Ajker Patrika

আলুচাষিদের বিজয়

সম্পাদকীয়
আলুচাষিদের বিজয়

কুড়িগ্রামে আলুচাষিরা হিমাগারমালিকদের হারিয়ে দিয়েছেন। হঠাৎ করেই আলুর জন্য হিমাগার ভাড়া বস্তাপ্রতি ৩৫০ টাকার পরিবর্তে কেজিপ্রতি ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করেছিলেন তাঁরা। কৃষকেরা সেই সিদ্ধান্তের তুমুল প্রতিবাদ করেছেন। আন্দোলনের মুখে সব পক্ষ এক হয়ে বসে আগের দামই পুনর্বহাল করে।

দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে নাকি এপ্রিলে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তার অন্ত নেই। নির্বাচনে আনুপাতিক হারে সংসদের আসন নির্দিষ্ট হওয়ার দাবি যেমন উঠেছে, তেমনি বিচার-সংস্কার ইত্যাদি নিয়েও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভাবনায় দূরত্ব আছে। এ রকম উত্তপ্ত রাজনৈতিক অবস্থার মধ্যে দেশের ছোট একটি জেলার আলুচাষিদের সংগ্রামের কথাটা কেন উঠে এল, তা নিয়েই দুটি কথা বলতে হচ্ছে।

আন্দিজ পর্বতমালার পেরু ও বলিভিয়ায় আদি নিবাস আলুর। লাতিন আমেরিকায় ইউরোপীয়, মূলত স্পেনের উপনিবেশবাদের প্রভাব পড়তে শুরু করে পঞ্চদশ শতাব্দীতে। স্পেনীয়রাই ইউরোপে নিয়ে আসে আলু। প্রথমে তা মানুষের প্রাত্যহিক খাবারে পরিণত হয়নি। কিন্তু সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপে খাদ্যসংকট দেখা দেওয়ার পর আলু এই অঞ্চলেও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। ভারতবর্ষে আলু আসে পর্তুগিজ উপনিবেশবাদীদের হাত ধরে। গোয়া এবং মুম্বাই অঞ্চল থেকে তা ছড়িয়ে যায় গোটা ভারতবর্ষে। এই ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি ইংরেজরাও করে।

বহুদূর লাতিনের ইনকা সভ্যতার ফসল আলু এখন বিদেশ থেকে আমদানি করা সবজি বলে কেউই মনে করে না। আলু একটি জনপ্রিয় খাবার হয়ে উঠেছে এই উপমহাদেশেও।

নিরামিষ এবং আমিষ—দুই ধরনের খাবারের সঙ্গেই আলু মানিয়ে যায়।

ইতিহাসের এই তথ্যগুলো চ্যাটজিপিটি বা গুগলের দ্বারস্থ হলে যে কেউ এখন পেতে পারেন। ডিজিটাল দুনিয়া সেই সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু তাতে আলুচাষিদের দুর্ভাগ্যের কোনো সুরাহা হয়নি। দেশের অন্য সব আলোচনার মধ্যে কৃষকের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। অথচ, যে কেউ জানে, কৃষকের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফলে উৎপাদিত খাদ্যই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। আলু চাষ সহজেই করা যায় এবং আলুর চাহিদা থাকে বছরব্যাপী—এই দুই অনুকূল পরিবেশের মধ্যে ঝড়ের তাণ্ডব নিয়ে আসে আলুর দাম। আলু বাজারে উঠতে থাকলে অতি দ্রুত দাম পড়ে যায়। তাতে সিন্ডিকেটের হাত থাকে। ফলে কৃষকের পক্ষে উৎপাদন খরচ উঠিয়ে আনাও হয়ে পড়ে প্রায় অসম্ভব। ঋণ করে চাষ করা হলে তো কৃষক চোখে ধাঁধা দেখতে শুরু করেন। এ সময় আলু উঠলেই যদি উৎপাদন খরচের কথা বিবেচনা করে সরকার ন্যূনতম আলুর দাম নির্ধারণ করে দিত, তাহলে আলুচাষিরা কিছুটা নিশ্চিন্তে থাকতে পারতেন।

কুড়িগ্রামের হিমাগারমালিকেরা চাষিদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন, এ এক আনন্দ সংবাদ। এই ছোট ঘটনাটি সারা দেশে আলুচাষিদের নিয়ে গভীর পরিকল্পনা এবং তাঁদের স্বার্থ রক্ষা করে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করার কাজে সরকারকে উদ্দীপিত করলে ভালো হয়।

সরকার কৃষিক্ষেত্রের দিকে বাড়তি নজর দিলে তা পুরো দেশের জন্যই কল্যাণকর হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তোমাদের যে কিছু করিনি, তা-ই ভাগ্য—ডাকাতির সময় দুই কিশোরীকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা

বিকেলে চাঁদাবাজি নিয়ে লাইভ, রাতে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা

সাধুর বেশে এসে সাবেক স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা

স্টার্টআপ থেকে স্মার্ট সিটি: যেভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগ টানছে বাংলাদেশ

বরিশাল-১: স্বপন-কুদ্দুসের দ্বন্দ্বে নির্বাচনের আগে দলে অস্থিরতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত