Ajker Patrika

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: চার প্রশ্নের জবাব খুঁজছে মার্কিন পর্যবেক্ষণ মিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: চার প্রশ্নের জবাব খুঁজছে মার্কিন পর্যবেক্ষণ মিশন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন কমবেশি চারটি প্রশ্নের জবাব খুঁজছে। প্রশ্ন চারটি হলো—কীভাবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটে আনা যায়? নির্বাচনের আগে-পরে কী উপায়ে কত রকম অনিয়ম হয়? কীভাবে এসব অনিয়ম রোধ করা যায়? আর যুক্তরাষ্ট্রকে আগামী নির্বাচনে যদি পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে হয়, তা কেমন হওয়া উচিত? এসব প্রশ্নকে সামনে রেখে দুই দিন ধরে নানা মহলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন মিশনের সদস্যরা। গতকাল সোমবার তারা বৈঠক করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে। 

রাজধানীর বনানীতে শেরাটন ঢাকা হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগ থেকে মিশনকে বলা হয়েছে, বিএনপির পক্ষ থেকে সংবিধানসম্মত কোনো প্রস্তাব দেওয়া হলে ক্ষমতাসীন দলটি সমঝোতা করতে রাজি আছে। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমেরিকার প্রতিনিধি দল জানতে চেয়েছে বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের আপস আওয়ামী লীগ করবে কি না? জবাবে তাদের বলা হয়েছে, বিএনপির সব দাবি সংবিধান বহির্ভূত। দলটি যদি সংবিধানসম্মত কোনো প্রস্তাব দেয়, সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সমঝোতা করতে পারে। 

অবশ্য বৈঠকের পর সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার কোনো জায়গা নেই। তিনি বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়েছে বিএনপি সমঝোতা-আপসের কোনো পথ খোলা রাখেনি। বিএনপির দাবি সংবিধানসম্মত নয়। সংবিধান লঙ্ঘন করে তো আওয়ামী লীগ সমঝোতা করবে না। 

আলোচনায় বিএনপির দাবির বিষয়টি এসেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে, সমঝোতা ও আপসের মাধ্যমে সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় কি না? জবাবে আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়েছে, সমঝোতা ও আপসের জন্য সুযোগ থাকতে হয়। সেই সুযোগ বিএনপি রাখেনি, ব্লক করে দিয়েছে। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো মৃত একটি ইস্যুকে সামনে এনেছে। তাদের এক দফা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে। এসব দাবির মুখে কীভাবে আপস হবে? 

বৈঠকে নির্বাচনী ব্যবস্থা, নির্বাচনী পরিবেশ, প্রশাসনের ভূমিকা, বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা ও সাজা দেওয়া, রাজনৈতিক সুযোগ, সবার জন্য সমান সুযোগের সম্ভাবনা ও বিএনপির তোলা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান জানতে চায় মার্কিন প্রতিনিধিদল। এসব বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার পাশাপাশি আইনি যুক্তি তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের নেতারা। 

বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বসেছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। ছবি: আজকের পত্রিকা এদিকে বিএনপির সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলটির আলোচনায় ঘুরেফিরে কথা একটাই এসেছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তা হলো বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে কি না। আর হতে হলে কী কী প্রয়োজন, কীভাবে করা যায়? 

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে আমীর খসরু বলেন, বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক মানের বিশ্বাসযোগ্য অংশীদারত্বমূলক নির্বাচন হতে হবে। এর সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোনো ব্যবধান নেই বলে বিএনপি মনে করে। 

বিএনপির এই নেতা বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলকে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। 

বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধান প্রতিষ্ঠানসমূহের পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা মার্কিন মিশনকে বলা হয়েছে। 

ভোটের সময় পর্যবেক্ষক দল পাঠানো নিয়ে কথা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, তারা বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে এসেছে, জানতে এসেছে। সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলে তারা তাদের সিদ্ধান্ত নেবে। 

গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে গতকাল জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের জানান, বৈঠকে প্রতিনিধিদলটি আগামী নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করা যায়, আলোচনায় সে বিষয়ের জোর দিয়েছে। এ ছাড়া এর আগে এখানে নির্বাচনে কী ধরনের অসুবিধা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তারা নানা প্রশ্ন করেছে। 

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে ভালো হয়। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে, তা সুষ্ঠু হলো কি হলো না, তা বোঝা যায় না। তারা শেষ পর্যন্ত সবার অংশগ্রহণে কীভাবে নির্বাচন সুন্দরভাবে আয়োজন করা যায়, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে। 

বৈঠকে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচনপদ্ধতি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে দলটি। 

আগামী নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা আছে জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হলে দেশে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। 

জাতীয় পার্টি এখনো অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, তাঁর দল নির্বাচনে যাবে না, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি। অবস্থা দেখে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 
তবে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নিতে ‘গ্রহণযোগ্য’ প্রস্তাব এলে জাতীয় পার্টি বিবেচনা করবে বলে জি এম কাদের উল্লেখ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৌদি আরব থেকে মিসরের পথে সারজিস আলম

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ছবি: ফেসবুক
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ছবি: ফেসবুক

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম মিসরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আজ শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি এ কথা জানান।

পোস্টে সারজিস আলম লিখেছেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণে এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আমি গতকাল (৬ নভেম্বর) মিশরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি।’

সারজিস আরও জানান, সফরের অংশ হিসেবে প্রথম তিন দিন তিনি সৌদি আরবে এবং পরবর্তী তিন দিন মিসরে অবস্থান করবেন। এ সময় দুই দেশের প্রবাসী বাংলাদেশি, অভ্যুত্থানের সহযোদ্ধা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। এ ছাড়া মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর।

সফরের অংশ হিসেবে সারজিস মিসরের রাফা সীমান্তে শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত ফিলিস্তিনি নাগরিকদের জন্য স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমেও অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন।

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে সারজিস আলম লিখেছেন, ‘এই সফর যেন সফল হয় এবং মানবতার কল্যাণে কিছু করতে পারি—দু’আ চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জোট নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি: ভিত শক্ত করতে চায় এনসিপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৪৯
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

চলমান নির্বাচনী আমেজকে কাজে লাগিয়ে সারা দেশে সাংগঠনিক ভিত মজবুত করতে চাইছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে তৃণমূল/আঞ্চলিক পর্যায়ে যত দুর্বলতা আছে ভোটের বাদ্য বেজে ওঠার সুযোগে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে মনোযোগ দিচ্ছে দলটি। এ জন্যই জেলা-উপজেলাগুলোতে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে।

স্থানীয় পর্যায়ে অবস্থান শক্তিশালী করতে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি বাদে অন্য সব দলের নেতা-কর্মীদের জন্যই দরজা খোলা রাখছে এনসিপি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের একজন নেতা বলেন, ‘এই নির্বাচনে আমরা সর্বশক্তি দিয়েই লড়ব। কিন্তু আমরা পাখির চোখ করেছি মূলত এর পরের নির্বাচনকে। এবারের নির্বাচনে আমরা সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে চাই। শহরাঞ্চলগুলোতে এনসিপিকে সবাই চেনে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে আমরা দেখেছি দুর্বলতা আছে। এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য নির্বাচনী আবহটাই উপযুক্ত সময়।’

এনসিপির নেতারা বলছেন, বড় দলগুলোতে মনোনয়নবঞ্চিত অনেক নেতা রয়েছেন। এই নেতাদের অনুগত কর্মীর সংখ্যাও কম নয়। অন্য দলের বঞ্চিত এই নেতা-কর্মীরা চাইলে এনসিপির সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। দলটির প্রত্যাশা, এটি হলে আঞ্চলিক পর্যায়ে এনসিপির পালে হাওয়া লাগবে।

নির্বাচনের জন্য গত বৃহস্পতিবার মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে এনসিপি। আওয়ামী লীগ ও তাদের একসময়ের মিত্র জাতীয় পার্টি বাদে যেকোনো দলের ‘সৎ ও যোগ্য নেতারা’ এনসিপির মনোনয়ন পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেছেন, বিএনপি ও জামায়াতে অনেকে আছেন; যারা পার্টি অফিসে ‘ঠিক জায়গায় নক করতে না পারায়’ মনোনয়ন পাননি। তাঁরা সৎ ও যোগ্য হলে এনসিপি তাঁদের স্বাগত জানাবে।

এনসিপি জোটবদ্ধ হয়ে নাকি এককভাবে নির্বাচন করবে তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম আদীব। তিনি বলেন, ‘এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। প্রার্থিতা নিয়েও এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি।’

১৩-১৪ নভেম্বর এনসিপির নির্বাহী কাউন্সিলের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনী জোট ও প্রার্থী তালিকা নিয়ে সেখানে সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, এখনো এনসিপি সব পথই খোলা রেখেছে। জামায়াত ও বিএনপি উভয় দলই এনসিপিকে জোটসঙ্গী করতে চায়। তবে দলের নির্বাহী কাউন্সিলের অনেক নেতাই এককভাবে নির্বাচন করার পক্ষে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঔপনিবেশিক শাসনকাঠামো উৎখাত না করায় অভ্যুত্থান বিপ্লবে রূপ নিতে পারেনি: আরিফ সোহেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ শুক্রবার রাজধানীর সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে মুক্তিফোরাম আয়োজিত ‘সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার ভ্রান্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ শুক্রবার রাজধানীর সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে মুক্তিফোরাম আয়োজিত ‘সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার ভ্রান্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঔপনিবেশিক শাসনকাঠামো উৎখাত না করায় অভ্যুত্থান বিপ্লবে রূপ নিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল। আজ শুক্রবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে মুক্তিফোরাম আয়োজিত ‘সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার ভ্রান্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

আরিফ সোহেল বলেন, ‘১৮৫৭ থেকে ৭১, ৭৫ এমনকি ২৪-এও আমরা সিপাহি-জনতার একটি বিপ্লবী ঐক্য দেখতে পাই; কিন্তু বিদ্যমান কলোনিয়াল শাসন ও শোষণকাঠামোকে পুরোপুরি উৎখাত না করায় এই ঐক্য অভ্যুত্থান থেকে বিপ্লবে রূপ নিতে পারেনি। ৭ নভেম্বরে হাজির হওয়া সিপাহি-জনতার লড়াইকে সত্যিকার বিপ্লবে রূপ দিতে হলে রাজনৈতিক সচেতনতা নির্মাণ জরুরি।’

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কবি, চিন্তক ও অ্যাকটিভিস্ট সাঈদ উজ্জ্বল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতাকে রাষ্ট্রীয় স্থিতির প্রতীক হিসেবে দেখানো হলেও বাস্তবে এটি জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে। প্রতিটি গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে এই ধারাবাহিকতার নামে শাসকগোষ্ঠী পুরোনো রাষ্ট্রকাঠামোই টিকিয়ে রেখেছে। ফলে রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক পরিবর্তন না হয়ে কেবল মুখোশ পাল্টেছে, গণসার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ আটকে গেছে।

সভায় জুলাই যোদ্ধাসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য দিয়ে ঐক্যে ফাটল ধরাবেন না: জামায়াতের উদ্দেশে এ্যানি

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুরে জেলা শ্রমিক দলের পরিচিত সভায় শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। ছবি: আজকের পত্রিকা
লক্ষ্মীপুরে জেলা শ্রমিক দলের পরিচিত সভায় শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। ছবি: আজকের পত্রিকা

জামায়াত নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, পক্ষে-বিপক্ষে কঠিন বক্তব্য দিয়ে ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরাবেন না। এই মুহূর্তে ঐক্যে ফাটল ধরলে দেশের জন্য ও নির্বাচনের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে। আর এই সুযোগ পাবে ফ্যাসিবাদেরা। তাদের এই সুযোগ দেওয়া হবে না, দেওয়া যাবে না।

আজ শুক্রবার শহরের নিজ বাসভবনে জেলা শ্রমিক দলের পরিচিত সভায় যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের সুযোগ জাতীয় রাজনীতিতে রয়েছে। সবাই মিলে সে সুযোগ নিয়ে কাজ করি। আগামী নির্বাচনকে ভন্ডুল ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। যেন দেশে নির্বাচন না হয়, সে জন্য হাসিনা ও তার দল দেশে-বিদেশে বসে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। চক্রান্ত করছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত কাজে আসবে না। সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

এ্যানি আরও বলেন, হাসিনা রাজনীতি করেননি, করেছেন দুর্নীতি ও লুটপাট। তাঁরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুঃশাসনে জড়িত ছিলেন।

দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন, গুম ও খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। হাসিনা দেশের মানুষকে জিম্মি করে নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। এ কারণে দলের শত্রু, জনশত্রু ও গণশত্রুতে পরিণত হতে হয়েছে তাঁদের। এত কিছুর পরও ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি তাঁরা। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

বিএনপির এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গত ১৭ বছরে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে শ্রমিকেরাও নির্যাতন, গুম ও খুন থেকে বাঁচতে পারেননি। তাঁদের ওপর কঠিন নির্যাতন করা হয়েছে। নতুন একটা বাংলাদেশ গড়তে তারেক রহমান নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এ দেশে আওয়ামী লীগ আর রাজনীতি করতে পারবে না। কারণ, তাদের রাজনীতি এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

এ্যানি আরও বলেন, ‘ইদানীং বিভিন্ন স্থানে দুই-চারজন মিলে হঠাৎ একটি মিছিল বের করে। আবার মিনিটের মধ্যে উধাও। এটা সাময়িক, এটা হবে না। এদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে না পারে। সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’ আগামী নির্বাচনে সবাইকে মিলে ধানের শীষের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে আহ্বান জানান তিনি।

অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম শাহীনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সাহাবুদ্দিন সাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান, বিএনপি নেতা ওয়াহিদ উদ্দীন চৌধুরী হ্যাপী, অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান, জজকোর্টের প্রসিকিউটর আহমদ ফেরদৌস মানিক, শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি আবুল হাশেম, জেলা যুবদলের সভাপতি আবদুল আলীম হুমায়ুন, সাধারণ সম্পাদক রশিদুল হাসান লিংকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন কবির স্বপন, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন সোহেল হোসেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত