চিররঞ্জন সরকার

ইংরেজি বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দেয় সরকার। ২০১০ সাল থেকে সরকার প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিয়ে আসছে। কিন্তু এ বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার প্রায় দুই মাস হতে চলল, কিন্তু দেশের অনেক শিক্ষার্থী এখনো সব পাঠ্যবই হাতে পায়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এখনো প্রায় ৭ কোটি বই ছাপা হওয়া বাকি, যার অধিকাংশই মাধ্যমিক পর্যায়ের।
সরকার পরিবর্তন, শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জনসহ কিছু সমস্যার কারণে এবার শিক্ষা বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল, বই পেতে কিছুটা দেরি হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই দেরি অনন্ত অপেক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাপার যে পরিস্থিতি, তাতে আগামী এপ্রিল মাসেও শিক্ষার্থীরা সব বই পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে সব পাঠ্যবই বিতরণ কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন খোদ শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বই দিতে যত দেরি হচ্ছে, পড়াশোনাও তত ব্যাহত হচ্ছে। অভিভাবকদের উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে, কারণ পাঠ্যবই ছাড়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী করা কঠিন হয়ে পড়ছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছায়নি, সেখানে শিক্ষকেরা এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ ডাউনলোড করে পড়াচ্ছেন। তবে সব শিক্ষার্থীর হাতে পিডিএফ সংস্করণ নেই। ফলে যেসব বিষয়ের বই পৌঁছায়নি, সেসব বিষয়ে পড়াশোনা তেমন একটা হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাঠদান হচ্ছে না বললেই চলে। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে স্কুলে পাঠদান চলে না।
বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, এখন মাধ্যমিকের দুটি পরীক্ষা ষাণ্মাসিক ও বাৎসরিক। ষাণ্মাসিক হয় জুনে। প্রাথমিকের তিনটি পরীক্ষা হয়। তাদের প্রথম পরীক্ষা এপ্রিলে। তার মানে এবার শিক্ষার্থীদের প্রথম পরীক্ষায় বসতে হবে বই ছাড়া।
বই সরবরাহ কেন এত বিলম্বিত হচ্ছে, এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ভাষ্য, বই ছাপানো এমনিতেই একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তার ওপর এ বছর পাঠ্য বিষয় পুরোপুরি বদলে ফেলা হয়েছে। নতুন পাঠ্য বিষয় লেখা, পরিমার্জন, সম্পাদনা, অনুমোদন করতে অনেকটা সময় চলে যায়। এরপর টেন্ডার আহ্বান, সেগুলো যাচাই-বাছাই, কার্যাদেশ দেওয়া ইত্যাদি প্রক্রিয়াগত কারণে আরও সময় ব্যয় হয়। এর সঙ্গে আছে কাগজ ও প্রেস সংকট।
ছাপার পর বই নির্ধারিত মান অনুযায়ী হয়েছে কি না, তা যাচাই করে সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়। ফলে ছাপা হলেও সঙ্গে সঙ্গে তা পাঠানো যায় না, একটু সময় লাগে। আবার ছাপার পর তা বাঁধাইয়ের কাজেও দেরি হয়। সব মিলিয়ে নির্ধারিত সময়ে বই সরবরাহ করতে সমস্যা হয়েছে।
এ কথা ঠিক যে, এ বছর দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বই সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। তবে সরকারের অগ্রাধিকার নির্ধারণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেননা, সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে আগস্ট মাসে। এরপর সাত মাসেও বইয়ের ব্যবস্থা করতে না পারাটা একধরনের গাফিলতি। জানুয়ারিতে বই বিতরণ করা হবে, এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন। বিষয়টিকে এক নম্বর অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখে আগস্টের মাঝামাঝি থেকে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লে এই সংকট সৃষ্টি হতো না বলেই শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
আমাদের দেশের শাসকদের কাছে শিক্ষা কখনোই অগ্রাধিকারের তালিকায় স্থান পায়নি। শিক্ষাকে সব সময়ই গৌণ, অনেক ক্ষেত্রে তুচ্ছ হিসেবে দেখা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা যথাযথভাবে লেখাপড়া করতে পারছে কি না, তা নিয়ে কিছুমাত্র মাথাব্যথার লক্ষণ দেখা যায় না। শিক্ষার প্রতি এই ঔদাসীন্যের সবচেয়ে বড় প্রমাণ মিলেছিল করোনা মহামারির দিনগুলোতে, যখন গৃহবন্দী শিশু-কিশোরদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ বাতলে দেওয়া যায়নি। করোনার সময় প্রায় তিন বছর লেখাপড়া হয়নি। এরপর দুই বছর নতুন কারিকুলাম ছিল। সে সময় আক্ষরিক অর্থে পড়ালেখা ছিল না। প্র্যাকটিক্যাল হচ্ছিল। এবার আবার নতুন বই পাচ্ছে বছরের তিন-চার মাস পর। তাহলে লেখাপড়া হবে কীভাবে? কেবল করোনাকালে নয়, সাধারণভাবেই এ দেশে সরকারি কর্মকাণ্ডে শিক্ষার প্রতি খুব একটা মনোযোগ দেখা যায় না। কারণে-অকারণে স্কুল ছুটি ঘোষণা করা, প্রতিবছর পাঠ্যক্রম বদল এবং পাঠ্যক্রম, প্রশ্ন, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি উদ্যোগ শিক্ষাকে দিগ্ভ্রান্ত করে তুলেছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভেঙে পড়া অবকাঠামোর কথা তো বলাই বাহুল্য। যথেষ্ট শিক্ষক নেই, ক্লাসরুম নেই, শিক্ষকদের শিক্ষাবহির্ভূত নানা কাজে লাগানো চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেহাল দশার কারণে ইতিমধ্যেই মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত পরিবার সন্তানদের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে নিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনা আরও ব্যাহত হলে সরকারি স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আরও কমবে এবং আরও বহু স্কুল বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে।
বিভিন্ন সমীক্ষা প্রতিবেদনে শিক্ষাসম্পর্কিত বিভিন্ন উদ্বেগজনক সংবাদই পাওয়া যায়। ছাত্রছাত্রীদের একটি বড় অংশ প্রাথমিক শিক্ষার বনিয়াদি সামর্থ্যটুকুও অর্জন করছে না। উচ্চশিক্ষার অবস্থা তো আরও করুণ। জাতীয় শিক্ষানীতির বিবিধ আশ্চর্য সংশোধনে ও প্রয়োগে উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে যে কত রকমের পঙ্কিল আবর্ত তৈরি করা হয়েছে, তা গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে না। কিছু তথ্য ও সমীক্ষায় কেবল সেই কৃষ্ণশৈলের চূড়াটুকু দৃশ্যমান। তেমনই কিছু তথ্য বলছে—দেশের অগ্রগণ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষকদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ওদিকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসমুখী হচ্ছে না। তারা এখন ক্লাস করার চেয়ে অলীক সব দাবিদাওয়া আদায়ের মিছিলে অংশ নিতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে।
শিক্ষা নিয়ে সরকারের উদাসীনতা অত্যন্ত ক্ষতিকর। কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে তার শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে হয়। শিক্ষকদের অবহেলা করে তাদের শেখানোর ইচ্ছাকে নষ্ট করে দিতে হয়। আমাদের দেশে যেন তা-ই চলছে। পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই নৈরাজ্যমুখী। উদ্বেগ সবখানে। প্রাথমিক শিক্ষাই হলো সব শিক্ষার ভিত্তি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি হলো—প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণি মিলিয়ে দেশের প্রায় ৫৬ লাখ শিশু বিদ্যালয়ে যায় না। ঝরে পড়ার হারও আরও অনেক বেশি। তার ওপর কোচিং-বাণিজ্য ও প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানাবিধ কারণে সংখ্যাধিক শিশু ও শিক্ষার্থীরা প্রতিভা বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত ও অবহেলিত হচ্ছে।
শিক্ষা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কোনো উদ্যোগ সরকারিভাবে নেওয়া হচ্ছে না। বরং শিক্ষায় একধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। শিক্ষা খাতের বরাদ্দ সিংহভাগ চলে যায় ক্যাডেটসহ নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সেখানে একটা বিশেষ শ্রেণি লেখাপড়ার সুযোগ পায়। দেশে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি অনেক দিনের। কিন্তু সেই দাবিকে উপেক্ষা করে দেশে প্রাইভেট পাবলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দামি বিলাসবহুল ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বা কলেজ এবং সাধারণ স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ নানা ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা বহাল রাখা হয়েছে। এতে ধনী ও দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে বৈষম্য আরও বাড়ছে। সব রকম বৈষম্য বাতিল করে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করা হলে ‘সবার জন্য শিক্ষা’ ‘অধিকার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। কিন্তু সেটা আমাদের দেশে কবে হবে, আদৌ হবে কি না কে জানে!
যাহোক, সামগ্রিক শিক্ষা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি তুলে লাভ নেই, কেননা এই সরকারের পক্ষ থেকে নানা বিষয়ে সংস্কার কমিটি করা হলেও শিক্ষা নিয়ে কোনো কমিটি করা হয়নি। তার মানে শিক্ষা তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। এই মুহূর্তে পাঠ্যবই সংকট নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্তত আগামী বছর যেন এমন সংকট না হয়, সে জন্য সরকারকে আগাম পরিকল্পনা করে মুদ্রণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ার সময়সীমা সংক্ষিপ্ত করে আরও দ্রুত মুদ্রণ কার্যক্রম শুরু করা উচিত। এ ছাড়া ভবিষ্যতে পাঠ্যবই বিতরণের সময়সীমা নির্ধারণ ও তা কার্যকর করার জন্য কঠোর তদারকি দরকার।
পরিশেষে, পাঠ্যবই সংকট নিরসন করে শিক্ষাব্যবস্থাকে স্বাভাবিক করতে সরকার, শিক্ষাবিদ, প্রকাশক এবং মুদ্রণ মালিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নিরবচ্ছিন্ন ও সময়মতো বই সরবরাহ নিশ্চিত করা সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

ইংরেজি বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দেয় সরকার। ২০১০ সাল থেকে সরকার প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিয়ে আসছে। কিন্তু এ বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার প্রায় দুই মাস হতে চলল, কিন্তু দেশের অনেক শিক্ষার্থী এখনো সব পাঠ্যবই হাতে পায়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এখনো প্রায় ৭ কোটি বই ছাপা হওয়া বাকি, যার অধিকাংশই মাধ্যমিক পর্যায়ের।
সরকার পরিবর্তন, শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জনসহ কিছু সমস্যার কারণে এবার শিক্ষা বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল, বই পেতে কিছুটা দেরি হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই দেরি অনন্ত অপেক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাপার যে পরিস্থিতি, তাতে আগামী এপ্রিল মাসেও শিক্ষার্থীরা সব বই পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে সব পাঠ্যবই বিতরণ কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন খোদ শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বই দিতে যত দেরি হচ্ছে, পড়াশোনাও তত ব্যাহত হচ্ছে। অভিভাবকদের উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে, কারণ পাঠ্যবই ছাড়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী করা কঠিন হয়ে পড়ছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছায়নি, সেখানে শিক্ষকেরা এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ ডাউনলোড করে পড়াচ্ছেন। তবে সব শিক্ষার্থীর হাতে পিডিএফ সংস্করণ নেই। ফলে যেসব বিষয়ের বই পৌঁছায়নি, সেসব বিষয়ে পড়াশোনা তেমন একটা হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাঠদান হচ্ছে না বললেই চলে। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে স্কুলে পাঠদান চলে না।
বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, এখন মাধ্যমিকের দুটি পরীক্ষা ষাণ্মাসিক ও বাৎসরিক। ষাণ্মাসিক হয় জুনে। প্রাথমিকের তিনটি পরীক্ষা হয়। তাদের প্রথম পরীক্ষা এপ্রিলে। তার মানে এবার শিক্ষার্থীদের প্রথম পরীক্ষায় বসতে হবে বই ছাড়া।
বই সরবরাহ কেন এত বিলম্বিত হচ্ছে, এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ভাষ্য, বই ছাপানো এমনিতেই একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তার ওপর এ বছর পাঠ্য বিষয় পুরোপুরি বদলে ফেলা হয়েছে। নতুন পাঠ্য বিষয় লেখা, পরিমার্জন, সম্পাদনা, অনুমোদন করতে অনেকটা সময় চলে যায়। এরপর টেন্ডার আহ্বান, সেগুলো যাচাই-বাছাই, কার্যাদেশ দেওয়া ইত্যাদি প্রক্রিয়াগত কারণে আরও সময় ব্যয় হয়। এর সঙ্গে আছে কাগজ ও প্রেস সংকট।
ছাপার পর বই নির্ধারিত মান অনুযায়ী হয়েছে কি না, তা যাচাই করে সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়। ফলে ছাপা হলেও সঙ্গে সঙ্গে তা পাঠানো যায় না, একটু সময় লাগে। আবার ছাপার পর তা বাঁধাইয়ের কাজেও দেরি হয়। সব মিলিয়ে নির্ধারিত সময়ে বই সরবরাহ করতে সমস্যা হয়েছে।
এ কথা ঠিক যে, এ বছর দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বই সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। তবে সরকারের অগ্রাধিকার নির্ধারণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেননা, সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে আগস্ট মাসে। এরপর সাত মাসেও বইয়ের ব্যবস্থা করতে না পারাটা একধরনের গাফিলতি। জানুয়ারিতে বই বিতরণ করা হবে, এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন। বিষয়টিকে এক নম্বর অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখে আগস্টের মাঝামাঝি থেকে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লে এই সংকট সৃষ্টি হতো না বলেই শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
আমাদের দেশের শাসকদের কাছে শিক্ষা কখনোই অগ্রাধিকারের তালিকায় স্থান পায়নি। শিক্ষাকে সব সময়ই গৌণ, অনেক ক্ষেত্রে তুচ্ছ হিসেবে দেখা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা যথাযথভাবে লেখাপড়া করতে পারছে কি না, তা নিয়ে কিছুমাত্র মাথাব্যথার লক্ষণ দেখা যায় না। শিক্ষার প্রতি এই ঔদাসীন্যের সবচেয়ে বড় প্রমাণ মিলেছিল করোনা মহামারির দিনগুলোতে, যখন গৃহবন্দী শিশু-কিশোরদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ বাতলে দেওয়া যায়নি। করোনার সময় প্রায় তিন বছর লেখাপড়া হয়নি। এরপর দুই বছর নতুন কারিকুলাম ছিল। সে সময় আক্ষরিক অর্থে পড়ালেখা ছিল না। প্র্যাকটিক্যাল হচ্ছিল। এবার আবার নতুন বই পাচ্ছে বছরের তিন-চার মাস পর। তাহলে লেখাপড়া হবে কীভাবে? কেবল করোনাকালে নয়, সাধারণভাবেই এ দেশে সরকারি কর্মকাণ্ডে শিক্ষার প্রতি খুব একটা মনোযোগ দেখা যায় না। কারণে-অকারণে স্কুল ছুটি ঘোষণা করা, প্রতিবছর পাঠ্যক্রম বদল এবং পাঠ্যক্রম, প্রশ্ন, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি উদ্যোগ শিক্ষাকে দিগ্ভ্রান্ত করে তুলেছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভেঙে পড়া অবকাঠামোর কথা তো বলাই বাহুল্য। যথেষ্ট শিক্ষক নেই, ক্লাসরুম নেই, শিক্ষকদের শিক্ষাবহির্ভূত নানা কাজে লাগানো চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেহাল দশার কারণে ইতিমধ্যেই মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত পরিবার সন্তানদের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে নিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনা আরও ব্যাহত হলে সরকারি স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আরও কমবে এবং আরও বহু স্কুল বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে।
বিভিন্ন সমীক্ষা প্রতিবেদনে শিক্ষাসম্পর্কিত বিভিন্ন উদ্বেগজনক সংবাদই পাওয়া যায়। ছাত্রছাত্রীদের একটি বড় অংশ প্রাথমিক শিক্ষার বনিয়াদি সামর্থ্যটুকুও অর্জন করছে না। উচ্চশিক্ষার অবস্থা তো আরও করুণ। জাতীয় শিক্ষানীতির বিবিধ আশ্চর্য সংশোধনে ও প্রয়োগে উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে যে কত রকমের পঙ্কিল আবর্ত তৈরি করা হয়েছে, তা গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে না। কিছু তথ্য ও সমীক্ষায় কেবল সেই কৃষ্ণশৈলের চূড়াটুকু দৃশ্যমান। তেমনই কিছু তথ্য বলছে—দেশের অগ্রগণ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষকদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ওদিকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসমুখী হচ্ছে না। তারা এখন ক্লাস করার চেয়ে অলীক সব দাবিদাওয়া আদায়ের মিছিলে অংশ নিতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে।
শিক্ষা নিয়ে সরকারের উদাসীনতা অত্যন্ত ক্ষতিকর। কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে তার শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে হয়। শিক্ষকদের অবহেলা করে তাদের শেখানোর ইচ্ছাকে নষ্ট করে দিতে হয়। আমাদের দেশে যেন তা-ই চলছে। পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই নৈরাজ্যমুখী। উদ্বেগ সবখানে। প্রাথমিক শিক্ষাই হলো সব শিক্ষার ভিত্তি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি হলো—প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণি মিলিয়ে দেশের প্রায় ৫৬ লাখ শিশু বিদ্যালয়ে যায় না। ঝরে পড়ার হারও আরও অনেক বেশি। তার ওপর কোচিং-বাণিজ্য ও প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানাবিধ কারণে সংখ্যাধিক শিশু ও শিক্ষার্থীরা প্রতিভা বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত ও অবহেলিত হচ্ছে।
শিক্ষা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কোনো উদ্যোগ সরকারিভাবে নেওয়া হচ্ছে না। বরং শিক্ষায় একধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। শিক্ষা খাতের বরাদ্দ সিংহভাগ চলে যায় ক্যাডেটসহ নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সেখানে একটা বিশেষ শ্রেণি লেখাপড়ার সুযোগ পায়। দেশে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি অনেক দিনের। কিন্তু সেই দাবিকে উপেক্ষা করে দেশে প্রাইভেট পাবলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দামি বিলাসবহুল ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বা কলেজ এবং সাধারণ স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ নানা ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা বহাল রাখা হয়েছে। এতে ধনী ও দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে বৈষম্য আরও বাড়ছে। সব রকম বৈষম্য বাতিল করে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করা হলে ‘সবার জন্য শিক্ষা’ ‘অধিকার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। কিন্তু সেটা আমাদের দেশে কবে হবে, আদৌ হবে কি না কে জানে!
যাহোক, সামগ্রিক শিক্ষা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি তুলে লাভ নেই, কেননা এই সরকারের পক্ষ থেকে নানা বিষয়ে সংস্কার কমিটি করা হলেও শিক্ষা নিয়ে কোনো কমিটি করা হয়নি। তার মানে শিক্ষা তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। এই মুহূর্তে পাঠ্যবই সংকট নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্তত আগামী বছর যেন এমন সংকট না হয়, সে জন্য সরকারকে আগাম পরিকল্পনা করে মুদ্রণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ার সময়সীমা সংক্ষিপ্ত করে আরও দ্রুত মুদ্রণ কার্যক্রম শুরু করা উচিত। এ ছাড়া ভবিষ্যতে পাঠ্যবই বিতরণের সময়সীমা নির্ধারণ ও তা কার্যকর করার জন্য কঠোর তদারকি দরকার।
পরিশেষে, পাঠ্যবই সংকট নিরসন করে শিক্ষাব্যবস্থাকে স্বাভাবিক করতে সরকার, শিক্ষাবিদ, প্রকাশক এবং মুদ্রণ মালিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নিরবচ্ছিন্ন ও সময়মতো বই সরবরাহ নিশ্চিত করা সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
চিররঞ্জন সরকার

ইংরেজি বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দেয় সরকার। ২০১০ সাল থেকে সরকার প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিয়ে আসছে। কিন্তু এ বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার প্রায় দুই মাস হতে চলল, কিন্তু দেশের অনেক শিক্ষার্থী এখনো সব পাঠ্যবই হাতে পায়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এখনো প্রায় ৭ কোটি বই ছাপা হওয়া বাকি, যার অধিকাংশই মাধ্যমিক পর্যায়ের।
সরকার পরিবর্তন, শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জনসহ কিছু সমস্যার কারণে এবার শিক্ষা বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল, বই পেতে কিছুটা দেরি হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই দেরি অনন্ত অপেক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাপার যে পরিস্থিতি, তাতে আগামী এপ্রিল মাসেও শিক্ষার্থীরা সব বই পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে সব পাঠ্যবই বিতরণ কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন খোদ শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বই দিতে যত দেরি হচ্ছে, পড়াশোনাও তত ব্যাহত হচ্ছে। অভিভাবকদের উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে, কারণ পাঠ্যবই ছাড়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী করা কঠিন হয়ে পড়ছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছায়নি, সেখানে শিক্ষকেরা এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ ডাউনলোড করে পড়াচ্ছেন। তবে সব শিক্ষার্থীর হাতে পিডিএফ সংস্করণ নেই। ফলে যেসব বিষয়ের বই পৌঁছায়নি, সেসব বিষয়ে পড়াশোনা তেমন একটা হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাঠদান হচ্ছে না বললেই চলে। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে স্কুলে পাঠদান চলে না।
বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, এখন মাধ্যমিকের দুটি পরীক্ষা ষাণ্মাসিক ও বাৎসরিক। ষাণ্মাসিক হয় জুনে। প্রাথমিকের তিনটি পরীক্ষা হয়। তাদের প্রথম পরীক্ষা এপ্রিলে। তার মানে এবার শিক্ষার্থীদের প্রথম পরীক্ষায় বসতে হবে বই ছাড়া।
বই সরবরাহ কেন এত বিলম্বিত হচ্ছে, এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ভাষ্য, বই ছাপানো এমনিতেই একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তার ওপর এ বছর পাঠ্য বিষয় পুরোপুরি বদলে ফেলা হয়েছে। নতুন পাঠ্য বিষয় লেখা, পরিমার্জন, সম্পাদনা, অনুমোদন করতে অনেকটা সময় চলে যায়। এরপর টেন্ডার আহ্বান, সেগুলো যাচাই-বাছাই, কার্যাদেশ দেওয়া ইত্যাদি প্রক্রিয়াগত কারণে আরও সময় ব্যয় হয়। এর সঙ্গে আছে কাগজ ও প্রেস সংকট।
ছাপার পর বই নির্ধারিত মান অনুযায়ী হয়েছে কি না, তা যাচাই করে সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়। ফলে ছাপা হলেও সঙ্গে সঙ্গে তা পাঠানো যায় না, একটু সময় লাগে। আবার ছাপার পর তা বাঁধাইয়ের কাজেও দেরি হয়। সব মিলিয়ে নির্ধারিত সময়ে বই সরবরাহ করতে সমস্যা হয়েছে।
এ কথা ঠিক যে, এ বছর দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বই সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। তবে সরকারের অগ্রাধিকার নির্ধারণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেননা, সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে আগস্ট মাসে। এরপর সাত মাসেও বইয়ের ব্যবস্থা করতে না পারাটা একধরনের গাফিলতি। জানুয়ারিতে বই বিতরণ করা হবে, এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন। বিষয়টিকে এক নম্বর অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখে আগস্টের মাঝামাঝি থেকে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লে এই সংকট সৃষ্টি হতো না বলেই শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
আমাদের দেশের শাসকদের কাছে শিক্ষা কখনোই অগ্রাধিকারের তালিকায় স্থান পায়নি। শিক্ষাকে সব সময়ই গৌণ, অনেক ক্ষেত্রে তুচ্ছ হিসেবে দেখা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা যথাযথভাবে লেখাপড়া করতে পারছে কি না, তা নিয়ে কিছুমাত্র মাথাব্যথার লক্ষণ দেখা যায় না। শিক্ষার প্রতি এই ঔদাসীন্যের সবচেয়ে বড় প্রমাণ মিলেছিল করোনা মহামারির দিনগুলোতে, যখন গৃহবন্দী শিশু-কিশোরদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ বাতলে দেওয়া যায়নি। করোনার সময় প্রায় তিন বছর লেখাপড়া হয়নি। এরপর দুই বছর নতুন কারিকুলাম ছিল। সে সময় আক্ষরিক অর্থে পড়ালেখা ছিল না। প্র্যাকটিক্যাল হচ্ছিল। এবার আবার নতুন বই পাচ্ছে বছরের তিন-চার মাস পর। তাহলে লেখাপড়া হবে কীভাবে? কেবল করোনাকালে নয়, সাধারণভাবেই এ দেশে সরকারি কর্মকাণ্ডে শিক্ষার প্রতি খুব একটা মনোযোগ দেখা যায় না। কারণে-অকারণে স্কুল ছুটি ঘোষণা করা, প্রতিবছর পাঠ্যক্রম বদল এবং পাঠ্যক্রম, প্রশ্ন, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি উদ্যোগ শিক্ষাকে দিগ্ভ্রান্ত করে তুলেছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভেঙে পড়া অবকাঠামোর কথা তো বলাই বাহুল্য। যথেষ্ট শিক্ষক নেই, ক্লাসরুম নেই, শিক্ষকদের শিক্ষাবহির্ভূত নানা কাজে লাগানো চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেহাল দশার কারণে ইতিমধ্যেই মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত পরিবার সন্তানদের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে নিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনা আরও ব্যাহত হলে সরকারি স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আরও কমবে এবং আরও বহু স্কুল বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে।
বিভিন্ন সমীক্ষা প্রতিবেদনে শিক্ষাসম্পর্কিত বিভিন্ন উদ্বেগজনক সংবাদই পাওয়া যায়। ছাত্রছাত্রীদের একটি বড় অংশ প্রাথমিক শিক্ষার বনিয়াদি সামর্থ্যটুকুও অর্জন করছে না। উচ্চশিক্ষার অবস্থা তো আরও করুণ। জাতীয় শিক্ষানীতির বিবিধ আশ্চর্য সংশোধনে ও প্রয়োগে উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে যে কত রকমের পঙ্কিল আবর্ত তৈরি করা হয়েছে, তা গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে না। কিছু তথ্য ও সমীক্ষায় কেবল সেই কৃষ্ণশৈলের চূড়াটুকু দৃশ্যমান। তেমনই কিছু তথ্য বলছে—দেশের অগ্রগণ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষকদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ওদিকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসমুখী হচ্ছে না। তারা এখন ক্লাস করার চেয়ে অলীক সব দাবিদাওয়া আদায়ের মিছিলে অংশ নিতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে।
শিক্ষা নিয়ে সরকারের উদাসীনতা অত্যন্ত ক্ষতিকর। কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে তার শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে হয়। শিক্ষকদের অবহেলা করে তাদের শেখানোর ইচ্ছাকে নষ্ট করে দিতে হয়। আমাদের দেশে যেন তা-ই চলছে। পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই নৈরাজ্যমুখী। উদ্বেগ সবখানে। প্রাথমিক শিক্ষাই হলো সব শিক্ষার ভিত্তি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি হলো—প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণি মিলিয়ে দেশের প্রায় ৫৬ লাখ শিশু বিদ্যালয়ে যায় না। ঝরে পড়ার হারও আরও অনেক বেশি। তার ওপর কোচিং-বাণিজ্য ও প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানাবিধ কারণে সংখ্যাধিক শিশু ও শিক্ষার্থীরা প্রতিভা বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত ও অবহেলিত হচ্ছে।
শিক্ষা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কোনো উদ্যোগ সরকারিভাবে নেওয়া হচ্ছে না। বরং শিক্ষায় একধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। শিক্ষা খাতের বরাদ্দ সিংহভাগ চলে যায় ক্যাডেটসহ নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সেখানে একটা বিশেষ শ্রেণি লেখাপড়ার সুযোগ পায়। দেশে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি অনেক দিনের। কিন্তু সেই দাবিকে উপেক্ষা করে দেশে প্রাইভেট পাবলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দামি বিলাসবহুল ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বা কলেজ এবং সাধারণ স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ নানা ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা বহাল রাখা হয়েছে। এতে ধনী ও দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে বৈষম্য আরও বাড়ছে। সব রকম বৈষম্য বাতিল করে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করা হলে ‘সবার জন্য শিক্ষা’ ‘অধিকার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। কিন্তু সেটা আমাদের দেশে কবে হবে, আদৌ হবে কি না কে জানে!
যাহোক, সামগ্রিক শিক্ষা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি তুলে লাভ নেই, কেননা এই সরকারের পক্ষ থেকে নানা বিষয়ে সংস্কার কমিটি করা হলেও শিক্ষা নিয়ে কোনো কমিটি করা হয়নি। তার মানে শিক্ষা তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। এই মুহূর্তে পাঠ্যবই সংকট নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্তত আগামী বছর যেন এমন সংকট না হয়, সে জন্য সরকারকে আগাম পরিকল্পনা করে মুদ্রণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ার সময়সীমা সংক্ষিপ্ত করে আরও দ্রুত মুদ্রণ কার্যক্রম শুরু করা উচিত। এ ছাড়া ভবিষ্যতে পাঠ্যবই বিতরণের সময়সীমা নির্ধারণ ও তা কার্যকর করার জন্য কঠোর তদারকি দরকার।
পরিশেষে, পাঠ্যবই সংকট নিরসন করে শিক্ষাব্যবস্থাকে স্বাভাবিক করতে সরকার, শিক্ষাবিদ, প্রকাশক এবং মুদ্রণ মালিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নিরবচ্ছিন্ন ও সময়মতো বই সরবরাহ নিশ্চিত করা সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

ইংরেজি বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দেয় সরকার। ২০১০ সাল থেকে সরকার প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিয়ে আসছে। কিন্তু এ বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার প্রায় দুই মাস হতে চলল, কিন্তু দেশের অনেক শিক্ষার্থী এখনো সব পাঠ্যবই হাতে পায়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এখনো প্রায় ৭ কোটি বই ছাপা হওয়া বাকি, যার অধিকাংশই মাধ্যমিক পর্যায়ের।
সরকার পরিবর্তন, শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জনসহ কিছু সমস্যার কারণে এবার শিক্ষা বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল, বই পেতে কিছুটা দেরি হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই দেরি অনন্ত অপেক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাপার যে পরিস্থিতি, তাতে আগামী এপ্রিল মাসেও শিক্ষার্থীরা সব বই পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে সব পাঠ্যবই বিতরণ কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন খোদ শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বই দিতে যত দেরি হচ্ছে, পড়াশোনাও তত ব্যাহত হচ্ছে। অভিভাবকদের উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে, কারণ পাঠ্যবই ছাড়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী করা কঠিন হয়ে পড়ছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছায়নি, সেখানে শিক্ষকেরা এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ ডাউনলোড করে পড়াচ্ছেন। তবে সব শিক্ষার্থীর হাতে পিডিএফ সংস্করণ নেই। ফলে যেসব বিষয়ের বই পৌঁছায়নি, সেসব বিষয়ে পড়াশোনা তেমন একটা হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাঠদান হচ্ছে না বললেই চলে। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে স্কুলে পাঠদান চলে না।
বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, এখন মাধ্যমিকের দুটি পরীক্ষা ষাণ্মাসিক ও বাৎসরিক। ষাণ্মাসিক হয় জুনে। প্রাথমিকের তিনটি পরীক্ষা হয়। তাদের প্রথম পরীক্ষা এপ্রিলে। তার মানে এবার শিক্ষার্থীদের প্রথম পরীক্ষায় বসতে হবে বই ছাড়া।
বই সরবরাহ কেন এত বিলম্বিত হচ্ছে, এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ভাষ্য, বই ছাপানো এমনিতেই একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তার ওপর এ বছর পাঠ্য বিষয় পুরোপুরি বদলে ফেলা হয়েছে। নতুন পাঠ্য বিষয় লেখা, পরিমার্জন, সম্পাদনা, অনুমোদন করতে অনেকটা সময় চলে যায়। এরপর টেন্ডার আহ্বান, সেগুলো যাচাই-বাছাই, কার্যাদেশ দেওয়া ইত্যাদি প্রক্রিয়াগত কারণে আরও সময় ব্যয় হয়। এর সঙ্গে আছে কাগজ ও প্রেস সংকট।
ছাপার পর বই নির্ধারিত মান অনুযায়ী হয়েছে কি না, তা যাচাই করে সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়। ফলে ছাপা হলেও সঙ্গে সঙ্গে তা পাঠানো যায় না, একটু সময় লাগে। আবার ছাপার পর তা বাঁধাইয়ের কাজেও দেরি হয়। সব মিলিয়ে নির্ধারিত সময়ে বই সরবরাহ করতে সমস্যা হয়েছে।
এ কথা ঠিক যে, এ বছর দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বই সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। তবে সরকারের অগ্রাধিকার নির্ধারণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেননা, সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে আগস্ট মাসে। এরপর সাত মাসেও বইয়ের ব্যবস্থা করতে না পারাটা একধরনের গাফিলতি। জানুয়ারিতে বই বিতরণ করা হবে, এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন। বিষয়টিকে এক নম্বর অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখে আগস্টের মাঝামাঝি থেকে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লে এই সংকট সৃষ্টি হতো না বলেই শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
আমাদের দেশের শাসকদের কাছে শিক্ষা কখনোই অগ্রাধিকারের তালিকায় স্থান পায়নি। শিক্ষাকে সব সময়ই গৌণ, অনেক ক্ষেত্রে তুচ্ছ হিসেবে দেখা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা যথাযথভাবে লেখাপড়া করতে পারছে কি না, তা নিয়ে কিছুমাত্র মাথাব্যথার লক্ষণ দেখা যায় না। শিক্ষার প্রতি এই ঔদাসীন্যের সবচেয়ে বড় প্রমাণ মিলেছিল করোনা মহামারির দিনগুলোতে, যখন গৃহবন্দী শিশু-কিশোরদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ বাতলে দেওয়া যায়নি। করোনার সময় প্রায় তিন বছর লেখাপড়া হয়নি। এরপর দুই বছর নতুন কারিকুলাম ছিল। সে সময় আক্ষরিক অর্থে পড়ালেখা ছিল না। প্র্যাকটিক্যাল হচ্ছিল। এবার আবার নতুন বই পাচ্ছে বছরের তিন-চার মাস পর। তাহলে লেখাপড়া হবে কীভাবে? কেবল করোনাকালে নয়, সাধারণভাবেই এ দেশে সরকারি কর্মকাণ্ডে শিক্ষার প্রতি খুব একটা মনোযোগ দেখা যায় না। কারণে-অকারণে স্কুল ছুটি ঘোষণা করা, প্রতিবছর পাঠ্যক্রম বদল এবং পাঠ্যক্রম, প্রশ্ন, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি উদ্যোগ শিক্ষাকে দিগ্ভ্রান্ত করে তুলেছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভেঙে পড়া অবকাঠামোর কথা তো বলাই বাহুল্য। যথেষ্ট শিক্ষক নেই, ক্লাসরুম নেই, শিক্ষকদের শিক্ষাবহির্ভূত নানা কাজে লাগানো চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেহাল দশার কারণে ইতিমধ্যেই মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত পরিবার সন্তানদের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে নিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনা আরও ব্যাহত হলে সরকারি স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আরও কমবে এবং আরও বহু স্কুল বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে।
বিভিন্ন সমীক্ষা প্রতিবেদনে শিক্ষাসম্পর্কিত বিভিন্ন উদ্বেগজনক সংবাদই পাওয়া যায়। ছাত্রছাত্রীদের একটি বড় অংশ প্রাথমিক শিক্ষার বনিয়াদি সামর্থ্যটুকুও অর্জন করছে না। উচ্চশিক্ষার অবস্থা তো আরও করুণ। জাতীয় শিক্ষানীতির বিবিধ আশ্চর্য সংশোধনে ও প্রয়োগে উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে যে কত রকমের পঙ্কিল আবর্ত তৈরি করা হয়েছে, তা গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে না। কিছু তথ্য ও সমীক্ষায় কেবল সেই কৃষ্ণশৈলের চূড়াটুকু দৃশ্যমান। তেমনই কিছু তথ্য বলছে—দেশের অগ্রগণ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষকদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ওদিকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসমুখী হচ্ছে না। তারা এখন ক্লাস করার চেয়ে অলীক সব দাবিদাওয়া আদায়ের মিছিলে অংশ নিতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে।
শিক্ষা নিয়ে সরকারের উদাসীনতা অত্যন্ত ক্ষতিকর। কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে তার শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে হয়। শিক্ষকদের অবহেলা করে তাদের শেখানোর ইচ্ছাকে নষ্ট করে দিতে হয়। আমাদের দেশে যেন তা-ই চলছে। পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই নৈরাজ্যমুখী। উদ্বেগ সবখানে। প্রাথমিক শিক্ষাই হলো সব শিক্ষার ভিত্তি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি হলো—প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণি মিলিয়ে দেশের প্রায় ৫৬ লাখ শিশু বিদ্যালয়ে যায় না। ঝরে পড়ার হারও আরও অনেক বেশি। তার ওপর কোচিং-বাণিজ্য ও প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানাবিধ কারণে সংখ্যাধিক শিশু ও শিক্ষার্থীরা প্রতিভা বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত ও অবহেলিত হচ্ছে।
শিক্ষা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কোনো উদ্যোগ সরকারিভাবে নেওয়া হচ্ছে না। বরং শিক্ষায় একধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। শিক্ষা খাতের বরাদ্দ সিংহভাগ চলে যায় ক্যাডেটসহ নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সেখানে একটা বিশেষ শ্রেণি লেখাপড়ার সুযোগ পায়। দেশে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি অনেক দিনের। কিন্তু সেই দাবিকে উপেক্ষা করে দেশে প্রাইভেট পাবলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দামি বিলাসবহুল ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বা কলেজ এবং সাধারণ স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ নানা ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা বহাল রাখা হয়েছে। এতে ধনী ও দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে বৈষম্য আরও বাড়ছে। সব রকম বৈষম্য বাতিল করে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করা হলে ‘সবার জন্য শিক্ষা’ ‘অধিকার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। কিন্তু সেটা আমাদের দেশে কবে হবে, আদৌ হবে কি না কে জানে!
যাহোক, সামগ্রিক শিক্ষা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি তুলে লাভ নেই, কেননা এই সরকারের পক্ষ থেকে নানা বিষয়ে সংস্কার কমিটি করা হলেও শিক্ষা নিয়ে কোনো কমিটি করা হয়নি। তার মানে শিক্ষা তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। এই মুহূর্তে পাঠ্যবই সংকট নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্তত আগামী বছর যেন এমন সংকট না হয়, সে জন্য সরকারকে আগাম পরিকল্পনা করে মুদ্রণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ার সময়সীমা সংক্ষিপ্ত করে আরও দ্রুত মুদ্রণ কার্যক্রম শুরু করা উচিত। এ ছাড়া ভবিষ্যতে পাঠ্যবই বিতরণের সময়সীমা নির্ধারণ ও তা কার্যকর করার জন্য কঠোর তদারকি দরকার।
পরিশেষে, পাঠ্যবই সংকট নিরসন করে শিক্ষাব্যবস্থাকে স্বাভাবিক করতে সরকার, শিক্ষাবিদ, প্রকাশক এবং মুদ্রণ মালিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নিরবচ্ছিন্ন ও সময়মতো বই সরবরাহ নিশ্চিত করা সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী।
৪ ঘণ্টা আগে
দেখতে দেখতেই যেন বছরটা শেষ হয়ে আসছে। ২০২৫ সালের হতাশা-প্রত্যাশার হিসাব কষতে কষতে বড়দিন কড়া নেড়ে দিল দরজায়। সব হতাশা ভুলে প্রত্যাশা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতে প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগমন হয়, ভালোবাসা ও একতার বাণী ছড়িয়ে।
১ দিন আগে
গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। এই দর্পণে চোখ রাখলে সমাজ তার অন্ধকার দিকগুলো আবিষ্কার করতে পারে, ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায়। এ কারণেই যুগে যুগে সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া ব্যক্তিরা গণমাধ্যমকে ‘শত্রু’ মনে করে এসেছে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি দিয়ে তারা সমাজের এই দর্পণের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে।
১ দিন আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় যুদ্ধের ধারণা আমূল বদলে গেছে। রাষ্ট্রের সীমান্ত, সেনাবাহিনী কিংবা প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র আর একমাত্র ক্ষমতার মানদণ্ড নয়; বরং অদৃশ্য, নীরব ও প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সাইবার স্পেস।
১ দিন আগেতারেকের প্রত্যাবর্তন: অভিমত
অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী। যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছেন, সেদিন থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পরিচালিত হয়েছে, তা তিনি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছেন। বহু প্রতিভার অধিকারী বাবা জিয়াউর রহমান কীভাবে চড়াই-উতরাই মোকাবিলা করে দেশকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নিয়েছেন, তাও তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। মা খালেদা জিয়া হলেন তাঁর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু। রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই স্বৈরাচারী এরশাদ প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। তখন বিএনপির খুব দুঃসময়। হাল ধরলেন খালেদা জিয়া। তারেক রহমান প্রত্যক্ষ করেছেন, নবাগত তাঁর মা কীভাবে ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে সুসংগঠিত করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনবার দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে তারেক রহমানের রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলায় দলের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে। তৃণমূল সম্মেলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে পরিচিত হন, যা ছিল তাঁর জন্য মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা তাঁর পরিবার থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতার ঝুলিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করার কাজে সেই অভিজ্ঞতাকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন। অতঃপর এই অঙ্গনে তাঁর কর্মকাণ্ড ছিল নিরন্তর প্রবহমান। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশব্যাপী প্রচার-কার্যক্রম পরিচালনার পাঠ গ্রহণ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে আধুনিক ও কার্যকর প্রচারের কৌশল প্রণয়নে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং বিএনপির অমিত সম্ভাবনাময় নেতা হিসেবে তাঁর অভ্যুদয় ঘটে। ২০০১ সালে নির্বাচিত হন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে। ২০০৯ সালে দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। অল্প সময়ের মধ্যেই তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক গণসংযোগ ও যুবসমাজকে রাজনীতির প্রশিক্ষণ দিয়ে নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ দেশবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সাংগঠনিক দক্ষতা তাঁকে দলের ভেতরে ও দেশবাসীর কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তোলে। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় জুলুমের শিকার কারাবন্দী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্থলে ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে রয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। কখনো সংগ্রাম সফলতার মুখ দেখে, আবার কখনো-বা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে নেতাকে অপশক্তির রোষানলে পড়তে হয়। কৈশোরের অনুরূপ তারেক রহমানের রাজনৈতিক অঙ্গনে পথ চলাও নিয়ত সরলরৈখিক হয়নি। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আড়ালে যে সেনা সরকার এসেছিল, তা জরুরি অবস্থা জারি করে বিরাজনীতিকরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়।
বিশেষ করে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনী এবং টাস্কফোর্সের নামে হামলা-মামলা, জুলুম ও নির্যাতন চালায়। দেশনেত্রীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, এই নির্যাতন ও জুলুমের শিকার নেতা-কর্মীদের মধ্যে তারেক রহমানের ওপর নেমে আসা নির্যাতনের মাত্রা ও ধরন ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। ৭ মার্চ ২০০৭ তারিখে গ্রেপ্তারের পর তাঁর ওপর নেমে আসে পৈশাচিক নির্যাতন। এই আক্রমণ তাঁর প্রাণ কেড়ে নেওয়ার জন্যই করা হয়েছিল। তিনি ভাগ্যক্রমে এবং দেশবাসীর দোয়ায় বেঁচে যান। ৭ মার্চ ২০০৭ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এটি তাঁর জন্য একদিক থেকে যেমন নির্বাসনের যন্ত্রণা ভোগের শামিল, অন্যদিক থেকে দুঃসময়ের মুখোমুখি হয়ে তাঁর নিজের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে আরও দৃঢ় করার একটি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া। রাজনৈতিক জীবনের এই আঁকাবাঁকা পথ চলায় তিনি যে জীবনমুখী অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তা তাঁর বর্তমান পথ চলার ক্ষেত্রে পাথেয় হিসেবে ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে দেশের দায়িত্ব পালন করার সময় তাঁর এই অভিজ্ঞতার সুবাদে সূচিত হতে পারে বাংলাদেশে সুস্থ রাজনীতির গতিধারা। পৃথিবীর স্বনামধন্য রাজনীতিকগণের জীবন ইতিহাস পাঠ করলে দেখা যায়, তাঁদের অনেকেরই রাষ্ট্র পরিচালনায় সফল হওয়ার পেছনে রয়েছে অনেক সুখ-দুঃখের অভিজ্ঞতা ও চড়াই-উতরাই পার হওয়ার করুণ কাহিনি। সুখ-দুঃখের এই মিশ্র অভিজ্ঞতাগুলো তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে আরও জোরালো করেছে। তারেক রহমানের রয়েছে নির্যাতনের দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করার অভিজ্ঞতা। রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সফলতম রাষ্ট্রনায়ক পিতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের করুণ কাহিনি প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা। আরও রয়েছে মা খালেদা জিয়ার ৪০ বছর যাবৎ বসবাস করা নিজ বাসস্থান থেকে বিতাড়িত হওয়ার করুণ অভিজ্ঞতা। প্রতিনিয়ত নেতা-কর্মীদের ওপর ঘটে যাওয়া অসংখ্য নিপীড়ন-নির্যাতনের কাহিনি তো রয়েছেই। এই অভিজ্ঞতাগুলো তারেক রহমানকে করে তুলেছে এক সর্বংসহা রাজনীতিক হিসেবে। তাঁর মধ্যে এমন এক বোধ তৈরি হয়েছে, যা তাঁকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অপরিহার্য করে তুলেছে।
সুতরাং বলা যায়, যে অভিজ্ঞতাগুলো একজন মানুষকে ব্যক্তি, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের অন্তর্নিহিত মর্মার্থ উপলব্ধিতে সাহায্য করে, তারেক রহমান সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রায় অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে রাজনীতির পঙ্কিল পথে নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার-আন্দোলনের কর্মপন্থা নির্ধারণে এর চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে কি? বোধ করি নেই।
এখন প্রয়োজন হলো, এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণে সচেষ্ট হওয়া, যার স্বপ্ন নিয়ে এ দেশ রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছিল এবং যার সূচনা করেছিলেন তাঁরই পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা ও পরবর্তী সময়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার মাধ্যমে।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শেষ দিন ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেন, সেদিন থেকেই এই স্বপ্ন পূরণের বাস্তব এক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। প্রতিশোধের অগণতান্ত্রিক পথ পরিহার করে তারেক রহমান জাতির উদ্দেশ্যে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, তা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত থাকবে, সেটাই জাতির প্রত্যাশা। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন শুধু একজন ব্যক্তির ফিরে আসা নয় বরং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে এক নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের এক সুবর্ণ সুযোগ।
অন্তর্বর্তী সরকার তারেক রহমানসহ সকল রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে এই সুযোগের বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকা উচিত। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার বজায় থাকলে প্রতিহিংসার বিপরীতে গণতান্ত্রিক ইতিবাচক প্রতিযোগিতার বিজয় অনিবার্য।
লেখক: অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী। যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছেন, সেদিন থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পরিচালিত হয়েছে, তা তিনি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছেন। বহু প্রতিভার অধিকারী বাবা জিয়াউর রহমান কীভাবে চড়াই-উতরাই মোকাবিলা করে দেশকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নিয়েছেন, তাও তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। মা খালেদা জিয়া হলেন তাঁর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু। রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই স্বৈরাচারী এরশাদ প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। তখন বিএনপির খুব দুঃসময়। হাল ধরলেন খালেদা জিয়া। তারেক রহমান প্রত্যক্ষ করেছেন, নবাগত তাঁর মা কীভাবে ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে সুসংগঠিত করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনবার দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে তারেক রহমানের রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলায় দলের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে। তৃণমূল সম্মেলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে পরিচিত হন, যা ছিল তাঁর জন্য মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা তাঁর পরিবার থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতার ঝুলিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করার কাজে সেই অভিজ্ঞতাকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন। অতঃপর এই অঙ্গনে তাঁর কর্মকাণ্ড ছিল নিরন্তর প্রবহমান। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশব্যাপী প্রচার-কার্যক্রম পরিচালনার পাঠ গ্রহণ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে আধুনিক ও কার্যকর প্রচারের কৌশল প্রণয়নে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং বিএনপির অমিত সম্ভাবনাময় নেতা হিসেবে তাঁর অভ্যুদয় ঘটে। ২০০১ সালে নির্বাচিত হন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে। ২০০৯ সালে দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। অল্প সময়ের মধ্যেই তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক গণসংযোগ ও যুবসমাজকে রাজনীতির প্রশিক্ষণ দিয়ে নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ দেশবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সাংগঠনিক দক্ষতা তাঁকে দলের ভেতরে ও দেশবাসীর কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তোলে। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় জুলুমের শিকার কারাবন্দী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্থলে ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে রয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। কখনো সংগ্রাম সফলতার মুখ দেখে, আবার কখনো-বা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে নেতাকে অপশক্তির রোষানলে পড়তে হয়। কৈশোরের অনুরূপ তারেক রহমানের রাজনৈতিক অঙ্গনে পথ চলাও নিয়ত সরলরৈখিক হয়নি। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আড়ালে যে সেনা সরকার এসেছিল, তা জরুরি অবস্থা জারি করে বিরাজনীতিকরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়।
বিশেষ করে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনী এবং টাস্কফোর্সের নামে হামলা-মামলা, জুলুম ও নির্যাতন চালায়। দেশনেত্রীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, এই নির্যাতন ও জুলুমের শিকার নেতা-কর্মীদের মধ্যে তারেক রহমানের ওপর নেমে আসা নির্যাতনের মাত্রা ও ধরন ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। ৭ মার্চ ২০০৭ তারিখে গ্রেপ্তারের পর তাঁর ওপর নেমে আসে পৈশাচিক নির্যাতন। এই আক্রমণ তাঁর প্রাণ কেড়ে নেওয়ার জন্যই করা হয়েছিল। তিনি ভাগ্যক্রমে এবং দেশবাসীর দোয়ায় বেঁচে যান। ৭ মার্চ ২০০৭ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এটি তাঁর জন্য একদিক থেকে যেমন নির্বাসনের যন্ত্রণা ভোগের শামিল, অন্যদিক থেকে দুঃসময়ের মুখোমুখি হয়ে তাঁর নিজের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে আরও দৃঢ় করার একটি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া। রাজনৈতিক জীবনের এই আঁকাবাঁকা পথ চলায় তিনি যে জীবনমুখী অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তা তাঁর বর্তমান পথ চলার ক্ষেত্রে পাথেয় হিসেবে ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে দেশের দায়িত্ব পালন করার সময় তাঁর এই অভিজ্ঞতার সুবাদে সূচিত হতে পারে বাংলাদেশে সুস্থ রাজনীতির গতিধারা। পৃথিবীর স্বনামধন্য রাজনীতিকগণের জীবন ইতিহাস পাঠ করলে দেখা যায়, তাঁদের অনেকেরই রাষ্ট্র পরিচালনায় সফল হওয়ার পেছনে রয়েছে অনেক সুখ-দুঃখের অভিজ্ঞতা ও চড়াই-উতরাই পার হওয়ার করুণ কাহিনি। সুখ-দুঃখের এই মিশ্র অভিজ্ঞতাগুলো তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে আরও জোরালো করেছে। তারেক রহমানের রয়েছে নির্যাতনের দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করার অভিজ্ঞতা। রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সফলতম রাষ্ট্রনায়ক পিতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের করুণ কাহিনি প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা। আরও রয়েছে মা খালেদা জিয়ার ৪০ বছর যাবৎ বসবাস করা নিজ বাসস্থান থেকে বিতাড়িত হওয়ার করুণ অভিজ্ঞতা। প্রতিনিয়ত নেতা-কর্মীদের ওপর ঘটে যাওয়া অসংখ্য নিপীড়ন-নির্যাতনের কাহিনি তো রয়েছেই। এই অভিজ্ঞতাগুলো তারেক রহমানকে করে তুলেছে এক সর্বংসহা রাজনীতিক হিসেবে। তাঁর মধ্যে এমন এক বোধ তৈরি হয়েছে, যা তাঁকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অপরিহার্য করে তুলেছে।
সুতরাং বলা যায়, যে অভিজ্ঞতাগুলো একজন মানুষকে ব্যক্তি, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের অন্তর্নিহিত মর্মার্থ উপলব্ধিতে সাহায্য করে, তারেক রহমান সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রায় অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে রাজনীতির পঙ্কিল পথে নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার-আন্দোলনের কর্মপন্থা নির্ধারণে এর চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে কি? বোধ করি নেই।
এখন প্রয়োজন হলো, এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণে সচেষ্ট হওয়া, যার স্বপ্ন নিয়ে এ দেশ রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছিল এবং যার সূচনা করেছিলেন তাঁরই পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা ও পরবর্তী সময়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার মাধ্যমে।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শেষ দিন ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেন, সেদিন থেকেই এই স্বপ্ন পূরণের বাস্তব এক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। প্রতিশোধের অগণতান্ত্রিক পথ পরিহার করে তারেক রহমান জাতির উদ্দেশ্যে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, তা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত থাকবে, সেটাই জাতির প্রত্যাশা। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন শুধু একজন ব্যক্তির ফিরে আসা নয় বরং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে এক নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের এক সুবর্ণ সুযোগ।
অন্তর্বর্তী সরকার তারেক রহমানসহ সকল রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে এই সুযোগের বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকা উচিত। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার বজায় থাকলে প্রতিহিংসার বিপরীতে গণতান্ত্রিক ইতিবাচক প্রতিযোগিতার বিজয় অনিবার্য।
লেখক: অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ইংরেজি বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দেয় সরকার। ২০১০ সাল থেকে সরকার প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিয়ে আসছে।
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
দেখতে দেখতেই যেন বছরটা শেষ হয়ে আসছে। ২০২৫ সালের হতাশা-প্রত্যাশার হিসাব কষতে কষতে বড়দিন কড়া নেড়ে দিল দরজায়। সব হতাশা ভুলে প্রত্যাশা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতে প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগমন হয়, ভালোবাসা ও একতার বাণী ছড়িয়ে।
১ দিন আগে
গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। এই দর্পণে চোখ রাখলে সমাজ তার অন্ধকার দিকগুলো আবিষ্কার করতে পারে, ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায়। এ কারণেই যুগে যুগে সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া ব্যক্তিরা গণমাধ্যমকে ‘শত্রু’ মনে করে এসেছে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি দিয়ে তারা সমাজের এই দর্পণের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে।
১ দিন আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় যুদ্ধের ধারণা আমূল বদলে গেছে। রাষ্ট্রের সীমান্ত, সেনাবাহিনী কিংবা প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র আর একমাত্র ক্ষমতার মানদণ্ড নয়; বরং অদৃশ্য, নীরব ও প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সাইবার স্পেস।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

দেখতে দেখতেই যেন বছরটা শেষ হয়ে আসছে। ২০২৫ সালের হতাশা-প্রত্যাশার হিসাব কষতে কষতে বড়দিন কড়া নেড়ে দিল দরজায়। সব হতাশা ভুলে প্রত্যাশা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতে প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগমন হয়, ভালোবাসা ও একতার বাণী ছড়িয়ে। এ দিনে পৃথিবীতে যিশুখ্রিষ্টের আগমন, শান্তি আর সৎপথের বার্তা নিয়ে। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য তাই দিনটি বিশেষ।
আজ বড়দিন। যিশুর অনুসারী তথা খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে বড় উৎসব। পবিত্র এ দিনটি আজ বিশ্বজুড়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে। বহুবিধ সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশেও ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই মিলে উদ্যাপন করছে যিশুর জন্মদিন। গির্জা কিংবা ঘরোয়া পার্বণ—সবখানে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হচ্ছে সেই যিশুকে, যিনি বেথলেহেমের এক গোয়ালঘরে জন্মেছিলেন। স্মরণ করা হচ্ছে তাঁর জন্মের পবিত্র লগ্নকে।
আজ যিশুর বন্দনা গাওয়ার দিন। কারণ, এই দিনে ধরণিতে তাঁর আবির্ভাব হয় বিশেষ উদ্দেশ্যে—ত্রাতা হিসেবে। তিনি অন্যকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। শিখিয়েছেন পাপ-পঙ্কিলতা বর্জন করে করুণা, পবিত্রতা ও সুন্দর পথে কীভাবে জীবন পরিচালনা করা যায়। ঈশ্বরের প্রতি আস্থা এনে মুক্তির পথ খুঁজতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
বড়দিনে যিশুখ্রিষ্টের জন্মের কাহিনি পাঠ ও ধ্যান করা হয়। সেই কাহিনি অবলম্বনে গির্জায় এবং বাড়িতে বাড়িতে গোশালা নির্মাণ করে ফুলপাতা দিয়ে সাজানো হয়। এ দিনে চলে গানবাজনা, নামসংকীর্তন, ভোজন, আনন্দ-উল্লাস। এসব উৎসব-আয়োজনের চেয়েও বড় ব্যাপার হয়ে ওঠে নিজেদের হৃদয়-মন ও অন্তরাত্মাকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করার প্রয়াস। তাই খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা বড়দিনের পূর্ববর্তী চার সপ্তাহব্যাপী ধ্যান-অনুধ্যান, মন পরীক্ষা, ব্যক্তিগত পাপ স্বীকার, সমবেত পুনর্মিলন বা ক্ষমা-অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষে-মানুষে সুসম্পর্ক গড়তে সচেষ্ট হন।
ঈশ্বরের মহান বার্তাবাহক যিশুকে অনুসরণ করলে কতই না সুন্দর একটি সমাজ গঠন করা যায়! অথচ পাপাচারের পৃথিবীতে সেই সমাজ থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে বাস করি। মানবজাতির জন্য এ এক দুর্ভাগ্য! এ রকম সংকটের মুহূর্তেই যিশুর বাণী, বড়দিনের বার্তা যেন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে—মানুষে-মানুষে ভালোবাসা ও একতার বীজ বুনতে হবে; ধর্ম-বর্ণ-জাতিনির্বিশেষে সবার প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। কোনো জাতি, ধর্ম বা তার অনুসারীর প্রতিই বিরুদ্ধাচরণ কাম্য নয়।
বড়দিন উপলক্ষে প্রতিবছর বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে। শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপনের পাশাপাশি দিনটিতে প্রিয় স্বদেশের মঙ্গল কামনার জন্য খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনা করতে ভোলেন না। এই প্রার্থনা আর শান্তিরাজ যিশুর দেখানো পথে চলার প্রয়াসই কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারে। বড়দিন সবাইকে বারবার সুযোগ দেয় দুর্নীতি, অনাচার, পাপাচার বর্জন করে সৎপথে চলার। সেই সুযোগ হেলায় হারানো যাবে না। বরং কাজে লাগিয়ে গড়তে হবে একতার বাংলাদেশ; যে বাংলাদেশে ধর্মকে পুঁজি করে মিথ্যা অপবাদে কাউকে হত্যা করা হবে না—সে যে কেউ হোক।
সবার জীবনে বড়দিন শান্তি বয়ে আনুক। সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা।

দেখতে দেখতেই যেন বছরটা শেষ হয়ে আসছে। ২০২৫ সালের হতাশা-প্রত্যাশার হিসাব কষতে কষতে বড়দিন কড়া নেড়ে দিল দরজায়। সব হতাশা ভুলে প্রত্যাশা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতে প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগমন হয়, ভালোবাসা ও একতার বাণী ছড়িয়ে। এ দিনে পৃথিবীতে যিশুখ্রিষ্টের আগমন, শান্তি আর সৎপথের বার্তা নিয়ে। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য তাই দিনটি বিশেষ।
আজ বড়দিন। যিশুর অনুসারী তথা খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে বড় উৎসব। পবিত্র এ দিনটি আজ বিশ্বজুড়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে। বহুবিধ সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশেও ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই মিলে উদ্যাপন করছে যিশুর জন্মদিন। গির্জা কিংবা ঘরোয়া পার্বণ—সবখানে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হচ্ছে সেই যিশুকে, যিনি বেথলেহেমের এক গোয়ালঘরে জন্মেছিলেন। স্মরণ করা হচ্ছে তাঁর জন্মের পবিত্র লগ্নকে।
আজ যিশুর বন্দনা গাওয়ার দিন। কারণ, এই দিনে ধরণিতে তাঁর আবির্ভাব হয় বিশেষ উদ্দেশ্যে—ত্রাতা হিসেবে। তিনি অন্যকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। শিখিয়েছেন পাপ-পঙ্কিলতা বর্জন করে করুণা, পবিত্রতা ও সুন্দর পথে কীভাবে জীবন পরিচালনা করা যায়। ঈশ্বরের প্রতি আস্থা এনে মুক্তির পথ খুঁজতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
বড়দিনে যিশুখ্রিষ্টের জন্মের কাহিনি পাঠ ও ধ্যান করা হয়। সেই কাহিনি অবলম্বনে গির্জায় এবং বাড়িতে বাড়িতে গোশালা নির্মাণ করে ফুলপাতা দিয়ে সাজানো হয়। এ দিনে চলে গানবাজনা, নামসংকীর্তন, ভোজন, আনন্দ-উল্লাস। এসব উৎসব-আয়োজনের চেয়েও বড় ব্যাপার হয়ে ওঠে নিজেদের হৃদয়-মন ও অন্তরাত্মাকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করার প্রয়াস। তাই খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা বড়দিনের পূর্ববর্তী চার সপ্তাহব্যাপী ধ্যান-অনুধ্যান, মন পরীক্ষা, ব্যক্তিগত পাপ স্বীকার, সমবেত পুনর্মিলন বা ক্ষমা-অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষে-মানুষে সুসম্পর্ক গড়তে সচেষ্ট হন।
ঈশ্বরের মহান বার্তাবাহক যিশুকে অনুসরণ করলে কতই না সুন্দর একটি সমাজ গঠন করা যায়! অথচ পাপাচারের পৃথিবীতে সেই সমাজ থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে বাস করি। মানবজাতির জন্য এ এক দুর্ভাগ্য! এ রকম সংকটের মুহূর্তেই যিশুর বাণী, বড়দিনের বার্তা যেন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে—মানুষে-মানুষে ভালোবাসা ও একতার বীজ বুনতে হবে; ধর্ম-বর্ণ-জাতিনির্বিশেষে সবার প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। কোনো জাতি, ধর্ম বা তার অনুসারীর প্রতিই বিরুদ্ধাচরণ কাম্য নয়।
বড়দিন উপলক্ষে প্রতিবছর বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে। শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপনের পাশাপাশি দিনটিতে প্রিয় স্বদেশের মঙ্গল কামনার জন্য খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনা করতে ভোলেন না। এই প্রার্থনা আর শান্তিরাজ যিশুর দেখানো পথে চলার প্রয়াসই কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারে। বড়দিন সবাইকে বারবার সুযোগ দেয় দুর্নীতি, অনাচার, পাপাচার বর্জন করে সৎপথে চলার। সেই সুযোগ হেলায় হারানো যাবে না। বরং কাজে লাগিয়ে গড়তে হবে একতার বাংলাদেশ; যে বাংলাদেশে ধর্মকে পুঁজি করে মিথ্যা অপবাদে কাউকে হত্যা করা হবে না—সে যে কেউ হোক।
সবার জীবনে বড়দিন শান্তি বয়ে আনুক। সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা।

ইংরেজি বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দেয় সরকার। ২০১০ সাল থেকে সরকার প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিয়ে আসছে।
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী।
৪ ঘণ্টা আগে
গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। এই দর্পণে চোখ রাখলে সমাজ তার অন্ধকার দিকগুলো আবিষ্কার করতে পারে, ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায়। এ কারণেই যুগে যুগে সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া ব্যক্তিরা গণমাধ্যমকে ‘শত্রু’ মনে করে এসেছে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি দিয়ে তারা সমাজের এই দর্পণের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে।
১ দিন আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় যুদ্ধের ধারণা আমূল বদলে গেছে। রাষ্ট্রের সীমান্ত, সেনাবাহিনী কিংবা প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র আর একমাত্র ক্ষমতার মানদণ্ড নয়; বরং অদৃশ্য, নীরব ও প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সাইবার স্পেস।
১ দিন আগেরাজিউল হাসান

গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। এই দর্পণে চোখ রাখলে সমাজ তার অন্ধকার দিকগুলো আবিষ্কার করতে পারে, ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায়। এ কারণেই যুগে যুগে সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া ব্যক্তিরা গণমাধ্যমকে ‘শত্রু’ মনে করে এসেছে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি দিয়ে তারা সমাজের এই দর্পণের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে। সেই ধারাবাহিকতা ২০২৫ সালেও ছিল। এ বছরেও গণমাধ্যম আক্রান্ত হয়েছে, সাংবাদিকদের প্রাণ গেছে।
সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ফ্রান্সের প্যারিসভিত্তিক আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডাসের তথ্য বলছে, বিদ্বেষ ও দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণে ২০২৫ সালেও সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। এ বছর পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিক শুধু প্রাণই দেননি, তাঁরা হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্যবস্তুও হয়েছেন।
সংগঠনটির তথ্য বলছে, বিগত ১২ মাসে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকসহ ৬৭ জন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫৩ জনই প্রাণ দিয়েছেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিংবা অপরাধী চক্রের লক্ষ্যবস্তু হয়ে। এই ৬৭ জনের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরই প্রাণ গেছে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে। এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধেও সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে সাংবাদিকদের। আফ্রিকার দেশ সুদান সাংবাদিকদের জন্য হয়ে উঠেছে প্রাণঘাতী যুদ্ধক্ষেত্র। মেক্সিকোয় অপরাধী চক্রের হাতে প্রাণ গেছে ৯ সাংবাদিকের। উত্তর আমেরিকার এই দেশটিকে বলা হয় সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের দ্বিতীয় বিপজ্জনক রাষ্ট্র।
সাংবাদিকেরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শুধু প্রাণই দিচ্ছেন না, তাঁরা আটক-গ্রেপ্তারেরও শিকার হয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অন্তত ৫০৩ জন সাংবাদিক কারান্তরীণ হয়ে আছেন।
কেবল অপরাধ চক্রের উৎপাতে অতিষ্ঠ দেশ কিংবা যুদ্ধকবলিত দেশই নয়, গণতন্ত্রের চর্চার দাবি করা দেশেও সাংবাদিকেরা দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন। খোদ যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকের ওপর সহিংসতা বেড়ে গেছে। ফ্রিডম অব দ্য প্রেস ফাউন্ডেশন নামের অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যত সাংবাদিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তা গত তিন বছরের মোট সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনার সংখ্যার বেশি।
ফ্রিডম অব দ্য প্রেস ফাউন্ডেশন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে নিপীড়নের শিকার সাংবাদিকদের বেশির ভাগই আক্রান্ত হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা।
প্রশ্ন উঠতে পারে, সাংবাদিক কেন আক্রান্ত হন? বিশ্বজুড়েই দেখা যায়, যখন কোথাও অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়, সাংবাদিক সেখানে যান পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে তথ্য সংগ্রহ করতে। তিনি কারও পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কাজ করেন না। শুধু জনসাধারণকে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টায় কোনো না কোনো পক্ষ ক্ষুব্ধ হয় সেই পক্ষের উদ্দেশ্য প্রকাশ হওয়ার ভয়ে।
আবার অপরাধী চক্র সাংবাদিককে আক্রমণ করে তাদের গোমর ফাঁসের ভয়ে। যুদ্ধক্ষেত্রে সাংবাদিকের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বেশি থাকে। কারণ, এমন পরিস্থিতিতে মানবাধিকারের বালাই থাকে না। মাঠের পরিস্থিতি যেন বিশ্বমানবতা জানতে না পারে, সে চেষ্টার অংশ হিসেবে আক্রমণ করা হয় সাংবাদিককে।
কখনো কখনো শুধু রোষের বশেও সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করা হয়। শুধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী না, কখনো কখনো রাষ্ট্রও গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরে। সচেতন পাঠকমাত্রই জানেন, এর উদাহরণ বিশ্বজুড়েই রয়েছে। নতুন করে আর কোনো দেশের নামোল্লেখ করতে চাই না।
কিন্তু গণমাধ্যম সরকার ও সমাজের বন্ধু হওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল সমাজের নানা ত্রুটি তুলে ধরে গণমাধ্যম রাষ্ট্র গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। গণমাধ্যম সে প্রচেষ্টা করেও যাচ্ছে। গণমাধ্যমের শাসক কিংবা কোনো গোষ্ঠীর ‘দাসে’ পরিণত হওয়ার রেকর্ড যদিও আছে, কিন্তু সেটা হাতে গোনা বলা চলে। বাকি গণমাধ্যমগুলো সমাজকে সঠিক পথ দেখাতেই নিরন্তর কাজ করে চলেছে। উদাহরণও আছে ভূরি ভূরি। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে ওয়াশিংটন পোস্ট ও দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ভূমিকা রেখেছিল, তা যুগ যুগ ধরে আলোচনা হবে। কিংবা হাল আমলে যুক্তরাজ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের করোনাকালীন ভূমিকা বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ সে দেশের গণমাধ্যমগুলো যেভাবে প্রকাশ করেছিল, সেটাও বড় উদাহরণ।
একটি জাতি গঠন কিংবা সমাজ গঠন—যে গঠনের কথাই বলা হোক না কেন, গণমাধ্যমের ভূমিকা কিছুতেই খাটো করে দেখা যাবে না। সমাজের ভুলত্রুটিগুলো তুলে ধরাই সাংবাদিকের কাজ। এমনকি শাসক দল যখন বিরোধী দলের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়, তখন গণমাধ্যমই তাদের কথা সবার সামনে তুলে ধরে। অথচ এমনও দেখা গেছে, সেই বিরোধী দল যখন সরকারে যায়, তারাও গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা করেছে। এভাবেই যুগে যুগে সংবাদমাধ্যমকে বাকরুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে, এখনো হচ্ছে।
আমরা যদি একটু গভীরে ভাবি, তাহলে দেখব, সাংবাদিক যে পারিশ্রমিক পান, সে তুলনায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি যে ঝুঁকি নেন, তা অনেক অনেক বেশি। কার এমন দায় পড়েছে নগণ্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি জীবনের ঝুঁকি নেবেন। তারপরও তিনি ঝুঁকি নেন দায়িত্বের জায়গা থেকে, তিনি ঝুঁকি নেন জনসাধারণকে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার নেশা থেকে। এই নেশাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া উচিত, দমন করা উচিত নয়। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ মানে একটি সমাজের মৃত্যুর ঘণ্টা বাজিয়ে দেওয়া। সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
একবার ভাবুন, একটি দেশের গণমাধ্যমের কণ্ঠ যদি পুরোদমে রোধ করে দেওয়া হয়, তাহলে সেই রাষ্ট্রের অবস্থা কী হবে। কেবল ‘বাতাবি লেবুর রেকর্ড ফলনেরই’ গান শুনতে হবে পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায়। কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হলে কেউ থাকবে না কথা বলার।
কাজেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সবার জন্যই জরুরি। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে গণমাধ্যমের সেই স্বাধীনতার সুযোগে সে দূর করতে পারে সমাজের পঙ্কিলতা। বিরোধীরা চাইলে সেই স্বাধীনতার সুযোগে সরকারের অন্ধকার দিকগুলো সমাজের সামনে তুলে ধরতে পারবে। এভাবে পুরো সমাজ-রাষ্ট্রে নিশ্চিত হতে পারে জবাবদিহি।
কিন্তু বিশ্বে গণমাধ্যম নিয়ে এমন নীতি খুব কমই দেখা যায়। বরং উল্টো ঘটনাই বেশি ঘটছে। তারপরও গণমাধ্যম তার কাজ করে চলেছে, যাবে। কারণ, গণমাধ্যম হলো ফিনিক্স পাখির মতো। সে আক্রান্ত হবে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে, তারপর সেখান থেকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। গণমাধ্যম এমন একটি শিল্প, এমন একটি দায়বদ্ধতা, যা কখনো কোনো দিন কোনো হামলা, হুমকি, ত্রাসের কাছে মাথা নত করবে না।

গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। এই দর্পণে চোখ রাখলে সমাজ তার অন্ধকার দিকগুলো আবিষ্কার করতে পারে, ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায়। এ কারণেই যুগে যুগে সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া ব্যক্তিরা গণমাধ্যমকে ‘শত্রু’ মনে করে এসেছে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি দিয়ে তারা সমাজের এই দর্পণের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে। সেই ধারাবাহিকতা ২০২৫ সালেও ছিল। এ বছরেও গণমাধ্যম আক্রান্ত হয়েছে, সাংবাদিকদের প্রাণ গেছে।
সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ফ্রান্সের প্যারিসভিত্তিক আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডাসের তথ্য বলছে, বিদ্বেষ ও দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণে ২০২৫ সালেও সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। এ বছর পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিক শুধু প্রাণই দেননি, তাঁরা হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্যবস্তুও হয়েছেন।
