Ajker Patrika

সংকট, সংলাপ ও রোডম্যাপ

সম্পাদকীয়
সংকট, সংলাপ ও রোডম্যাপ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৪ মে তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। দল তিনটি হলো বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এসব বৈঠকে উঠে এসেছে নির্বাচন, বিচার, সংস্কার ও রোডম্যাপ নিয়ে তিনটি ভিন্ন দলের তিনটি ভিন্ন মেজাজ ও প্রত্যাশা। যদিও প্রত্যাশার ভাষা আলাদা, মূলত সব দলের মধ্যেই রয়েছে একটি অভিন্ন উদ্বেগ—নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা।

বিএনপির অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট: তারা খলিলুর রহমানসহ তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ, উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠন এবং ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের রোডম্যাপ দাবি করেছে। বিএনপি মনে করে, বিচার ও নির্বাচন—এ দুই প্রক্রিয়া নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন না হলে রাষ্ট্র আবার স্বৈরতান্ত্রিক ধারায় ফিরে যেতে পারে, যার দায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরই বর্তাবে।

জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান কিছুটা নমনীয়, কিন্তু তারাও চায় নির্বাচন ও সংস্কারের সমন্বিত রোডম্যাপ। তারা সতর্ক করে দিয়েছে যে, সংস্কারহীন নির্বাচন অর্থবহ হবে না। তারা এটাও মনে করিয়ে দিয়েছে, জুলাই বিপ্লব শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতার রদবদল নয়, এটি একটি মূল্যবোধের পরিবর্তন, যার প্রতিফলন ঘটাতে হবে বিচার ও গণতান্ত্রিক সংস্কারে।

এনসিপি প্রস্তাব দিয়েছে—জুলাই গণহত্যার বিচার, জুলাই সনদের ঘোষণা এবং গণপরিষদ ও আইনসভা নির্বাচনের সমন্বিত রোডম্যাপ।

এ ছাড়া তারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং শেখ হাসিনার আমলের নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

এই তিন মত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—সবাই নির্বাচন চায়, তবে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে বিএনপির তাড়া থাকলেও অন্য দুই দলের নেই। কারও কাছে নির্বাচন মুখ্য, কারও কাছে বিচার ও সংস্কার, আবার কারও কাছে প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা। এই ভিন্নতা অস্বাভাবিক নয়, তবে এ থেকে উত্তরণের পথ তৈরি করা এখন প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব।

অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য শুধু একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন নয়, একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা। এই প্রক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক দলকে আস্থায় নিতে না পারলে গণতন্ত্রের উত্তরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। তবে সংলাপ করেও রাজনৈতিক ঐকমত্যের দেখা পাওয়া নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টাকে এখন আর শুধু ধৈর্যশীল মধ্যস্থতাকারী নয়, বরং একটি ভবিষ্যৎ নির্ধারক নেতৃত্ব দিতে হবে। তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—কোথায় আপস সম্ভব, কোথায় অনমনীয় থাকা উচিত এবং কোন শর্তে সব দলকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি অন্তর্বর্তী রাজনৈতিক চুক্তি করা সম্ভব।

আমরা মনে করি, এখন আর সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর উপদেষ্টা পরিষদকে পক্ষপাতমুক্ত হয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবভিত্তিক নির্বাচনী রোডম্যাপ অবিলম্বে ঘোষণা করতে হবে। না হলে দেশে তৈরি হতে পারে এক অনিবার্য অনিশ্চয়তা, যা রাষ্ট্রকে বিভাজনের মুখে ঠেলে দেবে।

দেশের মানুষ আর প্রতিশ্রুতি চায় না, তারা চায় সিদ্ধান্ত। সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি বাসভবনে একাই থাকতেন শরীয়তপুরের ডিসি, পরিবার থাকত ঢাকায়

স্বামীকে ভিডিও কলে রেখে ফাঁস দিলেন স্ত্রী

‘তোরা তো পুলিশ মারছিস, ফাঁড়ি জ্বালাইছিস’ বলেই জুলাই যোদ্ধাকে মারধর

ইরানে ভূমিকম্প নিয়ে পারমাণবিক পরীক্ষার জল্পনা, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

বুশেহরে হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে ‘ফুকুশিমা’ ঘটতে পারে, বিশ্লেষকদের হুঁশিয়ারি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত