ডেরেক গ্রসম্যান

মিয়ানমারের বিরল খনিজে নজর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলতে গেলে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি মিয়ানমারে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সুসান স্টিভেনসন দেশটির কাচিন রাজ্যের রাজধানী মিচিনা সফর করেন। সফরের বিষয়ে পরে মুখপাত্র বলেন, এই সফরের মাধ্যমে তিনি স্থানীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা আরও ভালোভাবে বুঝতে চান। চীন সীমান্তে অবস্থিত এই রাজ্য জেড পাথর ও বিরল খনিজের ভান্ডার। চীনা প্রভাববলয়ের মধ্যে অবস্থিত মিয়ানমারের খনিজে ট্রাম্পের এই আসক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ভুল কৌশলগত পদক্ষেপের আশু পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
মিয়ানমারে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিরল খনিজের মজুত রয়েছে। টানা কয়েক বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। জান্তা সরকার অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ কার্যত হারিয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন মিয়ানমারের বিরল মৃত্তিকা খনিজে প্রবেশাধিকারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মিকে (কেআইএ) সহায়তা দেওয়া থেকে শুরু করে জান্তা সরকারের কার্যত প্রধান জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনার চেষ্টাও চালিয়ে যাওয়ার মতো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে গোপনে।
অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা বিবেচনায় এসব বিকল্প যে খারাপ, তা হয়তো নয়। বরং মিয়ানমারে চার বছরের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধ শেষ করতে উভয়ই হয়তো প্রয়োজনীয়। আগে জো বাইডেনের প্রশাসন মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনলেও ট্রাম্প প্রশাসন প্রাথমিক পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে দেখিয়েছে যে, তারা এই রেজিমের প্রতি অবস্থান নরম করতে ইচ্ছুক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নরম অবস্থান যদি মিয়ানমারে শান্তি আলোচনার সূচনা করতে পারে, তাহলে মিয়ানমারের খনিজ সম্পদে মার্কিন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যও সেই প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে না। এ ছাড়া আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলা যেতে পারে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার উদ্বেগগুলোকে কম গুরুত্ব দেওয়ার যে অবস্থান মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট নিয়েছে, তাতে ওয়াশিংটনকে সন্দেহ করার আরও সুযোগ তৈরি হয়েছে।
গত জুলাইয়ে ট্রাম্প প্রশাসন মিয়ানমারের জান্তা সরকারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও সেনাসংশ্লিষ্ট কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো—মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ট্রাম্পকে চিঠি লেখার পরপরই মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। ওই চিঠিতে তিনি ট্রাম্পের প্রশংসা করে লেখেন, সরকারি অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে মিয়ানমারের জান্তা ও তাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করা হচ্ছিল, এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় ট্রাম্পের ‘শক্তিশালী নেতৃত্বই’ প্রকাশ পেয়েছে।
হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অবশ্য অতি প্রশংসাসূচক ওই চিঠি আর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই বলে দাবি করেছেন। তবে প্রশাসন এখনো ব্যাখ্যা দেয়নি, কেন এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।
এখানে এমন একটি ইঙ্গিত মিলছে যে, জান্তা সরকার হয়তো ভাবছে ওয়াশিংটন-নেপিডো সম্পর্ক নতুন করে সাজানোর ‘সবচেয়ে বড় সুযোগ’ এটি। আর আশা করছে, ওয়াশিংটনের তথাকথিত সমর্থন পেয়ে তারা বিরোধীদের চূড়ান্তভাবে দমন করে যুদ্ধে জয়ী হবে। এমন একটি আত্মবিশ্বাস থেকে নেপিডো এখন নিজেদের শুধরে নেওয়ার ভান করছে, যাতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি ইতিবাচক বার্তা দেওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, জান্তা সরকার আগামী ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে। যদিও চলমান যুদ্ধে স্বাধীন, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন মোটেই সম্ভব নয়।
গত ৩১ জুলাই জান্তা বাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলের পর প্রথমবারের মতো জাতীয় জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তারা আবার সেটি বহাল করে। একই সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী-নিয়ন্ত্রিত বহু অশান্ত শহরে সামরিক আইন জারি করে। নেপিডো একইভাবে প্রতারণামূলকভাবে বেসামরিক নেতৃত্বের কাছে সরকারের দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়। তবে বাস্তবে ক্ষমতা কেবল সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের কাছ থেকে দেশের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের হাতে যায়। আর সেই ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট আবার মিন অং হ্লাইং নিজেই!
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ওয়াশিংটনভিত্তিক লবি প্রতিষ্ঠান ডিসিআই গ্রুপকে ভাড়া করেছে জান্তা সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনেই এই উদ্যোগ। চুক্তি অনুযায়ী বছরে প্রায় ৩০ লাখ ডলার দেবে জান্তা। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন এজেন্টস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টে (এফএআরএ) দাখিল করা নথিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা ‘জনসংযোগ সেবা প্রদান করবে... যেখানে মূলত বাণিজ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানবিক সহায়তা ইস্যুতে কাজ করা হবে।’ এর ভিত্তিতেই দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা চলবে।
কিন্তু যদি সত্যিই ভবিষ্যতে বিরল খনিজে প্রবেশাধিকার পাওয়ার বিনিময়ে ট্রাম্প প্রশাসন সরাসরি মিয়ানমারের সেনাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সমর্থন দেওয়ার কথা ভেবে থাকে, তাহলে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও মূল্যবোধের জন্য লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি বয়ে আনবে।
এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র যে দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের পক্ষের ভাবমূর্তি তৈরি করেছে, তা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্প যখন মিয়ানমারের জান্তা সরকারসংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন, তখন মিয়ানমারের মানবাধিকারসংক্রান্ত জাতিসংঘের বিশেষ কর্মকর্তা টম অ্যান্ড্রুজ এই সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেন। অ্যান্ড্রুজের যুক্তি, এই পদক্ষেপ ‘হন্তারক জান্তা রেজিমকে অস্ত্র সরবরাহে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে (সাধারণ মানুষের) জীবন বাঁচানোর আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করার সমতুল্য।’ তবে, ট্রাম্পের এভাবে কর্তৃত্ববাদ ও গণতন্ত্রের মধ্যকার লড়াইয়ে স্বৈরশাসকের পাশে দাঁড়ানোর ঘটনা এটিই প্রথম এবং সম্ভবত শেষও নয়!
যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ধরনের সহায়তা মিয়ানমারের জান্তা শাসককে চাপে রাখতে ২০২১ সালে আসিয়ান জোট যে পাঁচ দফা উত্থাপন করেছিল, সেটিকে সরাসরি বাধাগ্রস্ত করবে। ওই সম্মেলনে বলা হয়, মিয়ানমারে সংকট সমাধানে ‘সব পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপ’ প্রয়োজন। যদিও আসিয়ানের এই ঐকমত্য কার্যত খুব একটা ফলপ্রসূ নয়। এর পরও যদি ট্রাম্প প্রশাসন এটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আসিয়ান কঠোর নিন্দা জানাবে, ফলে যুক্তরাষ্ট্র-আসিয়ান সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হবে।
আর আসিয়ানের সমর্থন ও মিয়ানমারের সব পক্ষের সঙ্গে সংলাপ ছাড়া কেবল জান্তার সঙ্গে সমন্বয় করে বিরল মৃত্তিকা খনিজে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার চিন্তা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। মিয়ানমারের জান্তা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীন ও রাশিয়ার প্রতি বেশি আস্থাশীল। কারণ, এরাই অস্ত্র, কূটনৈতিক সহায়তা এবং আর্থিক সাহায্য দিয়ে জান্তা সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে। ফলে, এই বিবেচনায় চীন-রাশিয়ার স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে নেপিডো ওয়াশিংটনের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে, এমন সম্ভাবনা কম।
এ ছাড়া, বিরল মৃত্তিকা নিষ্কাশন বা উত্তোলন নিয়েও বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে খনিজসমৃদ্ধ উত্তর কাচিন রাজ্য কাচিন ইনডিপেনডেন্ট আর্মির রাজনৈতিক সরকারের হাতে। এই সরকার জান্তাবিরোধী। সাম্প্রতিক সময়ে অঞ্চলটিতে খনিজ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। জান্তার এই অঞ্চলে তো তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই-ই, বরং সাম্প্রতিক সময়ে তারা বিদ্রোহীদের হাতে কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
জান্তা সরকার কাচিনের এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও চীন এই বিতর্কিত অঞ্চল থেকে বিরল মৃত্তিকা রপ্তানিতে সুবিধা পাচ্ছে। সুতরাং, ওয়াশিংটন যদি মিয়ানমারের বিরল মৃত্তিকা সম্পদের পূর্ণ সুবিধা নিতে চায়, তাহলে তাকে হয় কাচিন ইনডিপেনডেন্স অর্গানাইজেশনের সঙ্গে চীনের চেয়ে ভালো কোনো চুক্তি করতে হবে, নয়তো জান্তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হাসিলের মাধ্যমে খনিসমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে দ্বিতীয় অপশন নতুন জটিল পরিস্থিতি তৈরি করবে, এটি ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। সেই সঙ্গে এমন পদক্ষেপ মার্কিন মূল্যবোধ ও স্বার্থের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
অবশ্য, নিশ্চিতভাবেই ট্রাম্প প্রশাসন এখনো এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যা স্পষ্টভাবে দেখায় যে তারা জান্তার পক্ষ নিয়েছে, বরং কিছু ক্ষেত্রে তারা বিপরীত কাজ করেছে। যেমন—জান্তা সরকারের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক বজায় রেখেছে। খুব শিগগির এই হার কমানোর কোনো ইঙ্গিত নেই। তবে সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা উদ্বেগের বিষয়। ওয়াশিংটনকে এই বিরল খনিজের জটিল পথে আরও এগোনোর চেষ্টা এড়ানো উচিত। কারণ, এর ফলাফল অত্যন্ত মারাত্মক কৌশলগত ভুল হতে পারে।
অনুবাদ: আব্দুর রহমান, সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া

মিয়ানমারের বিরল খনিজে নজর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলতে গেলে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি মিয়ানমারে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সুসান স্টিভেনসন দেশটির কাচিন রাজ্যের রাজধানী মিচিনা সফর করেন। সফরের বিষয়ে পরে মুখপাত্র বলেন, এই সফরের মাধ্যমে তিনি স্থানীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা আরও ভালোভাবে বুঝতে চান। চীন সীমান্তে অবস্থিত এই রাজ্য জেড পাথর ও বিরল খনিজের ভান্ডার। চীনা প্রভাববলয়ের মধ্যে অবস্থিত মিয়ানমারের খনিজে ট্রাম্পের এই আসক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ভুল কৌশলগত পদক্ষেপের আশু পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
মিয়ানমারে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিরল খনিজের মজুত রয়েছে। টানা কয়েক বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। জান্তা সরকার অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ কার্যত হারিয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন মিয়ানমারের বিরল মৃত্তিকা খনিজে প্রবেশাধিকারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মিকে (কেআইএ) সহায়তা দেওয়া থেকে শুরু করে জান্তা সরকারের কার্যত প্রধান জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনার চেষ্টাও চালিয়ে যাওয়ার মতো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে গোপনে।
অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা বিবেচনায় এসব বিকল্প যে খারাপ, তা হয়তো নয়। বরং মিয়ানমারে চার বছরের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধ শেষ করতে উভয়ই হয়তো প্রয়োজনীয়। আগে জো বাইডেনের প্রশাসন মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনলেও ট্রাম্প প্রশাসন প্রাথমিক পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে দেখিয়েছে যে, তারা এই রেজিমের প্রতি অবস্থান নরম করতে ইচ্ছুক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নরম অবস্থান যদি মিয়ানমারে শান্তি আলোচনার সূচনা করতে পারে, তাহলে মিয়ানমারের খনিজ সম্পদে মার্কিন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যও সেই প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে না। এ ছাড়া আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলা যেতে পারে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার উদ্বেগগুলোকে কম গুরুত্ব দেওয়ার যে অবস্থান মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট নিয়েছে, তাতে ওয়াশিংটনকে সন্দেহ করার আরও সুযোগ তৈরি হয়েছে।
গত জুলাইয়ে ট্রাম্প প্রশাসন মিয়ানমারের জান্তা সরকারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও সেনাসংশ্লিষ্ট কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো—মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ট্রাম্পকে চিঠি লেখার পরপরই মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। ওই চিঠিতে তিনি ট্রাম্পের প্রশংসা করে লেখেন, সরকারি অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে মিয়ানমারের জান্তা ও তাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করা হচ্ছিল, এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় ট্রাম্পের ‘শক্তিশালী নেতৃত্বই’ প্রকাশ পেয়েছে।
হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অবশ্য অতি প্রশংসাসূচক ওই চিঠি আর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই বলে দাবি করেছেন। তবে প্রশাসন এখনো ব্যাখ্যা দেয়নি, কেন এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।
এখানে এমন একটি ইঙ্গিত মিলছে যে, জান্তা সরকার হয়তো ভাবছে ওয়াশিংটন-নেপিডো সম্পর্ক নতুন করে সাজানোর ‘সবচেয়ে বড় সুযোগ’ এটি। আর আশা করছে, ওয়াশিংটনের তথাকথিত সমর্থন পেয়ে তারা বিরোধীদের চূড়ান্তভাবে দমন করে যুদ্ধে জয়ী হবে। এমন একটি আত্মবিশ্বাস থেকে নেপিডো এখন নিজেদের শুধরে নেওয়ার ভান করছে, যাতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি ইতিবাচক বার্তা দেওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, জান্তা সরকার আগামী ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে। যদিও চলমান যুদ্ধে স্বাধীন, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন মোটেই সম্ভব নয়।
গত ৩১ জুলাই জান্তা বাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলের পর প্রথমবারের মতো জাতীয় জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তারা আবার সেটি বহাল করে। একই সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী-নিয়ন্ত্রিত বহু অশান্ত শহরে সামরিক আইন জারি করে। নেপিডো একইভাবে প্রতারণামূলকভাবে বেসামরিক নেতৃত্বের কাছে সরকারের দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়। তবে বাস্তবে ক্ষমতা কেবল সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের কাছ থেকে দেশের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের হাতে যায়। আর সেই ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট আবার মিন অং হ্লাইং নিজেই!
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ওয়াশিংটনভিত্তিক লবি প্রতিষ্ঠান ডিসিআই গ্রুপকে ভাড়া করেছে জান্তা সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনেই এই উদ্যোগ। চুক্তি অনুযায়ী বছরে প্রায় ৩০ লাখ ডলার দেবে জান্তা। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন এজেন্টস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টে (এফএআরএ) দাখিল করা নথিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা ‘জনসংযোগ সেবা প্রদান করবে... যেখানে মূলত বাণিজ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানবিক সহায়তা ইস্যুতে কাজ করা হবে।’ এর ভিত্তিতেই দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা চলবে।
কিন্তু যদি সত্যিই ভবিষ্যতে বিরল খনিজে প্রবেশাধিকার পাওয়ার বিনিময়ে ট্রাম্প প্রশাসন সরাসরি মিয়ানমারের সেনাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সমর্থন দেওয়ার কথা ভেবে থাকে, তাহলে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও মূল্যবোধের জন্য লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি বয়ে আনবে।
এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র যে দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের পক্ষের ভাবমূর্তি তৈরি করেছে, তা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্প যখন মিয়ানমারের জান্তা সরকারসংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন, তখন মিয়ানমারের মানবাধিকারসংক্রান্ত জাতিসংঘের বিশেষ কর্মকর্তা টম অ্যান্ড্রুজ এই সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেন। অ্যান্ড্রুজের যুক্তি, এই পদক্ষেপ ‘হন্তারক জান্তা রেজিমকে অস্ত্র সরবরাহে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে (সাধারণ মানুষের) জীবন বাঁচানোর আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করার সমতুল্য।’ তবে, ট্রাম্পের এভাবে কর্তৃত্ববাদ ও গণতন্ত্রের মধ্যকার লড়াইয়ে স্বৈরশাসকের পাশে দাঁড়ানোর ঘটনা এটিই প্রথম এবং সম্ভবত শেষও নয়!
যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ধরনের সহায়তা মিয়ানমারের জান্তা শাসককে চাপে রাখতে ২০২১ সালে আসিয়ান জোট যে পাঁচ দফা উত্থাপন করেছিল, সেটিকে সরাসরি বাধাগ্রস্ত করবে। ওই সম্মেলনে বলা হয়, মিয়ানমারে সংকট সমাধানে ‘সব পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপ’ প্রয়োজন। যদিও আসিয়ানের এই ঐকমত্য কার্যত খুব একটা ফলপ্রসূ নয়। এর পরও যদি ট্রাম্প প্রশাসন এটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আসিয়ান কঠোর নিন্দা জানাবে, ফলে যুক্তরাষ্ট্র-আসিয়ান সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হবে।
আর আসিয়ানের সমর্থন ও মিয়ানমারের সব পক্ষের সঙ্গে সংলাপ ছাড়া কেবল জান্তার সঙ্গে সমন্বয় করে বিরল মৃত্তিকা খনিজে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার চিন্তা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। মিয়ানমারের জান্তা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীন ও রাশিয়ার প্রতি বেশি আস্থাশীল। কারণ, এরাই অস্ত্র, কূটনৈতিক সহায়তা এবং আর্থিক সাহায্য দিয়ে জান্তা সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে। ফলে, এই বিবেচনায় চীন-রাশিয়ার স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে নেপিডো ওয়াশিংটনের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে, এমন সম্ভাবনা কম।
এ ছাড়া, বিরল মৃত্তিকা নিষ্কাশন বা উত্তোলন নিয়েও বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে খনিজসমৃদ্ধ উত্তর কাচিন রাজ্য কাচিন ইনডিপেনডেন্ট আর্মির রাজনৈতিক সরকারের হাতে। এই সরকার জান্তাবিরোধী। সাম্প্রতিক সময়ে অঞ্চলটিতে খনিজ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। জান্তার এই অঞ্চলে তো তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই-ই, বরং সাম্প্রতিক সময়ে তারা বিদ্রোহীদের হাতে কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
জান্তা সরকার কাচিনের এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও চীন এই বিতর্কিত অঞ্চল থেকে বিরল মৃত্তিকা রপ্তানিতে সুবিধা পাচ্ছে। সুতরাং, ওয়াশিংটন যদি মিয়ানমারের বিরল মৃত্তিকা সম্পদের পূর্ণ সুবিধা নিতে চায়, তাহলে তাকে হয় কাচিন ইনডিপেনডেন্স অর্গানাইজেশনের সঙ্গে চীনের চেয়ে ভালো কোনো চুক্তি করতে হবে, নয়তো জান্তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হাসিলের মাধ্যমে খনিসমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে দ্বিতীয় অপশন নতুন জটিল পরিস্থিতি তৈরি করবে, এটি ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। সেই সঙ্গে এমন পদক্ষেপ মার্কিন মূল্যবোধ ও স্বার্থের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
অবশ্য, নিশ্চিতভাবেই ট্রাম্প প্রশাসন এখনো এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যা স্পষ্টভাবে দেখায় যে তারা জান্তার পক্ষ নিয়েছে, বরং কিছু ক্ষেত্রে তারা বিপরীত কাজ করেছে। যেমন—জান্তা সরকারের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক বজায় রেখেছে। খুব শিগগির এই হার কমানোর কোনো ইঙ্গিত নেই। তবে সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা উদ্বেগের বিষয়। ওয়াশিংটনকে এই বিরল খনিজের জটিল পথে আরও এগোনোর চেষ্টা এড়ানো উচিত। কারণ, এর ফলাফল অত্যন্ত মারাত্মক কৌশলগত ভুল হতে পারে।
অনুবাদ: আব্দুর রহমান, সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া

ছোট ছিলাম যখন, তখন শোনা কথাগুলোকে অমূল্য মনে হতো। বুঝে না-বুঝে প্রচলিত কথাগুলোকেই বিশ্বাস করতাম। বয়স বাড়তে লাগল, বুঝতে পারলাম, জীবনে এমন অনেক কিছুই আছে, যা আদর্শবাদের সঙ্গে যায় না। বাস্তব একেবারে অন্য কিছু।
১৩ ঘণ্টা আগে
এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল বেশ খারাপ। বলা যায়, সন্তোষজনক নয়। যদিও পরীক্ষার ফল যে ভালো হবে, পাসের হার বেশি হবে, তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ বা উদ্যোগ কিন্তু ছিল না। বরাবরের মতো গত নয়-দশ মাসে তেমন কোনো উদ্যোগ, তৎপরতা চোখে পড়েনি।
১৩ ঘণ্টা আগে
গরিব ও দরিদ্র মানুষদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত ভিজিডি কার্ড (পরিবর্তিত নাম ভিডব্লিউবি) বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আজকের পত্রিকায় ২১ অক্টোবর সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
হাত-পা বেঁধে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সেই ছিনতাইকারীর। সেখানে ঘটনা থেমে থাকেনি, লোকটির শরীরে লবণ দিয়ে উল্লাস করতে থাকে জনতা। টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ২০টি করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এটা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবস্থারই ইঙ্গিত দেয়।
২ দিন আগেজাহীদ রেজা নূর

ছোট ছিলাম যখন, তখন শোনা কথাগুলোকে অমূল্য মনে হতো। বুঝে না-বুঝে প্রচলিত কথাগুলোকেই বিশ্বাস করতাম। বয়স বাড়তে লাগল, বুঝতে পারলাম, জীবনে এমন অনেক কিছুই আছে, যা আদর্শবাদের সঙ্গে যায় না। বাস্তব একেবারে অন্য কিছু।
গত শতকের গোটা সময়টায় দুনিয়াজুড়ে সাম্যবাদের দিকে ঝুঁকেছিল প্রগতিবাদী মানুষ। উপনিবেশের শৃঙ্খল ভেঙে এশিয়া-আফ্রিকায় জন্ম হচ্ছিল নতুন নতুন দেশ। সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের বিজয় আশার আলো জাগিয়েছিল শোষিত মানুষের মনে। সারা বিশ্বে বিপ্লব ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য চে গেভারা ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন দেশে, উদ্বুদ্ধ করেছেন লাঞ্ছিত-বঞ্চিত মানুষকে। পৃথিবীর মেধাবী মানুষেরা সমাজতন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। বিশেষ করে তরুণেরা ত্যাগ ও সংগ্রামকেই বেছে নিয়েছে জীবনের পথ হিসেবে। পুঁজিবাদ এই ভেঙে পড়ল বলে মনে হয়েছে।
কিন্তু আদৌ সে রকম কিছু ঘটেনি। নানা ধরনের অসংগতি নিয়ে পুঁজিবাদ টিকে আছে। সমাজতন্ত্রের দেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেছে। চীনের শাসনব্যবস্থা সমাজতান্ত্রিক নাকি আধা-খ্যাঁচড়া পুঁজিবাদী কিছু—তা নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে। দেশে দেশে হানাহানি, নিজের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য যেকোনো পথ অবলম্বন করা, অন্যকে নিজের আয়ত্তে রাখার চেষ্টা করেই চলেছে পুঁজিবাদ।
২. আলোচনাটা তাত্ত্বিক আলোচনায় পরিণত হওয়ার আগেই থামা দরকার। যখন সমাজতান্ত্রিক জীবনের প্রতি মোহ ও মায়ায় আকৃষ্ট হয়েছে মানুষ, তখন তারা ভেবেও দেখেনি, তত্ত্ব থাকলেই তা রাষ্ট্রীয় জীবনে সুচারুভাবে প্রয়োগ করা যায় না। মানুষের সমাজে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে থাকে, তার সমাধানের জন্য তত্ত্বের বাইরেও চলে যান রাষ্ট্রের কর্তারা। তাঁরা নিজের তৈরি আইনে তখন দেশ চালান।
দেশে দেশে একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরাচার এভাবেই দাঁড়িয়ে যায়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নেও গড়ে উঠেছিল পার্টি-আমলাতন্ত্র, যা আদর্শকে বিলীন করে দিয়ে নিজস্ব এক কঠোর ও নির্যাতনবাদী সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। কমিউনিস্ট পার্টি আর জনগণের মধ্যে যখন বিস্তর ফারাক সৃষ্টি হলো, পার্টি ক্রমেই তার গোপন গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে জনগণের ওপর নজরদারি শুরু করল, পার্টির মতামতের বাইরে অন্য কোনো মতকে কঠোর হাতে দমন করা শুরু করল, বিরুদ্ধমতের মানুষকে নির্বাসনে পাঠাতে লাগল, দেশত্যাগে বাধ্য করতে থাকল কিংবা শারীরিকভাবে নিশ্চিহ্ন করতে শুরু করল, তখন বোঝা গেল সমাজতন্ত্রের স্বপ্নকে সমাজতান্ত্রিক মনীষীরাই ভয়ংকরভাবে বিপথে নিয়ে যেতে পারেন। সেই সঙ্গে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের ইন্ধন তো আছেই। কিন্তু ভেতরটা নষ্ট হওয়ার জন্য প্রস্তুত না থাকলে কোনো দেশকে অন্য কোনো দেশ এসে ধ্বংস করে দিতে পারে না।
সোভিয়েত ইউনিয়নে ১০ বছর ছিলাম। ৫ বছর ছিলাম গরবাচোভের পিরিস্ত্রোইকার আমলে, বাকি পাঁচ বছর ইয়েলৎসিনের গণতন্ত্রে। ইয়েলৎসিনের গণতন্ত্র ছিল এক কিম্ভূতকিমাকার ব্যবস্থা। চোখের নিমেষে বড় বড় মোড়লকে কোটিপতি হয়ে যেতে দেখেছি। এদের বেশির ভাগই একসময় সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির বড় বড় চাঁই ছিল। সারা দেশে মাফিয়া ছড়িয়ে পড়েছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হলে স্থানীয় মাফিয়াদের টাকা দিয়ে পালতে হতো। কিশোর গ্যাংয়ের জন্ম হতে থাকল প্রতিটি শহরেই। হঠাৎ করে নিষিদ্ধ পশ্চিমা সংস্কৃতির অবাধ প্রবেশ ঘটতে লাগল। তাতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বদহজম হতে থাকল। সে এক আজব সময় পার করেছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নবাসী।
প্রশ্ন হলো, গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যে দেশগুলো বের হলো, সে দেশগুলোয় কি গণতন্ত্র আদৌ জায়গা করে নিতে পেরেছে? কেন পারেনি, তার কারণগুলোও খতিয়ে দেখা দরকার।
৩. যে আমলাতন্ত্র গড়ে উঠেছিল সোভিয়েত দেশটিতে, তাতে পার্টির নামে যথেচ্ছাচার চলত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাশিয়া সফরে গিয়ে এই প্রশ্নটিই তুলেছিলেন। ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে শুধু সমষ্টি দিয়ে কিছু গড়ে তোলা যায় কি না, অর্থাৎ সম্মিলিত নেতৃত্ব টিকতে পারে কি না, সে প্রশ্নই তুলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ব্যক্তি যদি বিকশিত না হয়, সমষ্টিই যদি চলার পথের অনুপ্রেরণা হয়, তাহলে ভিন্নমত, বহুমত টিকবে কী করে? আসলেই টেকেনি। কারণ, বহুমতকে প্রবলভাবে হত্যা করে একটিমাত্র মতকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট নেতারা। মুখে বলেছেন সম্মিলিত নেতৃত্ব, কিন্তু দাঁড় করিয়েছেন পার্টি-স্বৈরাচার। দেয়ালেরও কান আছে—এই কথায় বিশ্বাস ছিল সোভিয়েত জনগণের।
বিতর্কটি আগামী দিনের জন্য তোলা থাকল। বিশ্বের সবচেয়ে প্রগতিশীল একটি মতবাদ কী কারণে এক শ বছর পার হওয়ার আগেই মুখ থুবড়ে পড়ল, তা নিয়ে বহু তাত্ত্বিক আলোচনা আছে। সে আলোচনাগুলোর কোনো কোনোটায় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের জন্য শুধু বাইরের শক্তির ষড়যন্ত্রকেই দেখা হয়। আমাদের দেশের মনীষীদের মধ্যেও এ রকম ঝোঁক দেখতে পাই। কিন্তু কী করে ভেতরের সংকটটা ভাঙনকে ত্বরান্বিত করেছে এবং সেটাই হয়ে উঠেছে ভাঙনের মূল কারণ—সে কথা বুঝতে হলে সে সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নে বসবাসকারী মানুষের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করা জরুরি। সে কাজটাই ক্রমান্বয়ে করা হবে।
৪. আমাদের দেশের তরুণেরাও শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার জন্য জীবনপণ করেছিল। শুধু আমাদের দেশেই নয়, পৃথিবীব্যাপী প্রগতিশীল মানুষ বলতে মার্ক্স-এঙ্গেলস-লেনিন-মাও-পড়া মানুষদেরকেই বোঝাত। আক্ষরিক অর্থেই এই মানুষেরা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়ে শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের অঙ্গীকার করেছিলেন। নেতৃত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ধীরে ধীরে সংকট মোকাবিলায় নিজস্ব-সৃষ্ট তত্ত্বকে প্রাধান্য দিতে থাকায় মূল আদর্শের জায়গায় যে বিচ্যুতি ঘটেছিল, প্রাথমিকভাবে তা কর্মীদের দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিল। সামনে শোষণহীন সমাজের অপার সম্ভাবনা, ফলে ছোটখাটো ভুলত্রুটিকে আমলে না নেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছিল। এই এড়িয়ে যাওয়াটাই কাল হয়ে উঠেছিল। মানুষ প্রশ্ন করতে ভুলে গিয়েছিল এবং একসময় প্রশ্ন করাকেই ভয়াবহ অপরাধ বলে গণ্য করা শুরু হলো।
সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি শহরে যখন পড়াশোনা করছি, তখন পিরিস্ত্রোইকা আর গ্লাসনোস্ত এসে কাঁপিয়ে দিয়েছে সোভিয়েত সমাজকে। হঠাৎ করে এতটা মুক্তির আস্বাদ পাওয়া ছিল বিরল ঘটনা। মানুষ যখন মুখ খুলতে শুরু করেছে, তখন আর কিছুই ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। সমাজে প্রচলিত সব অসংগতি নিয়ে যেমন মানুষ কথা বলেছে, তেমনি কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি যে রাগ, অভিমান ছিল, সেটাও ধীরে ধীরে প্রকাশ করেছে। পার্টির ভেতরেই ভিন্ন ভিন্ন মত জেগে উঠেছে। এই বিপুল পরিবর্তন মোকাবিলা করার মতো ক্ষমতা গরবাচোভের ছিল না। আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ তত দিনে পশ্চিমা দুনিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
কিন্তু কী করে এই ভাঙনটি এল? সেটাই তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আলোচনার চেষ্টা করব।
তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় রুশ সাহিত্যের ইতিহাস ক্লাসে ছিলেন এক তরুণ শিক্ষক। তিনি বললেন, বিখ্যাত সোভিয়েত সাহিত্যিক কনস্তান্তিন সিমোনভকে একবার এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনি এখন কী লিখছেন?’ সিমোনভ উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এখনো ঠিক করিনি। পার্টি যে নির্দেশ দেবে, সেটাই লিখব।’
তখন গ্লাসনোস্তের কাল। তাই শিক্ষক এই কথাটি বলতে পেরেছিলেন। একজন সৃজনশীল মানুষ কী লিখবে, সেটাও নির্ভর করছে পার্টির সিদ্ধান্তের ওপর—এই কথাটি কিসের ইঙ্গিত দেয়, তা নিয়েও কথা বলব। আজকের নাতিদীর্ঘ লেখাটি শেষ করি ওই সোভিয়েতজীবনের একটি ঘটনা দিয়েই। তখন সদ্য সে দেশে গেছি। অন্য একটি শহর থেকে আমাদেরই এক বন্ধু ছুটিতে বেড়াতে এসেছে। কথা প্রসঙ্গে ও বলছিল, এখনো প্রেমের সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ ব্যাপারে ও নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। পার্টি যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটাই সে মেনে নেবে।
ঘটনাটি সত্য। পার্টির প্রতি আনুগত্য ব্যক্তিজীবনকেও ধ্বংস করে দিচ্ছিল, এ কথা তখন অনেকেই বোঝেনি। আর তখনই মনে পড়েছে মেকিয়াভেলির কথা। রাষ্ট্রের ‘নিরাপত্তা’ ও ‘স্থিতিশীলতা’ রক্ষার জন্য শাসককে যেকোনো উপায় অবলম্বন করতে হবে, তা নৈতিক বা অনৈতিক যা-ই হোক না কেন। মেকিয়াভেলি মনে করেন মানুষ স্বার্থপর, ভিতু ও অবিশ্বাসী। তাই শাসককে মানুষের এই প্রকৃতি বুঝে কাজ করতে হবে। পৃথিবীজুড়েই কি এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না?
আমি কি সমাজতন্ত্র নিয়ে নিরাশার কথা বলছি? একেবারেই না। কেন তা নিরাশার জন্ম দিল, সে কারণগুলো খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি মাত্র। আর তা বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা যাবে, আমাদের দেশের স্বপ্নগুলোও কেন ভাঙতে থাকে, তার ইঙ্গিতও আমরা পেয়ে যাব।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

ছোট ছিলাম যখন, তখন শোনা কথাগুলোকে অমূল্য মনে হতো। বুঝে না-বুঝে প্রচলিত কথাগুলোকেই বিশ্বাস করতাম। বয়স বাড়তে লাগল, বুঝতে পারলাম, জীবনে এমন অনেক কিছুই আছে, যা আদর্শবাদের সঙ্গে যায় না। বাস্তব একেবারে অন্য কিছু।
গত শতকের গোটা সময়টায় দুনিয়াজুড়ে সাম্যবাদের দিকে ঝুঁকেছিল প্রগতিবাদী মানুষ। উপনিবেশের শৃঙ্খল ভেঙে এশিয়া-আফ্রিকায় জন্ম হচ্ছিল নতুন নতুন দেশ। সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের বিজয় আশার আলো জাগিয়েছিল শোষিত মানুষের মনে। সারা বিশ্বে বিপ্লব ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য চে গেভারা ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন দেশে, উদ্বুদ্ধ করেছেন লাঞ্ছিত-বঞ্চিত মানুষকে। পৃথিবীর মেধাবী মানুষেরা সমাজতন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। বিশেষ করে তরুণেরা ত্যাগ ও সংগ্রামকেই বেছে নিয়েছে জীবনের পথ হিসেবে। পুঁজিবাদ এই ভেঙে পড়ল বলে মনে হয়েছে।
কিন্তু আদৌ সে রকম কিছু ঘটেনি। নানা ধরনের অসংগতি নিয়ে পুঁজিবাদ টিকে আছে। সমাজতন্ত্রের দেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেছে। চীনের শাসনব্যবস্থা সমাজতান্ত্রিক নাকি আধা-খ্যাঁচড়া পুঁজিবাদী কিছু—তা নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে। দেশে দেশে হানাহানি, নিজের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য যেকোনো পথ অবলম্বন করা, অন্যকে নিজের আয়ত্তে রাখার চেষ্টা করেই চলেছে পুঁজিবাদ।
২. আলোচনাটা তাত্ত্বিক আলোচনায় পরিণত হওয়ার আগেই থামা দরকার। যখন সমাজতান্ত্রিক জীবনের প্রতি মোহ ও মায়ায় আকৃষ্ট হয়েছে মানুষ, তখন তারা ভেবেও দেখেনি, তত্ত্ব থাকলেই তা রাষ্ট্রীয় জীবনে সুচারুভাবে প্রয়োগ করা যায় না। মানুষের সমাজে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে থাকে, তার সমাধানের জন্য তত্ত্বের বাইরেও চলে যান রাষ্ট্রের কর্তারা। তাঁরা নিজের তৈরি আইনে তখন দেশ চালান।
দেশে দেশে একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরাচার এভাবেই দাঁড়িয়ে যায়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নেও গড়ে উঠেছিল পার্টি-আমলাতন্ত্র, যা আদর্শকে বিলীন করে দিয়ে নিজস্ব এক কঠোর ও নির্যাতনবাদী সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। কমিউনিস্ট পার্টি আর জনগণের মধ্যে যখন বিস্তর ফারাক সৃষ্টি হলো, পার্টি ক্রমেই তার গোপন গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে জনগণের ওপর নজরদারি শুরু করল, পার্টির মতামতের বাইরে অন্য কোনো মতকে কঠোর হাতে দমন করা শুরু করল, বিরুদ্ধমতের মানুষকে নির্বাসনে পাঠাতে লাগল, দেশত্যাগে বাধ্য করতে থাকল কিংবা শারীরিকভাবে নিশ্চিহ্ন করতে শুরু করল, তখন বোঝা গেল সমাজতন্ত্রের স্বপ্নকে সমাজতান্ত্রিক মনীষীরাই ভয়ংকরভাবে বিপথে নিয়ে যেতে পারেন। সেই সঙ্গে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের ইন্ধন তো আছেই। কিন্তু ভেতরটা নষ্ট হওয়ার জন্য প্রস্তুত না থাকলে কোনো দেশকে অন্য কোনো দেশ এসে ধ্বংস করে দিতে পারে না।
সোভিয়েত ইউনিয়নে ১০ বছর ছিলাম। ৫ বছর ছিলাম গরবাচোভের পিরিস্ত্রোইকার আমলে, বাকি পাঁচ বছর ইয়েলৎসিনের গণতন্ত্রে। ইয়েলৎসিনের গণতন্ত্র ছিল এক কিম্ভূতকিমাকার ব্যবস্থা। চোখের নিমেষে বড় বড় মোড়লকে কোটিপতি হয়ে যেতে দেখেছি। এদের বেশির ভাগই একসময় সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির বড় বড় চাঁই ছিল। সারা দেশে মাফিয়া ছড়িয়ে পড়েছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হলে স্থানীয় মাফিয়াদের টাকা দিয়ে পালতে হতো। কিশোর গ্যাংয়ের জন্ম হতে থাকল প্রতিটি শহরেই। হঠাৎ করে নিষিদ্ধ পশ্চিমা সংস্কৃতির অবাধ প্রবেশ ঘটতে লাগল। তাতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বদহজম হতে থাকল। সে এক আজব সময় পার করেছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নবাসী।
প্রশ্ন হলো, গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যে দেশগুলো বের হলো, সে দেশগুলোয় কি গণতন্ত্র আদৌ জায়গা করে নিতে পেরেছে? কেন পারেনি, তার কারণগুলোও খতিয়ে দেখা দরকার।
৩. যে আমলাতন্ত্র গড়ে উঠেছিল সোভিয়েত দেশটিতে, তাতে পার্টির নামে যথেচ্ছাচার চলত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাশিয়া সফরে গিয়ে এই প্রশ্নটিই তুলেছিলেন। ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে শুধু সমষ্টি দিয়ে কিছু গড়ে তোলা যায় কি না, অর্থাৎ সম্মিলিত নেতৃত্ব টিকতে পারে কি না, সে প্রশ্নই তুলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ব্যক্তি যদি বিকশিত না হয়, সমষ্টিই যদি চলার পথের অনুপ্রেরণা হয়, তাহলে ভিন্নমত, বহুমত টিকবে কী করে? আসলেই টেকেনি। কারণ, বহুমতকে প্রবলভাবে হত্যা করে একটিমাত্র মতকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট নেতারা। মুখে বলেছেন সম্মিলিত নেতৃত্ব, কিন্তু দাঁড় করিয়েছেন পার্টি-স্বৈরাচার। দেয়ালেরও কান আছে—এই কথায় বিশ্বাস ছিল সোভিয়েত জনগণের।
বিতর্কটি আগামী দিনের জন্য তোলা থাকল। বিশ্বের সবচেয়ে প্রগতিশীল একটি মতবাদ কী কারণে এক শ বছর পার হওয়ার আগেই মুখ থুবড়ে পড়ল, তা নিয়ে বহু তাত্ত্বিক আলোচনা আছে। সে আলোচনাগুলোর কোনো কোনোটায় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের জন্য শুধু বাইরের শক্তির ষড়যন্ত্রকেই দেখা হয়। আমাদের দেশের মনীষীদের মধ্যেও এ রকম ঝোঁক দেখতে পাই। কিন্তু কী করে ভেতরের সংকটটা ভাঙনকে ত্বরান্বিত করেছে এবং সেটাই হয়ে উঠেছে ভাঙনের মূল কারণ—সে কথা বুঝতে হলে সে সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নে বসবাসকারী মানুষের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করা জরুরি। সে কাজটাই ক্রমান্বয়ে করা হবে।
৪. আমাদের দেশের তরুণেরাও শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার জন্য জীবনপণ করেছিল। শুধু আমাদের দেশেই নয়, পৃথিবীব্যাপী প্রগতিশীল মানুষ বলতে মার্ক্স-এঙ্গেলস-লেনিন-মাও-পড়া মানুষদেরকেই বোঝাত। আক্ষরিক অর্থেই এই মানুষেরা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়ে শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের অঙ্গীকার করেছিলেন। নেতৃত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ধীরে ধীরে সংকট মোকাবিলায় নিজস্ব-সৃষ্ট তত্ত্বকে প্রাধান্য দিতে থাকায় মূল আদর্শের জায়গায় যে বিচ্যুতি ঘটেছিল, প্রাথমিকভাবে তা কর্মীদের দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিল। সামনে শোষণহীন সমাজের অপার সম্ভাবনা, ফলে ছোটখাটো ভুলত্রুটিকে আমলে না নেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছিল। এই এড়িয়ে যাওয়াটাই কাল হয়ে উঠেছিল। মানুষ প্রশ্ন করতে ভুলে গিয়েছিল এবং একসময় প্রশ্ন করাকেই ভয়াবহ অপরাধ বলে গণ্য করা শুরু হলো।
সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি শহরে যখন পড়াশোনা করছি, তখন পিরিস্ত্রোইকা আর গ্লাসনোস্ত এসে কাঁপিয়ে দিয়েছে সোভিয়েত সমাজকে। হঠাৎ করে এতটা মুক্তির আস্বাদ পাওয়া ছিল বিরল ঘটনা। মানুষ যখন মুখ খুলতে শুরু করেছে, তখন আর কিছুই ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। সমাজে প্রচলিত সব অসংগতি নিয়ে যেমন মানুষ কথা বলেছে, তেমনি কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি যে রাগ, অভিমান ছিল, সেটাও ধীরে ধীরে প্রকাশ করেছে। পার্টির ভেতরেই ভিন্ন ভিন্ন মত জেগে উঠেছে। এই বিপুল পরিবর্তন মোকাবিলা করার মতো ক্ষমতা গরবাচোভের ছিল না। আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ তত দিনে পশ্চিমা দুনিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
কিন্তু কী করে এই ভাঙনটি এল? সেটাই তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আলোচনার চেষ্টা করব।
তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় রুশ সাহিত্যের ইতিহাস ক্লাসে ছিলেন এক তরুণ শিক্ষক। তিনি বললেন, বিখ্যাত সোভিয়েত সাহিত্যিক কনস্তান্তিন সিমোনভকে একবার এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনি এখন কী লিখছেন?’ সিমোনভ উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এখনো ঠিক করিনি। পার্টি যে নির্দেশ দেবে, সেটাই লিখব।’
তখন গ্লাসনোস্তের কাল। তাই শিক্ষক এই কথাটি বলতে পেরেছিলেন। একজন সৃজনশীল মানুষ কী লিখবে, সেটাও নির্ভর করছে পার্টির সিদ্ধান্তের ওপর—এই কথাটি কিসের ইঙ্গিত দেয়, তা নিয়েও কথা বলব। আজকের নাতিদীর্ঘ লেখাটি শেষ করি ওই সোভিয়েতজীবনের একটি ঘটনা দিয়েই। তখন সদ্য সে দেশে গেছি। অন্য একটি শহর থেকে আমাদেরই এক বন্ধু ছুটিতে বেড়াতে এসেছে। কথা প্রসঙ্গে ও বলছিল, এখনো প্রেমের সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ ব্যাপারে ও নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। পার্টি যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটাই সে মেনে নেবে।
ঘটনাটি সত্য। পার্টির প্রতি আনুগত্য ব্যক্তিজীবনকেও ধ্বংস করে দিচ্ছিল, এ কথা তখন অনেকেই বোঝেনি। আর তখনই মনে পড়েছে মেকিয়াভেলির কথা। রাষ্ট্রের ‘নিরাপত্তা’ ও ‘স্থিতিশীলতা’ রক্ষার জন্য শাসককে যেকোনো উপায় অবলম্বন করতে হবে, তা নৈতিক বা অনৈতিক যা-ই হোক না কেন। মেকিয়াভেলি মনে করেন মানুষ স্বার্থপর, ভিতু ও অবিশ্বাসী। তাই শাসককে মানুষের এই প্রকৃতি বুঝে কাজ করতে হবে। পৃথিবীজুড়েই কি এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না?
আমি কি সমাজতন্ত্র নিয়ে নিরাশার কথা বলছি? একেবারেই না। কেন তা নিরাশার জন্ম দিল, সে কারণগুলো খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি মাত্র। আর তা বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা যাবে, আমাদের দেশের স্বপ্নগুলোও কেন ভাঙতে থাকে, তার ইঙ্গিতও আমরা পেয়ে যাব।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

মিয়ানমারের বিরল খনিজে নজর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলতে গেলে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি মিয়ানমারে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সুসান স্টিভেনসন দেশটির কাচিন রাজ্যের রাজধানী মিচিনা সফর করেন। সফরের বিষয়ে পরে মুখপাত্র বলেন, এই সফরের মাধ্যমে তিনি স্থানীয়...
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল বেশ খারাপ। বলা যায়, সন্তোষজনক নয়। যদিও পরীক্ষার ফল যে ভালো হবে, পাসের হার বেশি হবে, তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ বা উদ্যোগ কিন্তু ছিল না। বরাবরের মতো গত নয়-দশ মাসে তেমন কোনো উদ্যোগ, তৎপরতা চোখে পড়েনি।
১৩ ঘণ্টা আগে
গরিব ও দরিদ্র মানুষদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত ভিজিডি কার্ড (পরিবর্তিত নাম ভিডব্লিউবি) বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আজকের পত্রিকায় ২১ অক্টোবর সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
হাত-পা বেঁধে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সেই ছিনতাইকারীর। সেখানে ঘটনা থেমে থাকেনি, লোকটির শরীরে লবণ দিয়ে উল্লাস করতে থাকে জনতা। টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ২০টি করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এটা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবস্থারই ইঙ্গিত দেয়।
২ দিন আগেস্বপ্না রেজা

এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল বেশ খারাপ। বলা যায়, সন্তোষজনক নয়। যদিও পরীক্ষার ফল যে ভালো হবে, পাসের হার বেশি হবে, তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ বা উদ্যোগ কিন্তু ছিল না। বরাবরের মতো গত নয়-দশ মাসে তেমন কোনো উদ্যোগ, তৎপরতা চোখে পড়েনি। রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে যত কথা উঠেছে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে যত চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে, অনিয়মের বিরুদ্ধে যত আওয়াজ উঠেছে, শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মান বৃদ্ধি ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তার ন্যূনতম আলাপ-আলোচনা হতে দেখা যায়নি। কারোর দৃষ্টি ও উৎসাহ এই বিষয়ে ছিল বলেও মনে হয়নি। দুঃখজনক হলেও বলতে হয় যে, রাষ্ট্র সংস্কারের চেতনায় শিক্ষাব্যবস্থাকে অচেতন অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং সেটা বিগত সময়ের মতোই। এককথায়, আমাদের দেশে ক্ষমতাকেন্দ্রিক যাবতীয় কাজ, পরিকল্পনা, উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে উত্তম ও কার্যকর পদক্ষেপ কোনো রাজনৈতিক সরকারকেই নিতে দেখা যায়নি। যেটুকু নেওয়া হয়েছে তা অযোগ্য ও অদক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে করা হয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। ফলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব থেকেই গেছে। মেধাসম্পন্ন যোগ্য নাগরিক নয়, বরং রাজনৈতিক দল ও তার দলীয় চেতনায় দেশ গড়ার অন্যতম উপায় বলে প্রতিষ্ঠার হীন চেষ্টা চালানো হয়েছে সব সময়ই।
এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যা গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল বলে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে। সংবাদমাধ্যমে আরও জানা যায়, এই ফলকে শিক্ষার প্রকৃত চিত্র বলে উল্লেখ করেছেন স্বয়ং শিক্ষা উপদেষ্টা। এটা তাঁর কৃতিত্বের ঢেকুর কি না, নাকি সাধারণ জনগণের মতো হতাশার উক্তি, সেটা বলা মুশকিল। যদি কৃতিত্বের ঢেকুর এমন হয়, তাঁদের আমলে কড়াকড়ি তথা যথাযথভাবে পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাই করা হয়েছে, তাই পাসের হার কম হয়েছে এবং এটাই বাস্তবতা। তাহলে বলতেই হয় যে এটা নিঃসন্দেহে একটা খোঁড়া যুক্তি। যদি পাসের হার বেশি হতো তাহলে হয়তো এমন যুক্তি দেওয়া থেকে তিনি বিরত থাকতেন। উল্টো বলা হতো, যথাযথ ও উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার উত্তম ফলাফল। সব সরকারই যেভাবে কৃতিত্ব নিতে উৎসাহ বোধ করে থাকে, সে রকমই ব্যাপারটা এবারও ঘটেছে।
তবে সাধারণ জনগণ ভাবছে অন্য কথা। তারা বলছে, পরীক্ষায় পাস না করার কারণ হতে পারে উপযুক্ত শিক্ষা অর্জন ও প্রস্তুতি ছাড়াই শিক্ষার্থীরা এবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। সোজাসুজি বললে দাঁড়ায়, শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে লেখাপড়া করেননি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে গেছেন বেশ অনেক দিন। তরুণ, কিশোর, যুবকদের মধ্যে অন্য ধরনের তাড়না লক্ষ করা গেছে, যা শিক্ষাসংক্রান্ত নয়। বরং স্কুলের প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তিকে জুতার মালা পরিয়ে দেওয়ার মতো চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ দেখানো হয়েছে এই সময়ে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে ধরনের ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত ও রাষ্ট্রের জন্য এক অশনিসংকেত। সরকার এই হীন কর্মকাণ্ডকে রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়।
একজন প্রবীণ শিক্ষাবিদ দুঃখ করে বলছিলেন তাঁর সাম্প্রতিক সময়ের অভিজ্ঞতার কথা। যুবকদের নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তাঁকে সম্মানিত বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিনি যুবকদের মাঝে উপস্থিত হয়ে প্রথমেই জানতে চাইলেন, বক্তব্য দেওয়ার আগে জানতে চাই, তোমরা কয়জন নিয়মিত ক্লাসে যাচ্ছ, হাত তোলো? কিন্তু কারোর তোলা হাত তিনি দেখেননি। অবাক হন। জানতে চান, একটা হাতও না দেখার কারণ কী? তাদের কয়জন বেশ গাম্ভীর্য নিয়ে বলে, তারা এখন দেশ গড়ার কাজে ব্যস্ত। সংস্কারকাজে জড়িত। রাষ্ট্র সংস্কার হলে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরবে। প্রবীণ ভদ্রলোক ভেবে নিলেন, এই মুহূর্তে যুবকদের জ্ঞান দেওয়া বৃথা। বরং তারাই তাঁকে জ্ঞান দিতে বেশি আগ্রহী। এমন আয়োজনও নেহাত শোআপ। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে অবস্থা, জাতীয় পর্যায়ে ব্যবস্থাপনার যে চিত্র, তা শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি ও প্রসারে সহায়ক নয়। যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তির যথেষ্ট অভাব এই সেক্টরে। এই অভাব নতুন নয়, পুরোনো। বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে সার্বিক পরিস্থিতি তার ওপর গবেষণা চালালে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে।
ফলাফলে দেখা গেছে, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাসের হার মূলধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশি। এবার ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাসের চেহারা দেখতে পারেনি। এর কারণ অনুসন্ধান করতে না পারলে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যকার দূরত্ব বাড়বে বৈকি, যা দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে না, বরং প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। দেশের অস্তিত্ব সংকটের একটা কারণ হবে।
অটোপাসের দাবি কর্তৃপক্ষের মেনে নেওয়ার ঘটনাটি কখনোই উন্নত শিক্ষাব্যবস্থাকে সমর্থন করে না, শিক্ষিত এক জাতির পূর্বাভাস দেয় না। বরং শিক্ষাব্যবস্থাকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রচণ্ড সুযোগ দেয়। অতীতে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও তার শিক্ষার্থীদের কবজা করার প্রবণতা সব সরকারের ছিল এবং এখনো আছে। কিন্তু অটোপাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করবার ঘটনা সম্ভবত এই প্রথম এবং সেটা রাজনৈতিক ইস্যুতে। যেখানে ২৪-এর আন্দোলনের শুরুটা ছিল মেধার যোগ্যতায় বিসিএসে নিয়োগের দাবিতে, যদিও সেই আন্দোলন পৌঁছে যায় শেষ অবধি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে। সেখানে অটোপাসের বিষয়টি মেধার গুরুত্বকে কোথায় নিয়ে যায় বা যাবে, সংশ্লিষ্টরা তা বুঝতে সক্ষম হয়েছিল কি না, প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রশ্ন থাকে, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন ও তার প্রত্যয়, সেখানে মেধা ও শিক্ষার বিকল্প কী? উত্তর, কোনো বিকল্প নেই। একটা শিক্ষিত জাতি একটা দেশকে যতটা নিরাপদ করে রাখতে পারে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, স্থায়িত্বশীল উন্নয়নকে দৃশ্যমান করে তুলতে পারে, অন্য কোনো মন্ত্র, থিওরি কিন্তু তা পারে না।
যদি শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি মনোযোগ ও গুরুত্ব না দেওয়া হয়, তাহলে একদিন পাসের হার .০৫-এ নেমে গেলে কেউ আর আশ্চর্য হবে না। তখন এটাকে বাস্তব চিত্র বলে কৃতিত্ব নেওয়ার পথও থাকবে না। একজন ক্ষমতাসীনের চেয়ে একজন মেধাবী শিক্ষিতের প্রয়োজন এই দেশে সবচেয়ে বেশি।
স্বপ্না রেজা,কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক

এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল বেশ খারাপ। বলা যায়, সন্তোষজনক নয়। যদিও পরীক্ষার ফল যে ভালো হবে, পাসের হার বেশি হবে, তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ বা উদ্যোগ কিন্তু ছিল না। বরাবরের মতো গত নয়-দশ মাসে তেমন কোনো উদ্যোগ, তৎপরতা চোখে পড়েনি। রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে যত কথা উঠেছে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে যত চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে, অনিয়মের বিরুদ্ধে যত আওয়াজ উঠেছে, শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মান বৃদ্ধি ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তার ন্যূনতম আলাপ-আলোচনা হতে দেখা যায়নি। কারোর দৃষ্টি ও উৎসাহ এই বিষয়ে ছিল বলেও মনে হয়নি। দুঃখজনক হলেও বলতে হয় যে, রাষ্ট্র সংস্কারের চেতনায় শিক্ষাব্যবস্থাকে অচেতন অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং সেটা বিগত সময়ের মতোই। এককথায়, আমাদের দেশে ক্ষমতাকেন্দ্রিক যাবতীয় কাজ, পরিকল্পনা, উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে উত্তম ও কার্যকর পদক্ষেপ কোনো রাজনৈতিক সরকারকেই নিতে দেখা যায়নি। যেটুকু নেওয়া হয়েছে তা অযোগ্য ও অদক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে করা হয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। ফলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব থেকেই গেছে। মেধাসম্পন্ন যোগ্য নাগরিক নয়, বরং রাজনৈতিক দল ও তার দলীয় চেতনায় দেশ গড়ার অন্যতম উপায় বলে প্রতিষ্ঠার হীন চেষ্টা চালানো হয়েছে সব সময়ই।
এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যা গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল বলে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে। সংবাদমাধ্যমে আরও জানা যায়, এই ফলকে শিক্ষার প্রকৃত চিত্র বলে উল্লেখ করেছেন স্বয়ং শিক্ষা উপদেষ্টা। এটা তাঁর কৃতিত্বের ঢেকুর কি না, নাকি সাধারণ জনগণের মতো হতাশার উক্তি, সেটা বলা মুশকিল। যদি কৃতিত্বের ঢেকুর এমন হয়, তাঁদের আমলে কড়াকড়ি তথা যথাযথভাবে পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাই করা হয়েছে, তাই পাসের হার কম হয়েছে এবং এটাই বাস্তবতা। তাহলে বলতেই হয় যে এটা নিঃসন্দেহে একটা খোঁড়া যুক্তি। যদি পাসের হার বেশি হতো তাহলে হয়তো এমন যুক্তি দেওয়া থেকে তিনি বিরত থাকতেন। উল্টো বলা হতো, যথাযথ ও উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার উত্তম ফলাফল। সব সরকারই যেভাবে কৃতিত্ব নিতে উৎসাহ বোধ করে থাকে, সে রকমই ব্যাপারটা এবারও ঘটেছে।
তবে সাধারণ জনগণ ভাবছে অন্য কথা। তারা বলছে, পরীক্ষায় পাস না করার কারণ হতে পারে উপযুক্ত শিক্ষা অর্জন ও প্রস্তুতি ছাড়াই শিক্ষার্থীরা এবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। সোজাসুজি বললে দাঁড়ায়, শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে লেখাপড়া করেননি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে গেছেন বেশ অনেক দিন। তরুণ, কিশোর, যুবকদের মধ্যে অন্য ধরনের তাড়না লক্ষ করা গেছে, যা শিক্ষাসংক্রান্ত নয়। বরং স্কুলের প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তিকে জুতার মালা পরিয়ে দেওয়ার মতো চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ দেখানো হয়েছে এই সময়ে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে ধরনের ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত ও রাষ্ট্রের জন্য এক অশনিসংকেত। সরকার এই হীন কর্মকাণ্ডকে রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়।
একজন প্রবীণ শিক্ষাবিদ দুঃখ করে বলছিলেন তাঁর সাম্প্রতিক সময়ের অভিজ্ঞতার কথা। যুবকদের নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তাঁকে সম্মানিত বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিনি যুবকদের মাঝে উপস্থিত হয়ে প্রথমেই জানতে চাইলেন, বক্তব্য দেওয়ার আগে জানতে চাই, তোমরা কয়জন নিয়মিত ক্লাসে যাচ্ছ, হাত তোলো? কিন্তু কারোর তোলা হাত তিনি দেখেননি। অবাক হন। জানতে চান, একটা হাতও না দেখার কারণ কী? তাদের কয়জন বেশ গাম্ভীর্য নিয়ে বলে, তারা এখন দেশ গড়ার কাজে ব্যস্ত। সংস্কারকাজে জড়িত। রাষ্ট্র সংস্কার হলে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরবে। প্রবীণ ভদ্রলোক ভেবে নিলেন, এই মুহূর্তে যুবকদের জ্ঞান দেওয়া বৃথা। বরং তারাই তাঁকে জ্ঞান দিতে বেশি আগ্রহী। এমন আয়োজনও নেহাত শোআপ। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে অবস্থা, জাতীয় পর্যায়ে ব্যবস্থাপনার যে চিত্র, তা শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি ও প্রসারে সহায়ক নয়। যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তির যথেষ্ট অভাব এই সেক্টরে। এই অভাব নতুন নয়, পুরোনো। বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে সার্বিক পরিস্থিতি তার ওপর গবেষণা চালালে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে।
ফলাফলে দেখা গেছে, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাসের হার মূলধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশি। এবার ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাসের চেহারা দেখতে পারেনি। এর কারণ অনুসন্ধান করতে না পারলে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যকার দূরত্ব বাড়বে বৈকি, যা দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে না, বরং প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। দেশের অস্তিত্ব সংকটের একটা কারণ হবে।
অটোপাসের দাবি কর্তৃপক্ষের মেনে নেওয়ার ঘটনাটি কখনোই উন্নত শিক্ষাব্যবস্থাকে সমর্থন করে না, শিক্ষিত এক জাতির পূর্বাভাস দেয় না। বরং শিক্ষাব্যবস্থাকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রচণ্ড সুযোগ দেয়। অতীতে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও তার শিক্ষার্থীদের কবজা করার প্রবণতা সব সরকারের ছিল এবং এখনো আছে। কিন্তু অটোপাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করবার ঘটনা সম্ভবত এই প্রথম এবং সেটা রাজনৈতিক ইস্যুতে। যেখানে ২৪-এর আন্দোলনের শুরুটা ছিল মেধার যোগ্যতায় বিসিএসে নিয়োগের দাবিতে, যদিও সেই আন্দোলন পৌঁছে যায় শেষ অবধি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে। সেখানে অটোপাসের বিষয়টি মেধার গুরুত্বকে কোথায় নিয়ে যায় বা যাবে, সংশ্লিষ্টরা তা বুঝতে সক্ষম হয়েছিল কি না, প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রশ্ন থাকে, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন ও তার প্রত্যয়, সেখানে মেধা ও শিক্ষার বিকল্প কী? উত্তর, কোনো বিকল্প নেই। একটা শিক্ষিত জাতি একটা দেশকে যতটা নিরাপদ করে রাখতে পারে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, স্থায়িত্বশীল উন্নয়নকে দৃশ্যমান করে তুলতে পারে, অন্য কোনো মন্ত্র, থিওরি কিন্তু তা পারে না।
যদি শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি মনোযোগ ও গুরুত্ব না দেওয়া হয়, তাহলে একদিন পাসের হার .০৫-এ নেমে গেলে কেউ আর আশ্চর্য হবে না। তখন এটাকে বাস্তব চিত্র বলে কৃতিত্ব নেওয়ার পথও থাকবে না। একজন ক্ষমতাসীনের চেয়ে একজন মেধাবী শিক্ষিতের প্রয়োজন এই দেশে সবচেয়ে বেশি।
স্বপ্না রেজা,কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক

মিয়ানমারের বিরল খনিজে নজর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলতে গেলে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি মিয়ানমারে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সুসান স্টিভেনসন দেশটির কাচিন রাজ্যের রাজধানী মিচিনা সফর করেন। সফরের বিষয়ে পরে মুখপাত্র বলেন, এই সফরের মাধ্যমে তিনি স্থানীয়...
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছোট ছিলাম যখন, তখন শোনা কথাগুলোকে অমূল্য মনে হতো। বুঝে না-বুঝে প্রচলিত কথাগুলোকেই বিশ্বাস করতাম। বয়স বাড়তে লাগল, বুঝতে পারলাম, জীবনে এমন অনেক কিছুই আছে, যা আদর্শবাদের সঙ্গে যায় না। বাস্তব একেবারে অন্য কিছু।
১৩ ঘণ্টা আগে
গরিব ও দরিদ্র মানুষদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত ভিজিডি কার্ড (পরিবর্তিত নাম ভিডব্লিউবি) বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আজকের পত্রিকায় ২১ অক্টোবর সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
হাত-পা বেঁধে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সেই ছিনতাইকারীর। সেখানে ঘটনা থেমে থাকেনি, লোকটির শরীরে লবণ দিয়ে উল্লাস করতে থাকে জনতা। টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ২০টি করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এটা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবস্থারই ইঙ্গিত দেয়।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

গরিব ও দরিদ্র মানুষদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত ভিজিডি কার্ড (পরিবর্তিত নাম ভিডব্লিউবি) বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আজকের পত্রিকায় ২১ অক্টোবর সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নে। প্রকৃত দরিদ্র ব্যক্তিরা নয়, কার্ড পেয়েছেন ইউপি সদস্যের মেয়ে, প্রবাসীর স্ত্রী, চাকরিজীবীর পরিবার, এমনকি ১৫ বিঘা জমি ও পাকা বাড়ির মালিকেরাও। ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক, সচিব এবং একজন বিএনপিপন্থী প্রভাবশালী ইউপি সদস্যের যোগসাজশেই এই অনিয়মের কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে। ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে প্রকৃত দুস্থদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে, সচ্ছল পরিবারগুলোকে ভিজিডি কার্ড দেওয়া হয়েছে। নীতিমালার তোয়াক্কা না করে এই তালিকা প্রণয়ন শুধু নিয়ম ভঙ্গ করাই নয়, এটি অসহায় মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের শামিল।
শুধু দুস্থ ব্যক্তিদের কার্ডের জন্য নয়, সরকারের পক্ষ থেকে দারিদ্র্য নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্প, বিশেষ সম্প্রদায় বা পেশার জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করাসহ নানা জনকল্যাণমূলক কাজেও এমন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। বিধবা না হয়ে ভাতা উত্তোলন, ধনী হয়ে ভূমিহীনের জমি পাওয়া এবং প্রকৃত গৃহহীন মানুষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর না পাওয়াসহ নানা অভিযোগের খবর প্রতিনিয়ত পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে মূলত নির্বাচিত চেয়ারম্যান না থাকায়। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর দেশের কোনো ইউনিয়ন পরিষদে এখন আর নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্য নেই। এই ইউনিয়নে প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা। অনির্বাচিত ব্যক্তির সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বোধ থাকে না। সে জন্য অপকর্মটি এই প্রশাসকের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
সবার প্রত্যাশা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আগে যেমন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ এসব করতেন, এখন সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কেউ কেউ একই কাজ করছেন। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো, তদন্ত চলাকালেই অনিয়মের মাধ্যমে কার্ড পাওয়া ব্যক্তিরা দুই মাসের চাল তুলে নিয়েছেন।
সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্তি দেওয়া। কিন্তু যখন সেই কর্মসূচি দুর্নীতি দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ পূরণ করা সম্ভব হয় না।
যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির মাধ্যমে অনিয়মকারীদের বিচারের আওতায় আনা হতো, তাহলে এ ধরনের দুর্নীতি কিছুটা কমত।
অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এই ঘটনায় যাঁরা সরাসরি জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিভাগীয় ও ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। শুধু ইউপি সচিব ও মেম্বারকে দায়ী করে প্রশাসককে রেহাই দেওয়া হলে তা ভুল বার্তা দেবে। সব স্তরের জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে যাঁরা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। যথাযথ তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

গরিব ও দরিদ্র মানুষদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত ভিজিডি কার্ড (পরিবর্তিত নাম ভিডব্লিউবি) বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আজকের পত্রিকায় ২১ অক্টোবর সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নে। প্রকৃত দরিদ্র ব্যক্তিরা নয়, কার্ড পেয়েছেন ইউপি সদস্যের মেয়ে, প্রবাসীর স্ত্রী, চাকরিজীবীর পরিবার, এমনকি ১৫ বিঘা জমি ও পাকা বাড়ির মালিকেরাও। ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক, সচিব এবং একজন বিএনপিপন্থী প্রভাবশালী ইউপি সদস্যের যোগসাজশেই এই অনিয়মের কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে। ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে প্রকৃত দুস্থদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে, সচ্ছল পরিবারগুলোকে ভিজিডি কার্ড দেওয়া হয়েছে। নীতিমালার তোয়াক্কা না করে এই তালিকা প্রণয়ন শুধু নিয়ম ভঙ্গ করাই নয়, এটি অসহায় মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের শামিল।
শুধু দুস্থ ব্যক্তিদের কার্ডের জন্য নয়, সরকারের পক্ষ থেকে দারিদ্র্য নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্প, বিশেষ সম্প্রদায় বা পেশার জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করাসহ নানা জনকল্যাণমূলক কাজেও এমন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। বিধবা না হয়ে ভাতা উত্তোলন, ধনী হয়ে ভূমিহীনের জমি পাওয়া এবং প্রকৃত গৃহহীন মানুষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর না পাওয়াসহ নানা অভিযোগের খবর প্রতিনিয়ত পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে মূলত নির্বাচিত চেয়ারম্যান না থাকায়। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর দেশের কোনো ইউনিয়ন পরিষদে এখন আর নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্য নেই। এই ইউনিয়নে প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা। অনির্বাচিত ব্যক্তির সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বোধ থাকে না। সে জন্য অপকর্মটি এই প্রশাসকের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
সবার প্রত্যাশা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আগে যেমন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ এসব করতেন, এখন সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কেউ কেউ একই কাজ করছেন। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো, তদন্ত চলাকালেই অনিয়মের মাধ্যমে কার্ড পাওয়া ব্যক্তিরা দুই মাসের চাল তুলে নিয়েছেন।
সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্তি দেওয়া। কিন্তু যখন সেই কর্মসূচি দুর্নীতি দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ পূরণ করা সম্ভব হয় না।
যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির মাধ্যমে অনিয়মকারীদের বিচারের আওতায় আনা হতো, তাহলে এ ধরনের দুর্নীতি কিছুটা কমত।
অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এই ঘটনায় যাঁরা সরাসরি জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিভাগীয় ও ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। শুধু ইউপি সচিব ও মেম্বারকে দায়ী করে প্রশাসককে রেহাই দেওয়া হলে তা ভুল বার্তা দেবে। সব স্তরের জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে যাঁরা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। যথাযথ তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মিয়ানমারের বিরল খনিজে নজর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলতে গেলে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি মিয়ানমারে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সুসান স্টিভেনসন দেশটির কাচিন রাজ্যের রাজধানী মিচিনা সফর করেন। সফরের বিষয়ে পরে মুখপাত্র বলেন, এই সফরের মাধ্যমে তিনি স্থানীয়...
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছোট ছিলাম যখন, তখন শোনা কথাগুলোকে অমূল্য মনে হতো। বুঝে না-বুঝে প্রচলিত কথাগুলোকেই বিশ্বাস করতাম। বয়স বাড়তে লাগল, বুঝতে পারলাম, জীবনে এমন অনেক কিছুই আছে, যা আদর্শবাদের সঙ্গে যায় না। বাস্তব একেবারে অন্য কিছু।
১৩ ঘণ্টা আগে
এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল বেশ খারাপ। বলা যায়, সন্তোষজনক নয়। যদিও পরীক্ষার ফল যে ভালো হবে, পাসের হার বেশি হবে, তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ বা উদ্যোগ কিন্তু ছিল না। বরাবরের মতো গত নয়-দশ মাসে তেমন কোনো উদ্যোগ, তৎপরতা চোখে পড়েনি।
১৩ ঘণ্টা আগে
হাত-পা বেঁধে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সেই ছিনতাইকারীর। সেখানে ঘটনা থেমে থাকেনি, লোকটির শরীরে লবণ দিয়ে উল্লাস করতে থাকে জনতা। টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ২০টি করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এটা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবস্থারই ইঙ্গিত দেয়।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

গাজীপুরের টঙ্গীতে এক ছিনতাইকারীকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছিল এলাকাবাসী। দুজন মিলে মোবাইল ছিনতাই করতে গিয়েছিল, তাদের একজন পালিয়ে গিয়েছিল, অন্যজনকে ধরে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সেই ছিনতাইকারীর। সেখানে ঘটনা থেমে থাকেনি, লোকটির শরীরে লবণ দিয়ে উল্লাস করতে থাকে জনতা।
টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ২০টি করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এটা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবস্থারই ইঙ্গিত দেয়। যদি প্রতিদিন ২০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তা প্রতিরোধ করা হয় না কেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার মতো পর্যাপ্ত লোকবল কি নেই? ছিনতাইয়ের স্পটগুলো কি চিহ্নিত করা হয়েছে? এই দায় কার ওপর বর্তায়? যদি ছিনতাই রোধ করার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হতো এবং ছিনতাইকারীদের উপযুক্ত শাস্তি হতো, তাহলে এ পথ কেউ মাড়াত না। অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্টরা। আর তাই এখনো প্রতিদিন গড়ে ২০টা করে ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে।
ছিনতাই করার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নয়। কিন্তু উত্তেজিত জনতা সেই সাজাই দিয়েছে ছিনতাইকারীকে। জনতা ছিনতাইকারীকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেনি, বিচার চায়নি, বরং হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে বেদম প্রহার করেছে। এতটাই মেরেছে যে ঘটনাস্থলেই সে নিহত হয়েছে। নিহত হওয়ার পর মৃতদেহে লবণ ছিটিয়ে উল্লাস করেছে জনতা!
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এই দৃষ্টান্ত মোটেই সুখকর কিছু নয়। যারা হত্যা করে, তারাই হত্যাকারী। এই হত্যার দায় কি এই উল্লসিত জনতা দেবে? প্রশ্ন জাগে, মানুষ কেন এতটা অসহিষ্ণু হয়ে উঠল? কেন একজন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে? আইনের পথটি কি তাদের জানা নেই?
জানা আছে নিশ্চয়। কিন্তু দিনের পর দিন ছিনতাইকারীদের শাস্তি হচ্ছে না দেখে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। পুলিশ কিংবা নিরাপত্তারক্ষীরা যদি সতর্ক হয়ে ছিনতাইকারীদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে পারত, ছিনতাইকারীরা যদি তাদের অপরাধের সাজা পেত, তাহলে হয়তো মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিত না। কিন্তু এখন এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যদি কেউ কাউকে ছিনতাইকারী বলে পেটাতে শুরু করে, তাহলে সমবেত জনতার প্রত্যেকেই খায়েশ মিটিয়ে পেটাতে থাকবে। কারও সাতে-পাঁচে নেই—এমন একজন নিরীহ মানুষও এই মবের হাতে প্রাণ হারাতে পারে।
ধরা যাক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হয়ে ছিনতাইকারীদের ধরতে শুরু করল, তাতে কি জনতার এই উন্মত্ততা কমে যাবে? মনে হয় না। হিংস্রতা নিবারণের জন্য পারিবারিক শিক্ষা, সচেতনতা ইত্যাদির প্রয়োজন পড়ে। সৎ গুণাবলি তৈরি করতে হলে তো সেটার চর্চা দরকার। সেই চর্চাই তো কমে গেছে। একজন মানুষের মনে যদি হিংসা, ঘৃণা, ক্ষোভ জমা হতে থাকে, কমে যেতে থাকে ভালোবাসা, মানবতা—তাহলে সে মৃত মানুষের লাশ নিয়ে উল্লাসই করবে! এ এক ভয়াবহ বাস্তবতা!

গাজীপুরের টঙ্গীতে এক ছিনতাইকারীকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছিল এলাকাবাসী। দুজন মিলে মোবাইল ছিনতাই করতে গিয়েছিল, তাদের একজন পালিয়ে গিয়েছিল, অন্যজনকে ধরে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সেই ছিনতাইকারীর। সেখানে ঘটনা থেমে থাকেনি, লোকটির শরীরে লবণ দিয়ে উল্লাস করতে থাকে জনতা।
টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ২০টি করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এটা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবস্থারই ইঙ্গিত দেয়। যদি প্রতিদিন ২০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তা প্রতিরোধ করা হয় না কেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার মতো পর্যাপ্ত লোকবল কি নেই? ছিনতাইয়ের স্পটগুলো কি চিহ্নিত করা হয়েছে? এই দায় কার ওপর বর্তায়? যদি ছিনতাই রোধ করার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হতো এবং ছিনতাইকারীদের উপযুক্ত শাস্তি হতো, তাহলে এ পথ কেউ মাড়াত না। অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্টরা। আর তাই এখনো প্রতিদিন গড়ে ২০টা করে ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে।
ছিনতাই করার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নয়। কিন্তু উত্তেজিত জনতা সেই সাজাই দিয়েছে ছিনতাইকারীকে। জনতা ছিনতাইকারীকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেনি, বিচার চায়নি, বরং হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে বেদম প্রহার করেছে। এতটাই মেরেছে যে ঘটনাস্থলেই সে নিহত হয়েছে। নিহত হওয়ার পর মৃতদেহে লবণ ছিটিয়ে উল্লাস করেছে জনতা!
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এই দৃষ্টান্ত মোটেই সুখকর কিছু নয়। যারা হত্যা করে, তারাই হত্যাকারী। এই হত্যার দায় কি এই উল্লসিত জনতা দেবে? প্রশ্ন জাগে, মানুষ কেন এতটা অসহিষ্ণু হয়ে উঠল? কেন একজন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে? আইনের পথটি কি তাদের জানা নেই?
জানা আছে নিশ্চয়। কিন্তু দিনের পর দিন ছিনতাইকারীদের শাস্তি হচ্ছে না দেখে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। পুলিশ কিংবা নিরাপত্তারক্ষীরা যদি সতর্ক হয়ে ছিনতাইকারীদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে পারত, ছিনতাইকারীরা যদি তাদের অপরাধের সাজা পেত, তাহলে হয়তো মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিত না। কিন্তু এখন এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যদি কেউ কাউকে ছিনতাইকারী বলে পেটাতে শুরু করে, তাহলে সমবেত জনতার প্রত্যেকেই খায়েশ মিটিয়ে পেটাতে থাকবে। কারও সাতে-পাঁচে নেই—এমন একজন নিরীহ মানুষও এই মবের হাতে প্রাণ হারাতে পারে।
ধরা যাক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হয়ে ছিনতাইকারীদের ধরতে শুরু করল, তাতে কি জনতার এই উন্মত্ততা কমে যাবে? মনে হয় না। হিংস্রতা নিবারণের জন্য পারিবারিক শিক্ষা, সচেতনতা ইত্যাদির প্রয়োজন পড়ে। সৎ গুণাবলি তৈরি করতে হলে তো সেটার চর্চা দরকার। সেই চর্চাই তো কমে গেছে। একজন মানুষের মনে যদি হিংসা, ঘৃণা, ক্ষোভ জমা হতে থাকে, কমে যেতে থাকে ভালোবাসা, মানবতা—তাহলে সে মৃত মানুষের লাশ নিয়ে উল্লাসই করবে! এ এক ভয়াবহ বাস্তবতা!

মিয়ানমারের বিরল খনিজে নজর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলতে গেলে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি মিয়ানমারে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সুসান স্টিভেনসন দেশটির কাচিন রাজ্যের রাজধানী মিচিনা সফর করেন। সফরের বিষয়ে পরে মুখপাত্র বলেন, এই সফরের মাধ্যমে তিনি স্থানীয়...
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছোট ছিলাম যখন, তখন শোনা কথাগুলোকে অমূল্য মনে হতো। বুঝে না-বুঝে প্রচলিত কথাগুলোকেই বিশ্বাস করতাম। বয়স বাড়তে লাগল, বুঝতে পারলাম, জীবনে এমন অনেক কিছুই আছে, যা আদর্শবাদের সঙ্গে যায় না। বাস্তব একেবারে অন্য কিছু।
১৩ ঘণ্টা আগে
এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল বেশ খারাপ। বলা যায়, সন্তোষজনক নয়। যদিও পরীক্ষার ফল যে ভালো হবে, পাসের হার বেশি হবে, তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ বা উদ্যোগ কিন্তু ছিল না। বরাবরের মতো গত নয়-দশ মাসে তেমন কোনো উদ্যোগ, তৎপরতা চোখে পড়েনি।
১৩ ঘণ্টা আগে
গরিব ও দরিদ্র মানুষদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত ভিজিডি কার্ড (পরিবর্তিত নাম ভিডব্লিউবি) বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আজকের পত্রিকায় ২১ অক্টোবর সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগে