অবরুদ্ধ দেশের সাংবাদিকতা
জাহীদ রেজা নূর
আমরা আগেই দেখেছি, বিস্ফোরণের সংবাদগুলো যেন পত্রিকায় অগুরুত্বপূর্ণভাবে প্রকাশ করা হয়, তার নির্দেশ দিয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক সরকার। কিন্তু পত্রিকায় প্রকাশিত খবরগুলো থেকেই জানা যাচ্ছিল, ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময় বোমা বিস্ফোরিত হচ্ছে।
২৫ সেপ্টেম্বর প্রাদেশিক মৌলিক গণতন্ত্র, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন দপ্তরের মন্ত্রী মওলানা মোহাম্মদ ইসহাক তাঁর গাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে আহত হন। দৈনিক পাকিস্তান তখন পাকিস্তান সরকার নির্দেশিত পথেই চলছিল। তারা তাদের রিপোর্টটি ছাপে এভাবে:
গাড়িতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে মন্ত্রী আহত
স্টাফ রিপোর্টার
প্রাদেশিক মৌলিক গণতন্ত্র, স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন দফতরের মন্ত্রী মওলানা মোহাম্মদ ইসহাক গতকাল শনিবার তার গাড়ির মধ্যে রক্ষিত মেয়াদী বোমা বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। হাসপাতালে এখন তাঁর অবস্থার সন্তোষজনক উন্নতি ঘটছে।
তাঁর গাড়ির ড্রাইভার সাজ্জাদও আহত হয়েছে। ...ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী মহোদয়ের ডান পা ও ডান বাহুতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালের নয় নম্বর নিউ কেবিনে রয়েছেন। গাড়ির ড্রাইভার সাজ্জাদের দেহেও অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
গতকাল বেলা পৌণে একটা থেকে একটার মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চৌরাস্তায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রাদেশিক নেজামে ইসলাম পার্টির সাধারণ সম্পাদক মওলানা আশরাফ আলী এই প্রতিনিধিকে টেলিফোনে জানান যে, মন্ত্রী মহোদয় লালবাগে নেজামে ইসলাম এর এক কর্মীসভায় যোগদানের পর সেক্রেটারিয়েট ফিরে যাচ্ছিলেন।
তিনি জানান যে মেয়াদী বোমাটা গাড়ীর ডানপার্শ্বস্থ আসনের নীচে রক্ষিত ছিল। মন্ত্রী মহোদয় গাড়ীর পেছনের আসনে ডানপার্শ্বে ছিলেন।...
(দৈনিক পাকিস্তান, ২৬শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১)
ইত্তেফাক কিন্তু রিপোর্টটি শুরুই করেছিল এপিপির বরাত দিয়ে। কারণ এপিপির যেকোনো খবর ছাপা মানেই এটা সরকারি ভাষ্য। তারা শিরোনাম করেছিল:
মেয়াদী বোমা বিস্ফোরণে প্রাদেশিক মন্ত্রী আহত
এপিপি পরিবেশিত খবরে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানের মৌলিক গণতন্ত্র ও স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মওলানা মোহাম্মদ ইসহাক গতকাল (শনিবার) বোমা বিস্ফোরণে সামান্য আহত হন। তাঁহার মোটর গাড়ীতে একটি মেয়াদী বোমা রাখা হইয়াছিল বলিয়া মনে করা হইতেছে। মন্ত্রী মহোদয় ডান হাত ও ডান পায়ে আঘাত পাইয়াছেন। মন্ত্রী মহোদয়ের মোটর গাড়ীর ড্রাইভারও আহত হইয়াছে।
বিস্তারিত রিপোর্টটি পড়লে বোঝা যায়, মন্ত্রীর গাড়িতে টাইম বোমা রাখা হয়েছিল। খবরটি কীভাবে দেশের বাইরে ছাপা হয়েছিল, তারও একটা নমুনা থাকা চাই। ২৬ সেপ্টেম্বরের অগ্রদূত পত্রিকায় খবরটি ছাপা হয়েছিল কীভাবে, তা দেখুন:
মন্ত্রীর এক হাত ও এক পা
রৌমারী। ২৪শে সেপ্টেম্বর স্বাধীন বাংলা বেতার পরিবেশিত সংবাদে প্রকাশ বাংলার অধিকৃত অঞ্চলে খুনি ইয়াহিয়ার মনোনীত মন্ত্রীসভার সদস্য মৌলানা মহম্মদ ইসাকের মটর গাড়ীতে আমাদের দুর্বার গেরিলাগণ টাইমবোমা গোপনে রেখেছিলেন। এই বোমা বিস্ফোরণের ফলে নব মনোনীত মন্ত্রী সাহেবের এক হাত ও এক পা ওফাত বরণ করেছে। ঢাকা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে বঙ্গবৈরি মন্ত্রী সাহেব তার কৃতকর্মের ফলাফলের যোগ বিয়োগ করছেন আর বাকী মন্ত্রী সাহেবরা তো ‘এখন কি করি কি করি’ করে অস্থির হয়ে উঠেছেন।
(অগ্রদূত, ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১)
এইদিনই ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় শেখ মুজিবুর রহমানের পিতার শারীরিক অবস্থা নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি ছাপা হয়েছিল এভাবে:
শেখ মুজিবের অশীতিপর পিতাও হাসপাতালে নীত
ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিনের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেখ মুজিবুর রহমানের পিতা-মাতার অবস্থা গতকাল (শনিবার) অপরিবর্তিত ছিল বলিয়া পিপিআই পরিবেশিত খবরে বলা হইয়াছে।
৭৫ বৎসর বয়স্কা শেখ মুজিবুর রহমানের মাতা হাঁপানি ও ব্রংকাইটিস রোগে ভুগিতেছেন। কয়েকদিন পূর্বে তাঁহাকে উক্ত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের ৯০ বৎসর বয়সী পিতাকেও গত শুক্রবার একই হাসপাতালে ভর্তি করা হইয়াছে। তিনি গ্যাস্ট্রিক, আলসার, রক্তশূন্যতা ও চক্ষুপীড়ায় ভুগিতেছেন।
গতকাল তাঁহাদের অবস্থার কোনোরূপ উন্নতি কিংবা অবনতি ঘটে নাই। এবার একটু পেছন দিকে তাকাই। আওয়ামী লীগকে দমন করার নানা চেষ্টাই তখন করে যাচ্ছিল সামরিক সরকার। জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত একটি সংবাদ ছিল এ রকম:
তাজউদ্দিন ও অন্যান্যদের ফৌজদারি আদালতেও বিচার হবে
সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের নিকট হাজির হতে ব্যর্থ হওয়ার দরুণ ৪০ নম্বর সামরিক আইন বিধির অধীনে ঢাকার সাত মসজিদ রোডের জনাব তাজউদ্দিন আহমদ, বাকেরগঞ্জ জেলার বোয়ালিয়ার জনাব তোফায়েল আহমদ, ময়মনসিংহ জেলার রাঙ্গল শিমুলের জনাব এ এম নজরুল ইসলাম, ঢাকা জেলার ১১০ নম্বর সিদ্ধেশ্বরীর জনাব আবিদুর রহমানকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকের সম্পত্তির শতকরা ৫০ ভাগ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে আনীত প্রধান প্রধান অভিযোগের জন্য পরে ১২১ নম্বর পাকিস্তান দণ্ডবিধি অর্থাৎ ৫ নম্বর সামরিক আইন বিধির অধীনে তাদের বিচার করা হবে বলে গতকাল বুধবার এপিপি পরিবেশিত খবরে প্রকাশ।
(দৈনিক সংগ্রাম, ১১ জুন, ১৯৭১)
একই সংবাদ দৈনিক ইত্তেফাক একইভাবে ছেপেছে। শুধু একটি শব্দের ব্যবহার পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। সংগ্রাম লিখেছে ‘সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের নিকট হাজির হতে ব্যর্থ হওয়ার দরুণ’ অর্থাৎ দোষটা চাপানো হয়েছে তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখের ওপর। সেখানে ইত্তেফাক লিখেছে, ‘সামরিক কর্তৃপক্ষের সম্মুখে হাজির না হওয়ায়’। পরিবেশনের ঢঙেই বোঝা যায় দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য।
ইত্তেফাকের প্রতিবেদনটি এ রকম:
তাজুদ্দীন প্রমুখের বিরুদ্ধে অভিযোগ
মূল মামলার বিচার পরে হইবে
‘সামরিক কর্তৃপক্ষের সম্মুখে হাজির না হওয়ার জন্য ৪০ নম্বর সামরিক আইনবিধি অনুযায়ী তাজউদ্দীন আহমদ, সাতমসজিদ রোড, ঢাকা, তোফায়েল আহমদ,
পোঃ কোড়ালিয়া, জেলা বাকেরগঞ্জ, এ এম নজরুল ইসলাম, লাঙ্গলশিমাল, জেলা ময়মনসিংহ, আবদুল মান্নান, ১১০ সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা এবং পিপল-এর মালিক ও ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা আবিদুর রহমান—এই সকল ব্যক্তিকে ১৪ বৎসর করিয়া সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হইয়াছে এবং তাহাদের সম্পত্তির শতকরা ৫০ ভাগ বাজেয়াফত করা হইয়াছে বলিয়া গত বুধবার ঢাকায় এপিপি পরিবেশিত এক খবরে বলা হয়।
আমরা আগেই দেখেছি, বিস্ফোরণের সংবাদগুলো যেন পত্রিকায় অগুরুত্বপূর্ণভাবে প্রকাশ করা হয়, তার নির্দেশ দিয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক সরকার। কিন্তু পত্রিকায় প্রকাশিত খবরগুলো থেকেই জানা যাচ্ছিল, ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময় বোমা বিস্ফোরিত হচ্ছে।
২৫ সেপ্টেম্বর প্রাদেশিক মৌলিক গণতন্ত্র, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন দপ্তরের মন্ত্রী মওলানা মোহাম্মদ ইসহাক তাঁর গাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে আহত হন। দৈনিক পাকিস্তান তখন পাকিস্তান সরকার নির্দেশিত পথেই চলছিল। তারা তাদের রিপোর্টটি ছাপে এভাবে:
গাড়িতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে মন্ত্রী আহত
স্টাফ রিপোর্টার
প্রাদেশিক মৌলিক গণতন্ত্র, স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন দফতরের মন্ত্রী মওলানা মোহাম্মদ ইসহাক গতকাল শনিবার তার গাড়ির মধ্যে রক্ষিত মেয়াদী বোমা বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। হাসপাতালে এখন তাঁর অবস্থার সন্তোষজনক উন্নতি ঘটছে।
তাঁর গাড়ির ড্রাইভার সাজ্জাদও আহত হয়েছে। ...ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী মহোদয়ের ডান পা ও ডান বাহুতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালের নয় নম্বর নিউ কেবিনে রয়েছেন। গাড়ির ড্রাইভার সাজ্জাদের দেহেও অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
গতকাল বেলা পৌণে একটা থেকে একটার মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চৌরাস্তায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রাদেশিক নেজামে ইসলাম পার্টির সাধারণ সম্পাদক মওলানা আশরাফ আলী এই প্রতিনিধিকে টেলিফোনে জানান যে, মন্ত্রী মহোদয় লালবাগে নেজামে ইসলাম এর এক কর্মীসভায় যোগদানের পর সেক্রেটারিয়েট ফিরে যাচ্ছিলেন।
তিনি জানান যে মেয়াদী বোমাটা গাড়ীর ডানপার্শ্বস্থ আসনের নীচে রক্ষিত ছিল। মন্ত্রী মহোদয় গাড়ীর পেছনের আসনে ডানপার্শ্বে ছিলেন।...
(দৈনিক পাকিস্তান, ২৬শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১)
ইত্তেফাক কিন্তু রিপোর্টটি শুরুই করেছিল এপিপির বরাত দিয়ে। কারণ এপিপির যেকোনো খবর ছাপা মানেই এটা সরকারি ভাষ্য। তারা শিরোনাম করেছিল:
মেয়াদী বোমা বিস্ফোরণে প্রাদেশিক মন্ত্রী আহত
এপিপি পরিবেশিত খবরে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানের মৌলিক গণতন্ত্র ও স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মওলানা মোহাম্মদ ইসহাক গতকাল (শনিবার) বোমা বিস্ফোরণে সামান্য আহত হন। তাঁহার মোটর গাড়ীতে একটি মেয়াদী বোমা রাখা হইয়াছিল বলিয়া মনে করা হইতেছে। মন্ত্রী মহোদয় ডান হাত ও ডান পায়ে আঘাত পাইয়াছেন। মন্ত্রী মহোদয়ের মোটর গাড়ীর ড্রাইভারও আহত হইয়াছে।
বিস্তারিত রিপোর্টটি পড়লে বোঝা যায়, মন্ত্রীর গাড়িতে টাইম বোমা রাখা হয়েছিল। খবরটি কীভাবে দেশের বাইরে ছাপা হয়েছিল, তারও একটা নমুনা থাকা চাই। ২৬ সেপ্টেম্বরের অগ্রদূত পত্রিকায় খবরটি ছাপা হয়েছিল কীভাবে, তা দেখুন:
মন্ত্রীর এক হাত ও এক পা
রৌমারী। ২৪শে সেপ্টেম্বর স্বাধীন বাংলা বেতার পরিবেশিত সংবাদে প্রকাশ বাংলার অধিকৃত অঞ্চলে খুনি ইয়াহিয়ার মনোনীত মন্ত্রীসভার সদস্য মৌলানা মহম্মদ ইসাকের মটর গাড়ীতে আমাদের দুর্বার গেরিলাগণ টাইমবোমা গোপনে রেখেছিলেন। এই বোমা বিস্ফোরণের ফলে নব মনোনীত মন্ত্রী সাহেবের এক হাত ও এক পা ওফাত বরণ করেছে। ঢাকা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে বঙ্গবৈরি মন্ত্রী সাহেব তার কৃতকর্মের ফলাফলের যোগ বিয়োগ করছেন আর বাকী মন্ত্রী সাহেবরা তো ‘এখন কি করি কি করি’ করে অস্থির হয়ে উঠেছেন।
(অগ্রদূত, ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১)
এইদিনই ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় শেখ মুজিবুর রহমানের পিতার শারীরিক অবস্থা নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি ছাপা হয়েছিল এভাবে:
শেখ মুজিবের অশীতিপর পিতাও হাসপাতালে নীত
ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিনের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেখ মুজিবুর রহমানের পিতা-মাতার অবস্থা গতকাল (শনিবার) অপরিবর্তিত ছিল বলিয়া পিপিআই পরিবেশিত খবরে বলা হইয়াছে।
৭৫ বৎসর বয়স্কা শেখ মুজিবুর রহমানের মাতা হাঁপানি ও ব্রংকাইটিস রোগে ভুগিতেছেন। কয়েকদিন পূর্বে তাঁহাকে উক্ত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের ৯০ বৎসর বয়সী পিতাকেও গত শুক্রবার একই হাসপাতালে ভর্তি করা হইয়াছে। তিনি গ্যাস্ট্রিক, আলসার, রক্তশূন্যতা ও চক্ষুপীড়ায় ভুগিতেছেন।
গতকাল তাঁহাদের অবস্থার কোনোরূপ উন্নতি কিংবা অবনতি ঘটে নাই। এবার একটু পেছন দিকে তাকাই। আওয়ামী লীগকে দমন করার নানা চেষ্টাই তখন করে যাচ্ছিল সামরিক সরকার। জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত একটি সংবাদ ছিল এ রকম:
তাজউদ্দিন ও অন্যান্যদের ফৌজদারি আদালতেও বিচার হবে
সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের নিকট হাজির হতে ব্যর্থ হওয়ার দরুণ ৪০ নম্বর সামরিক আইন বিধির অধীনে ঢাকার সাত মসজিদ রোডের জনাব তাজউদ্দিন আহমদ, বাকেরগঞ্জ জেলার বোয়ালিয়ার জনাব তোফায়েল আহমদ, ময়মনসিংহ জেলার রাঙ্গল শিমুলের জনাব এ এম নজরুল ইসলাম, ঢাকা জেলার ১১০ নম্বর সিদ্ধেশ্বরীর জনাব আবিদুর রহমানকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকের সম্পত্তির শতকরা ৫০ ভাগ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে আনীত প্রধান প্রধান অভিযোগের জন্য পরে ১২১ নম্বর পাকিস্তান দণ্ডবিধি অর্থাৎ ৫ নম্বর সামরিক আইন বিধির অধীনে তাদের বিচার করা হবে বলে গতকাল বুধবার এপিপি পরিবেশিত খবরে প্রকাশ।
(দৈনিক সংগ্রাম, ১১ জুন, ১৯৭১)
একই সংবাদ দৈনিক ইত্তেফাক একইভাবে ছেপেছে। শুধু একটি শব্দের ব্যবহার পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। সংগ্রাম লিখেছে ‘সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের নিকট হাজির হতে ব্যর্থ হওয়ার দরুণ’ অর্থাৎ দোষটা চাপানো হয়েছে তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখের ওপর। সেখানে ইত্তেফাক লিখেছে, ‘সামরিক কর্তৃপক্ষের সম্মুখে হাজির না হওয়ায়’। পরিবেশনের ঢঙেই বোঝা যায় দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য।
ইত্তেফাকের প্রতিবেদনটি এ রকম:
তাজুদ্দীন প্রমুখের বিরুদ্ধে অভিযোগ
মূল মামলার বিচার পরে হইবে
‘সামরিক কর্তৃপক্ষের সম্মুখে হাজির না হওয়ার জন্য ৪০ নম্বর সামরিক আইনবিধি অনুযায়ী তাজউদ্দীন আহমদ, সাতমসজিদ রোড, ঢাকা, তোফায়েল আহমদ,
পোঃ কোড়ালিয়া, জেলা বাকেরগঞ্জ, এ এম নজরুল ইসলাম, লাঙ্গলশিমাল, জেলা ময়মনসিংহ, আবদুল মান্নান, ১১০ সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা এবং পিপল-এর মালিক ও ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা আবিদুর রহমান—এই সকল ব্যক্তিকে ১৪ বৎসর করিয়া সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হইয়াছে এবং তাহাদের সম্পত্তির শতকরা ৫০ ভাগ বাজেয়াফত করা হইয়াছে বলিয়া গত বুধবার ঢাকায় এপিপি পরিবেশিত এক খবরে বলা হয়।
অনেকেরই সংশয় ছিল। কারও কিছুটা হালকা, কারও আবার গভীর। কেউ কেউ শঙ্কিতও ছিলেন। দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা নিয়ে। এদের সবার সেই সব সংশয় ও শঙ্কা এখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। ফলে দেশের শাসনব্যবস্থার গণতান্ত্রিক রূপান্তরকামী সাধারণ মানুষের জন্য তা হয়ে উঠেছে অশনিসংকেত। হ্যাঁ, এই কথাগুলো হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয়
১৯ ঘণ্টা আগেন্যায়বিচার, সংস্কার ও বৈষম্য বিলোপের দাবি থেকে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের অনেকেই অপরাধ চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) নেতার উন্মুক্ত চাঁদাবাজির ঘটনা এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
১৯ ঘণ্টা আগেআমাদের সর্বসাধারণের মনে একটা প্রশ্ন সব সময়ই ঘুরপাক খায়—ভগবান যেহেতু অজ, তাহলে তাঁর আবার জন্ম কিসের? এই প্রশ্নের উত্তর ভগবান নিজেই গীতায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। গীতায় ভগবান বলেছেন, তিনি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি অজ অর্থাৎ জন্মরহিত হওয়া সত্ত্বেও এই জড়জগতে জন্মগ্রহণ করেন। কেন তিনি জন্মগ্রহণ
১৯ ঘণ্টা আগেএকসময় ভরা মৌসুমে এ দেশের সাধারণ মানুষও ইলিশ কিনতে পারত। কিন্তু অনেক বছর থেকে ইলিশ শুধু উচ্চবিত্ত মানুষেরাই কিনতে পারছে। বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় এর আকাশছোঁয়া দামের কারণে এখন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে নেই ইলিশ। এখন ভরা মৌসুমে ইলিশের দাম বাড়া নিয়ে ১৫ আগস্ট আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ
১৯ ঘণ্টা আগে