Ajker Patrika

দুর্নীতির তথ্য দেন, ব্যবস্থা নেব: শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৫: ৪৫
দুর্নীতির তথ্য দেন, ব্যবস্থা নেব: শেখ হাসিনা

কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে, সেই তথ্য চেয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি তো পার্লামেন্টে বলেছি, কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে আমাকে তথ্য দেন, আমি ব্যবস্থা নেব।’

শনিবার আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভার মুলতুবি সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক হয়।

এর আগে গত ৭ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এই যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

দুর্নীতির কথা শুধু মুখে মুখে বললে হবে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন এমন এমন লোকজনের কাছ থেকে আমাকে শুনতে হচ্ছে, যারা নিজেরাই দুর্নীতিগ্রস্ত। যাদের আমলে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অথবা কেউ বলতে গেলে ওই ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করতে গিয়ে গরিব মানুষের ওপর এমন চাপ...যে সুদ দিতে দিতে তাদের অনেক সময় বাড়িঘর ছেড়ে এলাকা থেকে চলে যেতে হয়েছে অথবা আত্মহত্যা করতে হয়েছে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘এই গরিব মানুষের টাকা দিয়েই কিন্তু দেশে নাম-টাম করে বেশ ভালোই আছে এবং প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগও করে ফেলেছেন। এই টাকাগুলো কোথা থেকে, এগুলো গরিবের রক্তচোষা টাকা এটা তো বাস্তব কথা।’

বিগত সময়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের কথা তুলে ধরে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা যা যা চেয়েছিলেন, আমরা সেগুলো কিন্তু একে একে করে দিচ্ছি মানুষকে। তাঁর যে স্বপ্ন, সেটাই বাস্তবায়ন করা আমাদের লক্ষ্য। এত কাজ করার পরেও কিছু লোক আছে, তাদের কোনো কিছু ভালো লাগে না।’

আওয়ামী লীগ ওয়াদা রক্ষা করে মন্তব্য করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কথা দিয়েছি...প্রতি বাজেটে নির্বাচনের ইশতেহার সামনে রেখে আমরা পরিকল্পনা নেই। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা যখন করি, সেখানেও আমাদের ঘোষণাপত্র, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার মাথায় রেখে, সামনে রেখেই আমরা কিন্তু করি। অর্থাৎ যে ওয়াদা জাতিকে দেই, সেটা আমরা রক্ষা করি।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেটা বলে, মানুষের জন্য যে ওয়াদা করে, সেই ওয়াদা আওয়ামী লীগ রক্ষা করে। এটা হলো বাস্তবতা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সার কথা হলো, আওয়ামী লীগ যে কথা দেয়, সেই কথা রাখে এবং জাতির কল্যাণে আমরা কাজ করি এবং মানুষ তার শুভ ফল পাচ্ছে।’

দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চিন্তা করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ যেন মাথা তুলে চলতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের যে পরিবর্তন ঘটেছে, আমি জানি এটা অনেকেই নিতে পারে না। নানা ধরনের কথা রটায়। কিন্তু মানুষের জীবনযাত্রায় যে পরিবর্তন এসেছে। তা ছাড়া রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি আমরা করেছি। এটাকেও অনেকই স্বীকার করতে চায় না। করতে চাইবেও না।’

টানা ১৪ বছর সরকারে থাকায় ধারবাহিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মানুষের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে দাবি করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের দেশেও যাদের একেবারে নির্দিষ্ট বেতনে চলতে হয়, তাদের জন্য কষ্ট হচ্ছে। সেটা আমরা বুঝি। সেই জন্য বিদেশ থেকে অনেক টাকা খরচ করে খাবার কিনে নিয়ে আসতেছি। ভর্তুকি মূল্যে সেটা দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি জানি না বাংলাদেশে আর কোনো সরকার এইভাবে জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে কি না।’

দেশে বেকার থাকার সুযোগ নেই মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কিন্তু আমাদের দেশের একেকটা সেক্টরকে ধরে ধরে আমাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার ফলে আজকে আমরা দারিদ্র্য কমাতে পেরেছি; কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে বাড়াতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘কেউ ইচ্ছে করলে বেকার থাকতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বেকার থাকার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমরা এত সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অনেক ছেলেমেয়ে কিন্তু এখন গ্রামে বসে টাকা উপার্জন করছে। কাজেই এভাবে যত সুযোগ আছে আমরা করে দিয়েছি।’

বাংলাদেশ নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের কথা মাথায় রেখেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হয় বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। ভূমিহীন নিয়ে সরকার জরিপ করছে বলেও জানান তিনি। তাদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। দলীয় নেতা-কর্মীদের সত্তর সালের নির্বাচনে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য পড়ার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি।

অনবাদি জমিতে আবাদ করার নির্দেশনা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি আমার এলাকায় (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) খুঁজে দেখলাম প্রায় ১০ হাজার বিঘা জমি আছে অনাবাদি। আমাদের কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আনাবাদি জমিতে আবাদ করার একটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের বাইরেও অনেক জমি রয়ে গেছে। আমি উদ্যোগ নিয়েছি আমার ওখানে যত অনাবাদি জমি রয়েছে, সেখানে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে আবাদ করার। সেখানে শ্রমিকের পাশাপাশি যন্ত্রের ব্যবহারও হচ্ছে। এইভাবে সবাই শুরু করলে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যের অভাব হবে না। উৎপাদন করে বাইরেও রপ্তানি করতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত