Ajker Patrika

অর্থনীতি যেন বসে না পড়ে

সম্পাদকীয়
অর্থনীতি যেন বসে না পড়ে

বাজেট নিয়ে অনেক তো কথা হলো। সংসদ থেকে রাজপথ। সরকার ও বিরোধী দল, প্রেসক্লাব, পত্রিকা, টেলিভিশন সর্বত্র অনেক আলোচনা, বিতর্ক, সমালোচনা। তাতে খুব যে কাজ হয়েছে, তা বলা যাবে না। যত সমালোচনাই হোক, প্রস্তাবিত বাজেটের খুব বড় কোনো পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। আর এসবের মধ্য দিয়েই আগামী অর্থবছরের বাজেটটি আজ সংসদে পাস হচ্ছে। তাই পাসের ঠিক আগমুহূর্তে কী হলো, কেমন হলো, বড় বাজেট, ছোট বাজেট—এসব বলে লাভ নেই। এখন যা বলতে চাই সেটি হচ্ছে, যে বাজেটই দিক না কেন, তা যেন বাস্তবায়ন হয়—সেদিকে নজর দিতে হবে সরকারকে।

সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে প্রতিবারই রীতি মেনে বাজেট দেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অঙ্কের হিসাব মেলানো বাজেট। আগেরটি থেকে আকারে বড় ব্যয় ও আয়ের ফর্দ। একটি বড় অঙ্কের অর্থ নেওয়া হয় ঘাটতি অর্থায়ন থেকে। আরেকটি বড় বরাদ্দ থাকে উন্নয়ন বাজেটে। প্রতিটি খাতে যেন সরকারের তদারকি থাকে, সেটিই দেখার বিষয়। চলতি বাজেটটি ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষ করে উন্নয়ন বাজেট শেষ মুর্হূতে এসে তড়িঘড়ি করে বাস্তবায়ন দেখানো হয়। তখন কাজের মান খারাপ হয়।

নানান অনিয়মের পর একটি গ্রহণযোগ্য বাস্তবায়ন হার দেখানোর মধ্য দিয়ে ওই বাজেটটি শেষ হয়। তাই আসছে অর্থবছরে বরাদ্দে কঠোর হতে হবে। বিশেষ করে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দেওয়া, অনাবশ্যক বিদেশভ্রমণ পরিহার করা ইত্যাদি বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। আর প্রকল্পের কাজের গুণগত মান যেন বজায় থাকে, সরকারি টাকার যাতে অপচয় না হয়, তা-ও দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে।

রাজস্ব আয়েও বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। নতুন অর্থবছরে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা হলেও করোনাকালে এটিও অনেক বড় লক্ষ্যমাত্রা। তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নতুন করদাতাদের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। যারা করের জালে নেই, যেসব প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো ভ্যাট দেয় না, আর পণ্য আমদানিতে যাতে মিথ্যা ঘোষণায় রাজস্ব ফাঁকি দিতে না পারে—এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।

পুরোনো করদাতারা স্বাভাবিকভাবেই কর দেবেন। তাদের পেছনে বেশি না ছুটে কেউ ফাঁকি দেয় কি না, সেটি দেখতে হবে। অসংখ্য করদাতা বিপুল আয় করলেও রিটার্ন দেন না। তাঁদের নজরদারিতে আনতে হবে। মোটাদাগে করের নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে হবে। এভাবে যতটা পারা যায়, রাজস্বের লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করতে হবে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, করোনাকালে রাজস্ব আয় ঠিকমতো না হলেও অর্থনীতি সচল রাখা, সরকারি-বেসরকারি কর্মকাণ্ডে চাঞ্চল্য আনা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সুরক্ষা দেওয়া, বেকারদের কাজের সুযোগ তৈরি ও দরিদ্রদের সহায়তা করাসহ নানামুখী কর্মকাণ্ড চালু রাখতে হবে, যাতে অর্থনীতিতে স্থবিরতা না আসে। সব মিলিয়ে অর্থনীতির চলমান গতি ধরে রাখতে হবে। তাহলেই করোনার মধ্যেও অর্থনীতি বসে পড়বে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত