Ajker Patrika

নিষিদ্ধ হলে চলছে কী করে?

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২১, ১১: ৪১
নিষিদ্ধ হলে চলছে কী করে?

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের ঘটনাটি হৃদয়ে আঘাত হানে। ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেলেন মতিন আর ময়না। এই স্বামী–স্ত্রীর দুই অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যাও লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে। আগুনের লেলিহান শিখা পরিবারটিকে তছনছ করে দিল। বাড়িতে না থাকায় পরিবারের একমাত্র ছেলেসন্তানটি আগুন থেকে রেহাই পেয়েছে।

আজকের পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় ছাপা হওয়া খবরটি ছোট, কিন্তু এর ব্যাপ্তি অনেক। পরিবারটির সঙ্গে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি যেকোনো স্পর্শকাতর মনের মানুষকে শোকগ্রস্ত করে তুলবে। এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, সে আশাই করবে মানুষ।

ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখেও ঘটনাটির আরেকটি দিক নিয়ে কথা না বললে অন্যায় হবে। ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বহু আগে থেকেই অযান্ত্রিক ত্রিচক্রযানে ব্যাটারি লাগিয়ে যে নির্ভার ভ্রমণের উপায় বের করা হয়েছিল, তা যে কোনোভাবেই নিরাপদ নয়, সে কথা বারবার বলা হয়েছে। পেছনের চাকায় ব্রেকের ব্যবস্থা না থাকাই দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই বাহন চালক বা যাত্রী—কারও জন্যই নিরাপদ নয়।

লক্ষ করা গেছে, একটু সুযোগ পেলেই অযান্ত্রিক ত্রিচক্রযানকে ইঞ্জিন লাগিয়ে যান্ত্রিক যানে পরিণত করার চেষ্টা চলেছে সর্বত্রই। এ কথা সবাই জানেন, রাজধানীর বাইরে বহু শহরেই বহাল তবিয়তে চলছে নছিমন, করিমন ইত্যাদি নামের ত্রিচক্রযান। এগুলো হয়ে উঠেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার বিকল্প। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কীভাবে এগুলো চলে, সেটাই প্রশ্ন।

নিয়ম করলে সে নিয়ম ভাঙার দিকে আমাদের ঝোঁক থাকে। কতবার সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়ার চার্ট তৈরি করা হলো, কদিন মেনে চলল তারা? কদিনের মাথায় আবার চার্ট এড়িয়ে দরদামে অভ্যস্ত হয়ে উঠল সবাই।

ইঞ্জিনচালিত রিকশার ক্ষেত্রেও নিয়ম করে ঘটছে নিয়ম ভাঙার ঘটনা। এ–সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ধরনের বাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছিলেন গত মাসের শেষ দিকে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! নিয়ম মানবে কে? বাহনগুলো তো শুধু গলিঘুঁজিতে চলছে না, বেরিয়ে আসছে রাজপথেও। তারপরও বাধা পাচ্ছে না। তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়িয়ে চলছে কী করে? এই প্রশ্নের নানা ধরনের উত্তর আছে। সম্মিলিতভাবেই আইন ভাঙার যে প্রবণতার কথা একটু আগে বলা হলো, সেটাই আরেকটু গভীরভাবে দেখলে প্রশ্নের উত্তর পেতে কষ্ট হবে না।

এখানে আরেকটি ব্যাপার নিয়েও ভাবতে হবে। যাঁদের সম্বল শুধু ইজিবাইক, নছিমন, করিমন বা ইঞ্জিনচালিত রিকশা, তাঁদের জন্য বিকল্প যান ব্যবহারের একটা সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার কথাও তো ভাবতে হবে, নইলে এই অসহায় মানুষ যাবে কোথায়?

পুনরাবৃত্তি করে বলি, যদি এই ইঞ্জিনচালিত রিকশাটা এই পরিবারের বাড়িতে না থাকত, তাহলে বিস্ফোরণও ঘটত না, কেউ মারাও যেত না। নিয়ম মানার ক্ষেত্রে আমরা আরেকটু সচেতন হতে পারি কি?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত