সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
‘তোমার না প্রেমের বিয়ে? তাইলে এত মন খারাপ করে আছো ক্যান? হাসো।’
আমি বাল্যবন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝলাম এই মন খারাপ তার মা-বাবার জন্য। বন্ধুর মতো আগলে রাখা ভাই-বোনের জন্য। পরিবারের আদুরে ছোট্ট সদস্যটার জন্য। তাঁদের ছেড়ে একদম অপরিচিত একটা পরিবারে অজানা আশঙ্কায় মন বেঁধেই তাকে যেতে হবে। আমার বন্ধুর যে ভালোলাগা-মন্দলাগার এক মিশ্র অনুভূতি হচ্ছিল, সেটা বুঝতে পারছিলাম। প্রেমের বিয়ে হোক কিংবা পরিবারের পছন্দে হোক, বিয়ের দিন কনের মন খারাপ হতে পারবে না, এটা কোথায় লেখা আছে, জানেন? কিছুটা আঁচ করতে পারি, আমাদের দেশের পশ্চাৎ মস্তিষ্কের শিরায় শিরায়।
এরপর আরও কথা থেকে যায়। কনের বাড়ি থেকে কী কী দিল, সেটার ফর্দ বরের বাড়ির আত্মীয়-অনাত্মীয় বা প্রতিবেশীরা না দেখা পর্যন্ত সদ্যবিবাহিত কনেকে কথায় কান দিতে হয়। ভাবতে অবাক লাগে, শিক্ষিত সমাজেও এসব চলে দেখছি! ‘যৌতুক’ শব্দটা ব্যবহার করবে না কেউ, এতটা আধুনিক অবশ্য হওয়া গেছে। শুধু বলা হবে, ‘না, না এটা যৌতুক নয়। বাপের বাড়ি থেকে তো মেয়েকে এমনিতেই উপহার দেয়। এটা আবার বলা লাগে নাকি!’ বলছি শুধু মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প। নিম্নবিত্তদের গল্পটা অন্য রকম, সরাসরি মারমার-কাটকাট কথা হয়। জানেন তো, নাকি?
মাত্র সেদিনই খবরটা পড়লাম, ভোলার মনপুরার একটি ঘটনা। ভালোয় ভালোয় বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিপত্তি বাধে বউভাতের দিন। যৌতুক নিয়ে দুই পক্ষের তর্কযুদ্ধের একপর্যায়ে বর-কনে আস্তে করে সেখান থেকে সটকে পড়েন। তাঁরা পালিয়ে কোথায় গেছেন, কীভাবে আছেন সে খবর অবশ্য এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। কনের বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। কনেপক্ষের কয়েকজনকে বরপক্ষ মেরে আহত করেছেন বলে। অবাক হওয়ার কিছু নেই। ওই মারধরের জন্যই অভিযোগ হয়, যৌতুকের
জন্য নয়।
এটা যেন অলিখিত সংস্কৃতি—যৌতুক বা উপহার দিতে না পারলে মেয়ের বিয়ে হবে না। অথবা যে মেয়ের বাড়ি থেকে উপঢৌকন না আসবে, সেখানে ছেলেকে বিয়ে করানো যাবে না। কী এক অদ্ভুত সমাজে বাস করছি আমরা। লোকে কী না বলে আর সেই বলায় কান দিয়ে দিয়ে আমরা আমাদের ‘আজব’ সংস্কৃতির চর্চা করি। এক মধ্যবিত্তের বিয়েতে কনেপক্ষ কোনো ‘ঘর সাজানোর উপহার’ দেয়নি। ছেলের বাবা লজ্জায় চাইতেও পারেননি। ওই যে ‘এটা আবার বলা লাগে নাকি’! ব্যাপারটা মাথায় ঢেউ খেলে আরকি। নিজেই তাই ‘ঘর সাজানোর উপহার’ হিসেবে খাট, সোফা, ড্রেসিং টেবিল কিনে ছেলের ঘর সাজিয়েছেন। প্রতিবেশীদের বলেছেন, কনের বাড়ি থেকে পাঠিয়েছে! শুধু ‘লোকে কী বলবে’র পাত্তায় পড়েই শিক্ষিত বাবা হয়েও এ কাজটা করেছেন বাধ্য হয়ে। সেই বাবার জন্য সমবেদনা।
এহেন চর্চা চলতে চলতে সেই নবদম্পতির ওপরেও কিন্তু একদিন সেটা বর্তে যায়। না চাইতেও তাঁদের এই সংস্কৃতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এই লোকের কথায় কান দিয়ে একসময় নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। অথচ এই লোকজন কখনো তাঁদের পরিবারের সমস্যা সমাধান করতে আসেন না। মাসে মাসে রসদ দিয়ে যান না দোরগোড়ায়। তাঁদের সংসার পরিচালনা করেন না। তারপরও লোকের কথায় কান দিতে হয়। কেননা, আমরা সামাজিক জীব। সমাজ নিয়ে চলতে হয়। সমাজের নিয়ম মেনে চলতে হয়। তবু সমাজের ‘আজব’ সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হয় না। আমরা বলতে পারি, ‘সমাজ বদলে দেব। হ্যান করব, ত্যান করব।’ আদতে আমরা ‘ঐতিহ্য’ ধরে রাখতে ভালোবাসি—সত্যিকারের নয়, বাকওয়াসগুলো!
‘তোমার না প্রেমের বিয়ে? তাইলে এত মন খারাপ করে আছো ক্যান? হাসো।’
আমি বাল্যবন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝলাম এই মন খারাপ তার মা-বাবার জন্য। বন্ধুর মতো আগলে রাখা ভাই-বোনের জন্য। পরিবারের আদুরে ছোট্ট সদস্যটার জন্য। তাঁদের ছেড়ে একদম অপরিচিত একটা পরিবারে অজানা আশঙ্কায় মন বেঁধেই তাকে যেতে হবে। আমার বন্ধুর যে ভালোলাগা-মন্দলাগার এক মিশ্র অনুভূতি হচ্ছিল, সেটা বুঝতে পারছিলাম। প্রেমের বিয়ে হোক কিংবা পরিবারের পছন্দে হোক, বিয়ের দিন কনের মন খারাপ হতে পারবে না, এটা কোথায় লেখা আছে, জানেন? কিছুটা আঁচ করতে পারি, আমাদের দেশের পশ্চাৎ মস্তিষ্কের শিরায় শিরায়।
এরপর আরও কথা থেকে যায়। কনের বাড়ি থেকে কী কী দিল, সেটার ফর্দ বরের বাড়ির আত্মীয়-অনাত্মীয় বা প্রতিবেশীরা না দেখা পর্যন্ত সদ্যবিবাহিত কনেকে কথায় কান দিতে হয়। ভাবতে অবাক লাগে, শিক্ষিত সমাজেও এসব চলে দেখছি! ‘যৌতুক’ শব্দটা ব্যবহার করবে না কেউ, এতটা আধুনিক অবশ্য হওয়া গেছে। শুধু বলা হবে, ‘না, না এটা যৌতুক নয়। বাপের বাড়ি থেকে তো মেয়েকে এমনিতেই উপহার দেয়। এটা আবার বলা লাগে নাকি!’ বলছি শুধু মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প। নিম্নবিত্তদের গল্পটা অন্য রকম, সরাসরি মারমার-কাটকাট কথা হয়। জানেন তো, নাকি?
মাত্র সেদিনই খবরটা পড়লাম, ভোলার মনপুরার একটি ঘটনা। ভালোয় ভালোয় বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিপত্তি বাধে বউভাতের দিন। যৌতুক নিয়ে দুই পক্ষের তর্কযুদ্ধের একপর্যায়ে বর-কনে আস্তে করে সেখান থেকে সটকে পড়েন। তাঁরা পালিয়ে কোথায় গেছেন, কীভাবে আছেন সে খবর অবশ্য এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। কনের বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। কনেপক্ষের কয়েকজনকে বরপক্ষ মেরে আহত করেছেন বলে। অবাক হওয়ার কিছু নেই। ওই মারধরের জন্যই অভিযোগ হয়, যৌতুকের
জন্য নয়।
এটা যেন অলিখিত সংস্কৃতি—যৌতুক বা উপহার দিতে না পারলে মেয়ের বিয়ে হবে না। অথবা যে মেয়ের বাড়ি থেকে উপঢৌকন না আসবে, সেখানে ছেলেকে বিয়ে করানো যাবে না। কী এক অদ্ভুত সমাজে বাস করছি আমরা। লোকে কী না বলে আর সেই বলায় কান দিয়ে দিয়ে আমরা আমাদের ‘আজব’ সংস্কৃতির চর্চা করি। এক মধ্যবিত্তের বিয়েতে কনেপক্ষ কোনো ‘ঘর সাজানোর উপহার’ দেয়নি। ছেলের বাবা লজ্জায় চাইতেও পারেননি। ওই যে ‘এটা আবার বলা লাগে নাকি’! ব্যাপারটা মাথায় ঢেউ খেলে আরকি। নিজেই তাই ‘ঘর সাজানোর উপহার’ হিসেবে খাট, সোফা, ড্রেসিং টেবিল কিনে ছেলের ঘর সাজিয়েছেন। প্রতিবেশীদের বলেছেন, কনের বাড়ি থেকে পাঠিয়েছে! শুধু ‘লোকে কী বলবে’র পাত্তায় পড়েই শিক্ষিত বাবা হয়েও এ কাজটা করেছেন বাধ্য হয়ে। সেই বাবার জন্য সমবেদনা।
এহেন চর্চা চলতে চলতে সেই নবদম্পতির ওপরেও কিন্তু একদিন সেটা বর্তে যায়। না চাইতেও তাঁদের এই সংস্কৃতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এই লোকের কথায় কান দিয়ে একসময় নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। অথচ এই লোকজন কখনো তাঁদের পরিবারের সমস্যা সমাধান করতে আসেন না। মাসে মাসে রসদ দিয়ে যান না দোরগোড়ায়। তাঁদের সংসার পরিচালনা করেন না। তারপরও লোকের কথায় কান দিতে হয়। কেননা, আমরা সামাজিক জীব। সমাজ নিয়ে চলতে হয়। সমাজের নিয়ম মেনে চলতে হয়। তবু সমাজের ‘আজব’ সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হয় না। আমরা বলতে পারি, ‘সমাজ বদলে দেব। হ্যান করব, ত্যান করব।’ আদতে আমরা ‘ঐতিহ্য’ ধরে রাখতে ভালোবাসি—সত্যিকারের নয়, বাকওয়াসগুলো!
রাজনীতির মাঠে অশালীন শব্দ ব্যবহার করলে আর মিথ্যা কথা বললে জনপ্রিয়তা বাড়ে—এ রকম বক্তব্যসহ সহকর্মী জাহাঙ্গীর আলমের লেখা একটি উপসম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবারের আজকের পত্রিকায়। ব্যাপারটা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক।
১১ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা ভাইরাল নিউজ চোখে পড়ল। একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন ক্লিনার বকশিশ চেয়ে না পেয়ে অসুস্থ শিশুর মুখ থেকে অক্সিজেনের মাস্ক খুলে ফেলেন। এতে সেই শিশুর একপর্যায়ে করুণ মৃত্যু হয়। এমন অভিযোগ শিশুর মায়ের।
১১ ঘণ্টা আগেবাগছাস নেতা এসে স্কুলের ফেল করা শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে যাচ্ছেন—এটাকে কি রূপকথার গল্প বলে মনে হচ্ছে? মনে হচ্ছে কারও অলীক কল্পনা? চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের অস্থায়ী (অ্যাডহক) কমিটির আহ্বায়ক হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহম্মদ।
১২ ঘণ্টা আগেদেশের দু’টি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ—ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের অভাবনীয় উত্থান সাম্প্রতিক ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যে সংগঠনটি অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে নিষিদ্ধ ছিল, তারাই কীভাবে এত সংখ্যক পদে জয়ী হলো—এই প্রশ্ন শিক্ষিত সমাজকে
১৮ ঘণ্টা আগে