Ajker Patrika

এসসিও বৈঠক

সম্পাদকীয়
এসসিও বৈঠক

সেপ্টেম্বরের বাংলাদেশ অনেক ধরনের প্রশ্ন সামনে রেখে শুরু হয়েছে। এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটছে যে, তা নিয়ে মন্তব্য করার আগেই নতুন কোনো ঘটনা এসে আগের ঘটনাকে ঢেকে দিচ্ছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, কোন ঘটনা কোন দিকে গড়ায়, তা এতটাই অনিশ্চিত যে, অকারণে মন্তব্য করা হলে পাঠক বিভ্রান্ত হতে পারে। তাই এ সময়টিতে বিশ্বরাজনীতিতে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি নিয়েই কিছু কথা বলা ভালো।

এবারের এসসিও বৈঠকে বিশ্বের অনেক শীর্ষ নেতা অংশ নিয়েছেন। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এসসিও মানে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন। এটি একটি আঞ্চলিক সংস্থা, যা দেশগুলোর রাজনীতি, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে গড়ে উঠেছে। এই সংস্থার উল্লেখযোগ্য সদস্যদেশের মধ্যে রয়েছে চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান। প্রতিবছর কোনো সদস্যরাষ্ট্রে এই শীর্ষ বৈঠক আয়োজিত হয়। এবার হলো চীনের তিয়ানজিন শহরে।

বিশ্বরাজনীতিতে এখন যে ওলটপালট চলছে, তাতে রাজনৈতিক গতিধারা কোন দিকে গড়াবে, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ঝড়ের গতিতে তিনি এমন কিছু পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন, যা সারা বিশ্বকেই হতবাক করেছে। অভিবাসন নীতি নিয়ে তাঁর কড়া সিদ্ধান্তগুলো মোটেই স্বস্তিকর নয়। এরপর তিনি সারা বিশ্বের সঙ্গেই যে শুল্কযুদ্ধ শুরু করেছেন, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ রকম অবস্থায় এসসিও বৈঠকটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়া এবং চীনের বৈরী সম্পর্ক আজকের নয়, ভারত কখনো শত্রু, কখনো মিত্র হয়ে টিকে ছিল এত দিন। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের ঘোষণা রাশিয়া-চীন-ভারতকে যদি কাছাকাছি নিয়ে আসে, তাহলে আগামী দিনে অর্থনীতির দুনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য মার খাবে কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। চীন ও ভারত আঞ্চলিকভাবে নিজেদের মধ্যে তৈরি হওয়া বৈরী সম্পর্ক কাটিয়ে উঠলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে। এসসিও আর ব্রিকস মিলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবে কি না, সেটাও আগামী দিনের জন্য বড় প্রশ্ন।

এসসিও বৈঠকে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান উঠে এসেছে এই বৈঠকে। বহুমাত্রিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারেও ভাবা হয়েছে। দেশগুলোর নিরাপত্তা রক্ষা ও মাদক প্রচারবিরোধী অবস্থান জোরদার করার কথা আলোচনায় এসেছে। এ সম্মেলনের পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক ব্যাপক তাৎপর্য বহন করে। এই তিন শক্তির মধ্যে সমঝোতা হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

পৃথিবীতে এখন আধিপত্যের যে লড়াই চলছে, তাতে জোটবদ্ধভাবে কে কাকে ‘দেখে’ নেবে, তা যেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের করণীয় কী, সেটাও ভেবে দেখা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত