অরুণ কর্মকার
চারদিক থেকে যেন রাজ্যের এক অস্থিতিশীলতা আমাদের ঘিরে ধরেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কোনোভাবে স্থিতিশীল বলে গণ্য করা যায় না। তার ওপর পূর্ব সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে আছে মিয়ানমারকে ঘিরে। সেখানকার রোহিঙ্গা শরণার্থী; সীমান্তের ওপারের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন করে বাংলাদেশে তাদের অব্যাহত অনুপ্রবেশ; বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবিত মানবিক করিডর বা হিউম্যান চ্যানেল যা-ই বলা হোক না কেন—এই সবকিছু মিলে পরিস্থিতিটা আমাদের জন্য মোটেই স্বাভাবিক বলা যায় না, বরং বেশ জটিল বলেই মনে হয়। তাই দেশের সব রাজনৈতিক দল বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে।
এগুলোর সঙ্গে সর্বশেষ অনুষঙ্গ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতি। এমনিতে তাদের মধ্যকার ওই পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো যোগসূত্র নেই। কিন্তু ওই দুটি দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সম্পর্ক, সদ্ভাব কিংবা অসদ্ভাব ঐতিহাসিক। তার ওপর ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। বলতে গেলে আমাদের সীমান্তের চারপাশেই ভারতের অবস্থান। তা সত্ত্বেও সেখানকার বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতি রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের জন্য খুব বেশি মাথাব্যথার কারণ হতো না। কিন্তু তা হয়েছে। কেননা, ভারত যে রাতে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে আক্রমণ শুরু করেছে, সেই রাতেই বাংলাদেশের কয়েকটি সীমান্ত থেকে বেশ কিছু মানুষকে পুশ ইন করার ঘটনা ঘটেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী কুড়িগ্রামের দুটি, মেহেরপুরের একটি এবং ভূরাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচিত পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির একটি সীমান্ত এলাকা থেকে ৮ মে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ১২০ জন মানুষকে পুশ ইন করা হয়েছে। পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে মিসাইল হামলার সঙ্গে একপ্রকার সমন্বয় করে ভারত কেন এই পুশ ইন করল, তা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন বটে।
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, এ ধরনের পুশ ইন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পুশ ইনের ব্যাপারে তাঁরা দিল্লিকে জানিয়েছেন। যাঁদের পুশ ইন করা হয়েছে, তাঁরা যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন, তাহলে তো তাঁদের আইনি প্রক্রিয়াতেই ফেরত পাঠানো যায়। তবে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন দেখেন না। প্রায় একই কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিরল উপজেলার মোকলেছপুর ইউনিয়নের ঢেলপীর ব্লকে বোরো ব্রি ধান-৮৮ কর্তন উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের সীমান্ত সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ও নিরাপদ রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় ভীতির কোনো কারণ নেই।’
সীমান্ত নিরাপদ থাকলেও ভারতের তৎপরতা নিয়ে বাংলাদেশে যে শঙ্কা রয়েছে, সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। জুলাই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ফেসবুক পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘শুধু এই মাসেই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ও হাইকমিশন বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ও সামরিক পর্যায়ে অন্তত তেইশটা মিটিং করেছে। লিখে রাখেন আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের সুযোগ করে দিতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচারের নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। একটা পর্যায় গিয়ে বলা হবে একসময়ের জন সমর্থিত রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা আমাদের কাজ নয়। যার এজেন্ডায় আওয়ামী লীগের বিচার নাই, যার এজেন্ডায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নাই, তার সঙ্গে আমরা নাই।’ হাসনাত আবদুল্লাহর ফেসবুক পোস্টের এই বক্তব্যে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় যে গভীর অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, তার স্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়।
একইভাবে জুলাই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে খ্যাত অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের একটি ফেসবুক পোস্টেও দেশের রাজনীতির অনেক গভীরের হালচাল ফুটে উঠেছে। ‘কৈফিয়ত কিংবা বাস্তবতা’ শিরোনামে দেওয়া ওই পোস্টে মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘ক্ষমতার ভরকেন্দ্র অনেকগুলো। ফলে কাজের দায় সরকারের, কিন্তু কাজ করে ক্ষমতার অন্যান্য ভরকেন্দ্র। জোড়াতালি দিয়ে গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্ভব না, সম্ভব নয় নূতন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।’
মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো ডিসেম্বরের পর সহযোগী ভূমিকায় নেই। কিন্তু ঠিকই প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশে তারা স্টেক নিয়ে বসে আছেন। স্টাবলিশমেন্ট দ্বিদলীয় বৃত্তে ফিরতে এবং ছাত্রদের মাইনাস করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রায় তিন ডজন নিয়োগপ্রাপ্তের মধ্যে ছাত্র মাত্র দুজন। ছাত্র প্রতিনিধিদেরও স্টাবলিশমেন্ট রাষ্ট্রপতি অপসারণের ঘটনার পর থেকে কোণঠাসা করে রেখেছে। আমরা দুজন সর্বোচ্চ ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট করতে পারছি, কিন্তু প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে হলে সরকারে সুষম ছাত্র প্রতিনিধিত্ব লাগবে। ছাত্রদের কয়েকটি দল হয়ে যাওয়ায় তারা এখন বিভক্ত, তদুপরি অন্য রাজনৈতিক দলের মতোই তারা ট্রিটেড হচ্ছেন। এ জন্য নাগরিক কমিটিই ছিল দীর্ঘ মেয়াদে অভ্যুত্থানের ফোর্স হিসেবে টেকসই। যাই হোক, এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম দেশব্যাপী ছাত্রদের গুছিয়ে উঠতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতা বিভক্ত ও দ্বিধান্বিত।’
মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র কম্প্রোমাইজড। মিডিয়া ও ব্যবসায়ে লীগের আধিপত্য কমেনি। লীগের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে হাত দেওয়া যায়নি। পুরোনো দ্বিদলীয় বন্দোবস্ত টিকে গেছে। বিচার বিভাগ এখনো দ্বিদলীয় বৃত্তে বন্দী। বাম-ডানের কালচারাল ক্যাচাল জুলাইকে দুর্বল করেছে এবং শাহবাগ-শাপলাকে চিরন্তন করে তুলেছে। ডানপন্থীরা ভুল রাজনীতি করেছেন এবং নূতন বাস্তবতায় আবেগের বশে প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা রেখেছেন। বামপন্থীরা প্রথম থেকেই সরকারের প্রতি স্কেপ্টিক্যাল এবং অভ্যুত্থানের পক্ষে জোরদার ভূমিকা রাখতে অসফল। সবচেয়ে ডেডিকেটেড ছাত্রকর্মীরা ক্রেডিট, দলবাজি আর কোরামবাজির খপ্পরে পড়েছেন। আর্থিক অসচ্ছতার অভিযোগ হাতে গোনা কয়েকজনের বিরুদ্ধে, কিন্তু ডিমোরালাইজড হয়েছে সমগ্র ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের পক্ষের প্রতিষ্ঠান ও নূতন সিভিল সোসাইটি গড়তে ব্যর্থ হয়েছেন। সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক অ্যালায়েন্সের ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার কোনো হিস্যা নেই।’
মাহফুজ লিখেছেন, ‘শহীদ-আহতদের ক্ষেত্রে এবং বিচারের প্রশ্নে সরকারসহ সব অংশীজন অসফল। অভ্যুত্থান শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত হয়নি। স্টাবলিশমেন্ট ও রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থবাদী চিন্তা ও কর্মের সাথে সাথে ছাত্রদের অনভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব এ জন্য দায়ী। সর্বোপরি ছাত্রদের মাইনাস করে (ছাত্রদের ব্যর্থতা অনস্বীকার্য বটে) দ্বিদলীয় বন্দোবস্তে ফেরার জন্য স্টাবলিশমেন্ট অপেক্ষমাণ। ছাত্রদের পরিপূর্ণ অসহযোগিতার মুখে ইতিমধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সমাধান? রাষ্ট্র ও স্টাবলিশমেন্টে ছাত্রদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তার দালালদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আঘাত করা। এগুলো করার পূর্বশর্ত হলো, ছাত্রদের মধ্যে সততা, আদর্শ, নিষ্ঠা ও ঐক্য ফিরিয়ে আনা। পুরোনো বন্দোবস্তের সৈনিকদের অকার্যকর করে তোলা।’
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মাহফুজ আলমের এই ভাষ্য দেশের রাজনীতির গভীরে বিদ্যমান অস্থিতিশীলতারই প্রকাশ। তাঁর সমাধানসূত্র কার্যকর না হলে বাংলাদেশের ইতিহাসে যতগুলো অভ্যুত্থান হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে অসফল অভ্যুত্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে জুলাই অভ্যুত্থান।
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও স্থিতিশীল নয়। অতি সম্প্রতি দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ বিষয়ে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বিডার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, জ্বালানির মূল্যনীতি; আমেরিকার আরোপিত নতুন শুল্কনীতি ও তার প্রভাব; তৃণমূল পর্যায়ে পুরোনো অনুশীলন এবং প্রকল্প সম্পাদন ও বাস্তবায়নের গতিকে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরিতে চ্যালেঞ্জের। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এই চ্যালেঞ্জগুলোর কথা জানা গেছে।
স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য এসব চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সেই কাজে কতটা সফল হতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
চারদিক থেকে যেন রাজ্যের এক অস্থিতিশীলতা আমাদের ঘিরে ধরেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কোনোভাবে স্থিতিশীল বলে গণ্য করা যায় না। তার ওপর পূর্ব সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে আছে মিয়ানমারকে ঘিরে। সেখানকার রোহিঙ্গা শরণার্থী; সীমান্তের ওপারের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন করে বাংলাদেশে তাদের অব্যাহত অনুপ্রবেশ; বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবিত মানবিক করিডর বা হিউম্যান চ্যানেল যা-ই বলা হোক না কেন—এই সবকিছু মিলে পরিস্থিতিটা আমাদের জন্য মোটেই স্বাভাবিক বলা যায় না, বরং বেশ জটিল বলেই মনে হয়। তাই দেশের সব রাজনৈতিক দল বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে।
এগুলোর সঙ্গে সর্বশেষ অনুষঙ্গ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতি। এমনিতে তাদের মধ্যকার ওই পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো যোগসূত্র নেই। কিন্তু ওই দুটি দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সম্পর্ক, সদ্ভাব কিংবা অসদ্ভাব ঐতিহাসিক। তার ওপর ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। বলতে গেলে আমাদের সীমান্তের চারপাশেই ভারতের অবস্থান। তা সত্ত্বেও সেখানকার বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতি রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের জন্য খুব বেশি মাথাব্যথার কারণ হতো না। কিন্তু তা হয়েছে। কেননা, ভারত যে রাতে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে আক্রমণ শুরু করেছে, সেই রাতেই বাংলাদেশের কয়েকটি সীমান্ত থেকে বেশ কিছু মানুষকে পুশ ইন করার ঘটনা ঘটেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী কুড়িগ্রামের দুটি, মেহেরপুরের একটি এবং ভূরাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচিত পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির একটি সীমান্ত এলাকা থেকে ৮ মে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ১২০ জন মানুষকে পুশ ইন করা হয়েছে। পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে মিসাইল হামলার সঙ্গে একপ্রকার সমন্বয় করে ভারত কেন এই পুশ ইন করল, তা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন বটে।
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, এ ধরনের পুশ ইন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পুশ ইনের ব্যাপারে তাঁরা দিল্লিকে জানিয়েছেন। যাঁদের পুশ ইন করা হয়েছে, তাঁরা যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন, তাহলে তো তাঁদের আইনি প্রক্রিয়াতেই ফেরত পাঠানো যায়। তবে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন দেখেন না। প্রায় একই কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিরল উপজেলার মোকলেছপুর ইউনিয়নের ঢেলপীর ব্লকে বোরো ব্রি ধান-৮৮ কর্তন উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের সীমান্ত সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ও নিরাপদ রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় ভীতির কোনো কারণ নেই।’
সীমান্ত নিরাপদ থাকলেও ভারতের তৎপরতা নিয়ে বাংলাদেশে যে শঙ্কা রয়েছে, সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। জুলাই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ফেসবুক পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘শুধু এই মাসেই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ও হাইকমিশন বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ও সামরিক পর্যায়ে অন্তত তেইশটা মিটিং করেছে। লিখে রাখেন আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের সুযোগ করে দিতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচারের নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। একটা পর্যায় গিয়ে বলা হবে একসময়ের জন সমর্থিত রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা আমাদের কাজ নয়। যার এজেন্ডায় আওয়ামী লীগের বিচার নাই, যার এজেন্ডায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নাই, তার সঙ্গে আমরা নাই।’ হাসনাত আবদুল্লাহর ফেসবুক পোস্টের এই বক্তব্যে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় যে গভীর অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, তার স্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়।
একইভাবে জুলাই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে খ্যাত অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের একটি ফেসবুক পোস্টেও দেশের রাজনীতির অনেক গভীরের হালচাল ফুটে উঠেছে। ‘কৈফিয়ত কিংবা বাস্তবতা’ শিরোনামে দেওয়া ওই পোস্টে মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘ক্ষমতার ভরকেন্দ্র অনেকগুলো। ফলে কাজের দায় সরকারের, কিন্তু কাজ করে ক্ষমতার অন্যান্য ভরকেন্দ্র। জোড়াতালি দিয়ে গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্ভব না, সম্ভব নয় নূতন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।’
মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো ডিসেম্বরের পর সহযোগী ভূমিকায় নেই। কিন্তু ঠিকই প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশে তারা স্টেক নিয়ে বসে আছেন। স্টাবলিশমেন্ট দ্বিদলীয় বৃত্তে ফিরতে এবং ছাত্রদের মাইনাস করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রায় তিন ডজন নিয়োগপ্রাপ্তের মধ্যে ছাত্র মাত্র দুজন। ছাত্র প্রতিনিধিদেরও স্টাবলিশমেন্ট রাষ্ট্রপতি অপসারণের ঘটনার পর থেকে কোণঠাসা করে রেখেছে। আমরা দুজন সর্বোচ্চ ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট করতে পারছি, কিন্তু প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে হলে সরকারে সুষম ছাত্র প্রতিনিধিত্ব লাগবে। ছাত্রদের কয়েকটি দল হয়ে যাওয়ায় তারা এখন বিভক্ত, তদুপরি অন্য রাজনৈতিক দলের মতোই তারা ট্রিটেড হচ্ছেন। এ জন্য নাগরিক কমিটিই ছিল দীর্ঘ মেয়াদে অভ্যুত্থানের ফোর্স হিসেবে টেকসই। যাই হোক, এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম দেশব্যাপী ছাত্রদের গুছিয়ে উঠতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতা বিভক্ত ও দ্বিধান্বিত।’
মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র কম্প্রোমাইজড। মিডিয়া ও ব্যবসায়ে লীগের আধিপত্য কমেনি। লীগের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে হাত দেওয়া যায়নি। পুরোনো দ্বিদলীয় বন্দোবস্ত টিকে গেছে। বিচার বিভাগ এখনো দ্বিদলীয় বৃত্তে বন্দী। বাম-ডানের কালচারাল ক্যাচাল জুলাইকে দুর্বল করেছে এবং শাহবাগ-শাপলাকে চিরন্তন করে তুলেছে। ডানপন্থীরা ভুল রাজনীতি করেছেন এবং নূতন বাস্তবতায় আবেগের বশে প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা রেখেছেন। বামপন্থীরা প্রথম থেকেই সরকারের প্রতি স্কেপ্টিক্যাল এবং অভ্যুত্থানের পক্ষে জোরদার ভূমিকা রাখতে অসফল। সবচেয়ে ডেডিকেটেড ছাত্রকর্মীরা ক্রেডিট, দলবাজি আর কোরামবাজির খপ্পরে পড়েছেন। আর্থিক অসচ্ছতার অভিযোগ হাতে গোনা কয়েকজনের বিরুদ্ধে, কিন্তু ডিমোরালাইজড হয়েছে সমগ্র ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের পক্ষের প্রতিষ্ঠান ও নূতন সিভিল সোসাইটি গড়তে ব্যর্থ হয়েছেন। সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক অ্যালায়েন্সের ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার কোনো হিস্যা নেই।’
মাহফুজ লিখেছেন, ‘শহীদ-আহতদের ক্ষেত্রে এবং বিচারের প্রশ্নে সরকারসহ সব অংশীজন অসফল। অভ্যুত্থান শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত হয়নি। স্টাবলিশমেন্ট ও রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থবাদী চিন্তা ও কর্মের সাথে সাথে ছাত্রদের অনভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব এ জন্য দায়ী। সর্বোপরি ছাত্রদের মাইনাস করে (ছাত্রদের ব্যর্থতা অনস্বীকার্য বটে) দ্বিদলীয় বন্দোবস্তে ফেরার জন্য স্টাবলিশমেন্ট অপেক্ষমাণ। ছাত্রদের পরিপূর্ণ অসহযোগিতার মুখে ইতিমধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সমাধান? রাষ্ট্র ও স্টাবলিশমেন্টে ছাত্রদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তার দালালদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আঘাত করা। এগুলো করার পূর্বশর্ত হলো, ছাত্রদের মধ্যে সততা, আদর্শ, নিষ্ঠা ও ঐক্য ফিরিয়ে আনা। পুরোনো বন্দোবস্তের সৈনিকদের অকার্যকর করে তোলা।’
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মাহফুজ আলমের এই ভাষ্য দেশের রাজনীতির গভীরে বিদ্যমান অস্থিতিশীলতারই প্রকাশ। তাঁর সমাধানসূত্র কার্যকর না হলে বাংলাদেশের ইতিহাসে যতগুলো অভ্যুত্থান হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে অসফল অভ্যুত্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে জুলাই অভ্যুত্থান।
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও স্থিতিশীল নয়। অতি সম্প্রতি দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ বিষয়ে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বিডার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, জ্বালানির মূল্যনীতি; আমেরিকার আরোপিত নতুন শুল্কনীতি ও তার প্রভাব; তৃণমূল পর্যায়ে পুরোনো অনুশীলন এবং প্রকল্প সম্পাদন ও বাস্তবায়নের গতিকে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরিতে চ্যালেঞ্জের। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এই চ্যালেঞ্জগুলোর কথা জানা গেছে।
স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য এসব চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সেই কাজে কতটা সফল হতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আমাদের দেশের রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনা স্বাভাবিকভাবে ঘটছে, নাকি কারও ইশারায়, তা জানা খুব জরুরি হয়ে উঠেছে। একই দিনে এত বেশি সংবাদের জন্ম হচ্ছে এবং সংবাদগুলো দেশকে অস্থিরতার দিকে যেভাবে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে মনে হয়, সত্যিকারের কাজের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কেউ কেউ ফায়দা লোটার...
১৩ ঘণ্টা আগেবর্তমানে আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের অন্যায়, অবক্ষয় ও অমানবিকতার মুখোমুখি হচ্ছি। প্রতিদিন নানা প্রচারমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে হত্যা, ধর্ষণ, দুর্নীতি, প্রতারণা, পারিবারিক সহিংসতা ও সামাজিক বৈষম্যের খবর। এসব দেখে আমরা আতঙ্কিত হই, বিরক্ত হই, মাঝে মাঝে প্রতিবাদও করি। তবে একটু গভীরভাবে ভাবলেই বোঝা যায়...
১৪ ঘণ্টা আগেবর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স ৯ মাস পূর্ণ হয়েছে। মেঘে মেঘে বেলা অনেক হয়েছে। ৯ মাস যুদ্ধ করে আমরা স্বাধীন হয়েছি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী অনেক হয়েছেন। তাঁরা প্রশাসনিকভাবে অনেকটা অভিজ্ঞ হয়ে উঠছেন। প্রথম দিকে তাঁদের নিয়ে নানা কথা থাকলেও মানুষ ভালো কিছু দেখতে চেয়েছিল।
১৪ ঘণ্টা আগেদীর্ঘ তিন বছর নেগোসিয়েশনের পর ৬ মে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারত এমন একটি বাণিজ্য চুক্তি করতে সক্ষম হয়, যেটিকে উভয় দেশই ‘ল্যান্ডমার্ক ট্রেড ডিল’ হিসেবে অভিহিত করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বাড়তি ট্যারিফ আরোপের মাধ্যমে পুরো বিশ্বের অর্থনীতিকে মারাত্মক একটা ঝাঁকুনি দিয়েছেন, তখন এমন চুক্তি ভারত ও যুক্তরাজ্য উভয়
২ দিন আগে