Ajker Patrika

ঘর পুড়িয়ে উত্তাপ?

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২১, ০৯: ৩৭
ঘর পুড়িয়ে উত্তাপ?

করোনাভাইরাস মহামারিতে ঘরবন্দী মানুষ, বৃত্তবন্দী জীবন। মাঝে মাঝে সংক্রমণ কমলে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্লথগতিতে কিছুটা হলেও কাজকর্ম চলে, সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে আবারও বন্ধ হয়ে যায়। গত ১৪ মাসের জীবনচিত্রটা এমনই। কিন্তু সবচেয়ে বিপদ ঘটেছে শিক্ষাক্ষেত্রে। এক দিনের জন্যও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলেনি। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বা বেসরকারি স্কুল-কলেজ অনলাইনভিত্তিক পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও সাধারণ শিক্ষাক্ষেত্রের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই এই অনলাইনেরও বাইরে ছিল। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমে অংশ নেয়নি।

এই দীর্ঘ সময় শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীরা যেমন বিপাকে পড়েছেন, তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে। তার ওপর এমন কিছু ঘটনা ঘটছে, যা একেবারেই অনভিপ্রেত।

১২ জুলাই ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে রাত ১২টায় নৈশপ্রহরীকে বেঁধে রেখে চারটি শ্রেণিকক্ষে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন দেওয়ায় দ্রুতই আসবাবসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তার আগে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা ভেঙে কম্পিউটার,  ল্যাপটপ,  প্রজেক্টরসহ অফিসের কাগজপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

জানা যায়, এলাকার দুই ব্যক্তির সঙ্গে ১০ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিল বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির। একাধিকবার মীমাংসার জন্য বসা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে বিদ্যালয়টিই আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হলো।

আরেকটি ঘটনা। আজকাল স্থানের সংকীর্ণতার কারণে শিশুরা খেলার মাঠ পায় না। শহরের স্কুলগুলোতে মাঠ নেই বললেই চলে। শুধু গ্রামের স্কুলগুলোতেই মাঠের অস্তিত্ব এখনো আছে। সেই মাঠ যদি চাষাবাদের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়, যেমনটা হয়েছে ঝালকাঠি জেলার একটি উপজেলায়, তাহলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক এবং মানসিক চর্চার জায়গাটা নিদারুণ সংকটে পড়বে।

কথা হলো, শিক্ষাঙ্গন না খুললে কি তাতে আগুন দিতে হবে? বা স্কুলের মাঠ ভাড়া দিয়ে হালচাষ করতে হবে? শীত নিবারণের জন্য আগুনের উত্তাপ দরকারি হলেও ঘরে আগুন দিয়ে নিশ্চয়ই কেউ উত্তাপ নিতে চায় না। বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করা, আগুন দেওয়া, ভাঙচুর করা–এসব আমাদের সামাজিক অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ, নৈতিকতার অবক্ষয়।

বিদ্যালয়ের জায়গায় বিদ্যালয় থাকুক, মাঠের জায়গায় মাঠ থাকুক। টিকা কার্যক্রম দ্রুত হলে শিগগিরই করোনার প্রকোপ কমে যাবে, খুলে যাবে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠবে শিক্ষাঙ্গন।

জমি,  জায়গা,  ভবন,  মাঠ ইত্যাদি নিয়ে সমস্যা থাকলে অন্যভাবে তার সমাধান হতে হবে, একেবারে শিক্ষাঙ্গনের বাইরে। কিন্তু কোনোক্রমেই শিক্ষাঙ্গনকে আঘাত করা যাবে না, ধ্বংস করা যাবে না।

যাঁরা আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন, যাঁরা স্কুলমাঠ চাষের জন্য ভাড়া দিয়েছেন,  তাঁদের দ্রুত বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আর মনে রাখতে হবে, এসব অপরাধ মোটেও সামান্য নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

আদালতের বিচারকাজে বাধা দেওয়ায় আইনজীবীর দণ্ড, ক্ষমা চেয়ে পার

‘ফের ধর্ষণচেষ্টার ক্ষোভে’ বাবাকে খুন, ৯৯৯-এ কল দিয়ে আটকের অনুরোধ মেয়ের

আ. লীগের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের বিএনপির সদস্য হতে বাধা নেই: রিজভী

১৫ স্থাপনায় পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আকাশেই ধ্বংসের দাবি ভারতের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত