Ajker Patrika

নির্বাচন কমিশন আইন নতুন মোড়কে পুরোনো জিনিস: জিএম কাদের   

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
নির্বাচন কমিশন আইন নতুন মোড়কে পুরোনো জিনিস: জিএম কাদের   

নির্বাচন কমিশন আইনকে নতুন মোড়কে পুরোনো জিনিস বলে মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগে যে আইনটি পাস হয়েছে তাতে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে। যথাযথ ক্ষমতায়নের বিষয়টি আইনের আওতায় আনা হয়নি, আমরা মনে করি ক্ষমতায়নের বিষয়টি বিদ্যমান আইন বা আলাদা একটি আইন হিসেবে আনা দরকার ছিল। 

শনিবার জাপার বনানী কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। চলতি সংসদ অধিবেশনে করোনা আক্রান্ত হওয়ায় যোগদান করতে পারেননি জাপা চেয়ারম্যান। আইনটি নিয়ে শনিবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি। 

জিএম কাদের বলেন, সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে। কিন্তু বাস্তবে এ বিষয়টি খুব একটা কার্যকর হতে দেখা যায় না। ফলে কীভাবে এটি প্রযোজ্য হবে বা কার্যকর করা যাবে তার বিস্তারিত বর্ণনা থাকা আবশ্যক। আমাদের প্রস্তাব ছিল এ বিষয়েও একটি আইন থাকা প্রয়োজন। যে আইনে, নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনী কাজে কোন কর্মচারী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনাবলি পালন না করলে নির্বাচন কমিশন নিজেই যেন প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে এইরকম একটি আইন করা দরকার। 

কাদের বলেন, যথোপযুক্ত নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই তা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে নির্বাচন কমিশনকে কর্তব্য সম্পাদনের সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ও সহযোগিতা দেওয়া হয়।  

জিএম কাদের আরও বলেন, আইনে একটি সার্চ কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সার্চ কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়নি। সার্চ কমিটির মাধ্যমে মনোনীত ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় সংবলিত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান ব্যবস্থায় প্রকাশ করার কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তা ছাড়া মাত্র ১৫ (পনেরো) কর্মদিবসের মধ্যে নাম প্রস্তাব করার বিধানটি বেশি তাড়াহুড়ো বলে মনে হয়। যা জনমনে সংশয় সৃষ্টি করতে পারে, ফলে সার্চ কমিটির কাজের স্বচ্ছতা থাকছে না। 

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা মনে করি রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার পূর্বে সার্চ কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত নাম সমূহ জনগণের সামনে প্রকাশ করার প্রয়োজন ও জনগণের মতামত প্রদানের ব্যবস্থা রাখা উচিত। জনগণের মতামত বিবেচনায় এনে তালিকা সংশোধনের সুযোগ রাখার ব্যবস্থা রাখলে বাছাইয়ের সার্বিক বিষয়টি স্বচ্ছতা পেত। সার্চ কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত তালিকাটি প্রকাশ করার বিধান না থাকার ফলে শেষ পর্যন্ত সেই তালিকার সুপারিশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে কি না সেই বিষয়ে সংশয় থেকেই যায়। কারণ সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদের ৩ দফার কারণে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর মতামতের প্রাধান্য দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তার দলীয় বিবেচনায় যেকোনো ব্যক্তি ও ব্যক্তিবর্গকে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে মনোনীত করার সুযোগ থাকবে। 

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান আইনটিতে যাতে উপরিউক্ত সুযোগ না থাকে সে জন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮ এর ৩ ধারার পরিবর্তন করে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দানের বিষয়টিও সরাসরি রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি। এ আইন প্রণয়ন করার ফলে নির্বাচন কমিশন গঠন ও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব কার্যকরভাবে পালনের ক্ষমতায়নে আগের তুলনায় কোন উন্নতি হবে বলে মনে হয় না। আগের মতই উপরিউক্ত বিষয় সমূহ পরোক্ষভাবে প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অর্থাৎ নতুন করা আইনটি পুরোনো পদ্ধতিকে একটি আইনগত কাঠামোতে এনে আইন সম্মত করা হচ্ছে। এক কথায় এই আইনটি করার পরেও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে পূর্বের ন্যায় সংশয় থেকেই যাচ্ছে। 

জিএম কাদের বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির সংলাপে প্রস্তাব করেছিলাম আগামীতে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে তার জন্য উপরিউক্ত সংবিধানের বিধান অনুসারে একটি আইন করা দরকার। আইনের উদ্দেশ্য হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন গঠন ও সে অনুযায়ী যোগ্য ও মোটামুটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের বাছাই করার মাপকাঠি ও পন্থা সুনির্দিষ্ট করা। আমরা যোগ্যতার মাপকাঠি বলতে দায়িত্ব পালনের দক্ষতাকে বুঝিয়েছি। মোটামুটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বলতে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে নিরপেক্ষ ব্যক্তি নির্বাচনের কথা বুঝিয়েছিলাম। 

জাতীয় পার্টি সব সময় চায় অবাধ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন। কারণ, নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রবেশদ্বার। নির্বাচন সঠিক হলেই দেশে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হবে। জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে। সুশাসনের পরিবেশের উন্নয়ন হবে। সাধারণ মানুষ তার পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারলে গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদ পাওয়ার পথচলা শুরু হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিরোধী দলের কাজ হচ্ছে সরকারের ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বিরোধী দলের এর বাইরে কিছুই করার নেই। 

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, এসএম আব্দুল মান্নান, ফখরুল ইমাম এমপি, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এটিইউ তাজ রহমান, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, নাজমা আখতার এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুস সাত্তার মিয়া প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

কুমিল্লায় দুই ট্যাংকে পানি, তদন্ত শেষ হয়নি ১ মাসে

জিন সম্পাদনায় নতুন সাফল্য, ডায়াবেটিস রোগীদের আর ইনসুলিন নিতে হবে না

কনস্যুলেটে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হামলা, ব্যবস্থা নিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে চিঠি

ট্রাম্পের শুল্ক এড়াতে ১০৩টি বোয়িং বিমান কিনবে দক্ষিণ কোরিয়া

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত