Ajker Patrika

স্মৃতি জমাতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্নায়ুকোষ

স্মৃতি জমাতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্নায়ুকোষ

মানুষের প্রতিটি জমানো স্মৃতির বিপরীতে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কোষ স্ফীত হয়ে যায়। মূলত মানুষের মস্তিষ্কের কোষ নিউরনে ‘একক গাঠনিক উপাদান’ হিসেবে দীর্ঘ মেয়াদে স্মৃতি জমানোর প্রক্রিয়ায় মানুষের স্নায়ুকোষের এই ক্ষতি হয়। সম্প্রতি বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত এক নিবন্ধ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

একদল আন্তর্জাতিক গবেষক বলছেন, স্মৃতি গঠনের বিষয়টি স্রেফ কেবল কয়েকটি ডিম ভেঙে অমলেট তৈরির মতো নয়। এই পুরো প্রক্রিয়া তথা স্মৃতির এটি প্যাটার্ন তৈরির জন্য কিছু স্বতঃস্ফূর্ত ধ্বংস প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা মূলত ইঁদুরের স্মৃতির বিষয়টি আমলে নিয়েই গবেষণা করেছেন। 

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, প্রাণীর স্মৃতি সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে নিয়ে মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসের নিউরন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উল্লেখ্য, হিপ্পোক্যাম্পাস সাধারণত, মস্তিষ্কের প্রাথমিক স্মৃতি সংরক্ষণাগার হিসেবে পরিচিত এবং এই অংশটিই প্রাণীর পুরোনো বিষয়টি মনে করার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। 

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের আলবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অব মেডিসিনের স্নায়ুবিজ্ঞানী জেলেনা রাদুলোভিচ বলেন, ‘মস্তিষ্কের নিউরনের ক্ষতিকে সাধারণত খারাপ বিষয় বলেই বিবেচনা করা হয়। কারণ এটি থেকে আলঝেইমার ও পারকিনসন রোগের মতো স্নায়বিক সমস্যা হতে পারে। তবে আমাদের অনুসন্ধান বলছে যে, মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস অংশে নির্দিষ্ট নিউরনে সৃষ্ট ‘প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন’ দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি তৈরির জন্য অপরিহার্য।’ 

গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের ওপর স্বল্পস্থায়ী ও মাঝারি ধরনের বৈদ্যুতিক শক থেরাপি পরিচালনা করেন। যা ইঁদুরের মস্তিষ্কে সেটির নিকট অতীতের স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়। এরপর বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের হিপ্পোক্যাম্পাসের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। স্মৃতি মনে করার জন্য টল-লাইক রিসেপ্টর-৯ নামে জিনের সক্রিয় হয়ে উঠতে হয়। আর এর ফলে, নিউরনের প্রদাহেরও শুরু হয়। অধিকন্তু আরও যে বিষয়টি উল্লেখ্য, সেটি হলো—এই প্রক্রিয়াটি নিউরনের ক্লাস্টারে সক্রিয় হয় এবং এটি সংশ্লিষ্ট নিউরনগুলোর ডিএনএ—এর ক্ষতি হয়। 

সাধারণত, মস্তিষ্কের কোষগুলোর ডিএনএ প্রায়ই পরিবর্তিত হয় এবং তা আবার দ্রুত সেরেও যায়। কিন্তু স্মৃতি জমানোর প্রক্রিয়ায় ডিএনএ-এর যে ক্ষতি হয় তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত কোষ বিভাজনের সঙ্গে যুক্ত জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোই স্নায়ু কোষকে বিভক্ত না করেই স্মৃতি সংরক্ষক ক্লাস্টারে নিউরনগুলোকে সংগঠিত করতে ব্যবহৃত হয়। 

এই বিষয়টি আমলে নিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ইঁদুরের মস্তিষ্কে এই ‘ইনফ্ল্যামেটরি এডিটিং’ বা নিউরনের প্রদাহজনিত কারণে সেটির ডিএনএ—এর যে পরিবর্তন তা প্রায় ১ সপ্তাহ সময় ধরে চলেছিল এবং এই এডিটিংয়ের পর দেখা গেছে, সেই নির্দিষ্ট নিউরনগুলো বাইরের যেকোনো প্রভাবের বিপরীতে ব্যাপক প্রতিরোধ দেখাচ্ছে। এর অর্থ হলো, সেই নিউরনগুলোতে স্মৃতি স্থায়ীভাবে বসে গেছে এবং বাইরের প্রভাব থেকে সেটিকে রক্ষা করছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঠিক উপরিউক্ত প্রক্রিয়াটিই ঘটে মানুষের ক্ষেত্রেও। এ বিষয়ে রাদুলোভিচ বলেন, ‘আমরা ক্রমাগত তথ্যের সমুদ্রে ভাসতে থাকি এবং যে নিউরনগুলো স্মৃতি এনকোড করে সেগুলো এরই মধ্যে যেসব তথ্য অর্জন করেছে সেগুলোকে সংরক্ষণ করতে হয় এবং নতুন ইনপুট দ্বারা সেগুলোর বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।’ মূলত এ কারণেই কোনো নিউরনে স্মৃতি জমা হওয়ার পর তা বাইরের যেকোনো প্রভাব থেকে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত