Ajker Patrika

শিশুশিক্ষাই মূলভিত্তি

ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান
শিশুশিক্ষাই মূলভিত্তি

শিশু ছেলে বা মেয়ে হোক, তা আল্লাহর বড় নিয়ামত। জন্ম থেকে পিতামাতা নানা রকম কষ্ট স্বীকার করে তাকে প্রতিপালন করেন। সন্তানের কল্যাণ কামনায় তাঁরা প্রতিটি মুহূর্ত ব্যস্ত থাকেন। তাঁরা শিশুর জন্য যা করেন, তা নেক আমল হিসেবে পরিগণিত হয়। শিশুর জন্মের পর ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দিতে হয়। আজান-ইকামত দেওয়ার মধ্য দিয়েই শিশুকে আল্লাহর একাত্ববাদের শিক্ষা দেওয়া হয়। লালনপালনের পাশাপাশি তাদের সুশিক্ষা প্রদান করা পিতামাতার জন্য আবশ্যক।

শিশু যখন ধীরে ধীরে বড় হয়, তখন থেকেই সে বিভিন্ন বিষয় শিখতে থাকে। শিশু দোলনা থেকেই তার শিক্ষা আরম্ভ করে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞানার্জন করো।’ 
শিশু যখন শব্দ ও বাক্য শিখতে শুরু করে তখন সর্বপ্রথম তাকে কালিমা তায়্যিবা শেখাতে হয়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা শিশুদের সর্বপ্রথম যে কথাটি শেখাবে, সেটি যেন হয়, “লা ইলাহা ইল্লাহ” অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।’

ইমানের পাশাপাশি হালাল-হারাম, পাক-পবিত্রতা ও আল্লাহর ওপর ভরসা সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়াও অত্যাবশ্যক। ইব্ন ‘আব্বাস (রা.) বলেন, একদা মহানবী (সা.) আমাকে বললেন, ‘হে প্রিয় বৎস! কয়েকটি কথা স্মরণ রাখো। তুমি আল্লাহর আদেশগুলো মান্য করবে, তাহলে তিনিই তোমার দায়িত্বশীল হবেন। তুমি আল্লাহর হককে গুরুত্ব দিয়ে পালন করবে, দেখবে তিনি তোমার সম্মুখে বিদ্যমান। কোনো প্রার্থনা করলে আল্লাহর কাছেই করবে, সাহায্য চাইলে আল্লাহর কাছেই চাইবে। তুমি মনে রেখো, যদি সমগ্র সৃষ্টিজগৎ তোমার উপকার করতে চায়, তাহলে তোমার জন্য যতটুকু কল্যাণ আল্লাহ লিখে রেখেছেন, তার বেশি কেউ করতে পারবে না। আর সমগ্র জগৎ যদি তোমার অনিষ্ট করতে চায়, তাহলে তোমার জন্য যতটুকু অকল্যাণ আল্লাহ লিখে রেখেছেন, তার বেশি কেউ অনিষ্ট করতে পারবে না। এ ব্যাপারে লেখার কলম তুলে নেওয়া হয়েছে, কাগজ-কালি শুকিয়ে গেছে।’

মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা নিজ সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের আদেশ দেবে। ১০ বছর বয়সে নামাজ না পড়লে তাদের মৃদু প্রহার করবে এবং এ বয়সে তাদের বিছানা পৃথক করে দেবে।’ আরও বলেন, ‘নিজ সন্তানদের তিনটি বিষয় শেখাবে। তোমাদের নবীর প্রতি ভালোবাসা, নবীপরিবারের প্রতি ভালোবাসা এবং কোরআন তিলাওয়াত।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের শরিয়তের আদিষ্ট বিষয়াদি পালন এবং নিষিদ্ধ বিষয়াদি থেকে বিরত থাকার হুকুম দেবে। কারণ, এটিই হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়।’ মহানবী (সা.) আরও বলেন, ‘জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।’

জ্ঞানের পাশাপাশি শিশুকে উত্তম আদব ও নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া জরুরি। মহানবী (সা.) বলেন, ‘নিজ সন্তানকে শিষ্টাচার শেখানো সম্পদ দান করার চেয়েও বেশি মূল্যবান।’ তিনি আরও বলেন, ‘পিতা সন্তানকে যে উপঢৌকন দেয়, তন্মধ্যে সর্বোত্তম হলো সুন্দর শিষ্টাচার শিক্ষা প্রদান করা।’ সন্তান মেয়ে হলে তাকে পর্দার ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া আবশ্যক। কেননা, মহানবী (সা.) আসমা (রা.)-কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘হে আসমা! মেয়েরা যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন তাদের শরীরের কোনো অংশ অনাবৃত রাখা বৈধ নয়, তবে এইটুকু।’ এ কথা বলে তিনি মুখমণ্ডল ও কবজি পর্যন্ত হস্তদ্বয়ের দিকে ইশারা করেন।

হাদিসগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শিশুর শিক্ষালাভ জন্ম থেকে শুরু হয়ে ক্রমে বাড়তে থাকে। যে শিক্ষার মধ্যে আল্লাহ ও রাসুলকে চেনার পাশাপাশি নৈতিকতা থাকে, সে শিক্ষাই ইসলাম সমর্থন করে। যে শিক্ষা আল্লাহ ও রাসুলকে চেনার বিরোধী করে তোলে, সে শিক্ষা ইসলাম সমর্থন করে না। তাই শিশুকে শৈশবকালেই আল্লাহ ও রাসুল (সা.) প্রদর্শিত পথের শিক্ষা-দীক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত