Ajker Patrika

এনসিপি-গণঅধিকার একীভূতকরণ: নেতৃত্ব নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা, গতি নেই আলোচনায়

  • দলের নতুন নাম দেওয়ার প্রস্তাব গণঅধিকার পরিষদের।
  • নুরুল হক নুরকে কার্যকরী সভাপতি করার প্রস্তাব।
  • নুর ও আখতার দেশে ফিরলে গতি পাবে আলোচনা।
সাখাওয়াত ফাহাদঅর্চি হক, ঢাকা 
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ২৬
এনসিপি-গণঅধিকার একীভূতকরণ: নেতৃত্ব নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা, গতি নেই আলোচনায়

তরুণদের সম্মিলিত শক্তিকে একই প্ল্যাটফর্মে আনার লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) একীভূতকরণের আলোচনা শুরু হয়েছে সম্প্রতি। কিন্তু সেই আলোচনা থেকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি দল দুটি। মূলত এক হওয়ার পর দলের নাম কী হবে, মূল নেতৃত্বে কে থাকবেন, আর উভয় দলের প্রথম সারির নেতাদের পদ-পদবি বণ্টন কেমন হবে—এসব নিয়েই ঝুলে আছে একীভূতকরণের উদ্যোগ। এ ছাড়া গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন দেশের বাইরে থাকায় আলোচনায় গতি নেই বলে জানিয়েছেন দল দুটির নেতারা।

আখতার হোসেন বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। অন্যদিকে নুরুল হক নুর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে আখতার আগামীকাল দেশে ফেরার কথা রয়েছে, তবে নুর চিকিৎসা শেষে কবে দেশে ফিরবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটার কারণে (শীর্ষনেতারা বিদেশে থাকায়) আলোচনায় একটা দীর্ঘসূত্রতা এসেছে। কারণ, একটা দলের প্রধান এবং একটা দলের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি যখন নানা প্রয়োজনে বিদেশে থাকেন, আলোচনায় একটা ইফেক্ট পড়ে।’ একীভূতকরণের প্রক্রিয়া যৌক্তিক জায়গায় নেওয়ার জন্য এখনো আলাপ আলোচনা চলছে বলেও জানান সামান্তা। তিনি বলেন, ‘আশা করি, কিছু দিনের মধ্যে আমরা একটা চূড়ান্ত ফল দেখতে পাব।’

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘আলোচনা চলছিল, কিন্তু নুরুল হক নুর সিঙ্গাপুরে এবং আখতার তো জাতিসংঘে। তারা এলে এ বিষয়ে আলোচনা আগাবে।’ তিনি বলেন, ‘নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এর কিছুই চূড়ান্ত না।’

নেতারা জানিয়েছেন, তরুণদের সম্মিলিত শক্তিকে একই প্ল্যাটফর্মে আনার ইচ্ছা নেতা-কর্মীদের মধ্যে থাকলেও একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদি। তাই উভয় দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। দল দুটির ইতিমধ্যে দেশের থানা পর্যায় পর্যন্ত কমিটি বিস্তৃত। একীভূত করতে হলে থানা পর্যায় পর্যন্ত সব কমিটিকেও একীভূত করতে হবে। তাই দলের অভ্যন্তরেও প্রক্রিয়াটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন আছে।

জানতে চাইলে গণঅধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান বলেন, ‘একীভূত হওয়া, নেতৃত্ব নিয়ে প্রাথমিক আলাপের পর ভিপি (নুরুল হক নুর) দেশের বাইরে গিয়েছেন। তিনি দেশে এলে আবারও আলোচনা হতে পারে।’

এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে একীভূত হওয়া দলে কার্যকরী সভাপতি করার প্রস্তাব উঠেছে। একই সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ দলটির অন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। অন্যদিকে গণঅধিকারের নেতারা বলেছেন, ‘আমাদের প্রস্তাব ছিল, একীভূত হলে দলের নতুন নাম অথবা গণঅধিকার পরিষদ থাকবে। কিন্তু আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার আগে এনসিপি নেতারা বলতে শুরু করেছেন, আমরা এনসিপিতে একীভূত হচ্ছি। এতে তৃণমূলে ভুল বার্তা গেছে। এ কারণে আলোচনায় কিছুটা ভাটা পড়েছে।’

দুই দলের নেতারাই জানান একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে দুই দল থেকে আসছে নানা প্রস্তাব ও শর্ত। এনসিপির নেতারা দলের নাম এনসিপিই থাকবে বলে প্রস্তাব দিয়েছেন। অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা দলের নতুন নাম অথবা গণঅধিকার পরিষদ রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন। শীর্ষ নেতাদের পদ দেওয়ার বিষয়েও এখনো মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি দল দুটো। এ বিষয়ে উভয় দলের নেতারা জানিয়েছেন, নেতৃত্বের বিষয়েও প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে দুই দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে। সে ক্ষেত্রে নেতৃত্বের বিভিন্ন কাঠামোর বিষয়েও আলোচনা করেছেন তাঁরা। দলে একাধিক সভাপতির কথাও আলোচনায় এসেছে।

সভাপতি ও কার্যকরী সভাপতির আলোচনা প্রসঙ্গে সামান্তা শারমীন বলেন, ‘একটা দলে দুজন সভাপতি তো থাকে না। একটা দলে একজনই প্রধান থাকেন। সেক্ষেত্রে সভাপতি নাহিদ ইসলামই থাকবেন। এটা আমরা বলতে পারি। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি যে আরেকটি দল যখন আসছে, তখন তাদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে কীভাবে আমাদের মধ্যে সম্মানজনক জায়গা করে দেওয়া যায়, সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি। সুনির্দিষ্ট পোস্ট পদবি, কী হবে—এটা এখনই চূড়ান্তভাবে বলা যাচ্ছে না।’

নাম পরিবর্তনের আলোচনা প্রসঙ্গে সামান্তা বলেন, ‘এনসিপির নাম পরিবর্তনের বিষয়ে তাঁরা বলছেন। কিন্তু এনসিপি নামটা এমন কোনো জায়গা থেকে ঠিক করা হয়নি, যেটা পরিবর্তনযোগ্য। কারণ আমরা তো নাগরিক অধিকারের কথা বলি। সেই জায়গা থেকে আমরা সিটিজেন পার্টি গঠন করেছি। সেই জায়গা থেকে নাম পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আমার কাছে মনে হয়, আমাদের সদস্যসচিব আখতার হোসেন দেশে আসার পর আমরা সার্বিক বিষয়ে একটা দিকনির্দেশনা পেতে পারি।’

একীভূতকরণের সার্বিক আলোচনা প্রসঙ্গে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আলোচনাটা একটা পর্যায়ে আসছে। বাকিটা নুরুল হক নুর দেশে এলে চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনাটা হবে। তাঁকে ছাড়া তো সবকিছু ঠিকঠাক করে ফেলতে পারি না।’

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এখন ঝুলেই আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মূল নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা আসলে যা হয়েছে, তাতে উল্লেখযোগ্য কিছু নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ক্ষমা না চাইলে জামায়াত ক্ষমতায় যেতে পারবে না: জামায়াত নেতাকে পাশে বসিয়ে কাদের সিদ্দিকী

এনসিপি-গণঅধিকার একীভূতকরণ: নেতৃত্ব নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা, গতি নেই আলোচনায়

যে কোনো মুহূর্তে ইসরায়েলি বাধার মুখে পড়ার শঙ্কায় গাজাগামী নৌবহর

কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় জমি লিখে নেওয়া সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় সর্বোচ্চ ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টি, কিন্তু কেন?

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত