শাইখ সিরাজ
অ্যাভোকাডোকে খাদ্যের দিক থেকে ফল ও সবজি—দুই শ্রেণিতেই রাখা যায়, অনেকটা পেঁপের মতোই। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফল ইউরোপ ও আমেরিকায় স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয়। আমাদের দেশেও এর চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে সুপারশপগুলোতে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত অ্যাভোকাডো বেশ উঁচু দামে বিক্রি হয়।
উচ্চমূল্যের এই ধরনের ফলের প্রতি ভোক্তার আগ্রহ দেখে দেশের অনেক কৃষকই নতুন ফল-ফসল উৎপাদনে ঝুঁকছেন। বিদেশি সবজির পাশাপাশি বিদেশি ফলের চাষও বাড়ছে দ্রুত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ড্রাগন ফলের সফল চাষ তার বড় উদাহরণ। এতে বোঝা যায়, নতুন ফসল উৎপাদনে আমাদের কৃষকেরা কতটা দক্ষ হয়ে উঠেছেন। শুধু কৃষকেরাই নন, ভিন্ন পেশার মানুষও এই ধরনের সম্ভাবনাময় ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
এমনই একজন ঝিনাইদহের কাগমারি গ্রামের হারুন-অর-রশীদ মুছা। তিনি স্কুলের শিক্ষকতার পাশাপাশি নতুন ফল-ফসল চাষে দারুণ সফল। মোট ২০ বিঘার সমন্বিত ফলবাগান তাঁর। উৎপাদন করছেন অ্যাভোকাডো, মাল্টা, পারসিমন, লংগান, থাই জাম, কমলা, ড্রাগন, ফিলিপিনো আখসহ বিভিন্ন ফসল। গত এক যুগে দেশে ফলের উৎপাদন বেড়েছে ২২ শতাংশ। কম জমিতে বেশি মানুষের দেশ হিসেবে ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকাতেও এখন আমরা। আবার ফল চাষের জমি বৃদ্ধির দিক থেকেও বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। এই হিসাবে, বছরে ফল চাষের জমি বাড়ছে ১০ শতাংশ হারে। শুধু ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির দিক থেকে নয়, দেশের মানুষের মাথাপিছু ফল খাওয়ার পরিমাণও দ্বিগুণ হয়েছে গত এক যুগে। ২০০৬ সালের এক হিসাবে বাংলাদেশের মানুষ গড়ে দিনে প্রায় ৫৫ গ্রাম করে ফল খেত।
বর্তমানের হিসাবে সেটি প্রায় ৮৫ গ্রামে উন্নীত হয়েছে। যা দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য এবং নিরাপদ পুষ্টি গ্রহণ অবস্থার উন্নয়নের একটি বার্তা। দুই দশক আগেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, লিচু ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো ফল উৎপাদনের চিত্র দেখিনি। অথচ গত দুই দশকে নতুন নতুন ফল-ফসলে বদলে যাওয়া বহু এলাকার চিত্র দেখছি। কৃষক, উদ্যোক্তাদের মাল্টা, ড্রাগন, পেয়ারা, কুল, কমলা, লটকন ও অ্যাভোকাডোর মতো পুষ্টিকর ফল উৎপাদনে সফল হয়েছেন অনেকে। যা-ই হোক, গ্রামের ফসলের মাঠে হাঁটতে হাঁটতে কথা হচ্ছিল মুছার সঙ্গে। মাঠজুড়েই বিভিন্ন ফসল। কোথাও হয়তো লাউ চাষ হচ্ছে, পাশের জমিতেই ড্রাগন, পেয়ারা, কলা, আম্রপালি আম কিংবা ফিলিপিনো আখ। একসময় শুধু ধানই চাষ হতো এসব জমিতে। এখন ফসল বৈচিত্র্যের দারুণ সম্মিলন। মুছা বলছিলেন, উচ্চমূল্যের ফসলের নেশায় যুক্ত হয়েছেন ২০০৫ সালে। প্রথমে বাউকুল, পেয়ারা চাষ করেছেন। তারপর একে একে ড্রাগন, ফিলিপিনো আখ থেকে নানা রকম দেশি-বিদেশি উচ্চমূল্যের ফল চাষের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন তিনি। নিয়ে গেলেন ড্রাগন ফল চাষের খেতে। ১২ বিঘা ড্রাগন বাগানের মধ্যে পিংক রোজ জাতের ড্রাগন আবাদ হচ্ছে পাঁচ বিঘায়। দেখতে গোলাপি রঙের এই ড্রাগন অন্য জাতের ড্রাগনের থেকে অধিক ফলনশীল ও লাভজনক, বললেন তিনি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গোটা দেশেই রকমারি ফলের উৎপাদন লক্ষ করা যায়। শুধু ড্রাগন নয়, বারোমাসি আম, মাল্টা, কমলাসহ বিভিন্ন ফল উৎপাদনের সাফল্য দেখতে পাই। একজন স্কুলশিক্ষক হয়েও হারুন-অর-রশীদ মুছা কৃষিতেও দারুণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। তাঁর পরিশ্রম আর হাতের যশে উৎপাদিত হচ্ছে বৈচিত্র্যময় ফসল। যা থেকে তিনি পেয়েছেন সচ্ছলতা। সবচেয়ে বড় কথা, বহু মানুষের কাছে তিনি নতুন নতুন ফলের বীজ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। আবার সৃষ্টি করেছেন বহু মানুষের কর্মসংস্থানও।
মুছার বাড়ির আঙিনায় রীতিমতো চলছে নতুন ফল-ফসল নিয়ে গবেষণা। সব ধরনের উচ্চমূল্যের ফল-ফসলের চাষ মাঠে নেওয়ার আগে এখানেই ট্রায়াল করেন তিনি। এরপর মুছার বাড়ির পাশেই অ্যাভোকাডোর বাগানে গেলাম। দেশের বিভিন্ন স্থানে একটা দুটো অ্যাভোকাডোগাছ থাকলেও, জানামতে বাণিজ্যিকভাবে এটিই বাংলাদেশের প্রথম অ্যাভোকাডো চাষের বাণিজ্যিক প্রয়াস। ছয় বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন অ্যাভোকাডোর বাগান। গাছে গাছে ঝুলছে দামি এই ফল। মুছা জানালেন তাঁর অ্যাভোকাডো চাষের শুরুর গল্পটা। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণার সাবেক মহাপরিচালক এনামুল হকের সহযোগিতায় বিদেশি ব্যয়বহুল অ্যাভোকাডোর চারা এনে রোপণ করেন। তাঁর বাগানে প্রায় ২৫০ অ্যাভোকাডোগাছ রয়েছে। যার বেশির ভাগেই ফল এসেছে। এবার তিনি প্রতি কেজি ৫০০ টাকা দরে ফল বিক্রি করছেন। যা বিদেশে মিশন থেকে ফিরে আসা সেনাসদস্যরা ছাড়াও ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার ফল ব্যবসায়ীরা অনলাইনে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। মুছা মাস্টারের ছেলে মেহেদী শিমুল অনলাইনেও অ্যাভোকাডো বিক্রি করে থাকেন।
মুছার কাছে জানতে চাইলাম, ‘অ্যাভোকাডোগাছ তো প্রচুর পানি শুষে নেয়। চাষে তো প্রচুর সেচ প্রয়োজন হয়। সেচের জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?’ তিনি জানালেন, জুলাই-আগস্ট মাসে ফল আসে। তখন বর্ষাকাল বলে সেচ তত দিতে হয় না। তবে শুকনো মৌসুমে সেচ দিতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তাঁর বাড়ির চারদিক বাঁওড়বেষ্টিত, ফলে মাটিতে পানির তেমন ঘাটতি নেই।
ঢাকায় ফিরে উদ্যান বিশেষজ্ঞ মেহেদী মাসুদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, অ্যাভোকাডো চাষ আমাদের দেশের মাটির জন্য কতটা উপযোগী। তিনি অ্যাভোকাডোর বাণিজ্যিক চাষকে নিরুৎসাহিত করলেন। বললেন, হয়তো পাঁচ-সাত বছর ভালো ফলন মিলবে। কিন্তু এরপর যখন মাটি পানিশূন্য হয়ে যাবে, ফলন হবে না। তখন অন্য ফসলও চাষ করা কঠিন হয়ে যাবে।
যা-ই হোক, ফল-ফসলের সঙ্গে নিবিড় এক সম্পর্ক হারুন-অর-রশীদ মুছার। ভেতরে কৃষির প্রতি গাঢ় টান না থাকলে সফলতা আসে না। তারই প্রমাণ হারুন-অর-রশীদ মুছা।
ক্রমেই বাড়ছে ফল-ফসলের বৈচিত্র্য।
তবে প্রশ্ন উঠছে বিদেশি নতুন নতুন ফল-ফসল চাষ আমাদের পরিবেশে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না। আসলে দেশে ফলের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে ব্যক্তিগত পর্যায়ের এসব উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু যেকোনো বাণিজ্যিক চাষের আগে প্রয়োজন যথাযথ জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার সহায়তা। বিদেশি ফল-ফসল আমাদের মাটি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর
হয়ে উঠছে কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। আবার বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করার আগে চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকা যেমন দরকার, তেমনি বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা থাকা অপরিহার্য। কৃষির সুপরিকল্পিত বিকাশে কৃষক, গবেষক, উদ্যোক্তা ও নীতিনির্ধারক সবার সক্রিয় ভূমিকা টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান চ্যানেল আই
অ্যাভোকাডোকে খাদ্যের দিক থেকে ফল ও সবজি—দুই শ্রেণিতেই রাখা যায়, অনেকটা পেঁপের মতোই। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফল ইউরোপ ও আমেরিকায় স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয়। আমাদের দেশেও এর চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে সুপারশপগুলোতে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত অ্যাভোকাডো বেশ উঁচু দামে বিক্রি হয়।
উচ্চমূল্যের এই ধরনের ফলের প্রতি ভোক্তার আগ্রহ দেখে দেশের অনেক কৃষকই নতুন ফল-ফসল উৎপাদনে ঝুঁকছেন। বিদেশি সবজির পাশাপাশি বিদেশি ফলের চাষও বাড়ছে দ্রুত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ড্রাগন ফলের সফল চাষ তার বড় উদাহরণ। এতে বোঝা যায়, নতুন ফসল উৎপাদনে আমাদের কৃষকেরা কতটা দক্ষ হয়ে উঠেছেন। শুধু কৃষকেরাই নন, ভিন্ন পেশার মানুষও এই ধরনের সম্ভাবনাময় ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
এমনই একজন ঝিনাইদহের কাগমারি গ্রামের হারুন-অর-রশীদ মুছা। তিনি স্কুলের শিক্ষকতার পাশাপাশি নতুন ফল-ফসল চাষে দারুণ সফল। মোট ২০ বিঘার সমন্বিত ফলবাগান তাঁর। উৎপাদন করছেন অ্যাভোকাডো, মাল্টা, পারসিমন, লংগান, থাই জাম, কমলা, ড্রাগন, ফিলিপিনো আখসহ বিভিন্ন ফসল। গত এক যুগে দেশে ফলের উৎপাদন বেড়েছে ২২ শতাংশ। কম জমিতে বেশি মানুষের দেশ হিসেবে ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকাতেও এখন আমরা। আবার ফল চাষের জমি বৃদ্ধির দিক থেকেও বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। এই হিসাবে, বছরে ফল চাষের জমি বাড়ছে ১০ শতাংশ হারে। শুধু ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির দিক থেকে নয়, দেশের মানুষের মাথাপিছু ফল খাওয়ার পরিমাণও দ্বিগুণ হয়েছে গত এক যুগে। ২০০৬ সালের এক হিসাবে বাংলাদেশের মানুষ গড়ে দিনে প্রায় ৫৫ গ্রাম করে ফল খেত।
বর্তমানের হিসাবে সেটি প্রায় ৮৫ গ্রামে উন্নীত হয়েছে। যা দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য এবং নিরাপদ পুষ্টি গ্রহণ অবস্থার উন্নয়নের একটি বার্তা। দুই দশক আগেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, লিচু ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো ফল উৎপাদনের চিত্র দেখিনি। অথচ গত দুই দশকে নতুন নতুন ফল-ফসলে বদলে যাওয়া বহু এলাকার চিত্র দেখছি। কৃষক, উদ্যোক্তাদের মাল্টা, ড্রাগন, পেয়ারা, কুল, কমলা, লটকন ও অ্যাভোকাডোর মতো পুষ্টিকর ফল উৎপাদনে সফল হয়েছেন অনেকে। যা-ই হোক, গ্রামের ফসলের মাঠে হাঁটতে হাঁটতে কথা হচ্ছিল মুছার সঙ্গে। মাঠজুড়েই বিভিন্ন ফসল। কোথাও হয়তো লাউ চাষ হচ্ছে, পাশের জমিতেই ড্রাগন, পেয়ারা, কলা, আম্রপালি আম কিংবা ফিলিপিনো আখ। একসময় শুধু ধানই চাষ হতো এসব জমিতে। এখন ফসল বৈচিত্র্যের দারুণ সম্মিলন। মুছা বলছিলেন, উচ্চমূল্যের ফসলের নেশায় যুক্ত হয়েছেন ২০০৫ সালে। প্রথমে বাউকুল, পেয়ারা চাষ করেছেন। তারপর একে একে ড্রাগন, ফিলিপিনো আখ থেকে নানা রকম দেশি-বিদেশি উচ্চমূল্যের ফল চাষের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন তিনি। নিয়ে গেলেন ড্রাগন ফল চাষের খেতে। ১২ বিঘা ড্রাগন বাগানের মধ্যে পিংক রোজ জাতের ড্রাগন আবাদ হচ্ছে পাঁচ বিঘায়। দেখতে গোলাপি রঙের এই ড্রাগন অন্য জাতের ড্রাগনের থেকে অধিক ফলনশীল ও লাভজনক, বললেন তিনি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গোটা দেশেই রকমারি ফলের উৎপাদন লক্ষ করা যায়। শুধু ড্রাগন নয়, বারোমাসি আম, মাল্টা, কমলাসহ বিভিন্ন ফল উৎপাদনের সাফল্য দেখতে পাই। একজন স্কুলশিক্ষক হয়েও হারুন-অর-রশীদ মুছা কৃষিতেও দারুণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। তাঁর পরিশ্রম আর হাতের যশে উৎপাদিত হচ্ছে বৈচিত্র্যময় ফসল। যা থেকে তিনি পেয়েছেন সচ্ছলতা। সবচেয়ে বড় কথা, বহু মানুষের কাছে তিনি নতুন নতুন ফলের বীজ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। আবার সৃষ্টি করেছেন বহু মানুষের কর্মসংস্থানও।
মুছার বাড়ির আঙিনায় রীতিমতো চলছে নতুন ফল-ফসল নিয়ে গবেষণা। সব ধরনের উচ্চমূল্যের ফল-ফসলের চাষ মাঠে নেওয়ার আগে এখানেই ট্রায়াল করেন তিনি। এরপর মুছার বাড়ির পাশেই অ্যাভোকাডোর বাগানে গেলাম। দেশের বিভিন্ন স্থানে একটা দুটো অ্যাভোকাডোগাছ থাকলেও, জানামতে বাণিজ্যিকভাবে এটিই বাংলাদেশের প্রথম অ্যাভোকাডো চাষের বাণিজ্যিক প্রয়াস। ছয় বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন অ্যাভোকাডোর বাগান। গাছে গাছে ঝুলছে দামি এই ফল। মুছা জানালেন তাঁর অ্যাভোকাডো চাষের শুরুর গল্পটা। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণার সাবেক মহাপরিচালক এনামুল হকের সহযোগিতায় বিদেশি ব্যয়বহুল অ্যাভোকাডোর চারা এনে রোপণ করেন। তাঁর বাগানে প্রায় ২৫০ অ্যাভোকাডোগাছ রয়েছে। যার বেশির ভাগেই ফল এসেছে। এবার তিনি প্রতি কেজি ৫০০ টাকা দরে ফল বিক্রি করছেন। যা বিদেশে মিশন থেকে ফিরে আসা সেনাসদস্যরা ছাড়াও ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার ফল ব্যবসায়ীরা অনলাইনে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। মুছা মাস্টারের ছেলে মেহেদী শিমুল অনলাইনেও অ্যাভোকাডো বিক্রি করে থাকেন।
মুছার কাছে জানতে চাইলাম, ‘অ্যাভোকাডোগাছ তো প্রচুর পানি শুষে নেয়। চাষে তো প্রচুর সেচ প্রয়োজন হয়। সেচের জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?’ তিনি জানালেন, জুলাই-আগস্ট মাসে ফল আসে। তখন বর্ষাকাল বলে সেচ তত দিতে হয় না। তবে শুকনো মৌসুমে সেচ দিতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তাঁর বাড়ির চারদিক বাঁওড়বেষ্টিত, ফলে মাটিতে পানির তেমন ঘাটতি নেই।
ঢাকায় ফিরে উদ্যান বিশেষজ্ঞ মেহেদী মাসুদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, অ্যাভোকাডো চাষ আমাদের দেশের মাটির জন্য কতটা উপযোগী। তিনি অ্যাভোকাডোর বাণিজ্যিক চাষকে নিরুৎসাহিত করলেন। বললেন, হয়তো পাঁচ-সাত বছর ভালো ফলন মিলবে। কিন্তু এরপর যখন মাটি পানিশূন্য হয়ে যাবে, ফলন হবে না। তখন অন্য ফসলও চাষ করা কঠিন হয়ে যাবে।
যা-ই হোক, ফল-ফসলের সঙ্গে নিবিড় এক সম্পর্ক হারুন-অর-রশীদ মুছার। ভেতরে কৃষির প্রতি গাঢ় টান না থাকলে সফলতা আসে না। তারই প্রমাণ হারুন-অর-রশীদ মুছা।
ক্রমেই বাড়ছে ফল-ফসলের বৈচিত্র্য।
তবে প্রশ্ন উঠছে বিদেশি নতুন নতুন ফল-ফসল চাষ আমাদের পরিবেশে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না। আসলে দেশে ফলের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে ব্যক্তিগত পর্যায়ের এসব উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু যেকোনো বাণিজ্যিক চাষের আগে প্রয়োজন যথাযথ জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার সহায়তা। বিদেশি ফল-ফসল আমাদের মাটি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর
হয়ে উঠছে কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। আবার বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করার আগে চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকা যেমন দরকার, তেমনি বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা থাকা অপরিহার্য। কৃষির সুপরিকল্পিত বিকাশে কৃষক, গবেষক, উদ্যোক্তা ও নীতিনির্ধারক সবার সক্রিয় ভূমিকা টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান চ্যানেল আই
সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বর্তমানে মানসিকভাবে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সম্প্রতি সাত কলেজকে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে শিক্ষা ক্যাডারের কিছু শিক্ষক প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করছেন।
৪ ঘণ্টা আগেপাঁচটি ধর্মভিত্তিক দলের উদ্যোগে ১৬ সেপ্টেম্বর আয়োজিত সেমিনার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতশিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সেখানে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। বহু ধর্মাবলম্বী মানুষের এ রাষ্ট্রে গত ৫৫ বছরের মধ্যে ধর্মভিত্তিকসহ নানা পন্থার রাজনৈতিক দল ও সামরিক সরকার ক্ষমতায়...
৬ ঘণ্টা আগেগণ-অভ্যুত্থানের এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পুলিশ বাহিনী এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি। এটা দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বড় একটা সংকট। সামনে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
৬ ঘণ্টা আগে‘আপনি আবুল হলে, আপনার আবুলত্ব দূর করার দায়িত্ব অথরিটির না’—এ রকম একটা মন্তব্য নাকি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি করেছেন তাঁর ফেসবুকে। বিষয়টা পড়লাম বিডিনিউজ ২৪ ডটকমে। নিশ্চিত হতে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে ঢুঁ মারলাম। দু-এক মিনিট ঘাঁটাঘাঁটি করলাম। কিন্তু পেলাম না।
১ দিন আগে