সংগঠনটির তথ্য বলছে, বিগত ১২ মাসে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকসহ ৬৭ জন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫৩ জনই প্রাণ দিয়েছেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিংবা অপরাধী চক্রের লক্ষ্যবস্তু হয়ে। এই ৬৭ জনের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরই প্রাণ গেছে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে। এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধেও সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে সাংবাদিকদের। আফ্রিকার দেশ সুদান সাংবাদিকদের জন্য হয়ে উঠেছে প্রাণঘাতী যুদ্ধক্ষেত্র। মেক্সিকোয় অপরাধী চক্রের হাতে প্রাণ গেছে ৯ সাংবাদিকের। উত্তর আমেরিকার এই দেশটিকে বলা হয় সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের দ্বিতীয় বিপজ্জনক রাষ্ট্র।
সাংবাদিকেরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শুধু প্রাণই দিচ্ছেন না, তাঁরা আটক-গ্রেপ্তারেরও শিকার হয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অন্তত ৫০৩ জন সাংবাদিক কারান্তরীণ হয়ে আছেন।
কেবল অপরাধ চক্রের উৎপাতে অতিষ্ঠ দেশ কিংবা যুদ্ধকবলিত দেশই নয়, গণতন্ত্রের চর্চার দাবি করা দেশেও সাংবাদিকেরা দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন। খোদ যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকের ওপর সহিংসতা বেড়ে গেছে। ফ্রিডম অব দ্য প্রেস ফাউন্ডেশন নামের অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যত সাংবাদিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তা গত তিন বছরের মোট সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনার সংখ্যার বেশি।
ফ্রিডম অব দ্য প্রেস ফাউন্ডেশন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে নিপীড়নের শিকার সাংবাদিকদের বেশির ভাগই আক্রান্ত হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা।
প্রশ্ন উঠতে পারে, সাংবাদিক কেন আক্রান্ত হন? বিশ্বজুড়েই দেখা যায়, যখন কোথাও অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়, সাংবাদিক সেখানে যান পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে তথ্য সংগ্রহ করতে। তিনি কারও পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কাজ করেন না। শুধু জনসাধারণকে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টায় কোনো না কোনো পক্ষ ক্ষুব্ধ হয় সেই পক্ষের উদ্দেশ্য প্রকাশ হওয়ার ভয়ে।
আবার অপরাধী চক্র সাংবাদিককে আক্রমণ করে তাদের গোমর ফাঁসের ভয়ে। যুদ্ধক্ষেত্রে সাংবাদিকের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বেশি থাকে। কারণ, এমন পরিস্থিতিতে মানবাধিকারের বালাই থাকে না। মাঠের পরিস্থিতি যেন বিশ্বমানবতা জানতে না পারে, সে চেষ্টার অংশ হিসেবে আক্রমণ করা হয় সাংবাদিককে।
কখনো কখনো শুধু রোষের বশেও সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করা হয়। শুধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী না, কখনো কখনো রাষ্ট্রও গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরে। সচেতন পাঠকমাত্রই জানেন, এর উদাহরণ বিশ্বজুড়েই রয়েছে। নতুন করে আর কোনো দেশের নামোল্লেখ করতে চাই না।
কিন্তু গণমাধ্যম সরকার ও সমাজের বন্ধু হওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল সমাজের নানা ত্রুটি তুলে ধরে গণমাধ্যম রাষ্ট্র গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। গণমাধ্যম সে প্রচেষ্টা করেও যাচ্ছে। গণমাধ্যমের শাসক কিংবা কোনো গোষ্ঠীর ‘দাসে’ পরিণত হওয়ার রেকর্ড যদিও আছে, কিন্তু সেটা হাতে গোনা বলা চলে। বাকি গণমাধ্যমগুলো সমাজকে সঠিক পথ দেখাতেই নিরন্তর কাজ করে চলেছে। উদাহরণও আছে ভূরি ভূরি। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে ওয়াশিংটন পোস্ট ও দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ভূমিকা রেখেছিল, তা যুগ যুগ ধরে আলোচনা হবে। কিংবা হাল আমলে যুক্তরাজ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের করোনাকালীন ভূমিকা বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ সে দেশের গণমাধ্যমগুলো যেভাবে প্রকাশ করেছিল, সেটাও বড় উদাহরণ।
একটি জাতি গঠন কিংবা সমাজ গঠন—যে গঠনের কথাই বলা হোক না কেন, গণমাধ্যমের ভূমিকা কিছুতেই খাটো করে দেখা যাবে না। সমাজের ভুলত্রুটিগুলো তুলে ধরাই সাংবাদিকের কাজ। এমনকি শাসক দল যখন বিরোধী দলের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়, তখন গণমাধ্যমই তাদের কথা সবার সামনে তুলে ধরে। অথচ এমনও দেখা গেছে, সেই বিরোধী দল যখন সরকারে যায়, তারাও গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা করেছে। এভাবেই যুগে যুগে সংবাদমাধ্যমকে বাকরুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে, এখনো হচ্ছে।
আমরা যদি একটু গভীরে ভাবি, তাহলে দেখব, সাংবাদিক যে পারিশ্রমিক পান, সে তুলনায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি যে ঝুঁকি নেন, তা অনেক অনেক বেশি। কার এমন দায় পড়েছে নগণ্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি জীবনের ঝুঁকি নেবেন। তারপরও তিনি ঝুঁকি নেন দায়িত্বের জায়গা থেকে, তিনি ঝুঁকি নেন জনসাধারণকে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার নেশা থেকে। এই নেশাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া উচিত, দমন করা উচিত নয়। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ মানে একটি সমাজের মৃত্যুর ঘণ্টা বাজিয়ে দেওয়া। সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
একবার ভাবুন, একটি দেশের গণমাধ্যমের কণ্ঠ যদি পুরোদমে রোধ করে দেওয়া হয়, তাহলে সেই রাষ্ট্রের অবস্থা কী হবে। কেবল ‘বাতাবি লেবুর রেকর্ড ফলনেরই’ গান শুনতে হবে পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায়। কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হলে কেউ থাকবে না কথা বলার।
কাজেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সবার জন্যই জরুরি। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে গণমাধ্যমের সেই স্বাধীনতার সুযোগে সে দূর করতে পারে সমাজের পঙ্কিলতা। বিরোধীরা চাইলে সেই স্বাধীনতার সুযোগে সরকারের অন্ধকার দিকগুলো সমাজের সামনে তুলে ধরতে পারবে। এভাবে পুরো সমাজ-রাষ্ট্রে নিশ্চিত হতে পারে জবাবদিহি।
কিন্তু বিশ্বে গণমাধ্যম নিয়ে এমন নীতি খুব কমই দেখা যায়। বরং উল্টো ঘটনাই বেশি ঘটছে। তারপরও গণমাধ্যম তার কাজ করে চলেছে, যাবে। কারণ, গণমাধ্যম হলো ফিনিক্স পাখির মতো। সে আক্রান্ত হবে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে, তারপর সেখান থেকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। গণমাধ্যম এমন একটি শিল্প, এমন একটি দায়বদ্ধতা, যা কখনো কোনো দিন কোনো হামলা, হুমকি, ত্রাসের কাছে মাথা নত করবে না।

ইংরেজি বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দেয় সরকার। ২০১০ সাল থেকে সরকার প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিয়ে আসছে।
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী।
৪ ঘণ্টা আগে
দেখতে দেখতেই যেন বছরটা শেষ হয়ে আসছে। ২০২৫ সালের হতাশা-প্রত্যাশার হিসাব কষতে কষতে বড়দিন কড়া নেড়ে দিল দরজায়। সব হতাশা ভুলে প্রত্যাশা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতে প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগমন হয়, ভালোবাসা ও একতার বাণী ছড়িয়ে।
১ দিন আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় যুদ্ধের ধারণা আমূল বদলে গেছে। রাষ্ট্রের সীমান্ত, সেনাবাহিনী কিংবা প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র আর একমাত্র ক্ষমতার মানদণ্ড নয়; বরং অদৃশ্য, নীরব ও প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সাইবার স্পেস।
১ দিন আগেড. জাহাঙ্গীর আলম সরকার

একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় যুদ্ধের ধারণা আমূল বদলে গেছে। রাষ্ট্রের সীমান্ত, সেনাবাহিনী কিংবা প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র আর একমাত্র ক্ষমতার মানদণ্ড নয়; বরং অদৃশ্য, নীরব ও প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সাইবার স্পেস। আজ তথ্যই শক্তি, ডেটাই অস্ত্র এবং নেটওয়ার্কই নতুন ফ্রন্টলাইন। রাষ্ট্রের অর্থনীতি, সামরিক সক্ষমতা, কূটনীতি, এমনকি নাগরিকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে উঠছে ডিজিটাল অবকাঠামোর ওপর।
সাইবার যুদ্ধ এখন আর কল্পবিজ্ঞান নয়; এটি বাস্তব, চলমান এবং ক্রমাগত বিস্তৃত এক বৈশ্বিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা অচল করা, ব্যাংকিং সিস্টেমে অনুপ্রবেশ, নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ, ভুয়া তথ্য ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ—সবকিছুই আজ সাইবার আক্রমণের আওতায় পড়ে। এসব আক্রমণ কোনো যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই, কোনো গুলির শব্দ ছাড়াই একটি রাষ্ট্রকে কার্যত অচল করে দিতে পারে। ফলে সামরিক শক্তির পাশাপাশি সাইবার সক্ষমতা এখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এরই সঙ্গে দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে নজরদারি প্রযুক্তি। জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে রাষ্ট্রগুলো নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ, যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর ডেটা বিশ্লেষণের দিকে ঝুঁকছে। ক্যামেরা, বায়োমেট্রিক ডেটা, মেটাডেটা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সবকিছুই নজরদারির আওতায় চলে আসছে। এতে একদিকে সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধ দমনের সম্ভাবনা তৈরি হলেও, অন্যদিকে ব্যক্তিস্বাধীনতা, গোপনীয়তা ও মানবাধিকারের প্রশ্নও তীব্র হয়ে উঠছে।
এই প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কোন পথে যাচ্ছে—সে প্রশ্ন ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। সাইবার অস্ত্র প্রতিযোগিতা, ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব, তথ্যনির্ভর আধিপত্য এবং প্রযুক্তিগত অসমতা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করছে। শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো যেখানে প্রযুক্তিকে আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, সেখানে উন্নয়নশীল ও দুর্বল রাষ্ট্রগুলো পড়ছে নতুন ধরনের ঝুঁকির মুখে।
এই কলামে সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তির উদ্ভব, রাষ্ট্রীয় কৌশলে এর প্রভাব এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তাকাঠামোর ওপর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিফলন বিশ্লেষণ করা হবে। একই সঙ্গে প্রশ্ন তোলা হবে—নিরাপত্তার নামে কতটা নজরদারি গ্রহণযোগ্য এবং এই অদৃশ্য যুদ্ধের যুগে মানবিক মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক নৈতিকতা আদৌ টিকে থাকবে কি না।
আধুনিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও অ-রাষ্ট্রীয় সংস্থার কৌশলগত আচরণে সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তি এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সামরিক শক্তি প্রদর্শনের প্রচলিত কাঠামোর বাইরে গিয়ে এই অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্য, ডেটা এবং ডিজিটাল অবকাঠামোর নিয়ন্ত্রণই হয়ে উঠেছে প্রভাব বিস্তারের প্রধান হাতিয়ার। রাষ্ট্রের পাশাপাশি বহুজাতিক করপোরেশন, হ্যাকার গোষ্ঠী, সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক এবং রাষ্ট্র-সমর্থিত সাইবার ইউনিটগুলোও সাইবার স্পেসকে ব্যবহার করছে কৌশলগত সুবিধা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে।
এই প্রেক্ষাপটে সাইবার হামলা, ডিজিটাল স্পাইয়িং, তথ্য চুরি, গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্কে ব্যাঘাত সৃষ্টি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রোপাগান্ডা আধুনিক সংঘাতের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। কোনো একটি দেশের বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা, আর্থিক খাত, সামরিক যোগাযোগ বা নির্বাচনব্যবস্থায় সামান্য ডিজিটাল হস্তক্ষেপও তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এই ধরনের আক্রমণ প্রায়ই অজ্ঞাতনামা, সীমান্তহীন এবং যুদ্ধ ঘোষণার বাইরে সংঘটিত হয়, যা প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তাকাঠামোকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
ফলস্বরূপ, সাইবার যুদ্ধ এবং নজরদারি প্রযুক্তি আজ আধুনিক রাষ্ট্রগুলোর কৌশলগত সক্ষমতা, প্রতিরক্ষা নীতি এবং নিরাপত্তা পরিকল্পনার একটি কেন্দ্রীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রগুলো শুধু আক্রমণ প্রতিরোধেই নয়, বরং আগাম হুমকি শনাক্তকরণ, প্রতিপক্ষের দুর্বলতা বিশ্লেষণ এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই প্রযুক্তির ওপর ক্রমবর্ধমানভাবে নির্ভর করছে। এর পাশাপাশি, সাইবার সক্ষমতা এখন আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব, সামরিক জোট এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তবে এই বাস্তবতা শুধু প্রযুক্তিগত বা সামরিক সক্ষমতার প্রশ্নে সীমাবদ্ধ নয়। সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তির বিস্তার জিওপলিটিকসের সামগ্রিক কাঠামো, রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা স্থিতিশীলতার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে। ক্ষমতার ভারসাম্য, সার্বভৌমত্বের ধারণা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা—সবকিছুই নতুন করে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে এই ডিজিটাল যুগে।
এই প্রেক্ষাপটে আধুনিক সাইবার ক্ষেত্রের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব রাষ্ট্রগুলোর জন্য কৌশলগত সতর্কতা, নীতি সমন্বয় এবং বহুপক্ষীয় নিরাপত্তা অংশীদারত্বের প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। বৈশ্বিক নিরাপত্তা কোন পথে অগ্রসর হচ্ছে—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এই কলামে সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তির বহুমাত্রিক প্রভাব বিশ্লেষণের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
সাইবার যুদ্ধ এবং নজরদারি প্রযুক্তি আধুনিক জিওপলিটিকসের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এটি আর শুধু প্রতিরক্ষা বা আক্রমণের হাতিয়ার নয়; বরং রাষ্ট্রগুলোর কৌশলগত প্রভাব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা স্থিতিশীলতার মূল নির্ধারণকারী। প্রতিটি ডিজিটাল নেটওয়ার্ক, তথ্যপ্রবাহ এবং নজরদারি সক্ষমতা আজ রাষ্ট্রকে শক্তিশালী বা দুর্বল করতে পারে—এটি শুধু প্রযুক্তির নয়, ক্ষমতারও খেলা।
এই বাস্তবতায় রাষ্ট্রগুলোর জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে কৌশলগত সতর্কতা, তথ্যভিত্তিক নীতিনির্ধারণ এবং বহুপক্ষীয় অংশীদারত্বের মাধ্যমে বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ন্যায্য এবং নিয়ন্ত্রিত সাইবার ক্ষমতার ব্যবহার আজ শুধু প্রতিরক্ষা নয়; এটি রাষ্ট্রের কূটনীতি, শক্তি ভারসাম্য এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার রক্ষাকবচে পরিণত হয়েছে।
ফলস্বরূপ আধুনিক জিওপলিটিকসে সাইবার যুদ্ধ এবং নজরদারি প্রযুক্তি শুধু এক হাতিয়ার নয়; এটি রাষ্ট্রগুলোর ভবিষ্যৎ, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা এবং শান্তি রক্ষার এক অদৃশ্য, কিন্তু শক্তিশালী ভিত্তি। প্রযুক্তির অদৃশ্য স্রোতগুলোর মধ্যে আজ রাষ্ট্রের ক্ষমতা, নিরাপত্তা এবং প্রভাবের মান নির্ধারিত হচ্ছে—এটি আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা, যা দীর্ঘদিন আমাদের স্মৃতিতে এবং নীতিতে টেকসই রেশ রেখে যাবে।

একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় যুদ্ধের ধারণা আমূল বদলে গেছে। রাষ্ট্রের সীমান্ত, সেনাবাহিনী কিংবা প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র আর একমাত্র ক্ষমতার মানদণ্ড নয়; বরং অদৃশ্য, নীরব ও প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সাইবার স্পেস। আজ তথ্যই শক্তি, ডেটাই অস্ত্র এবং নেটওয়ার্কই নতুন ফ্রন্টলাইন। রাষ্ট্রের অর্থনীতি, সামরিক সক্ষমতা, কূটনীতি, এমনকি নাগরিকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে উঠছে ডিজিটাল অবকাঠামোর ওপর।
সাইবার যুদ্ধ এখন আর কল্পবিজ্ঞান নয়; এটি বাস্তব, চলমান এবং ক্রমাগত বিস্তৃত এক বৈশ্বিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা অচল করা, ব্যাংকিং সিস্টেমে অনুপ্রবেশ, নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ, ভুয়া তথ্য ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ—সবকিছুই আজ সাইবার আক্রমণের আওতায় পড়ে। এসব আক্রমণ কোনো যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই, কোনো গুলির শব্দ ছাড়াই একটি রাষ্ট্রকে কার্যত অচল করে দিতে পারে। ফলে সামরিক শক্তির পাশাপাশি সাইবার সক্ষমতা এখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এরই সঙ্গে দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে নজরদারি প্রযুক্তি। জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে রাষ্ট্রগুলো নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ, যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর ডেটা বিশ্লেষণের দিকে ঝুঁকছে। ক্যামেরা, বায়োমেট্রিক ডেটা, মেটাডেটা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সবকিছুই নজরদারির আওতায় চলে আসছে। এতে একদিকে সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধ দমনের সম্ভাবনা তৈরি হলেও, অন্যদিকে ব্যক্তিস্বাধীনতা, গোপনীয়তা ও মানবাধিকারের প্রশ্নও তীব্র হয়ে উঠছে।
এই প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কোন পথে যাচ্ছে—সে প্রশ্ন ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। সাইবার অস্ত্র প্রতিযোগিতা, ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব, তথ্যনির্ভর আধিপত্য এবং প্রযুক্তিগত অসমতা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করছে। শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো যেখানে প্রযুক্তিকে আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, সেখানে উন্নয়নশীল ও দুর্বল রাষ্ট্রগুলো পড়ছে নতুন ধরনের ঝুঁকির মুখে।
এই কলামে সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তির উদ্ভব, রাষ্ট্রীয় কৌশলে এর প্রভাব এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তাকাঠামোর ওপর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিফলন বিশ্লেষণ করা হবে। একই সঙ্গে প্রশ্ন তোলা হবে—নিরাপত্তার নামে কতটা নজরদারি গ্রহণযোগ্য এবং এই অদৃশ্য যুদ্ধের যুগে মানবিক মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক নৈতিকতা আদৌ টিকে থাকবে কি না।
আধুনিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও অ-রাষ্ট্রীয় সংস্থার কৌশলগত আচরণে সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তি এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সামরিক শক্তি প্রদর্শনের প্রচলিত কাঠামোর বাইরে গিয়ে এই অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্য, ডেটা এবং ডিজিটাল অবকাঠামোর নিয়ন্ত্রণই হয়ে উঠেছে প্রভাব বিস্তারের প্রধান হাতিয়ার। রাষ্ট্রের পাশাপাশি বহুজাতিক করপোরেশন, হ্যাকার গোষ্ঠী, সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক এবং রাষ্ট্র-সমর্থিত সাইবার ইউনিটগুলোও সাইবার স্পেসকে ব্যবহার করছে কৌশলগত সুবিধা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে।
এই প্রেক্ষাপটে সাইবার হামলা, ডিজিটাল স্পাইয়িং, তথ্য চুরি, গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্কে ব্যাঘাত সৃষ্টি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রোপাগান্ডা আধুনিক সংঘাতের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। কোনো একটি দেশের বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা, আর্থিক খাত, সামরিক যোগাযোগ বা নির্বাচনব্যবস্থায় সামান্য ডিজিটাল হস্তক্ষেপও তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এই ধরনের আক্রমণ প্রায়ই অজ্ঞাতনামা, সীমান্তহীন এবং যুদ্ধ ঘোষণার বাইরে সংঘটিত হয়, যা প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তাকাঠামোকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
ফলস্বরূপ, সাইবার যুদ্ধ এবং নজরদারি প্রযুক্তি আজ আধুনিক রাষ্ট্রগুলোর কৌশলগত সক্ষমতা, প্রতিরক্ষা নীতি এবং নিরাপত্তা পরিকল্পনার একটি কেন্দ্রীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রগুলো শুধু আক্রমণ প্রতিরোধেই নয়, বরং আগাম হুমকি শনাক্তকরণ, প্রতিপক্ষের দুর্বলতা বিশ্লেষণ এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই প্রযুক্তির ওপর ক্রমবর্ধমানভাবে নির্ভর করছে। এর পাশাপাশি, সাইবার সক্ষমতা এখন আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব, সামরিক জোট এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তবে এই বাস্তবতা শুধু প্রযুক্তিগত বা সামরিক সক্ষমতার প্রশ্নে সীমাবদ্ধ নয়। সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তির বিস্তার জিওপলিটিকসের সামগ্রিক কাঠামো, রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা স্থিতিশীলতার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে। ক্ষমতার ভারসাম্য, সার্বভৌমত্বের ধারণা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা—সবকিছুই নতুন করে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে এই ডিজিটাল যুগে।
এই প্রেক্ষাপটে আধুনিক সাইবার ক্ষেত্রের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব রাষ্ট্রগুলোর জন্য কৌশলগত সতর্কতা, নীতি সমন্বয় এবং বহুপক্ষীয় নিরাপত্তা অংশীদারত্বের প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। বৈশ্বিক নিরাপত্তা কোন পথে অগ্রসর হচ্ছে—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এই কলামে সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তির বহুমাত্রিক প্রভাব বিশ্লেষণের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
সাইবার যুদ্ধ এবং নজরদারি প্রযুক্তি আধুনিক জিওপলিটিকসের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এটি আর শুধু প্রতিরক্ষা বা আক্রমণের হাতিয়ার নয়; বরং রাষ্ট্রগুলোর কৌশলগত প্রভাব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা স্থিতিশীলতার মূল নির্ধারণকারী। প্রতিটি ডিজিটাল নেটওয়ার্ক, তথ্যপ্রবাহ এবং নজরদারি সক্ষমতা আজ রাষ্ট্রকে শক্তিশালী বা দুর্বল করতে পারে—এটি শুধু প্রযুক্তির নয়, ক্ষমতারও খেলা।
এই বাস্তবতায় রাষ্ট্রগুলোর জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে কৌশলগত সতর্কতা, তথ্যভিত্তিক নীতিনির্ধারণ এবং বহুপক্ষীয় অংশীদারত্বের মাধ্যমে বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ন্যায্য এবং নিয়ন্ত্রিত সাইবার ক্ষমতার ব্যবহার আজ শুধু প্রতিরক্ষা নয়; এটি রাষ্ট্রের কূটনীতি, শক্তি ভারসাম্য এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার রক্ষাকবচে পরিণত হয়েছে।
ফলস্বরূপ আধুনিক জিওপলিটিকসে সাইবার যুদ্ধ এবং নজরদারি প্রযুক্তি শুধু এক হাতিয়ার নয়; এটি রাষ্ট্রগুলোর ভবিষ্যৎ, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা এবং শান্তি রক্ষার এক অদৃশ্য, কিন্তু শক্তিশালী ভিত্তি। প্রযুক্তির অদৃশ্য স্রোতগুলোর মধ্যে আজ রাষ্ট্রের ক্ষমতা, নিরাপত্তা এবং প্রভাবের মান নির্ধারিত হচ্ছে—এটি আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা, যা দীর্ঘদিন আমাদের স্মৃতিতে এবং নীতিতে টেকসই রেশ রেখে যাবে।

ইংরেজি বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দেয় সরকার। ২০১০ সাল থেকে সরকার প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিয়ে আসছে।
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী।
৪ ঘণ্টা আগে
দেখতে দেখতেই যেন বছরটা শেষ হয়ে আসছে। ২০২৫ সালের হতাশা-প্রত্যাশার হিসাব কষতে কষতে বড়দিন কড়া নেড়ে দিল দরজায়। সব হতাশা ভুলে প্রত্যাশা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতে প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগমন হয়, ভালোবাসা ও একতার বাণী ছড়িয়ে।
১ দিন আগে
গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। এই দর্পণে চোখ রাখলে সমাজ তার অন্ধকার দিকগুলো আবিষ্কার করতে পারে, ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায়। এ কারণেই যুগে যুগে সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া ব্যক্তিরা গণমাধ্যমকে ‘শত্রু’ মনে করে এসেছে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি দিয়ে তারা সমাজের এই দর্পণের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে।
১ দিন আগে