Ajker Patrika

ফুটবলে নতুন স্বপ্নের সূচনা

সম্পাদকীয়
ফুটবলে নতুন স্বপ্নের সূচনা

বাংলাদেশ ফুটবলে দীর্ঘদিন ধরে এক অপূর্ণতা ছিল—আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচিত কোনো ফুটবলারের অভাব। সেই শূন্যতা এবার কিছুটা হলেও পূরণ করতে চলেছেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী। ইংল্যান্ডের শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে খেলা এই মিডফিল্ডার যখন বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠে নামবেন, তখন শুধু একটি খেলাই হবে না, হবে নতুন এক স্বপ্নের সূচনা।

হামজার আগমন কেবল একজন ফুটবলারের ফেরাই নয়, এটি দেশের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এক অভূতপূর্ব অনুপ্রেরণা। সিলেট বিমানবন্দর থেকে হবিগঞ্জের স্নানঘাট গ্রাম পর্যন্ত যে অভ্যর্থনা তিনি পেয়েছেন, তা বোঝায় বাংলাদেশের মানুষ কী পরিমাণ ভালোবাসে ফুটবলকে, কী পরিমাণ তৃষ্ণার্ত একটি সফল দলের জন্য। তাঁর আগমনে যেন গ্রাম, শহর, পুরো দেশ এক নতুন আশায় বুক বাঁধছে—একদিন বাংলাদেশের ফুটবলও মাথা তুলে দাঁড়াবে।

আশির দশকে সাফ অঞ্চলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা, নব্বইয়ের দশকে আবাহনী-মোহামেডানের উত্তেজনা, আর ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর থেকে নতুন করে বড় কোনো সাফল্য আসেনি। কিন্তু ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা কখনো কমেনি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যখনই কেউ দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছে, মানুষ তাঁকে গ্রহণ করেছে উন্মুক্ত হৃদয়ে। হামজার বেলায় সেটির চূড়ান্ত রূপ দেখা গেল—তাঁকে এক ঝলক দেখার জন্য হাজারো মানুষের ঢল, স্লোগানে মুখরিত স্টেডিয়াম, গ্রামজুড়ে উৎসবের আবহ।

কিন্তু এই আবেগ শুধু সাময়িক উদ্দীপনা হয়ে থাকলে চলবে না। হামজার আগমনে যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে, সেটি কাজে লাগাতে হবে। আমাদের ফুটবলকাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে, ঘরোয়া লিগের মানোন্নয়ন করতে হবে, পেশাদারত্ব আনতে হবে ফুটবলারদের প্রস্তুতিতে। শুধু হামজার ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ ফুটবলের উন্নয়ন সম্ভব নয়, প্রয়োজন সামগ্রিক পরিকল্পনা ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ।

হামজা যেমন বলেছিলেন, ‘আমাদের বড় স্বপ্ন আছে, আমরা প্রোগ্রেস করতে পারব।’ তাঁর এই আত্মবিশ্বাস জাতীয় দলের সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের ফুটবল প্রশাসন, কোচিং স্টাফ, ক্লাবগুলো—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের তরুণ ফুটবলারদেরও অনুপ্রাণিত হতে হবে, যেন ভবিষ্যতে আরও অনেক হামজা উঠে আসে আমাদের মাঠ থেকে, ইউরোপ থেকে, কিংবা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে।

বাংলাদেশ ফুটবলের সামনে এখন বড় এক পরীক্ষা ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ। হামজার নেতৃত্বে দল কেমন পারফর্ম করবে, সেটি দেখার অপেক্ষায় সবাই। ফুটবল পুরোপুরি টিমওয়ার্কের ব্যাপার। একজন অসাধারণ খেলোয়াড় পুরো দলকে অনুপ্রেরণা দিতে পারেন, আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করে তুলতে পারেন। কিন্তু প্রত্যেক খেলোয়াড়ের কুশলী শৈল্পিক খেলার মাধ্যমে টিমওয়ার্ক গড়ে তোলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। হামজা আমাদের ফুটবলের জন্য প্রত্যাশিত সেই দাবি পূরণ করবেন বলেই আমাদের আশা।

শুধু এক ম্যাচ বা এক টুর্নামেন্ট নয়, আমাদের লক্ষ্য হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি। বাংলাদেশকে ফুটবলের একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে হামজার মতো খেলোয়াড়েরা শুধু আসা-যাওয়ার গল্প না হয়, বরং বিশ্বমঞ্চে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে নিয়মিতভাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত