Ajker Patrika

বেশি আদরে বিরক্ত হয় বিড়ালেরা: গবেষণা

প্রমিতি কিবরিয়া ইসলাম, ঢাকা 
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৪, ১৭: ২১
বেশি আদরে বিরক্ত হয় বিড়ালেরা: গবেষণা

সংগীত শিল্পী টেলর সুইফটের পোষা বিড়ালটির সম্পত্তি নাকি তাঁর বয়ফ্রেন্ডের চেয়েও বেশি! বিলিয়নিয়ার এ সংগীত শিল্পীর বিড়াল নিয়ে আদিখ্যেতা সবাই জানে। সুইফট তাঁর বিড়ালটিকে এত ভালোবাসলেও বিড়ালটি তাঁকে কি পছন্দ করে? গবেষকেরা বলছেন, উত্তরটি নেতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

পশ্চিমা দেশগুলোতে ‘ক্যাট পিপল’ নামে একটি ধারণা প্রচলিত আছে। এই ধরনের ব্যক্তিরা বিড়াল অন্তত পছন্দ করেন। তবে ক্যাট পিপলরা বিড়াল একটু বেশিই আহ্লাদ দেখান বলে মনে করে অনেকেই।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, এদের অপছন্দের তালিকায় থাকতে পারেন খোদ বিড়ালপ্রেমীরাও।

২০২১ সালে এক গবেষণায় বিড়ালদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত তা তুলে ধরা হয়েছে। এই গবেষণার প্রধান গবেষক হলেন—যুক্তরাজ্যের নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটির বিড়াল কল্যাণ ও আচরণ বিজ্ঞানী ড. লরেন ফিনকা। 

গবেষণায় বলা হয়, বিড়াল সব সময় আদর নেওয়ার মুডে থাকে না। তাই বুঝতে হবে, এরা কখন আদর চায়, হুট করে কোলে নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ঘন ঘন স্পর্শ না করে এদের নিজেদের মতো থাকতে দিতে হবে। 

আর আদর নেওয়ার জন্য বিড়াল আগ্রহ দেখালে পেট ও লেজের অগ্রভাগ এড়িয়ে কানের অগ্রভাগ, গাল এবং চিবুকের নিচে স্পর্শ করা উচিত। আদরের এমন নিয়মগুলো মেনে চললেই কেবল তা ‘সঠিক আচরণ’ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক নয়জন সহকর্মীর সঙ্গে গবেষণাটি পরিচালনা করেন ড. ফিনকা। এই গবেষণার সঙ্গে আরও কিছু ব্যক্তি যুক্ত ছিলেন। বিড়ালপ্রেমীরা এই গবেষণার পরামর্শগুলো মেনে চলছেন কি না সেটি পর্যবেক্ষণ করা হয়।

যখন-তখন আদর করতে গেলে বিড়াল বিরক্ত হতে পারে। ছবি: পেক্সেল ডটকমএই গবেষণায় থেকে বিড়ালপ্রেমীদের সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য জানা যায়। গবেষণায় বলা হয়, যারা বিড়াল সম্পর্কে অনেক জানেন ও অভিজ্ঞ হিসেবে নিজেদের দাবি করেন, তাঁরাই বিড়ালের আগ্রহ ও আকাঙ্ক্ষা বুঝে সঠিকভাবে আদর করার বিষয়গুলো উপেক্ষা করেন। অর্থাৎ ক্যাট পিপলরা বিড়াল স্পর্শ করার সাধারণ নিয়মগুলো মেনে চলেন না। 

বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের মূল্যায়ন করতে ও বিড়ালদের সঙ্গে তাঁদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য ড. ফিনকা ও তাঁর সহকর্মীরা ১১৯ জন অংশগ্রহণকারীর তথ্য নেন। অংশগ্রহণকারীদের একটি পরীক্ষাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এই পরীক্ষাগারে বিভিন্ন স্থানে ক্যামেরা লাগানো ছিল। অংশগ্রহণকারীরা তিনটি ভিন্ন প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ালের সঙ্গে কেমন আচরণ করেন, তা ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। তবে এর আগেই বিড়ালগুলো মানুষের সঙ্গে কতটুকু বন্ধুসুলভ আচরণ করে তা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে বিড়ালের প্রতিটি সেশন পাঁচ মিনিট স্থায়ী ছিল। 

পশ্চিমা দেশগুলোতে ‘ক্যাট পিপল’ নামে একটি ধারণা প্রচলিত আছে। ছবি: ওয়ান কাইন্ড অফ এ পেট রেসকিউ ড. ফিনকা বলেন, অংশগ্রহণকারীদের শান্তভাবে পরীক্ষাগার প্রবেশ করতে ও প্রবেশদ্বারের নিকটবর্তী কোনায় বসতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা বিড়ালগুলোর সঙ্গে সাধারণভাবে যেমন আচরণ করেন তেমনটিই করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে শুধু কোলে নেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পরীক্ষার পুরো সময় বসে থাকতে বলা হয়েছিল। এর ফলে বিড়ালগুলো চাইলে মানুষের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া এড়াতে পারে। 

গবেষকেরা সর্বোত্তম অনুশীলনের ওপর ভিত্তি করে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে বিড়ালগুলোর মিথস্ক্রিয়া পর্যালোচনা করেন ও নম্বর দেন।

যাদের বিড়াল পোষার অভিজ্ঞতা বেশি তাঁদের প্রাণীটির আচরণে অভ্যস্ত থাকার কথা। সেই সঙ্গে এই ব্যক্তিরা বিড়ালের সঙ্গে সঠিক আচরণ করবেন বলেই ধরে নেওয়া যায়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অংশগ্রহণকারী বিড়ালের বিষয়ে নিজেদের বেশি অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী বলে দাবি করেন, তাঁরা প্রাণীগুলোর সঙ্গে সঠিক আচরণ করেননি। তাঁরাই স্পর্শের ক্ষেত্রে বিড়ালের পছন্দের ও অপছন্দের স্থানের পার্থক্য করতে পারেননি।

গবেষক বলেন, সঠিক আচরণ, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের স্ব–মূল্যায়নের সঙ্গে পোষা কুকুর নিয়ে আগের গবেষণায় প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণগুলোর ইতিবাচক সম্পর্কের ঘাটতি দেখা গেছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রাণীর প্রতি অধিকতর সহমর্মিতার সঙ্গেও সম্পর্কিত নয়। 

গবেষণা দেখা যায়, ৫৬ থেকে ৭৫ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা বিষণ্নতায় আক্রান্ত, তাঁরাই বিড়ালদের বেশি কোলে নিচ্ছিলেন ও ধরে রাখেন। এমন আচরণ বেশির ভাগ বিড়ালই পছন্দ করে না। 

এক বিবৃতিতে গবেষকেরা বলেন, অবশ্যই প্রতিটি বিড়ালের নিজস্ব পছন্দ রয়েছে। তাই মানুষের সঙ্গে কতটুকু মেলামেশা করবে প্রতিটি বিড়ালের ক্ষেত্রে তা আলাদা হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মহাকাশে প্রস্রাব থেকে তৈরি প্রোটিন পাউডার হবে নভোচারীদের খাবার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাতাস ও প্রস্রাব থেকে তৈরি করা যাবে এ প্রোটিন পাউডার। ছবি: স্পেস ডটকম
বাতাস ও প্রস্রাব থেকে তৈরি করা যাবে এ প্রোটিন পাউডার। ছবি: স্পেস ডটকম

মাধ্যাকর্ষণের কারণে আমরা বসে-দাঁড়িয়ে প্লেটে বা হাতে নিয়ে খাবার খেতে পারি; কিন্তু মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ নেই, তাই সেখানকার খাবার ও খাওয়ার পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন। সাধারণত নভোচারীরা হিমায়িত বা শুকনো খাবার খান। আর এসব খাবার পৃথিবী থেকে মহাকাশে নিয়ে যেতে হয়।

তবে এবার মহাকাশেই বাতাস (thin air) ও নভোচারীদের প্রস্রাব থেকে খাদ্য তৈরি সম্ভব বলে জানিয়েছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ‘সোলেইন’ (Solein) নামে একটি প্রোটিন পাউডার খেয়ে ভবিষ্যতে চাঁদ বা মঙ্গলে দীর্ঘমেয়াদি মিশনে যাওয়া নভোচারীরা বেঁচে থাকতে পারবেন।

ইএসএ জানিয়েছে, একটি নতুন পাইলট প্রকল্পের আওতায় তারা সোলেইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এটি তৈরি করতে প্রয়োজন কেবল মাইক্রোব (অণুজীব), বাতাস ও বিদ্যুৎ।

এই প্রোটিন তৈরি করেছে ফিনল্যান্ডভিত্তিক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান সোলার ফুডস। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সোলেইন তৈরিতে প্রোটিন সংশ্লেষণের জন্য নাইট্রোজেনের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয় ইউরিয়া, যা মানুষের প্রস্রাবেই পাওয়া যায়।

ইএসএ ঘোষণা দিয়েছে, এই খাবার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) তৈরির জন্য তারা একটি প্রকল্পে অর্থায়ন করবে। তাদের মতে, এই পরীক্ষা সফল হলে ভবিষ্যতে মহাকাশচারীদের খাদ্যব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসবে।

সোলার ফুডসের স্পেস ও ডিফেন্স বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আরত্তু লুকানেন বলেন, ‘এই প্রকল্প কেবল শুরু। আমাদের লক্ষ্য হলো, মহাকাশে সোলেইন উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করা। আমরা আশা করছি, ২০৩৫ সালের মধ্যে মহাকাশচারীদের প্রধান প্রোটিন উৎস হয়ে উঠবে সোলেইন।’

প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘হোবি-ওয়ান’ (HOBI-WAN), এর পূর্ণরূপ Hydrogen Oxidizing Bacteria In Weightlessness As a source of Nutrition। প্রথম ধাপে এই প্রযুক্তি পৃথিবীতে উন্নয়ন করা হবে, এরপর তা মাইক্রোগ্র্যাভিটি (অল্প মহাকর্ষ) পরিবেশে পরীক্ষা করা হবে।

ইএসএর প্রধান অনুসন্ধান বিজ্ঞানী অ্যাঞ্জেলিক ভ্যান ওমবারজেন বলেন, এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো এমন একটি খাদ্য উপাদান তৈরি করা, যা মহাকাশ অভিযানে নভোচারীদের জন্য সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনবে।

অ্যাঞ্জেলিক ভ্যান আরও বলেন, মানবজাতি যদি একদিন দীর্ঘ সময়ের জন্য চাঁদে বা মঙ্গলে অবস্থান করতে চায়, তাহলে সীমিত সরবরাহের মধ্যেও টিকে থাকার মতো উদ্ভাবনী ও টেকসই সমাধান প্রয়োজন হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইএসএ ভবিষ্যতের মহাকাশ অনুসন্ধানের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সক্ষমতা তৈরি করছে।

সূত্র: স্পেস ডটকম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডিএনএর গঠন আবিষ্কারক ওয়াটসনের মৃত্যু, বর্ণবিদ্বেষ যাঁকে খ্যাতির শীর্ষ থেকে ডুবিয়েছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৪০
৯৭ বছর বয়সে মারা গেছেন জেমস ওয়াটসন। ছবি: সংগৃহীত
৯৭ বছর বয়সে মারা গেছেন জেমস ওয়াটসন। ছবি: সংগৃহীত

নোবেলজয়ী আমেরিকান বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। ডিএনএর (DNA) যুগান্তকারী ডাবল হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কারকদের অন্যতম তিনি। তিনি কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরিতে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষ তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ওয়াটসন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে মিলে ১৯৫৩ সালে ডিএনএর কাঠামোগত রহস্য উন্মোচন করেন। এই আবিষ্কারকে ‘বিশ শতকের অন্যতম সেরা অগ্রগতি’ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই আবিষ্কার আণবিক জীববিজ্ঞানের দ্রুত বিকাশের পথ প্রশস্ত করেছিল।

ডিএনএ ডাবল হেলিক্স হলো ডিএনএর দুটি সর্পিল বা প্যাঁচানো মইয়ের মতো কাঠামো, যা পরস্পরকে পেঁচিয়ে থাকে। এই কাঠামোতে দুটি শৃঙ্খল থাকে, সেটি আবার হাইড্রোজেন বন্ধনের মাধ্যমে সংযুক্ত। এই শৃঙ্খলগুলো অ্যাডেনিন (A) ও থাইমিন (T) এবং সাইটোসিন (C) ও গুয়ানিনের (G) মতো নাইট্রোজেনাস বেস জোড়া দিয়ে গঠিত।

জেমস ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক এবং মরিস উইলকিন্স—এই তিনজন বিজ্ঞানী ১৯৬২ সালে ডিএনএর ডাবল হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কারের জন্য যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান। এই আবিষ্কারের সময় তাঁরা বলেছিলেন, ‘আমরা জীবনের রহস্য আবিষ্কার করেছি।’

যদিও এই আবিষ্কারের পেছনে কিংস কলেজের গবেষক রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিনের তোলা এক্স-রে চিত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। সেটি তাঁর সম্মতি ছাড়াই ওয়াটসন ও ক্রিক ব্যবহার করেছিলেন। মরিস উইলকিন্স ফ্রাঙ্কলিনের সঙ্গে ডিএনএ অণুর কাঠামো নির্ণয়ের কাজ করেছিলেন।

এমন যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক সাফল্যের পরও পরবর্তীকালে বর্ণ ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে জেমস ওয়াটসনের খ্যাতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০০৭ সালে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি ‘আফ্রিকার সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে হতাশ’। কারণ, ‘আমাদের সব সামাজিক নীতি এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি যে তাদের (আফ্রিকানদের) বুদ্ধিমত্তা আমাদের মতোই—যদিও সব পরীক্ষামূলক ফলাফলে তেমনটি দেখা যায় না।’ এই মন্তব্যের জেরে নিউইয়র্কের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির চ্যান্সেলরের পদ হারান তিনি।

২০১৯ সালে ওয়াটসন পুনরায় একই ধরনের মন্তব্য করেন, যেখানে তিনি আরও একবার বর্ণ ও বুদ্ধিমত্তার মধ্যে যোগসূত্র টেনেছিলেন। এর ফলস্বরূপ, ল্যাবরেটরি তাঁর চ্যান্সেলর ইমেরিটাসসহ সমস্ত সম্মানসূচক পদ কেড়ে নেয়। ল্যাবরেটরি সেই সময় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ‘ড. ওয়াটসনের বক্তব্য নিন্দনীয় এবং বিজ্ঞানের দ্বারা অসমর্থিত।’

২০১৪ সালে বৈজ্ঞানিক মহলে একঘরে হওয়ার অনুভূতির কথা বলে ওয়াটসন তাঁর নোবেল পদকটি ৪৮ লাখ ডলারে (প্রায় ৩৬ কোটি টাকা) নিলামে বিক্রি করে দেন। যদিও পদকটি ক্রয় করা এক রুশ বিলিয়নিয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেটি আবার তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

১৯২৮ সালের এপ্রিলে শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন জেমস ওয়াটসন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য স্কলারশিপ পান। ডিএনএ নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি কেমব্রিজে যান, যেখানে ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। ডিএনএর গঠন আবিষ্কারের পর তিনি হার্ভার্ডে জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৬৮ সালে কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির দায়িত্ব নেন। এই প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত করার কৃতিত্ব তাঁর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম কবে মানুষের বন্ধু হলো কুকুর—একটি খুলি ঘিরে নতুন বিতর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ২১
বেলজিয়ামের জীবাশ্মবিজ্ঞানী মিৎসে গেরমোঁপ্রের হাতে সেই খুলি। ছবি: দ্য টাইমস
বেলজিয়ামের জীবাশ্মবিজ্ঞানী মিৎসে গেরমোঁপ্রের হাতে সেই খুলি। ছবি: দ্য টাইমস

বেলজিয়ামের জীবাশ্মবিজ্ঞানী মিৎসে গেরমোঁপ্রে দাবি করেছেন, তাঁর আবিষ্কার মানুষের সঙ্গে কুকুরের বন্ধুত্বের ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে পারে। তাঁর মতে, কুকুরের গৃহপালিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর আগে, যা প্রচলিত ধারণার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে!

শুক্রবার (৭ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমস জানিয়েছে, গেরমোঁপ্রে ছোটবেলা থেকেই বরফযুগের প্রাণীদের নিয়ে মুগ্ধ ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি বেলজিয়ান ইনস্টিটিউট অব ন্যাচারাল সায়েন্সেসে কাজ করার সময় গ্রামের একটি গুহা থেকে পাওয়া প্রাগৈতিহাসিক কিছু প্রাণীর হাড় পরীক্ষা করছিলেন।

এই কাজ করতে গিয়ে একটি মাথার খুলির দিকে মনোযোগী হন গেরমোঁপ্রে। দীর্ঘদিন ধরে খুলিটিকে বরফযুগের কোনো নেকড়ের বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গেরমোঁপ্রে বুঝতে পারেন—এটির নাক বা মুখের অংশটি ছোট ও চওড়া এবং এগুলো গৃহপালিত প্রাণীর বৈশিষ্ট্য।

পরে রেডিওকার্বন পরীক্ষায় দেখা যায়, ওই খুলির বয়স প্রায় ৩৫ হাজার বছর। আর বৈশিষ্টগুলোই বলে দিচ্ছে, এটি সেই সময়ের কোনো নেকড়ে নয়, বরং মানুষের সান্নিধ্যে থাকা প্রাচীন কোনো কুকুর হতে পারে।

গেরমোঁপ্রে বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, কেউ বিশ্বাস করবে না।’ তবে তাঁর এই গবেষণা প্রকাশের পর থেকে বিজ্ঞানমহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করেন, এটি আসলে অস্বাভাবিক আকৃতির একটি নেকড়ের মাথার খুলি। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এটি সত্যিই গৃহপালিত কুকুরের সবচেয়ে পুরোনো নিদর্শন।

গেরমোঁপ্রে মনে করেন, এটি এমন এক যুগের চিহ্ন, যখন মানুষ প্রথমবারের মতো প্রাণীদের সঙ্গে সহাবস্থান শুরু করেছিল। তিনি বিশ্বাস করেন, কুকুর গৃহপালিত হওয়ার প্রক্রিয়া মানুষের উদ্যোগেই ঘটেছিল। প্রাচীন মানুষেরা নেকড়ে শাবক লালন করত, আক্রমণাত্মকদের বেছে হত্যা করত আর শান্তগুলোকে নিজেদের সঙ্গী বানাত। এভাবেই ধীরে ধীরে জন্ম নেয় প্যালিওলিথিক কুকুর।

বরফযুগের বেলজিয়াম ছিল খোলা তৃণভূমি—চারপাশে ম্যামথ, ঘোড়া, রেইনডিয়ার আর বন্য সিংহ-ভালুকের ভিড়। এমন বিপজ্জনক পৃথিবীতে কুকুর ছিল মানুষের সহচর, রক্ষক ও পথপ্রদর্শক।

গেরমোঁপ্রের মতে, এই প্রাচীন খুলি শুধু একটি প্রাণীর নয়, মানবসভ্যতার প্রথম বন্ধুত্বের প্রতীকও বটে—যখন মানুষ আর কুকুর একে অন্যের ভরসা হয়ে উঠেছিল বরফে ঢাকা নীরব পৃথিবীর প্রান্তরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মহাকাশে বিশেষ চুলায় রান্নাবান্না, বারবিকিউ পার্টি করলেন চীনা নভোচারীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বারবিকিউ হাতে এক নভোচারী। ছবি: চায়না ডেইলি
বারবিকিউ হাতে এক নভোচারী। ছবি: চায়না ডেইলি

বারবিকিউ পার্টি চলছে এখন মহাকাশেও! তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে চীনের ছয়জন নভোচারী এই আয়োজন করেছেন। চীনের অ্যাস্ট্রোনট সেন্টার (এসিসি) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, শেনঝো–২০ ও শেনঝো–২১ মিশনের নভোচারীরা একটি নতুন ধরনের ওভেন ব্যবহার করে রান্না করছেন, যা মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে ব্যবহারের উপযোগী প্রথম ওভেন হিসেবে ইতিহাস গড়েছে।

স্পেস ডট কম-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ওভেন ব্যবহার করে নভোচারীরা ২৮ মিনিটে রোস্টেড চিকেন উইংস রান্না করতে সক্ষম হন। মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় তাপ সমভাবে ছড়ায় না বলে মহাকাশে রান্না করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওভেনটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে এটি তিয়ানগং স্টেশনের বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো চাপ সৃষ্টি না করে এবং ধোঁয়াবিহীন ও স্থিতিশীল তাপমাত্রায় রান্না করা যায়।

ভিডিওতে দেখা যায়, নভোচারীরা বিশেষভাবে তৈরি একটি গ্রিল কেস-এ চিকেন উইংস নিয়ে স্পেস স্টেশনের দেয়ালের একটি ছোট কেবিন আকৃতির অংশে স্থাপন করছেন।

অ্যারোস্পেস নলেজ সাময়িকীর প্রধান সম্পাদক ওয়াং ইয়ানান চায়না ডেইলিকে বলেন, ‘পৃথিবীতে যেমন ওভেনের ভেতর বাতাস ঘুরে তাপ সঞ্চালন ঘটায়, মহাকাশে তা হয় না। কারণ সেখানে কনভেকশন নামের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া অনুপস্থিত। তাই প্রকৌশলীদের এমন একটি বিশেষ পদ্ধতি বের করতে হয়েছে যাতে খাবার সমভাবে গরম হয় এবং রান্নার ধোঁয়াও নিরাপদভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নভোচারীদের সুরক্ষাও নিশ্চিত থাকে।’

ওভেনটির সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও রাখা হয়েছে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৯০ ডিগ্রিতে। এর ফলে নভোচারীরা প্রসেসড ফুড গরম করার পাশাপাশি খাবার রান্নাও করতে পারছেন।

এর আগে ২০২০ সালে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস)-এ প্রথমবারের মতো মহাকাশে খাবার বেক করার একটি পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। ন্যানোরেকস ও জিরো জি কিচেন যৌথভাবে তৈরি একটি প্রোটোটাইপ ওভেন ব্যবহার করে ওই পরীক্ষা চালায়। তখন পাঁচটি চকলেট চিপ কুকি বেক করা হয়। এটি ছিল মহাকাশে প্রথমবারের মতো কোনো খাবার বেক করার ঘটনা। পরবর্তীতে স্পেসএক্স ড্রাগন মহাকাশযানে করে এর মধ্যে তিনটি কুকি পৃথিবীতে ফেরত আনা হয়।

গত ৩১ অক্টোবর তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে পৌঁছান শেনঝো-২১ মিশনের তিন নভোচারী। তাঁরা সেখানে প্রায় ছয় মাসের জন্য অবস্থান করবেন। শেনঝো-২০ দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তাঁরা। শেনঝো-২০ এর সদস্যরা গত এপ্রিল থেকে স্টেশনে অবস্থান করছেন এবং আগামী ৫ নভেম্বর পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত