Ajker Patrika

হাঁটতে ভুলে গেলেন ভারতীয় নভোচারী!

শূন্য ভেসে থাকার ৭ মাসের অভিজ্ঞতার পর হাঁটতে পারার অভিজ্ঞতা ভুলে গেছেন সুনিতা। ছবি: নাসা
শূন্য ভেসে থাকার ৭ মাসের অভিজ্ঞতার পর হাঁটতে পারার অভিজ্ঞতা ভুলে গেছেন সুনিতা। ছবি: নাসা

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) প্রায় সাত মাস ধরে আটকে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোর। এত দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার কারণে সুনিতা এখন বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি ভুলে গেছেন কীভাবে হাঁটতে হয়! এই চ্যালেঞ্জটি তার শরীরের ওপর দীর্ঘ মহাকাশ অভিযানের প্রভাব নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। এই ঘটনা মহাকাশে দীর্ঘ সময় থাকার শারীরিক প্রভাব নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে এবং ভবিষ্যতে মিশনগুলো নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক আলাপ–আলোচনার সময় সুনিতা স্বীকার করেন, শূন্য ভেসে থাকার সাত মাসের অভিজ্ঞতার পর হাঁটতে পারার অভিজ্ঞতা ভুলে গেছেন তিনি। সুনিতা জানিয়েছেন, এই সাত মাস তিনি না বসেছেন, না শুয়েছেন, বরং শুধু শূন্যে ভেসে ছিলেন। সে জন্য এখন পৃথিবীর মাটিতে হাঁটার অনুভূতিটি মনে করতে পারছেন না।

সুনিতা ও বাচের এই অভিযানটি স্বল্পকালীন হওয়ার কথা ছিল। গত বছরের ৫ জুন মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের তৈরি স্টারলাইনার মহাকাশযানে চড়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন নাসার দুই নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বাচ উইলমোর। মাত্র আট দিন মহাকাশ স্টেশনে থাকার কথা থাকলেও নিজেদের মহাকাশযান ফুটো হয়ে হিলিয়াম গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি ইঞ্জিনে গোলযোগ দেখা দেওয়ায় প্রায় আট মাস ধরে পৃথিবীতে ফিরতে পারছেন না তাঁরা।

উইলিয়ামস এবং তাঁর সহযাত্রী মহাকাশচারী বাচ উইলমোর আশা করেছিলেন, তাঁরা মহাকাশে এক মাসের বেশি সময় কাটাবেন না, কিন্তু মিশনটি অপ্রত্যাশিতভাবে কয়েক মাসের জন্য বেড়ে গিয়েছে। এ জন্য তাঁদের দুজনকেই ক্রমাগত শূন্যে ভাসতে হচ্ছে।

মিশনটি দীর্ঘায়িত হওয়ায় সুনিতা উইলিয়ামস চমকে গেছেন এবং পৃথিবী থেকে শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এই ঘটনাটি দীর্ঘ মহাকাশ যাত্রার অজানা প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

এদিকে বাচ উইলমোর এবং সুনিতা উইলিয়ামসকে দ্রুত ফিরিয়ে আনতে ইলন মাস্ককে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁরা দাবি তুলেছেন, বাইডেন প্রশাসন নভোচারীদের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ‘পরিত্যাগ’ করেছে।

ট্রাম্প বলেন, ‘ইলন শিগগিরই নভোচারীদের বাঁচানোর চেষ্টা করবেন। আশা করি সবকিছু নিরাপদে হবে।’

মহাকাশ অভিযানে তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা জন্য পরিচিত ইলন মাস্ক নিশ্চিত করেছেন, স্পেসএক্স এই মিশনটি গ্রহণ করবে। মহাকাশচারীদের নিরাপদ পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার ব্যর্থতার জন্য তিনি অবাক হয়েছেন। ঘটনাটিকে তিনি ‘ভয়ানক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। মাস্ক আশ্বস্ত করেছেন, ‘আমরা যত দ্রুত সম্ভব তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসব।’

এটা একটি জোরালো মন্তব্য হলেও বিষয়টি নিয়ে মাস্ক কেবল ব্যঙ্গ করেছেন বলে অনেকেই মনে করেন। তবে, এই মন্তব্য নাসার জন্য বেশ কিছু জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। কারণ, নাসা অনেক আগেই বলেছে যে বাচ উইলমোর এবং সুনিতা উইলিয়ামস মহাকাশ স্টেশনে আটকে পড়েননি। তাঁদের জন্য একটি সুরক্ষিত ফেরার ব্যবস্থা রয়েছে।

নির্ধারিত সময়ের চেয়ে মিশনটি দীর্ঘায়িত হলেও সুনিতা এই অভিজ্ঞতা উপভোগ করার চেষ্টা করছেন। তিনি পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় প্রতিদিনই আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলি, যেন কোনোভাবেই পারিবারিক বন্ধন মুছে না যায়।’ পরিবারের সঙ্গে এই যোগাযোগ তাঁর জন্য মানসিকভাবে বেশ সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে।

নভোচারীদের কিছুটা দেরিতে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি দেখতে পাচ্ছে না নাসা। কারণ, উইলমোর এবং উইলিয়ামস সুস্থ আছেন এবং তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার এবং কাপড় রয়েছে।

তবে এই দুই নভোচারী দ্রুত ফিরে এলে মহাকাশ স্টেশনটি পরিচালনায় বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেখানে শুধু ডন পেটিট নামের একজন মহাকাশচারী থাকবেন। তিনি বেশ অভিজ্ঞ হলেও তার ওপর এত দায়িত্ব চাপানো ঠিক হবে না। এই মিশনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে মহাকাশে একটি স্পেসওয়াক (মহাকাশে বাইরে কাজ) এবং কিছু জরুরি প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পরিকল্পনা ছিল।

ক্রু-৯ নভোচারীদের ফেরার তারিখ এখন ক্রু-১০ মিশনের ওপর নির্ভর করছে। এই মিশনে নতুন একটি ড্রাগন স্পেসক্রাফট ব্যবহার হবে। আরও প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ২৫ মার্চ উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করেছে স্পেসএক্স। যদি ২৫ মার্চে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা মেনে চলে, তবে স্পেসএক্সকে একটি পুরোনো ড্রাগন স্পেসক্রাফট ব্যবহার করতে হতে পারে। এই মহাকাশযানটি মূলত অন্য একটি মিশন ‘অ্যাক্সিয়ম-৪’–এর জন্য তৈরি হয়েছিল। এই মিশনে স্পেসএক্স একটি নতুন ড্রাগন স্পেসক্রাফট ব্যবহার করতে চায়। তবে স্পেসএক্স আরও কিছু সময় চেয়েছে যাতে তারা এই নতুন স্পেসক্রাফটটি সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে পারে।

আবার মার্চের শেষের ক্রু-১০ মিশনটি উৎক্ষেপণের তারিখ থেকে পিছিয়ে গেলে আরও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, পেটিট রাশিয়ার সয়ুজ যান দিয়ে মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন এবং তার ফেরার তারিখ ২০ এপ্রিল। সয়ুজ স্পেসক্রাফটটি ২১০ দিন পর্যন্ত মহাকাশে থাকতে পারবে, কিন্তু ২০ এপ্রিল তাঁদের যাত্রার ২২১ দিন পূর্ণ হবে। তাই, ২০ এপ্রিল সম্ভবত সয়ুজ মিশনের শেষ সময়সীমা এবং তারপর ওই মিশন আর চালানো সম্ভব না–ও হতে পারে।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত