Ajker Patrika

দখল বনাম উচ্ছেদ

সম্পাদকীয়
দখল বনাম উচ্ছেদ

সম্পাদকীয়র শিরোনাম দেখে পাঠক ভাবতে পারেন—এ আবার কেমন নামের দল, কেমন খেলাই বা খেলে! আসলে এটি এক দলের দখল এবং আরেক দলের উচ্ছেদের খেলা। হ্যাঁ, খেলাই বটে। তা বোঝা যায় ১০ নভেম্বর আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত ‘উচ্ছেদের পর ফের দখল’ শিরোনামের খবরটি পড়লে।

যাঁরা এখনো খবরটি পড়েননি তাঁদের জন্য সংক্ষেপে একটু ধারণা দেওয়া যাক। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মুগদা-মান্ডা সড়কটি ৬, ৭১ ও ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের ওপর দিয়ে গেছে। সরু এই সড়কে যানজটের ভোগান্তি কমাতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ডিএসসিসি ২০২৪ সালে মুগদা বিশ্বরোড থেকে মান্ডা হায়দার আলী উচ্চবিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। এরপর সংস্কারকাজ করার কথা থাকলেও গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সেই কাজ থমকে যায়। অসাধুদের এই তো সুযোগ! তারা আবার দখল করে নেয় সড়কের দুই পাশ। এখন ৫০ ফুট প্রশস্ত এই মুগদা-মান্ডা সড়ক জায়গা হারিয়ে আবার সংকীর্ণ হয়ে গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, দেড় বছর ধরে সংশ্লিষ্টদের ইচ্ছা হলে সড়কের সংস্কারকাজ চলে, আবার ইচ্ছা হলে তারা কাজ বন্ধ রাখে। উচ্ছেদের পর আবার কারও কারও দোকান পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। কেউ কেউ ছাউনি দিয়ে সড়ক অবধি দখল করে দোকান বাড়িয়েছে। এসব অভিযোগ ডিএসসিসি পায়নি বলে জানায়। সরকার পতনের পর আগের ঠিকাদারেরা নাকি কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু তাই বলে কি কর্তৃপক্ষ অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করবে না?

শিশু কাঁদলে অবশ্যই মা-বাবা বুঝতে পারেন তাকে খাবার দিতে হবে কিংবা অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা করাতে হবে। কিন্তু শুধু কাঁদলেই কি খাবার দিতে হয়? তিন বেলা যথেষ্ট পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় টিকা বা ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করতে যেকোনো মা-বাবাই সচেষ্ট থাকেন, সচেতন থাকেন। একটি নগরের অভিভাবকের দায়িত্বটাও এমন হওয়া উচিত নয় কি? কোথাও অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ব্যবস্থা নেওয়ার পর সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলছে কি না, তা তদারকি করাও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

আমরা মেনে নিচ্ছি, সরকার পতনের পর এমন অনেক সংস্কারকাজ বন্ধ হয়ে আছে। কিন্তু বর্তমানে যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের উচিত সেইসব সংস্কারকাজকে এগিয়ে নেওয়া, অজুহাত দেওয়া নয়। যদি উচ্ছেদের পর ফের সড়ক দখল হয়ে যায়, তাহলে উচ্ছেদ করা হলো কেন? সড়ক তো যাতায়াতের জন্য। যাতায়াতই যদি বিঘ্নিত হয়, তাহলে সে উচ্ছেদের কোনো মানে হয় না। এই উচ্ছেদ এবং পুনর্দখলের খেলায় লাগাম না টানলে তো জনহিতকর কাজ থেমেই থাকবে। সেই দায়িত্বও নিশ্চয়ই সিটি করপোরেশনেরই।

আমরা সেই কাজটাই করি, যা আমাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। তাই সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা আর প্রতিরোধ গড়ে না উঠলে এসব চলতেই থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...