Ajker Patrika

কিশোরদের যৌনক্ষুধা

সম্পাদকীয়
কিশোরদের যৌনক্ষুধা

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে পাঁচ বছর বয়সী যে শিশুটি গত বৃহস্পতিবার দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে, সে বেঁচে আছে বটে; কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিশুটির অবস্থা স্থিতিশীল ছিল না। চিকিৎসকেরা শিশুটির শুশ্রূষা করছেন। এই শিশুকে যারা ধর্ষণ করেছে, তাদের সবাই কিশোর বয়সী। প্রতিবেশীর বাড়িতে খেলতে গেলে প্রতিবেশী তিন কিশোর খেলার নাম করে শিশুটিকে একটি পরিত্যক্ত ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে তারা শিশুটিকে ধর্ষণ করে। কান্নার শব্দ পেয়ে শিশুটির মা সেই ঘরে প্রবেশ করলে তিন কিশোর পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়।

ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। শিশুটির পরিবারের পাশে দাঁড়াবার মতো কেউ নেই। স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভয় দেখিয়ে বলছেন, এ ব্যাপারে যেন কথা বলা না হয়। পুলিশ তিন কিশোরকে আটক করেছে বটে, কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে এই অপরাধ ঢাকা পড়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা এড়ানো যাবে না।

কিশোর বয়সীদের মধ্যে ধর্ষণের প্রবণতা বাড়ছে কেন, তা নিয়ে সমাজতাত্ত্বিকেরা নিশ্চয়ই ভাবছেন। মোটা দাগে যা দেখা যায়, তার প্রধানতম হলো, আমাদের শিশু-কিশোরেরা এখন পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে না, তাদের মধ্যে গড়ে উঠছে না মূল্যবোধ আর শৃঙ্খলা। স্মার্টফোন ব্যবহারের যোগ্যতা ছাড়াই এই যন্ত্রটি সবার হাতে এসে গেছে, তাই ইন্টারনেটে ভালো কিছু দেখার পাশাপাশি পর্নোগ্রাফিও দেখছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তাতে অনৈতিক ও অস্বাস্থ্যকর যৌন আকাঙ্ক্ষা জাগছে তাদের মনে। পরিবারে এবং শিক্ষালয়ে শিশু-কিশোরের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খুব একটা ভাবা হয় না। ফলে দেশের কোনখানে কোন শিশু বা কিশোর বিকৃতির চরমে পৌঁছে কোনো অঘটনা ঘটানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, তা নির্ণয় করা কঠিন।

সন্তানদের সঙ্গে মা-বাবা বা পরিবারের অন্য সদস্যরা আরও বেশি সময় কাটালে, তাদের মানসিক কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কি না, সেদিকে খেয়াল করলে এবং বয়সোপযোগী যৌনশিক্ষা দিলে এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার একটা পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। শিক্ষালয়ে নৈতিক শিক্ষা, সহমর্মিতা, লিঙ্গসমতা ও শিশু অধিকার নিয়ে শিক্ষকেরা খোলামেলা কথা না বললে শিশু-কিশোরদের মধ্যে নৈতিক ভিত্তি কীভাবে গড়ে উঠবে? স্মার্টফোন কোন বয়স থেকে শিশু-কিশোরদের হাতে দেওয়া যায়, তা নিয়ে অভিভাবকেরা ভাবতে পারেন। ইন্টারনেটে শিশু-কিশোর কী দেখছে, তা মনিটর করাও জরুরি। রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের দুরাচারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে।

সাতক্ষীরার এই তিন কিশোর তাদেরই প্রতিবেশী এক শিশুকে ধর্ষণ করেছে। এই মানসিকতার পেছনে উদ্দীপক কী ছিল, তা সমাজ-গবেষকদের গবেষণার বিষয় হতে পারে। সবকিছু ভুলে জিপিএ-৫-এর দিকে ছুটে চলার যে প্রবণতা শুরু হয়েছে, তাতে আর সব গোল্লায় গেলেও কারও কিছু আসে-যায় না। ফলে তাতে সামাজিক বন্ধন শিথিল হয়, পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলে, অপরাধের মাত্রা না বুঝলেও কিছু যায়-আসে না। এই ধর্ষণের ঘটনায় শাস্তি হওয়া জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত