Ajker Patrika

বাজারে আগুন

সম্পাদকীয়
বাজারে আগুন

গরিব মানুষ কালেভদ্রে আমিষ খায়। গরু-ছাগল-মুরগি-হাঁস নিয়ে আমাদের যে মাংসের বাজার গড়ে উঠেছে, সেখানে ঢুঁ মারার সাহস খুব কম দরিদ্র মানুষেরই আছে। তাই বলে তারা স্বচ্ছন্দে মাছের বাজারে ঢুকে পড়ে, এমনও নয়। অল্প কয়েকটি মাছ বাদে সব মাছেরই কেজি ৭০০-৮০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আর মহান ইলিশ মাছ তো তার আভিজাত্য দেখিয়েই যাচ্ছেন নিয়ম করে। ফরাসি বিপ্লবের মতো অভিজাত মাছটির আভিজাত্য টেনেটুনে নামিয়ে খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে সাম্য সৃষ্টির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইলিশ নামে একটি মাছ আছে, বাজারে তা দেখাও যায়, কিন্তু তা কেনা যায় না—এই বিশ্বাসে পোক্ত হয়ে গেছে বহু মানুষ।

বাকি ছিল শাকসবজি। কোনো না কোনোভাবে শাকসবজি দিয়ে এক থালা ভাত খাওয়ার যে সুযোগ ছিল খেটে খাওয়া মানুষের, অগ্নিমূল্যের কারণে এখনো সে সুযোগ আছে কি না, তা নিয়ে ভাবতে হবে। দু-একটি সবজি ছাড়া সব সবজির দামই নাকি তিন অঙ্কে গিয়ে ঠেকেছে।

ব্রয়লার মুরগি বা ডিম সাধারণ মানুষের জন্য আমিষের ভালো উপায়। সেগুলোর দাম নাগালের মধ্যে থাকা উচিত। আমাদের দুর্ভাগ্য, কখন কেন কোন পণ্যের দাম কমে বা বাড়ে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আগে থেকে তা অনুমান করা যায় না। পেঁয়াজের দাম এই সময় থেকে অক্টোবর পর্যন্ত একটু চড়া থাকে, এ কথা বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। সে ক্ষেত্রে এই সময় পেঁয়াজ ব্যবহার একটু কমিয়ে দিয়ে অবস্থার সঙ্গে পাল্লা দেয় মানুষ। আমদানির মাধ্যমে ভোক্তার চাহিদা মেটানোর কথাও ভাবে সরকার। শুল্ক কমিয়ে কিংবা আমদানি দ্রুত করে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। কিন্তু একযোগে প্রায় সব সবজির দাম তিন অঙ্কে পৌঁছালে সংসারের বাজেট ব্যবস্থায় ধস নামবেই। করণীয় কী, সেটাই হলো প্রশ্ন।

অতীতে বিভিন্ন সময় আমরা দেখেছি, বাজারে অগ্নিমূল্যের প্রতিকার হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ভাতের বদলে আলু খাওয়ার উপদেশ দিয়েছেন, চড়া দামের খাদ্যপণ্যের জায়গায় কম দামের খাদ্যপণ্য খেতে, এমনকি খাওয়া কমিয়ে দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু মূল যে কাজ, কৃষকের সঙ্গে ভোক্তার দূরত্ব কমিয়ে আনার তেমন কোনো চেষ্টা চোখে পড়ে না। ফলে মুখে হম্বিতম্বি করলেও মাঠ থেকে বাজার পর্যন্ত আসা পণ্যগুলোর ওপর থেকে সিন্ডিকেট অথবা মধ্যস্বত্বভোগীর সংশ্লিষ্টতা কমানো যায়নি।

অর্থনীতির নিয়মে চাহিদা ও জোগানের একটা নিবিড় সম্পর্ক থাকে। সে সম্পর্ক নস্যাৎ করে সুকৌশলে প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করা যায়। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে টু পাইস কামানোর প্রবণতা দুর্লক্ষ্য নয়। এখন আরও একটি সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। মানুষের আয় বাড়ছে না, কিন্তু ব্যয় বাড়ছে। এ রকম অবস্থায় শুধু বাজেট সংকোচনের মাধ্যমে

পার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার মধ্যে রাখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, সেটাই কাঙ্ক্ষিত। তারা কী ভাবছে, সে কথা জনগণকে সুস্পষ্টভাবে জানালে জনগণ স্বস্তি পেত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত