Ajker Patrika

‘ভারতও বাংলাদেশকে নিয়ে ভয়ে থাকে’

রানা আব্বাস, দুবাই থেকে
দুবাইয়ে পরশু সুপার ফোরে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত। ছবি: ক্রিকইনফো
দুবাইয়ে পরশু সুপার ফোরে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত। ছবি: ক্রিকইনফো

দুবাইয়ের হোটেল হিলটনে অন্য বাংলাদেশকে দেখা গেল কাল। আক্ষরিক অর্থেই ‘অন্য বাংলাদেশ’। আবুধাবির টিম হোটেলে যেমন দলকে খুব একটা স্বস্তিতে থাকতে দেখা যায়নি। দল জিতলেও সুপার ফোরে ওঠার টেনশনই কাজ করেছে। কাল দুপুরে দুবাইয়ের টিম হোটেলে দলের যাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে—চিন্তার ছাপ নেই, বরং চোখেমুখে ফুটে উঠছে আত্মবিশ্বাস।

আত্মবিশ্বাস জন্মেছে ফাইনাল খেলার। অতীত ইতিহাস বলে, এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারলেই বাংলাদেশ ফাইনাল খেলে। ২০১২, ২০১৬, ২০১৮ এশিয়া কাপের মতো এবারও কি বাংলাদেশ নামতে পারবে শিরোপার লড়াইয়ে? পরশু শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ওপেনার সাইফ হাসান যেমন বলেছেন, ‘এখানে আসার আগে সবার মধ্যে বিশ্বাস ছিল, আমরা ফাইনাল খেলব। একটা ধাপ পেরিয়েছি। সামনে আরও দুটি ম্যাচ আছে। পরের ম্যাচে এখন সব মনোযোগ।’ সেই ম্যাচটা ভারতের সঙ্গে। পরশু দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশকে পিছিয়ে রাখতে হচ্ছে যেকোনো ক্রিকেটীয় যুক্তিতেই। পরিসংখ্যান-রেকর্ড বাংলাদেশের পক্ষে একেবারেই নেই। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে ১৭ বার মুখোমুখি হয়ে মাত্র একটি জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের দিল্লিতে ওই জয়ের আগে ও পরে কোথাও ভারতকে টি-টোয়েন্টিতে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ।

এই এশিয়া কাপেও ভারত শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার। বাংলাদেশের বেশির ভাগ দর্শকও বাস্তবতা মেনে বলছেন, ভারতকে হারানো অনেক কঠিন। পরশু দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের পর অধিকাংশ দর্শক ভবিষ্যদ্বাণী করলেন, সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গে না পারলেও পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ উঠে যাবে ফাইনালে! শিরোপার লড়াই হবে তখন ভারতের সঙ্গে। কাল দলের এক ক্রিকেটার বললেন, ভারত কঠিন হলেও ভারতীয়রাও তাঁদের নিয়ে যথেষ্ট ভয়ে থাকেন! বাংলাদেশকে নিয়ে কেন ভয়ে থাকবে ভারতের মতো শীর্ষস্থানীয় দল, এই প্রশ্নে তাঁর যুক্তি, ‘আপনাদের (সংবাদমাধ্যমের তীব্র সমালোচনা) ভয়ে আমরা যেমন আমাদের নিচের র‍্যাঙ্কিংয়ের দলগুলোর সঙ্গে খেলার আগে ভয়ে থাকি! একইভাবে ভারত, এমনকি পাকিস্তানও ভয়ে থাকে আমাদের নিয়ে।’

ভয়টা আসলে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা দলের কাছে হেরে যাওয়ার। দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত কিছু করলে তো কথাই নেই। তবে হারলেও শেষ নয়, পরের দিনই পাকিস্তানের বিপক্ষে আরেকটি সুযোগ থাকবে লিটনদের। পরশু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ যেভাবে রান তাড়া করেছে, তাতে প্রেসবক্সে অনেকেই মনে করছেন, ফাইনালটা হতে পারে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে। বাংলাদেশ যদি শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারে, পাকিস্তানকে কেন নয়? এই এশিয়া কাপে গ্রুপপর্বে অসাধারণ খেলেছে শ্রীলঙ্কা। তারা আফগানিস্তানকে হারিয়েছিল বলেই বাংলাদেশ সুপার ফোরে উঠেছে। সেই লঙ্কানদের পরশু দুবাইয়ে বাংলাদেশ যেভাবে হারিয়েছে, টুর্নামেন্টে নানা বিতর্কে জেরবার পাকিস্তানও খুব বেশি কঠিন হবে না। টিম হোটেলের লবিতে কাল দুপুরে মোস্তাফিজুর রহমান, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ কিংবা সিনিয়র কোচ সালাহ উদ্দীন যেন এত দিনে একটু স্বস্তিতে কথা বলতে পারছেন। আবুধাবিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর সবার চেহারায় যেমন মেঘ ভর করেছিল, এখন সেখানে খেলছে দুবাইয়ের ঝকঝক রোদ্দুর।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৪৯ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির রেকর্ডে সাকিব আল হাসানকে ছুঁয়ে ফেলেছেন মোস্তাফিজ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও অল্পের জন্য রেকর্ডটা পুরোপুরি নিজের হয়নি ফিজের। তাতে কি? মোস্তাফিজ মনে করেন, রিজিকের মালিক আল্লাহ। যখন রেকর্ড হওয়ার হবে, এসব নিয়ে অভিজ্ঞ বাঁহাতি পেসার ভাবেন না। পরশু ম্যাচের পর সতীর্থ সাইফ তাঁকে প্রশংসায় ভাসিয়ে বলেছেন, ‘কয়েক মাস ধরে তিনি (ফিজ) ভালো ছন্দে আছেন। তিনি তো বিশ্বমানের বোলার। এসব পরিস্থিতি তাঁর জন্য সহজ।’

কিন্তু মোস্তাফিজ একা ভালো করলে তো হবে না, ডেথ ওভারে তাঁর একজন যোগ্য সঙ্গী যে বড্ড দরকার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ অনেক চেষ্টাচরিত্র করে ৫ বোলারের কৌশল কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের আটকাতে ডেথ ওভারে মোস্তাফিজের সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে কারও না কারও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত