Ajker Patrika

অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দিক থেকে অনভিজ্ঞ হলেও আন্তরিকতার অভাব নেই: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ জুন ২০২৫, ১৯: ৩২
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: আজকের পত্রিকা
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: আজকের পত্রিকা

অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কম থাকলেও আন্তরিকতার অভাব নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।

সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘একটা বিশেষ মুহূর্তে এসে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কথা বললে অস্বীকার করা হবে না যে, আমরাই দায়িত্ব দিয়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে তাদের অভিজ্ঞতা যথেষ্ট নয়...তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সবাই অত্যন্ত অভিজ্ঞ মানুষ, পণ্ডিত লোক, উইজডম সব আছে, কিন্তু পলিটিক্যাল উইজডম যে পুরোপুরি আছে, সেটা বলা যাবে না। কিন্তু তাদের আন্তরিকতার অভাব আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না।’

যেকোনো সময়েই নির্বাচনের জন্য বিএনপি প্রস্তুত আছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তো বলেছি, আপনি যদি ইলেকশন কালকে করতে পারেন, আমরা কালকেই রেডি। বিএনপি নির্বাচনের দল...বিএনপি অলওয়েজ রেডি ফর ইলেকশন। কারণ, এটা (বিএনপি) নির্বাচনের দল, নির্বাচন করেই বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়। যখন সবাই চাইবে, একমত হবে, তখন নির্বাচন হবে...অসুবিধা নাই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব এবং এটা খুবই সম্ভব। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন এই কথা। আমি বিশ্বাস করি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া সম্ভব।’

জামায়াতে ইসলামী এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলছে, তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপির বক্তব্য কী—এমন প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, ‘একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, ডেমোক্রেসির মূল কথা হচ্ছে...আপনি আমার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করবেন, আমি আপনার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করব। কিন্তু তাই বলে আমি মনে করব না যে, আপনি আমার শত্রু, তাই বলে আমি মনে করব না যে, আপনি দেশদ্রোহী হয়ে গেছেন, আপনি গণতন্ত্রবিরোধী হয়ে গেছেন। আমি মনে করব, এটাই গণতন্ত্রের বিউটি। আমার দায়িত্ব হচ্ছে আপনার মতামত প্রকাশের অধিকারকে নিশ্চিত করা।’

এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অসুবিধার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সময়টা (এপ্রিল) তো ঠিক না। আমি প্রথম দিন বলেছি, টাইম ইজ নট গুড ফর ইলেকশন। এপ্রিল মাস রোজার মাস, রোজা শেষ হবে, ঈদ শেষ হবে...এর কয়েক দিন পরে নির্বাচন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনি ভাবেন রোজার মাসটায় প্রার্থীদের কী অবস্থা হবে...রাজনৈতিক কর্মীদের কী অবস্থা হবে? আমি নিজেই এখন চিন্তিত যে, প্রত্যেক দিন আমাকে ইফতার পার্টি করতে হবে। প্রার্থীদের ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, ওই সময় প্রচণ্ড গরম থাকবে আবহাওয়া, ঝড়-বৃষ্টি আছে...দিনের বেলা আমাদের যে নির্বাচনী কালচার...জনসভা করতে হয়, সেই জনসভায় লোকজন আনাটাই মুশকিল হবে...রোদ্রের মধ্যে কে আসবে? রাত্রিবেলা মিটিং করতে হবে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ সময়ে ডিসেম্বর-নভেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়েছে। দুবার বোধ হয় হয়েছে ভিন্ন সময়ে...দুই ইলেকশনই ঝামেলা ছিল।’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে কি না—প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি খুবই ইতিবাচক মানুষ এবং আমি সব সময়ে পজিটিভ দিকটাই দেখতে চাই, ব্রাইট দিকটা দেখতে চাই...তাতে আমি মনে করি, এই একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, অনেক সুযোগ তৈরি হতে পারে। সেই সুযোগগুলো তৈরি করার সুযোগ এসেছে আমাদের এই দুই নেতার। দিস ইজ এ প্রপার টাইম, প্রপার ভেন্যু, যেটাতে নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে আরকি।’

বিএনপির বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চলছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘কেমন জানি একটা নেগেটিভ প্রচারণা বিএনপির বিরুদ্ধে চলছে। কিন্তু কারণটা কী? আমরা নতুন নতুন সংস্কারের কাজ করেছি তো, পরিবর্তন আনার কাজ করেছি তো। এখন আমি জানি না, কিছু কিছু মানুষ আছেন বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য, বলেই যাচ্ছেন। বাস্তবতা হচ্ছে যে, বিএনপি ইজ আ রিয়্যালিটি। বিএনপি এমন একটা দল, একে যত কিছুই বলুক, তাকে সহজেই শেষ করা যায় না, কখনোই যায়নি।’

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে ‘জাতিকে বিভক্ত’ না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটা বিষয়, জাতি ইউনাইটেড যে আমরা গণতন্ত্র চাই, রেস্ট্রোরেশন অব ডেমোক্রেসি চাই, আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাই, আমার ভোটটা আমি দিতে চাই...ভোট দিয়ে আমি প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চাই। সংস্কার চাই। অযথা ডিভিশনটা করবেন না। আমরা যদি ডিভিশনটা করি, তাহলে আমাদের জাতির যারা শত্রু, বাইরে যারা আছে, তারা এই সুযোগটা বেশি করে পাবে।’

নির্বাচনের সময় চলে আসায় অন্তর্বর্তী সরকারের কেয়ারটেকার সরকারের ব্যবস্থায় চলে যাওয়া উচিত কি না—জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম কথাটা, ইলেকশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য দেয়ার শুড বি এ কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট। অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো কি থাকবে না থাকবে...ইলেকশনটা কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হওয়া উচিত। সেই সময়ে কিছু রাজনৈতিক দল সমালোচনাও করেছে যে, আমি এখানে ১/১১ আনতে চাই, অমুক আনতে চাই বলেছেন অনেক। এটা হয়েছে অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে।’

তিনি বলেন, ‘আমি যে কথাগুলো বলেছি, অভিজ্ঞতার আলোকে। আপনাদের মনে আছে, ৫ আগস্টের পরে আমরা নয়াপল্টনে একটা জনসমাবেশে বলেছিলাম যে, তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের দাবি তুলেছিলাম। এটা নিয়ে আমাকে যথেষ্ট সমালোচনা ফেস করতে হয়েছে যে, এখন বিএনপি নির্বাচন চায়, অমুক চায়-তমুক চায়। এটা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, ওই নির্বাচনটা আমরা দ্রুত চাই কী কারণে? একটা ইলেকটেড সরকার দরকার।’

তারেক রহমান কবে দেশে ফিরছেন—জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শিগগির ফিরবেন।’ তবে দিনক্ষণ কোনো কিছুই বলেননি বিএনপি মহাসচিব।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো আছেন বলেও এ সময় জানান ফখরুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত