Ajker Patrika

‘তবু সে দেখিলো কোন ভূত’

তাপস বড়ুয়া
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ০০
‘তবু সে দেখিলো কোন ভূত’

মহসিন সাহেব আত্মহত্যা করেছেন। তিনি ফেসবুক লাইভে এসে নিজের দুঃখের কথা সকলকে জানিয়ে নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেছেন। মূলধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে তোলপাড় চলছে। শেষমেশ বিটিআরসি কোর্টে গেছে এই ঘটনার যে ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে, তার বিস্তার ঠেকাতে। 

এই খবরগুলোর অনেকগুলোরই হেডলাইন ছিল—একজন চিত্রনায়কের শ্বশুর আত্মহত্যা করেছেন। যে মানুষটি মারা গেলেন নিজের হাতে, তিনি নিজেও তো একজন ব্যক্তি, আলাদা সত্তা। কার শ্বশুর, সেটা তো পরের কথা। দু-একটি পত্রিকা ছাড়া কেউই এই মানুষটিকে, যিনি একই সঙ্গে হত্যাকারী ও হত্যার শিকার, হেডলাইনে আনল না। অন্যের পরিচয়ে তাঁকে পরিচিত করানো হলো চিত্রনায়কের শ্বশুর হিসেবে। 

অমনি ‘ঢি ঢি’ পড়ে গেল। চিত্রনায়ক বা তাঁর স্ত্রী এই মানুষটির নিঃসঙ্গতা কাটাতে কিছু করেননি, ইত্যাদি ইত্যাদি। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এসব সমালোচনাকারীর অনেকেই তাঁদের বৃদ্ধ মা-বাবাকে, অথবা একাকী মাকে বা একাকী বাবাকে শহরে নিজের কাছে না রেখে গ্রামে নিঃসঙ্গ জীবনযাপনে বাধ্য করছেন। ব্যতিক্রম বাদে, কারও বাবা বা মা তো কারও শ্বশুর বা শাশুড়িও। নিজের বা নিজেদের মা-বাবা শ্বশুর-শাশুড়ির একাকিত্বের সময় কাছে টেনে না নিয়ে ‘গ্রামেই ওনারা ভালো থাকেন; ঢাকায় হাঁপিয়ে ওঠেন’ ইত্যাদি বলে দায় এড়ানো লোকেরাই সমস্বরে বলতে লাগলেন—এই মৃত্যুর পেছনে চিত্রনায়ক ও তাঁর স্ত্রীর পরোক্ষ দায় আছে বুঝিবা। এটাই সমাজমানস আজকাল। 

মহসিন সাহেবের ক্ষেত্রে ব্যবসার খারাপ অবস্থা, শরীরের ক্যানসার, আর দীর্ঘদিন একা থাকা—সব মিলে তিনি হয়তো প্রচণ্ডভাবে ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। এই তিনটির যেকোনো একটিই মানুষের বিষণ্নতাকে উসকে দিতে যথেষ্ট। সেটা বেশি মাত্রায় গেলে এবং তিনি একবারে নিরাশ হয়ে গেলে আত্মহত্যার মতো মারাত্মক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—এমন উদাহরণ যথেষ্ট। বেশ কয়েক বছর আগে ব্যবসার ক্ষতি ও ঋণের ধাক্কা সামলাতে না পেরে কালান্দর কবীরের আত্মহত্যার খবর পত্রিকায় এসেছিল। আর্থিক ক্ষতি মাথায় নিয়ে রেললাইনের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়েছিলেন সুমন জাহিদ। পত্রিকায় খবর হয়েছিল। তিনি কিন্তু একা ছিলেন না। পত্রিকায় খবর হয় না, কিন্তু অর্থকষ্ট বা দুরারোগ্য ব্যাধির যন্ত্রণা নিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা সারা দেশে প্রচুর ঘটে। 

মহসিন সাহেবও ভেবেছেন, এই জীবন যাপন করা, আর না করা একই কথা। তিনি নিজেকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের মধ্যে আলোচনায় বেশি আসছে তাঁর একাকিত্বের প্রসঙ্গটি। 

শুধু কি পাশে মানুষ না থাকলে মানুষ একা হয়। এই শহরে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার দুই বোনের বছরের পর বছর স্বেচ্ছা-গৃহবন্দীত্ব এবং মৃতপ্রায় অবস্থায় একটি মানবাধিকার সংস্থার তাঁদেরকে বের করে নিয়ে আসার খবর আমরা জানি। আমাদের স্মৃতিসৌধের বরেণ্য স্থপতি মঈনুল ইসলাম জীবনের শেষ পর্যায়ে একটা ঘরেই থাকতেন। বেরোতেন না। সুতরাং, জীবনানন্দের কথায়, ‘সকল লোকের মাঝে থেকেও’ মানুষ একা হতে পারে। ‘বধূ শুয়েছিলো পাশে—শিশুটিও ছিলো;/প্রেম ছিলো, আশা ছিলো–জ্যোৎস্নায়’; তবু ভূত দেখতে পারে একজন মানুষ; একগোছা দড়ি হাতে যেতে পারে গাছতলায়। মানুষের মনের মধ্যে এক ‘বিপন্ন বিস্ময়’ খেলা করতেই পারে। সেটার কতটা সাইকোলজি, কতটা বায়োলজি, আর কতটা এই দুয়ের মিশ্রণে সাইকিয়াট্রি এই প্রশ্নের হয়তো কোনো সঠিক জবাব নেই। এর কতটা জেনেটিক, আর কতটা পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে জেনেটিক ব্যাপারটার সাথে পারিপার্শ্বিক অবস্থা যোগ হলে ব্যাপারটা প্রবল হয়ে ওঠে। 

জীবনানন্দ লিখেছেন, ‘গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে/আরেকটি প্রভাতের ইশারায়/—অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে’। তবু কোনো কোনো মানুষ বেছে নেয় প্রস্থানের পথ। মানুষ একা হয়, সবার মধ্যে থেকেও হয়; কাছের লোকেরা কাছে না থাকলেও হয়। সকল লোকের মধ্যে থেকে যে আস্তে আস্তে গুটিয়ে যায়, তার একাকিত্বই সবচেয়ে দুর্বিষহ। কারণ, তার একাকিত্ব নিজের একান্ত গভীরে। চারপাশ বলে কিছু নেই সেই গহিনে। গভীর ডিপ্রেশনে চলে যাওয়ার ঝুঁকি তার খুব বেশি। এসব মানুষেরা সব খারাপে নিজের দোষ খুঁজে পান। নিজেকে সবকিছুর জন্য দায়ী মনে করে শাস্তি দিতে চান। যদিও গভীর ডিপ্রেশনে থাকা, একেবারে ভেঙে পড়া মানুষদের আত্মহত্যা করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতাও অবশিষ্ট থাকে না। ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠার পথে সে কিছুটা ডিপ্রেশনে থাকা অবস্থায়ই যখন কিছুটা মনের জোর আস্তে আস্তে অর্জন করে, আত্মহত্যার ঝুঁকি তখন বেশি বলে মনে করেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রবার্ট সাপোলস্কি, জীববিজ্ঞান ও মানুষের আচরণ নিয়ে যাঁর গভীর কাজ রয়েছে। 

বিষণ্নতায় ভোগা মানুষ তার চারপাশের মানুষকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। তাদের জীবনকেও নিজের অজান্তে ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দিতে পারে, বিষিয়ে তুলতে পারে। আবার এই কাছের মানুষদেরই তার দরকার হয় ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসার সময় আঁকড়ে ধরার জন্য। হাত বাড়ালে যদি সে আঁকড়ে ধরার মতো কিছু না পায়, সে সরে যেতে পারে দূর থেকে আরও দূরে। 

আলবেয়ার কাম্যু বলেছেন, মানুষ প্রতি মুহূর্তে এই কঠিন সিদ্ধান্তটা নেয়, সে আত্মহত্যা করবে কি-না। অন্য কথায়, সে বিবেচনা করে দেখে, এই যে জীবন তার, সেটা যাপন করার কোনো মানে আছে কি-না। যদি দেখে এই জীবন যাপনের কোনো মানে আর নেই। সে আত্মহত্যা করে। না হলে সে বেঁচে থাকে। অবচেতনে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। 

এ তো গেল শারীরিকভাবে আত্মহত্যার কথা। কাম্যু আরেক ধরনের আত্মহত্যার কথা বলেছেন—বুদ্ধিবৃত্তিক আত্মহত্যা। যা তার মন সায় দেয় না, সেটাও মেনে নেওয়া। সে জানে কাজটি ঠিক নয়; তবু সে মানিয়ে নেয়; কাজটি করা চালিয়ে যায়। এমন তো সব মানুষই করে, করতে হয়। কাম্যুর মতে বুদ্ধিজীবীরা বেশি করে। 

নচিকেতা গেয়েছেন, ‘প্রতিদিন চুরি যায় মূল্যবোধের সোনা/আমাদের স্বপ্ন; আমাদের চেতনা/...এরপর কোনো রাতে চাকরটা অজ্ঞাতে/সামান্য টাকা নিয়ে ধরা পড়ে হাতেনাতে/সকলে সমস্বরে, একরাশ ঘৃণা ভরে/চিৎকার করে বলে, “চোর, চোর, চোর…”।’ কোন চুরিটা বড় চুরি এটা নিয়ে ভাসা-ভাসা চিন্তা; অথবা চিন্তার প্রক্রিয়াকেই এড়িয়ে যাওয়া এবং স্রোতে গা-ভাসানো বোধ হয় কাম্যুর বলা বুদ্ধিবৃত্তিক আত্মহত্যাই, যা আমরা প্রতিনিয়ত করে চলেছি। 

ধরুন, আমেরিকায় একটি সামরিক ঘাঁটিতে কাজ করেন একজন মানুষ। তিনি সকালে স্যুট-টাই পরে অফিসে যান, পথে সন্তানকে স্কুলে নামিয়ে দেন। স্কুল গেটে সন্তানের কপালে চুমু খান। তার পর অফিসে গিয়ে স্যাটেলাইট ইমেজ দেখে দেখে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানকারী বোমারু বিমানের পাইলটদের পরামর্শ দেন, ঠিক কোন পয়েন্টে বোমা ফেলতে হবে। তারপর বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় স্ত্রীকে নিয়ে রোমান্টিক ডিনারে যান। রাতে দিব্যি ঘুমান। সকালে আবার একইরকম একটা দিন শুরু করেন। আমাদের শেখানো হয়েছে, এই মানুষটি স্বাভাবিক, ব্যালান্সড পার্সোনালিটির মানুষ। আর রাস্তায় যে মানুষটি অসংলগ্ন আচরণ করেন, অগোছালো কথা বলেন, কিন্তু অন্যের কোনো ক্ষতি করেন না, তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ, মানসিক রোগী। এই ধারণা যে বিশ্বে প্রচলিত, সেখানে যে মারাত্মক কোনো একটা সমস্যা আছে—এটা বুঝতে ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘হিস্ট্রি অব ম্যাডনেস’ পড়া লাগে না। 

আমরা সেই বিশ্বের, সেই সমাজের মানুষ। ভালো, আর মন্দের বিচারে আমরা খুব ওস্তাদ। ত্বরিত বিচার করে একজন কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারলেই আমরা সমস্বরে বলি, চেঁচিয়ে বলি—ওই যে, ও দোষী। এবং নিশ্চিত হই যে, দোষী লোকটা আমি নই; এটা প্রমাণ করতে পেরেছি। 

আসুন তো, গত দু-তিন বছরের মধ্যে এই শহরে ঘটে যাওয়া আর অন্তত দুটো ঘটনা মনে করে নিই। 

মগবাজারের খাইরুল ইসলাম আত্মহত্যা করেছিলেন। আর্থিক সংকট ছিল। মানসিক অসুস্থতা ছিল। সেগুলো তাঁকে আত্মহত্যাপ্রবণ হতে উৎসাহিত করেছে। কিন্তু আত্মহত্যার আগে তিনি একটি খুন করেছেন। তিনি খুন করেছেন নিজের সন্তানকে। একজন বাবা তাঁর নিজের সন্তানকে খুন করেছেন নিজেকে খুন করার আগে। যে মানুষটার ওপরে তাঁর কোনো ক্ষোভ, কোনো রাগ, কোনো অপছন্দ ছিল না; উল্টো ছিল অকৃত্রিম ভালোবাসা। ভালোবাসা থেকেই তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ছিল। তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর সেই অতি আদরের ধন মানুষের অনাদর, অবহেলা, এমনকি নির্যাতনের শিকার হবে—এই অনিশ্চয়তা তাঁর মনে গভীরভাবে বাসা বেঁধেছিল। 

বিষয়টি নিছক একটি হত্যা এবং তার পরে হত্যাকারীর আত্মহত্যা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, এখানে হত্যার কারণ বিরাগ নয়; বরং অনুরাগ। ছেলেটি অটিস্টিক ছিল। এ রকম একজন সন্তানের বাবা-মায়ের সব সময়ের দুশ্চিন্তা হচ্ছে, আমাদের মৃত্যুর পর আমার এই সন্তানের কী হবে, সে কোথায় যাবে, কে তাকে দেখে রাখবে। এমন একটি সন্তানের প্রতি মা-বাবার আবেগ, ভালো লাগা স্বাভাবিক একজন সন্তানের চেয়ে বেশি থাকে বলে ধারণা করা যায়। কারণ, মা-বাবা জানেন, এই সন্তানের সারা জীবন তাঁকে দরকার হবে গায়ে গা ঘেঁষে থাকার। এই বোধ থেকেই মা-বাবার সার্বক্ষণিক চিন্তাই থাকে, আমি যখন থাকব না, তখন আমার সন্তানটি কোথায় যাবে? সে কি রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াবে? সে রকম ছবি কল্পনা করে নির্ঘুম রাত কাটানো বা আঁতকে ওঠা প্রতি মুহূর্তের ব্যাপার। 

নিজে তিনি এমনিতেও মারা যেতে পারতেন, আর্থিক দুরবস্থাই হোক, আর মানসিক অসুস্থতাই হোক আত্মহত্যা তিনি করতে পারতেন। আত্মহত্যা কোনো গ্রহণযোগ্য বিষয় না হলেও আত্মহত্যা অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যু প্রিয়তম সন্তানের জীবনে যে দুঃখের অধ্যায় সৃষ্টি করবে, সেটা থেকে তাকে ‘মুক্তি’ দিয়ে নির্ভার হয়ে নিজেকে হত্যা করা বা আত্মহত্যা করার বিষয়টি আমাদের এই রাষ্ট্রকে, সমাজকে, আমাদের সবাইকে অপরাধী করে দেয়। 

আমরা এমন একটি সমাজ বা রাষ্ট্র তৈরি করতে পারিনি, যেখানে একজন বাবা বা মা তাঁর বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, যে অন্যদের সাথে কাড়াকাড়ি করে খেতে পারবে না, তাকে রেখে নিশ্চিন্তে চোখ বুঁজতে পারেন। 

তার এক বছর আগে টিকাটুলিতে এক বৃদ্ধ তাঁর পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্ত্রীকে খুন করেন, যিনি দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। পত্রপত্রিকায় খবর এসেছিল সত্তরোর্ধ্ব ওই মানুষটি স্ত্রীকে খুন করেছিলেন এমন একটি অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ থেকে যে, তিনি মারা গেলে স্ত্রীকে কে দেখে রাখবে! 

এতে মনে করার সুযোগ রয়েছে, রাষ্ট্র বা সমাজ তাঁর অবর্তমানে তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে দেখে রাখবে এই আস্থা এই মানুষগুলোর ছিল না। মানসিক ভারসাম্যহীনতা থেকে তাঁরা হত্যা এবং আত্মহত্যার মতো গুরুতর বিষয়ের সাথে জড়িয়ে পড়লেও এ রকম মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, তাঁদের মানসিক ভারসাম্যহীনতার সাথে এই অনিশ্চয়তার চাপের গুরুতর সংযোগ রয়েছে। অতিরিক্ত অনিশ্চয়তা থেকে অতিরিক্ত উদ্বেগ এবং সময়ের সাথে সাথে জীবনের অন্যান্য চাপে সেটা বাড়তে বাড়তে একসময় চূড়ান্ত ঘটনাগুলো তাঁরা ঘটিয়েছেন। 

অবশ্য এই প্রশ্ন করাই যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন স্বজনদের জন্য রাষ্ট্রের বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের সাপোর্ট পাওয়ার আশা আদৌ কি এ দেশের মানুষ কখনো করেছে? রাষ্ট্রের কাছ থেকে এ ধরনের সাপোর্ট পাওয়া যাবে এই বিশ্বাস, এই আস্থা কি কখনো এ দেশের মানুষের ছিল? স্বপ্ন থাকতে পারে, প্রত্যাশা থাকতে পারে; আস্থা গড়ে ওঠার মতো কোনো পরিবেশ কখনোই হয়তো ছিল না। 

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দানকারী পাবনার হাসপাতালটি পরিচিতি পেয়েছে ‘পাগলা গারদ’ হিসেবে; চিকিৎসা কেন্দ্র নয়। এতেই মানসিক রোগ ও রোগীদের প্রতি আমাদের মনোভাব বোঝা যায়।

কিন্তু সমাজের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ছিল। সেটা আমরা কয়েক দশক আগেও তো দেখেছি। সেই বিশ্বাসের ভিত্তি ছিল এ ধরনের মানুষের প্রতি সমাজের মানুষের সদয় আচরণ। অবজ্ঞা ছিল অনেকের মধ্যেই; কিন্তু হিংস্রতা ছিল না। এদের নির্যাতন করে বিকৃত আনন্দ পাওয়ার ব্যাপারটিকে সমাজ খারাপ চোখে দেখত। শুধু গ্রামে কেন, শহরেও এ ধরনের কোনো মানুষ থাকলে তাঁকে মহল্লার সবাই চিনতেন, তাঁর প্রতি সদয় আচরণ করতেন। এ কারণে একজন এ রকম শিশুর মা বা বাবা অন্তত ভাবতে পারতেন, চারপাশের পরিচিত মানুষদের মধ্যে সে থাকবে। সম্মান না পেলেও সুরক্ষা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে। সেই পরিস্থিতি দিন দিন বদলে যাচ্ছে। খারাপের দিকে যাচ্ছে। 

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দানকারী পাবনার হাসপাতালটি পরিচিতি পেয়েছে ‘পাগলা গারদ’ হিসেবে; চিকিৎসা কেন্দ্র নয়। এতেই মানসিক রোগ ও রোগীদের প্রতি আমাদের মনোভাব বোঝা যায়। তাদের গারদে আটকে রাখাকে স্বাভাবিক বলে আমরা মনে করতে শিখেছি। সেখানকার রোগীরা সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরও বছরের পর বছর পরিবার তাদের ফিরিয়ে নিতে চায় না বলে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে বহুবার। 

ঢাকার আদাবরের মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে পাওয়া গেছে নির্যাতন কেন্দ্র। সাউন্ড প্রুফ রুম তৈরি করা হয়েছে, যাতে নির্যাতনের সময় ভিকটিমের চিৎকার, কান্না বাইরে থেকে শোনা না যায়। অদৃশ্য এমন এক সাউন্ডপ্রুফ ঘরে আমরা সবাই আছি, নির্যাতিত হচ্ছি জীবনের নানা প্রতিকূলতা দ্বারা। কান্নার শব্দ অন্যের কাছে পৌঁছাবার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। 

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ট্যাবু দূর করাটা বোধ হয় প্রথম এবং প্রধান কাজ এখন। মানুষ যেন মনে করে, শরীরের মতো মনও খারাপ হতে পারে। সে কথা সবাইকে জানালে, চিকিৎসা নিলে ক্ষতির কিছু নেই, লজ্জার কিছু নেই। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা মানুষের হাতের নাগালে আনাটা প্রচণ্ড জরুরি। 

আর দরকার রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উদ্যোগে প্রচুর সংখ্যায় বৃদ্ধাশ্রম, প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র, যেখানে তাঁদের সঙ্গ দেওয়ার লোক থাকবে, যত্ন নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে, চিকিৎসা সুবিধা থাকবে। তাঁদের কাছের মানুষেরা জানবেন, ‘আমি না থাকলেও সে খুব খারাপ থাকবে না।’ বেসরকারি উদ্যোগেও এগুলো হতে পারে। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গেলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ কমবে। একা হয়ে যাওয়া একজন বয়স্ক মানুষ সেখানে থাকলে সমবয়সীদের সঙ্গ পাবেন; নতুন বন্ধুবান্ধব হবে; সুখ-দুঃখের গল্প করে সময় কাটবে। একেবারে একা থাকা, কথা বলার মতো কাউকে না পাওয়ার চেয়ে সেটা অনেক ভালো। সমাজে বৃদ্ধাশ্রম ব্যাপারটা নিয়ে যে ট্যাবু আছে, সেটা দূর করতে হবে। 

আদর্শ পরিস্থিতিতে, সবাই পারিবারিক পরিবেশে যত্ন-আত্তির মধ্যে থাকবেন—এই সমাধান যে প্রায় হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে, এই কঠিন সত্যটি মেনে নিয়েই আমাদের পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য পরিবর্তিত সমাধান খুঁজতে হবে। 

লেখক: বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ও কলাম লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

আজকের রাশিফল: প্রপোজের জন্য বিপজ্জনক দিন, গ্রহরা একগুঁয়েমিটা ছাড়তে বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ত্রিভুজ সম্পর্কের অনিবার্য পরিণতির অপেক্ষায়

মাসুদ কামাল
নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সংকট কাটেনি। ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সংকট কাটেনি। ছবি: সংগৃহীত

ত্রিমুখী সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি হয়েছে। এ রকম মুভি দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবল মুভিতেই কেন, বাস্তবেও ত্রিমুখী সম্পর্কের অনেক ঘটনা আমরা দেখে থাকি। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ত্রিভুজ সম্পর্কের শেষ পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না।

গত বছরের এ সময়ে আমাদের রাজনীতিতে খুব শক্ত একটা ত্রিভুজ সম্পর্ক দেখা গিয়েছিল। বিএনপি-অন্তর্বর্তী সরকার-জামায়াত—এই তিন পক্ষের দহরম-মহরম। তাদের সবারই লক্ষ্য তখন ছিল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা। এর প্রাথমিক ধাপ, কদিন আগে অর্থাৎ ২০২৪-এর অক্টোবরে অর্জিত হয়েছে। সে দিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এই সরকার একটা নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করেছে। এরপর বাকি ছিল মূল দল আওয়ামী লীগকে অকার্যকর ও অপ্রাসঙ্গিক করা। গত বছরের এ সময়ে সেই চেষ্টা আমরা দেখেছি। প্রশাসনিকভাবে যেমন, ঠিক তেমনি সামাজিকভাবেও স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগবিরোধী প্রচারণা বেশ জোরেশোরেই চলছিল। এ কাজে বিএনপি, জামায়াত, সরকার—সবাই বেশ আন্তরিকও ছিল। সে সময়ে মাঠের শক্তি হিসেবে বেশ বড় একটা ভূমিকা রেখেছে এনসিপি বা জাতীয় নাগরিক পার্টি। তারপর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, আমার বিবেচনায় ত্রিভুজ দহরম-মহরমের সেটাই ছিল পিক-টাইম। এর পর থেকে নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে ধীরে ধীরে সবাই মাঠে নেমে পড়ল। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল দূরত্ব।

