Ajker Patrika

আবারও মাজারে হামলা

সম্পাদকীয়
আবারও মাজারে হামলা

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় আবারও একটি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ৪ মার্চ রাতে মাসকা বাজারসংলগ্ন ‘হজরত শাহ নেওয়াজ ফকির ওরফে ল্যাংটা পাগলার মাজারে’ ওরস আয়োজনের প্রস্তুতির মধ্যেই স্থানীয়‘তৌহিদি জনতা’ মিছিল নিয়ে হামলা চালায়। তোরণ ভাঙচুরসহ ওরস পণ্ড করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে ৫ মার্চ আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

মূলত আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে এ ধরনের ঘটনার সূত্রপাত হয়। মাঝখানে সামাজিকমাধ্যমে এবং বিভিন্ন প্রতিবাদ সভার কারণে মাজারে হামলা কিছুটা কমে গিয়েছিল। এরপর কিছুদিন আগে টাঙ্গাইলে একইভাবে লালন উৎসব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কিছু শর্তের মাধ্যমে সে অনুষ্ঠান আবারও অনুষ্ঠিত হয়। তার পর থেকে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। সব ক্ষেত্রেই বর্তমান সরকার পুলিশ বাহিনীর ভূমিকার নিষ্ক্রিয়তার অজুহাত তুলে ধরে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, কোনো জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল সরকার এ ধরনের কথা বলে দেশের পরিস্থিতিকে নাজুক করে রাখতে পারে না।

এ ধরনের ঘটনা সমাজের ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে চিত্রায়িত করে। এই ঘটনাটি শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বাধা নয়, বরং ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণুতার একটি স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, মাজার কমিটি দীর্ঘদিন ধরে বার্ষিক ওরস পালন করে আসছে। এবার রমজান মাস থাকায় তারা শুধু দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিল। কিন্তু স্থানীয় ‘তৌহিদি জনতা’ তাদের দাবি উপেক্ষা করে ওরস আয়োজন করায় ক্ষুব্ধ হয় এবং হামলা চালায়। তাদের দাবি, মাজারে ‘গান-বাজনা, নাচানাচি ও মাদকসেবন’ চলবে না।

এ ধরনের ঘটনায় ‘তৌহিদি জনতা’র বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেও তাদের কেন চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলো না?

বাংলাদেশের সংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিধান আছে। কিন্তু একশ্রেণির উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী নিজের মতের বাইরে অন্য গোষ্ঠীকে সহ্য করতে পারছে না। সৃষ্টিকর্তার বিচারের দায়িত্ব তারাই গ্রহণ করছে। এতে তারা নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের যে অবমাননা করছে, সে বোধও তাদের মধ্যে কাজ করছে না।

সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ ধরনের কাজ করতে পারে না। কিন্তু ধর্মীয় স্বার্থের জায়গা থেকে কিছু বিপথগামী মানুষ এদের উসকে দিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করছে, সে বিষয়টা সচেতনতা দিয়ে বোঝানো গেলে এ ধরনের উগ্রতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না।

আমাদের দেশে বিভিন্ন ধর্ম ও মতের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে আসছে। এই ঐতিহ্য বজায় রাখতে হলে আবার নতুন করে ধর্মীয় সহাবস্থানের সংস্কৃতি নির্মাণ করতে হবে।

উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো সমাজে বিভেদ ও অস্থিরতা তৈরি করতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা আরও জোরালো করতে হবে।

কেন্দুয়ার ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিষ সমাজকে কতটা বিষাক্ত করে তুলতে পারে। এই বিষ রুখতে না পারলে আমরা একটা মানবিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারব না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত