Ajker Patrika

‘চেষ্টা করলে দূরপাল্লার দৌড়েও তারকা হওয়া সম্ভব’

আনোয়ার সোহাগ, ঢাকা
সামার অ্যাথলেটিকসে তিন ইভেন্টে রেকর্ড গড়ে সেরা অ্যাথলেট হয়েছেন রিনকী বিশ্বাস। ছবি: অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন
সামার অ্যাথলেটিকসে তিন ইভেন্টে রেকর্ড গড়ে সেরা অ্যাথলেট হয়েছেন রিনকী বিশ্বাস। ছবি: অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন

অ্যাথলেটিকসে দূরপাল্লার দৌড় নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না কখনো। রিনকী বিশ্বাস রেকর্ডের পর রেকর্ডের জন্ম না দিলে এবারও কি হতো! সে ক্ষেত্রে ‘না’র পাল্লাই হয়তো ভারী হবে।

৩০০০, ৫০০০ ও ১০০০০ মিটার—খালি পায়ে দৌড়ে তিনটি ইভেন্ট রেকর্ডময় করেছেন রিনকী। সোনা জিতেছেন ১৫০০ মিটারেও, তবে রেকর্ড গড়তে পারেননি। চার ইভেন্টের চারটি সোনা তাঁকে এনে দিয়েছে পরশু শেষ হওয়া সামার অ্যাথলেটিকসের সেরা নারী খেলোয়াড়ের পুরস্কারও।

জাতীয় কোনো প্রতিযোগিতায় এমন অনুভূতি এবারই প্রথম রিনকীর জন্য। গতকাল আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপে ১৯ বছর বয়সী নৌবাহিনীর এই অ্যাথলেট বলেন, ‘অনুভূতি বলে বোঝানোর মতো নয়, আমি খুব খুশি। অনেক ভালো লাগা কাজ করছে, দূরপাল্লার দৌড় দিয়ে আমি সেরা খেলোয়াড় হয়েছি। এখন মানুষ দূরপাল্লার দৌড়েও চোখ রাখবে। পরিবারের সবাই অনেক খুশি।’

ছোটবেলা থেকে খেলাধুলা ভালো লাগত রিনকীর। দৌড়বিদ হবেন তেমন ভাবনা অবশ্য ছিল না শুরুতে। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় বেড়ে ওঠা এই অ্যাথলেটের প্রতিভা প্রথমে নজর কাড়ে কোচ দীলিপ চক্রবর্তীর। রিনকী বলেন, ‘দূরপাল্লার দৌড়বিদ হওয়ার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ নেই। বেশি দূর পর্যন্ত দৌড়াতে পারতাম আমি। কোচের অধীনে অনুশীলন করে জেলা থেকে এসে জুনিয়র মিটে খেলেছিলাম। সেখানে ১৫০০ মিটারে রেকর্ড গড়ে নৌবাহিনীতে আসি।’

দূরপাল্লার দৌড়ে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয় সব অ্যাথলেটকে। রিনকী শুরুতে খানিকটা হতাশ হয়ে পড়লেও পরে খুঁজে পান আত্মবিশ্বাস, ‘অনুশীলন করাটা অনেক কষ্টের। কিন্তু পরিশ্রম না করলে তো আর হবে না। ধৈর্যটাও জরুরি। শুরুতে অনেক চ্যালেঞ্জের ছিল ধৈর্য ধরাটা। কোচকেও বলেছিলাম আমাকে দিয়ে হবে না। এরপর নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয়। বাকিরা কষ্ট করছে, আমাকেও কষ্ট করতে হবে। মাঠে যেহেতু নামব, তখন জিতেই ফিরব।’

মেয়েদের খেলা নিয়ে সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির দেখা মেলে হরহামেশাই। রিনকীরও শুনতে হয়েছে তেমন কথা। তবে পাশে পেয়েছেন পরিবারকে, ‘পরিবার থেকে সব সময় সমর্থন পেয়ে এসেছি। গ্রামে যখন খেলাধুলা করতাম, অনেকে অনেক কথা বলত। পরিবার সে সব কানে নিত না। কখনো বলেনি খেলাধুলা করো না। আমার বাবা মাছ ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী। আমাকে যথেষ্ট সমর্থন দিয়ে এসেছেন তাঁরা।’

দূরপাল্লার দৌড়বিদদের বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পাঠানো হয় না বলতে গেলে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রিনকী খুলতে চান সেই দুয়ারও, ‘নৌবাহিনীতে আছি। ভালো রেজাল্ট করলে হয়তো তারা আমার চাকরিটা স্থায়ী করবে। দিন শেষে ভালো অ্যাথলেট হতে চাই। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশকে কিছু উপহার দিতে চাই। ফেডারেশন থেকে সে রকম সুযোগ-সুবিধা পেলে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাথলেট হওয়া সম্ভব।’

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার ইচ্ছার কারণেই এখন থেকে জুতো পরে নিয়মিত অনুশীলন করবেন রিনকী, ‘আসলে খালি পায়ে খেলতে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। যদিও চোটে পড়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু জুতা পরলে অস্বস্তি লাগে। এজন্য পায়ে লিকো প্লাস্টার লাগাই। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলতে হলে জুতা লাগে। তাই এখন থেকে জুতা পরে অনুশীলনের চেষ্টা করব।’

স্প্রিন্টারদের জন্য অ্যাথলেটিকসে তারকা হওয়া তুলনামূলক সহজ। দূরপাল্লার দৌড়বিদদের জন্য অসম্ভব কিছু নয় বলে জানান রিনকী, ‘প্রথম থেকে যেহেতু লং রানে মনোনিবেশ করেছি, তাই বাকি সে সব ইভেন্ট নিয়ে সেভাবে ভাবিনি। তারকা হওয়া নয়, ভালো করার স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছি। তবে চেষ্টা করলে দূরপাল্লার দৌড়েও তারকা হওয়া সম্ভব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