মে মাসের ১২ তারিখে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, তার মাসখানেক পর জুনের ১৫ তারিখে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস লন্ডনে গিয়ে বৈঠক করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। বলতে গেলে ওই বৈঠকটাই যেন সম্পর্কে ভাঙনের ক্ষেত্রে একটা প্রকাশ্য কারণ হতে পারল। জামায়াত অভিযোগ তুলল সরকারের প্রতি—বলল, বিএনপির প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে সরকার। অভিযোগের পেছনের কারণটিও তারা প্রকাশ করল। বলল, ওই বৈঠকের পরই নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের কথাটি বলা হয়েছে। একটিমাত্র দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথার পরিপ্রেক্ষিতে যদি নির্বাচনের সময় নির্ধারিত হয়, তাহলে সেই দলের প্রতি সরকারের পক্ষপাতের বিষয়টি অস্বীকার করা তো সহজ হয় না।

জুনের পর থেকে যত দিন যেতে থাকল, সাধারণ মানুষের কাছেও বিএনপি-জামায়াতের মুখোমুখি অবস্থানটা পরিষ্কার হতে থাকল। ঐকমত্য কমিশনেও দেখা গেল দুই দলের এই বিরোধের প্রকাশ। সংস্কারের অনেক প্রস্তাবেই বিএনপি-জামায়াতকে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে দেখা গেল। বিএনপির পক্ষ থেকে একের পর এক আসতে থাকল নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তি। এরপর আবার বিপত্তি দেখা গেল জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যে ‘গণভোট’ করার কথা বলা হচ্ছে, সেটি অনুষ্ঠানের তারিখ নিয়ে। বিএনপি বলল, নির্বাচনের দিনই হোক গণভোট, বিপরীতে জামায়াত বলছে—নির্বাচনের আগে, সম্ভব হলে এই নভেম্বরেই গণভোট হতে হবে। গণভোটের রায় নিয়ে, সেটার ওপর ভিত্তি করেই হবে নির্বাচন। আবার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে আদেশ, তার খসড়া নিয়েও বড় ধরনের আপত্তি তুলল বিএনপি। আপত্তির মাত্রাটা এতটাই প্রবল যে, তারা বলল—জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য কমিশন তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। খেলায় যে রেফারির ওপর সব পক্ষ ভরসা রাখে, সে রেফারিই এবার গোল দিয়ে বসে আছে। অর্থাৎ চরম পক্ষপাতের অভিযোগ। যে কমিশনের প্রধান হচ্ছেন খোদ সরকারপ্রধান ড. ইউনূস, তাঁরই বিরুদ্ধে পক্ষপাত ও প্রতারণার অভিযোগ! বিষয়টি কিন্তু এরপর আর হালকা থাকল না।

তাহলে এখন কী হবে? গণভোট কবে হবে? গণভোটে জনগণের সামনে প্রশ্ন কী থাকবে? এসব প্রশ্নের সমাধান কে দেবে? ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও সক্রিয় দুই ব্যক্তি ড. আলী রীয়াজ ও মনির হায়দার এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। তড়িঘড়ি করে তাঁদের এই চলে যাওয়া নিয়েও নানা ধরনের সন্দেহ উচ্চারিত হতে থাকল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দুজনকে নিয়ে দেখা গেল নানা ধরনের ট্রল। সমাধানের পথ হিসেবে বলা হলো, সরকারপ্রধান ড. ইউনূস এর সমাধান করবেন। এ প্রবণতা আমরা আগের সরকারের আমলেও দেখেছি। সবকিছুই যেন শেখ হাসিনা করতেন। যত সাফল্য, সব তাঁর। মন্ত্রীদের কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে বলতেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ সাফল্য এসেছে।’ আবার যদি কোনো জটিলতা দেখা দিত, সবাই মিলে মিটিং করে শেষে সিদ্ধান্ত হতো ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ এর সমাধান দেবেন। দল, অঙ্গসংগঠন, কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কোনো কমিটি করতে হবে—অবধারিতভাবেই দায়িত্ব চলে যাবে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর’ কাছে। এভাবেই একজন ব্যক্তি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তিনি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারে না। সব কাজ তাঁকেই করতে হয়। তিনি আসলে অন্যদের মতো নয়, তিনি অনেকটা মহাপুরুষের মতো। আমার মতে, এই স্বৈরাচারী মনোভাবের শুরুটা হয় আশপাশে থাকা মোসাহেবদের কারণেই। এবারও তা-ই হয়েছে, মোসাহেবরা বলতে শুরু করেছেন—ড. ইউনূসই দেবেন শেষ সিদ্ধান্ত!

সরকার অবশ্য অদ্ভুত একটা কাজ করেছে। যখন তাদের ওপর দায়িত্ব এল সংকট নিরসনের, তারা একটা বৈঠক করল, আর বলে দিল—সাত দিনের সময় দেওয়া হলো, এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের বসে সমস্যার নিরসন করতে হবে। যে বিরোধের নিরসন টানা আট মাস রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বসে সমাধান করতে পারেনি, সেটা সাত দিনে কীভাবে সম্ভব হবে? তা ছাড়া আরেকটি কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। জুলাই সনদ নিয়ে এই বিরোধ, বাস্তবায়ন প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্টগুলোকে না রাখা, এটা আসলে কার দায়? এ অপকর্মটি করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যে কমিশনের প্রধান আবার ড. ইউনূস নিজে। তাহলে যে ক্রাইসিস সৃষ্টি করেছে ড. ইউনূসের কমিশন, সেটির সমাধানের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দেওয়া কেন? এদিকে আবার সেই সাত দিনও শেষ হয়ে গেছে গতকাল রোববার। কোনো সমাধান কি হয়েছে? এখন কী হবে? যথারীতি সেই একই কথা বলা হচ্ছে—ড. ইউনূসই দেবেন সমাধান। কিন্তু কীভাবে? তিনি কি খুব বড় রাজনীতিবিদ? আবার যদি ড. ইউনূস কিংবা তাঁর পরিষদ যদি কোনো একটা সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে সেটাকে কি আর ঐকমত্যের সিদ্ধান্ত বলা যাবে? এটা তো তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। সরকারই যদি সিদ্ধান্ত দেবে, তাহলে আর সংস্কার কমিশনের নামে এত নাটকের কী প্রয়োজন ছিল? এত সময়ক্ষেপণই বা কেন করা হলো?

এতসব প্রশ্নের জবাব আসলে কে দেবে, কী দেবে, কেউ জানে না। হয়তো জবাব কখনোই পাওয়া যাবে না। তবে বিএনপি কিন্তু এরই মধ্যে সরকারের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে। এর মধ্যে গত শনিবার দেখলাম বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সরাসরি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন—এভাবে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার কোনো এখতিয়ার এই সরকারের নেই। এই সরকার যে কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, এটাও তিনি তাদের স্মরণে রাখতে বলেছেন। জামায়াতে ইসলামী আবার এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এরই মধ্যে আট দলের একটা জোট বানিয়ে নিয়েছে। এই আট দলকে নিয়ে রাস্তায়ও নেমে গেছে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে। তাদের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা প্রকাশ্যে বলেছেন—ঘি তাদের চাই। আর এই ঘি পেতে যদি আঙুল বাঁকা করতে হয়, তারা সেটাই করবে। এ বক্তব্য কি কেবলই রেটরিক, নাকি এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন কোনো হুমকি আছে; সেটাও কিন্তু চিন্তার বিষয়। এসবের বিপরীতে বিএনপিও বসে নেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শনিবার এক জায়গায় বললেন, বিএনপির মতো বড় দলের কর্মীরা যদি রাস্তায় নামে, তাহলে সংঘাত হতে পারে।

এ রকম পরিস্থিতিতে জনগণের অবস্থান কোথায়? আমরা এখন বসে আছি ক্লাইমেক্সের অপেক্ষায়! এরই মধ্যে পরস্পরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আমরা দেখতে পাচ্ছি।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

আজকের রাশিফল: প্রপোজের জন্য বিপজ্জনক দিন, গ্রহরা একগুঁয়েমিটা ছাড়তে বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শহীদ নূর হোসেন দিবস

গণতন্ত্র কি মুক্তি পেয়েছে

নূর হোসেনের পিঠে লেখা ছিল এই স্লোগান। ছবি: সংগৃহীত
নূর হোসেনের পিঠে লেখা ছিল এই স্লোগান। ছবি: সংগৃহীত

আমরা চব্বিশের আন্দোলন দেখেছি—বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে যা রূপ নেয় স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। এর আগপর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে জেনেছি নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং নূর হোসেনের আত্মত্যাগের কথা। অনেকে দুটো ঘটনারই সাক্ষী। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেন শহীদ হন পুলিশের গুলিতে। কারণটা শুধু তাঁর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়া ছিল না, ছিল তাঁর বুকে-পিঠে লেখা স্লোগানও—‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। নূর হোসেনের এই অদম্য সাহসই যে পরবর্তী সময়ে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে যায়, সেটা না বললেও চলে। কেননা, ইতিহাস সাক্ষী এবং শিক্ষক—দুটো ভূমিকা পালন করে। শহীদ নূর হোসেন দিবসের নেপথ্যে কী, কেন তিনি শহীদ হন? এসব প্রশ্নের উত্তর না পেলে হয়তো আজকের প্রজন্ম অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারত না। তাই নূর হোসেনকে ভুলে যাওয়া যায় না।

বেবিট্যাক্সিচালকের সন্তান নূর হোসেনের জন্ম ঢাকায়, নারিন্দায়, ১৯৬১ সালে। পড়ালেখার দৌড় বেশি দূর যায়নি, অষ্টম শ্রেণিতেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। কিন্তু রাজনীতিতে সক্রিয়। আর মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদক। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না নিয়েও রাজনীতির শব্দ নিয়ে খেলায় মেধার পরিচয় দিয়েছিলেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়। জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনকালে নাখোশ হয়ে আর সবার সঙ্গে রাজনৈতিক মিছিলে যোগ দেওয়ার আগের দিন, অর্থাৎ ১৯৮৭ সালের ৯ নভেম্বর নূর হোসেন ঠিক করে ফেলেছিলেন কী হবে তাঁর স্লোগান। সেদিন পপুলার আর্ট নামের একটি দোকান থেকে সাদা রং দিয়ে নিজের বুকে লিখিয়ে নেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’। আর পিঠে লেখান ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। প্রচার সম্পাদকের কাজটা ভালোই জানতেন! এই কাজ করে বাড়ি গেলেন না। দুদিন আগেই ঘরছাড়া হয়েছিলেন যদিও। আশ্রয় নিয়েছিলেন একটি মসজিদে। পরিবার ১০ নভেম্বর সকালে তাঁকে খুঁজে পেলেও তিনি বাড়ি ফিরতে চাননি। গায়ে কাপড় টেনে ঢেকে দিয়েছিলেন সেই কঠোর স্লোগান।

কাজ শেষে বাড়ি ফিরবে বলে মা-বাবাকে বিদায় দিয়েছিলেন নূর হোসেন। কিন্তু ফেরা আর হলো কই? ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর জোটবদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ ‘ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি’ গ্রহণ করে। কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়। সেদিন স্বৈরাচারবিরোধী যে মিছিলটি পল্টন এলাকার ‘জিরো পয়েন্ট’ অতিক্রম করছিল, সেখানে ছিলেন নূর। কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয় তৎকালীন সরকারের পালিত পুলিশ। নূর হোসেনকে তখন আলাদা করে চেনা যাচ্ছিল খুব সহজে, গায়ে লেখা শ্বেত স্লোগানের কারণে। গুলি এসে বিঁধেছিল সেই গায়ে। তাঁর সঙ্গে সেদিন নিহত হন যুবলীগ নেতা বাবুলও। কিন্তু অষ্টম শ্রেণি পাস নূর হোসেনের গায়ে লেখা স্লোগান তাঁকে আজও অমর করে রেখেছে।

কোঁকড়া চুলের নূর হোসেন তিন দশক পরেও তরুণ, প্রাসঙ্গিক। তাঁর আত্মত্যাগ পরবর্তীকালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পথ দেখায়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পতন ঘটে এরশাদ সরকারের। যে গণতন্ত্রকে মুক্তি দিতে নূর প্রাণ দিয়েছিলেন, সেই গণতন্ত্র বন্দী হয়ে গিয়েছিল আবারও। আর আবারও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং সরকার পতন হলো, কিন্তু গণতন্ত্র কি আজও মুক্তি পেল? কখনো পাবে? এ প্রশ্ন হয়তো নূর হোসেন মনে মনে ভাবছেন, অন্য জগতে বসে। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।

লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

আজকের রাশিফল: প্রপোজের জন্য বিপজ্জনক দিন, গ্রহরা একগুঁয়েমিটা ছাড়তে বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সম্ভাবনার জটিল পথ

মামুনুর রশীদ
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গত এক বছরে আমাদের জাতি এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রজ্ঞা লাভ করেছে। জাতীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ঘরের ভেতর থেকে চায়ের দোকান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়—সর্বত্রই রাজনৈতিক আলোচনা, পর্যালোচনা এবং সেই সঙ্গে যাঁর যাঁর সুচিন্তিত মন্তব্যও দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই সকাল-বিকেল কিছু না কিছু ঘটনা ঘটছে, সেসবের ওপরও তাৎক্ষণিক মন্তব্য হয়ে যাচ্ছে। এবারের উচ্চমাধ্যমিকের ফলেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনায় তেমন মনোযোগী হতে পারছে না। সমগ্র আলোচনা ওই রাজনীতিতে। চায়ের কাপেই বড় বড় সিদ্ধান্ত হয়ে যাচ্ছে।

মধ্যবিত্তের বাজারঘাটে টান পড়লেও তা আলোচনায় খুব একটা জায়গা পাচ্ছে না। রাজনীতিই মুখ্য এবং মুখ্য আলোচনার বিষয়। একটা বিষয় অবশ্য দেখার আছে—ক্লান্তিহীন, আড্ডাবাজ বাঙালি যেকোনো বিষয়ের ওপর আলোচনা করতে এবং সিদ্ধান্ত দিতে বড়ই উৎসাহী। ক্রিকেট খেলা দেখতে দেখতে অবলীলায় বিশ্ববিখ্যাত ব্যাটার বা বোলারদের ভুল ধরতে একটুও বিলম্ব করে না।

বলা হয়ে থাকে, সম্মিলিতভাবে বাঙালি সব সময়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। জাতি যে এত রাজনীতিসচেতন হয়ে পড়ল, সেও ভালো কথা। কিন্তু যখন দেখি কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা হলো বা পুলিশের লাঠিপেটায় রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে, কোথাও কোনো নারীর অসম্মান হচ্ছে, তখন তার ফোনের ক্যামেরাটি গর্জে ওঠে বটে কিন্তু মানুষ আগায় না। সবকিছু যে ক্যামেরায় ধারণ করার বিষয় নয়, প্রতিবাদী হওয়া প্রয়োজন, তা বোঝার বোধ হয় এখন আর দরকার নেই।

আমাদের লেখাপড়ার সময়টা ছিল ষাটের দশক, যখন দেশে বিপুল পরিমাণে নানা জায়গায় আন্দোলন চলছিল। তার মধ্যে শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞানচিন্তা এবং বড় বড় রাজনৈতিক তত্ত্ব নিয়েও কথাবার্তা হতো। মিছিলে যাওয়ার আগে ও পরে এসব বিষয় নিয়ে তর্কের ঝড় উঠত। এই তর্কাতর্কির ফলেই একটা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন এমন একটা সময় এসেছে, যখন রাজনীতিই একমাত্র আলোচনা, তর্কবিতর্কের বিষয়।

এই সময়ের মধ্যে যে কত মানবিক বিপর্যয় ঘটে গেল, দুর্নীতি সকল সময়ের রেকর্ড অতিক্রম করল। শিক্ষাব্যবস্থা নিম্নমুখী, কতিপয় দুর্বৃত্ত আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠল—তার আলোচনা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ করে না। অসহায় কিছু মানুষকে দেখা যায় কোর্ট-কাচারিতে, জেলখানায় দৌড়াদৌড়ি করতে। আবার থানায় প্রচুর মানুষের ভিড়। মানুষ ভেবেছিল একটা পরিবর্তন আসবে, দুর্নীতির কবর রচনা হবে, সরকার একটি কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে, দুর্নীতি বিদায় করতে যেমন কমিশন গঠন করেছে, তা দিয়েই চিরতরে এই অসুখটি নির্মূল হয়ে যাবে। কিন্তু তা হলো না। নির্বাচনই এখন একমাত্র আলোচনার বিষয়। অধিকাংশ লোক ভাবছে নির্বাচন হবে না। এই অবিশ্বাসই-বা কেন? মানুষ একটা আস্থাহীনতা এবং অবিশ্বাসের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেল কেন?

বাঙালি চিরকালই সরকারবিরোধী। কারণ আছে অনেক। কিন্তু আস্থাহীনতা যদি সংক্রামক হয়ে জাতির সর্বক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে তার পরিণতি কী হবে? উত্তরের জন্য বহু দূর অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। এখনই দেখা যাচ্ছে মানবিক মূল্যবোধে ধস নেমেছে, যার হাজার হাজার উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। আরও বহুবার বলেছি, রাষ্ট্রকে আমরা মানবিক করতে পারিনি। সব দল মিলেই ব্যবস্থাটা এমন হয়েছে যে সরকার রাষ্ট্রকে অধিকার করে ফেলেছে, সমাজ কোনোমতে ধিকিধিকি জ্বলছে। তবে সমাজের শক্তি এখনো আছে। নইলে যে নৈরাজ্যকে আমরা দেখেছি, তাতে দেশে বিপুল পরিমাণে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়ে অনেক কিছুই তছনছ হয়ে যেত। কোনো কোনো ওয়াজ-মাহফিল থেকে যেসব উসকানিমূলক বক্তব্য আসে, তাতে সব জায়গায় অগ্ন্যুৎপাত হওয়ার কথা। কিছু কিছু জায়গায় যে তা হয়নি, তা-ও সত্য নয়। অনেক জায়গায়ই ফেসবুকের একটি পোস্ট অনেক দাঙ্গাবাজির কারণ হয়েছে। সেসব ঘটনায় আমাদের সমাজ সত্যিই একটা ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এবার কোনো শক্তিই তেমন দুর্বার হয়ে উঠতে পারেনি। আর সমাজের সবচেয়ে বড় শক্তিটি এখনো সোচ্চার হতে পারেনি।

আমাদের অর্ধশতকের শিক্ষাব্যবস্থা মানুষকে সত্য বলতে শেখায়নি। রাজনীতিবিদ, আমলা, বিচারক, শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রকও সত্য ভাষাকে উৎসাহিত করেনি। একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা সর্বত্রই উৎসাহিত হয়েছে। আজকে যে শুধু রাজনীতিই একমাত্র আলোচ্য বিষয়, তার কারণও হচ্ছে সমাজের অন্য সমস্যাগুলোর সমাধান না করে একটি দুর্নীতির পথই বেছে নিয়েছে সবাই। যদি সব জায়গায়ই একটা সুস্থ-স্বাভাবিক ধারা অব্যাহত থাকত, তাহলে এ জায়গায় এসে দাঁড়াতাম না আমরা। সমাজের সর্বত্র সত্যকে মূল্যায়ন করার একটা ব্যবস্থাই পারত সমাজকে রক্ষা করতে। রাজনীতির বৃহত্তর অর্থে প্রয়োগটাও হয়নি।

মানুষের মহত্তম কল্যাণের পথটা রাজনীতিই খুলে দেয়। চীন, রাশিয়া, কিউবার বিপ্লবে সে দেশগুলোর জনগণ একটা মুক্তির পথ পেয়েছিল। তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক সব ধর্মান্ধতা এবং গোঁড়ামি থেকে একটা মুক্ত সমাজ গড়েছিলেন। আমাদের দেশেও লাখ লাখ মানুষ দেশের জন্য বড় বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্ব তা সমাজের কাজে ব্যবহার করতে পারেননি। একটাই বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হলো ক্ষমতা। ক্ষমতার ব্যবহার এবং অপব্যবহার একটি সমাজের জন্য যে কত ভয়ংকর হতে পারে, তা আমরা দেখেছি। এটা সবাই স্বীকার করছেন, আমরা একটি সংকটকাল পার করছি। তার মধ্যেও মানুষের মনে আশা জাগে—একটা সুদিন আসবে। কীভাবে যে সে আশা পূর্ণ হবে আমি জানি না, কেউ জানে কি না জানি না, তবে কেউ না কেউ নিশ্চয়ই জানেন। জেনে থাকলে আমাদের খবর দেবেন।

লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

আজকের রাশিফল: প্রপোজের জন্য বিপজ্জনক দিন, গ্রহরা একগুঁয়েমিটা ছাড়তে বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নদীপাড়ের মাটি লুট

সম্পাদকীয়
নদীপাড়ের মাটি লুট

দেশে এমনিতেই ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। সেটি কমে যাওয়া মানে খাদ্যের উৎপাদনও কমে যাওয়া। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে, কোনো আবাদি জমি যাতে পতিত না থাকে।

সেই ফসলি জমির মাটিই যদি কেটে নেওয়া হয়, তাহলে খাদ্য উৎপাদনের কী হবে! মাদারীপুর সদর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের পাড়ের অন্তত ২০টি স্থান থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁদের একজন হলেন ইলিয়াস চৌকিদার। প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ট্রলারে করে অবাধে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে নদীপাড়ের গ্রামগুলোর মানুষের জীবনে এক বিশাল ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ৪-এর খ ও গ ধারা অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বালু বা মাটি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু যাঁরা মাটি কাটেন তাঁরা এই আইন মানেন না। আইন অমান্য করার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কম ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। প্রশাসন অবৈধভাবে মাটি কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না কেন, সেটা বোধগম্য নয়।

নদীর পাড় থেকে মাটি কাটার কারণে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে, যা ভাঙনে সহায়তা করবে। শুধু নদীভাঙনই নয়, এভাবে মাটি কাটার ফলে একজন কৃষকের সবজিখেত সরাসরি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেছেন, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে এবং ফলনও কমে গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ সত্ত্বেও ইলিয়াস চৌকিদার মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছেন। এমনকি প্রতিবাদ করায় তিনি গ্রামের একজনকে ‘চোখ তুলে ফেলার’ হুমকিও দিয়েছেন। ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা বহুবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

অবৈধভাবে এই মাটি কাটা রোধে নদের তীরবর্তী এলাকাগুলোতে নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা চালু করা দরকার। কেবল দিনের বেলাতেই নয়, মাটি কাটার মূল সময় অর্থাৎ রাতে ও ভোরে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যাঁরা রাজনৈতিক প্রভাবে এ ধরনের অপকর্ম করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কেবল জরিমানা নয়, মাটি কাটার সরঞ্জাম জব্দ এবং কঠোর কারাদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অন্যরা এমন কাজ করার সাহস না পান।

নদীর পাড়ের ফসলি জমি বাঁচানো না গেলে, পুরো গ্রামই একদিন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে। সে জন্য প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে এই দুই নদ স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে এবং নদের দুই পাড়ের স্থানীয় মানুষজন ভাঙন ও ভূমি হারানোর আতঙ্ক থেকে মুক্তি পান।

অবৈধভাবে মাটি কাটা প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। মাটি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারি যে আইন রয়েছে, আমরা সেই আইনের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

আজকের রাশিফল: প্রপোজের জন্য বিপজ্জনক দিন, গ্রহরা একগুঁয়েমিটা ছাড়তে বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত