ফিয়াদ নওশাদ ইয়ামিন
সম্প্রতি ফেনীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না গেলে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। গত বছরও ফেনী, নোয়াখালীতে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বন্যার পানি যত না ভয়ংকর, তার চেয়েও বেশি বিপদ হয় নিরাপদ আশ্রয় আর খাদ্যসংকট নিয়ে। বিশেষত দরিদ্র পরিবারগুলো যখন ঘরহারা হয়ে পড়ে, তখন মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে পাওয়া হয় বড় কঠিন ব্যাপার। এরপর প্রয়োজন দেখা দেয় খাদ্য। বন্যাকবলিত অঞ্চলে যদি কারও ঘরবাড়ি ডুবে যায়, পরিবারগুলো আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে, তখন তারা বাধ্য হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে চায়। কিন্তু সেই মুহূর্তে যদি কোনো আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত না থাকে, তারা এক বিভীষিকাময় বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। তাই আগেভাগেই প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পাকা দালান, স্কুল-কলেজ বা সরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা অত্যন্ত জরুরি। শুধু জায়গা নয়, আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুৎ, নারী-শিশুবান্ধব পরিবেশ, ওষুধ, নিরাপত্তা এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের ব্যবস্থা রাখা জরুরি। বন্যার সময় সেই কেন্দ্রগুলো শুধু আশ্রয় নয়—মানবিকতারও আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কঠিন সময়ে মানুষজন যেভাবে একে অপরের পাশে এসে দাঁড়ায়, তা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অব্যবস্থাপনা এবং অসচেতনতা রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুদের জন্য ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হয় গুঁড়া দুধ বা রাসায়নিকমিশ্রিত জুস, যা আন্তর্জাতিকভাবে শিশুস্বাস্থ্যের জন্য অনুপযুক্ত অথচ এই তথ্য জানা সত্ত্বেও আমরা বছরের পর বছর একই ভুল করে যাচ্ছি। এর পাশাপাশি আরেকটি গুরুতর উপেক্ষিত দিক হলো বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। পানি একটি ভারী জিনিস বলে অনেকেই সেটা বিতরণ করতে চায় না, কিন্তু বাস্তবতা হলো বন্যার সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় বিশুদ্ধ পানির, যা পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
বন্যার পর চর্মরোগ, টাইফয়েডসহ নানা পানিবাহিত ও সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ে, অথচ ত্রাণের প্যাকেটে সেই রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত সাধারণ ওষুধ থাকে না। শুধু চাল-ডাল নয়, ত্রাণের ব্যাগে থাকা উচিত স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম কিংবা মৌলিক ওষুধ।
বন্যার্তদের সহযোগিতায় ত্রাণ সংগ্রহের জন্য অর্থ তোলা একপ্রকার উৎসবে পরিণত হয়ে থাকে। কেউ কেউ দলবেঁধে সহায়তা সংগ্রহ করার জন্য এলাকা চষে বেড়ানোর সময় ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেন, ভিডিও বানান, যেন ‘বন্যা ট্যুর’ চালাচ্ছেন। অথচ ত্রাণ একটি জরুরি মানবিক সহায়তা। তার ভেতরে সম্মান, গোপনীয়তা আর মানুষের দুঃখকে উপলব্ধি করার গভীরতা থাকা উচিত। আবার ত্রাণ দেওয়ার সময়ও একইভাবে প্রচার করার কারণে অনেকে ত্রাণ নিতে অস্বস্তি বোধ করেন, অনেকেই ফিরে যান খালি হাতে।
সবচেয়ে করুণ যে দিকটি প্রতিবছরই উপেক্ষিত থেকে যায় তা হলো পুনর্বাসন। পানি নেমে গেলে সবাই ভুলে যায় দুর্গত অঞ্চলকে। ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়া, চাষের জমি বিনষ্ট হওয়া, ব্যবসা গুটিয়ে যাওয়া, স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া—এইসব চরম বাস্তবতায় মানুষ কাতরাতে থাকে, কিন্তু তাদের জন্য থাকে না কোনো সাহায্য-সহযোগিতা। বন্যার পর বন্যার্তদের কথা স্মরণ করে না আর কেউ। এ সময় নতুনভাবে জীবন চালানোর জন্য সব আয়োজনের পর খুব প্রয়োজনীয় ব্যাপার হলো মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা।
বন্যা-পরবর্তী সময়ে কোনো পরিকল্পনা না থাকায় বছরের পর বছর এক একটি দুর্যোগ শুধু একটি জনগোষ্ঠীকে নয়, গোটা এলাকার অর্থনীতিকেও পিছিয়ে দেয়। বন্যার পানি সরে গেলেই যদি মনে হয় কাজ শেষ, অথচ মূল চ্যালেঞ্জ শুরু হয় তখনই—পুনর্বাসনের প্রশ্নে যখন নীরবতা নেমে আসে।
আমরা ভুলে যাই দুর্যোগ প্রস্তুতির পাঠ, অবহেলা করি আশ্রয়ের গুরুত্ব, হেলাফেলা করি পুনর্বাসনকে। তাই দুর্যোগ মোকাবিলার নীতি যেন শুধু ত্রাণনির্ভর না হয়ে মানবিকতা, বাস্তবতা ও দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। সেটা খুব জরুরি।
লেখক: শিক্ষার্থী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
সম্প্রতি ফেনীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না গেলে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। গত বছরও ফেনী, নোয়াখালীতে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বন্যার পানি যত না ভয়ংকর, তার চেয়েও বেশি বিপদ হয় নিরাপদ আশ্রয় আর খাদ্যসংকট নিয়ে। বিশেষত দরিদ্র পরিবারগুলো যখন ঘরহারা হয়ে পড়ে, তখন মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে পাওয়া হয় বড় কঠিন ব্যাপার। এরপর প্রয়োজন দেখা দেয় খাদ্য। বন্যাকবলিত অঞ্চলে যদি কারও ঘরবাড়ি ডুবে যায়, পরিবারগুলো আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে, তখন তারা বাধ্য হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে চায়। কিন্তু সেই মুহূর্তে যদি কোনো আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত না থাকে, তারা এক বিভীষিকাময় বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। তাই আগেভাগেই প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পাকা দালান, স্কুল-কলেজ বা সরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা অত্যন্ত জরুরি। শুধু জায়গা নয়, আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুৎ, নারী-শিশুবান্ধব পরিবেশ, ওষুধ, নিরাপত্তা এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের ব্যবস্থা রাখা জরুরি। বন্যার সময় সেই কেন্দ্রগুলো শুধু আশ্রয় নয়—মানবিকতারও আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কঠিন সময়ে মানুষজন যেভাবে একে অপরের পাশে এসে দাঁড়ায়, তা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অব্যবস্থাপনা এবং অসচেতনতা রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুদের জন্য ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হয় গুঁড়া দুধ বা রাসায়নিকমিশ্রিত জুস, যা আন্তর্জাতিকভাবে শিশুস্বাস্থ্যের জন্য অনুপযুক্ত অথচ এই তথ্য জানা সত্ত্বেও আমরা বছরের পর বছর একই ভুল করে যাচ্ছি। এর পাশাপাশি আরেকটি গুরুতর উপেক্ষিত দিক হলো বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। পানি একটি ভারী জিনিস বলে অনেকেই সেটা বিতরণ করতে চায় না, কিন্তু বাস্তবতা হলো বন্যার সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় বিশুদ্ধ পানির, যা পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
বন্যার পর চর্মরোগ, টাইফয়েডসহ নানা পানিবাহিত ও সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ে, অথচ ত্রাণের প্যাকেটে সেই রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত সাধারণ ওষুধ থাকে না। শুধু চাল-ডাল নয়, ত্রাণের ব্যাগে থাকা উচিত স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম কিংবা মৌলিক ওষুধ।
বন্যার্তদের সহযোগিতায় ত্রাণ সংগ্রহের জন্য অর্থ তোলা একপ্রকার উৎসবে পরিণত হয়ে থাকে। কেউ কেউ দলবেঁধে সহায়তা সংগ্রহ করার জন্য এলাকা চষে বেড়ানোর সময় ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেন, ভিডিও বানান, যেন ‘বন্যা ট্যুর’ চালাচ্ছেন। অথচ ত্রাণ একটি জরুরি মানবিক সহায়তা। তার ভেতরে সম্মান, গোপনীয়তা আর মানুষের দুঃখকে উপলব্ধি করার গভীরতা থাকা উচিত। আবার ত্রাণ দেওয়ার সময়ও একইভাবে প্রচার করার কারণে অনেকে ত্রাণ নিতে অস্বস্তি বোধ করেন, অনেকেই ফিরে যান খালি হাতে।
সবচেয়ে করুণ যে দিকটি প্রতিবছরই উপেক্ষিত থেকে যায় তা হলো পুনর্বাসন। পানি নেমে গেলে সবাই ভুলে যায় দুর্গত অঞ্চলকে। ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়া, চাষের জমি বিনষ্ট হওয়া, ব্যবসা গুটিয়ে যাওয়া, স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া—এইসব চরম বাস্তবতায় মানুষ কাতরাতে থাকে, কিন্তু তাদের জন্য থাকে না কোনো সাহায্য-সহযোগিতা। বন্যার পর বন্যার্তদের কথা স্মরণ করে না আর কেউ। এ সময় নতুনভাবে জীবন চালানোর জন্য সব আয়োজনের পর খুব প্রয়োজনীয় ব্যাপার হলো মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা।
বন্যা-পরবর্তী সময়ে কোনো পরিকল্পনা না থাকায় বছরের পর বছর এক একটি দুর্যোগ শুধু একটি জনগোষ্ঠীকে নয়, গোটা এলাকার অর্থনীতিকেও পিছিয়ে দেয়। বন্যার পানি সরে গেলেই যদি মনে হয় কাজ শেষ, অথচ মূল চ্যালেঞ্জ শুরু হয় তখনই—পুনর্বাসনের প্রশ্নে যখন নীরবতা নেমে আসে।
আমরা ভুলে যাই দুর্যোগ প্রস্তুতির পাঠ, অবহেলা করি আশ্রয়ের গুরুত্ব, হেলাফেলা করি পুনর্বাসনকে। তাই দুর্যোগ মোকাবিলার নীতি যেন শুধু ত্রাণনির্ভর না হয়ে মানবিকতা, বাস্তবতা ও দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। সেটা খুব জরুরি।
লেখক: শিক্ষার্থী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। গত বছর জুলাই-আগস্টে দেশে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। তখন সাধারণ মানুষের মনে একধরনের ইতিবাচক প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল।
২১ ঘণ্টা আগেবর্ষাকাল এলেই যেন ঢাকায় জলাবদ্ধতা ভর করে বসে। জলাবদ্ধতা যখন এই শহরের ঘাড়ে চেপে বসে, তখন এই নগরের মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আজ এই শহরের এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না যদি তারা অপরিকল্পিত নগরায়ণের দিকে না ঝুঁকত, যদি নদী কিংবা খালের স্থান দখল না করে কোনো স্থাপনা করার পরিকল্পনা করত।
২১ ঘণ্টা আগেটাঙ্গাইলের সখীপুর-কচুয়া-আড়াইপাড়া সড়কের যে করুণ অবস্থা, তা আসলে আমাদের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার এক করুণ প্রতিচ্ছবি। সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক—যেখানে প্রতিদিন স্কুলশিক্ষার্থী, রোগী, কৃষিপণ্যবাহী ট্রাক ও হাজারো সাধারণ মানুষ চলাচল করে।
২১ ঘণ্টা আগেজুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে গেল। ওই অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল। মূলত তারা ফ্যাসিবাদী সরকারব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল। মূলত বাংলাদেশের মূল সমস্যা সেটাই যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে একটি
২ দিন আগে