জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
অরুণ বসুর সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৮৪ সালের উত্তাল সময়ে। এরশাদবিরোধী আন্দোলন তত দিনে দানা বেঁধেছে। সে সময় সদ্য এইচএসসি পাস করে টিএসসির কণ্ঠশীলনের আবর্তনে যোগ দিয়েছি। কণ্ঠশীলনের প্রাণ ছিলেন বিপ্লব বালা, তাঁর সারথি ছিলেন অরুণ বসু। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অরুণদা হয়ে গেলেন।
১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ছড়ায়-কবিতায়-নাটকে পরিচয় প্রগাঢ় হতে থাকল। বিপ্লব বালা এবং অরুণ বসু, দুজনের মাধ্যমেই আমরা শম্ভু মিত্রের আবৃত্তি ও নাটকের সঙ্গে পরিচিত হই।
অরুণদার নেতৃত্বে কণ্ঠশীলন অংশ নিয়েছিল চট্টগ্রামে পঞ্চম রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনে। তৃতীয় শ্রেণির ওয়াগনে আমরা সবাই মহানন্দে ট্রেনভ্রমণ উপভোগ করেছিলাম। বয়স কম থাকায় আমরা দরোজায় দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করছি, চিৎকার করে গান গাইছি। অরুণদা মাঝে মাঝে শাসাচ্ছেন! মনে আছে। সম্মেলনের মধ্যেই একদিন একফাঁকে বাটালি পাহাড়েও যাওয়া হলো সবাই মিলে। সেখানে তোলা ছবিগুলো দেখতে গিয়ে এখনো মন বেদনায় সিক্ত হয়।
এরপর ১০ বছরের জন্য আমি চলে গিয়েছিলাম সোভিয়েত ইউনিয়নে। ফিরে এসে আমাদের সেই মিলনস্থলে বিপ্লবদা বা অরুণদাকে পেলাম না। তাঁরা দুজনই তখন ছিলেন গণ সাহায্য সংস্থায়। এরপর দীর্ঘদিন অরুণদার সঙ্গে প্রথম আলোয় চাকরি করেছি। অরুণদা সুযোগ পেলেই পড়তেন। ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে সখ্যের কারণে দেশের ও ভারতের সাহিত্যজগতের অনেকের সঙ্গেই ছিল তাঁর জানাশোনা।
একবার খবর পেলেন শঙ্খ ঘোষ ঢাকায় এসেছেন। হন্তদন্ত হয়ে আমাকে সে খবর দিলেন। তারপর দুজনেই ছুটলাম ধানমন্ডির অরণি বিদ্যালয়ে। তারই ওপরতলায় উঠেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। অনেকটা সময় কাটিয়েছিলাম সে বাড়িতে। আমি ছোট্ট একটা সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। আমার লেখাটা অরুণদা সম্পাদনা করে দিয়েছিলেন।
অন্যের বাজে লেখা সম্পাদনা করে ঝরঝরে গদ্য তৈরি করার হাত ছিল অরুণদার। লেখার দখল নেই, অথচ সাংবাদিক, এ রকম সাংবাদিক আছে ভূরি ভূরি। তাদের লেখা সম্পাদনা করা যে কত পরিশ্রমসাপেক্ষ, সেটা অরুণদা জানতেন। মাঝে মাঝেই এসে আক্ষেপ করতেন, ‘লিখতে জানে না, আবার সাংবাদিক!’ কেউ ভালো কিছু লিখলে অফিসজুড়ে তাঁর তারিফ করতেন। জনে জনে ডেকে সেই লেখার চুম্বক অংশ পড়ে শোনাতেন। এই উদারতা খুব কম মানুষের থাকে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ঘাটতি তিনি পূরণ করেছিলেন অগাধ পড়াশোনা করে। আর তাঁর সেই আলোয় প্রতিষ্ঠিত অনেক তারকা লেখকও ম্লান হয়ে যেতেন। বেশ কিছু লেখার ভিড়ে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ‘দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাব না’ শিরোনামে একটি উপসম্পাদকীয় লিখেছিলেন। সে লেখার ভাষা কতটা অনবদ্য ছিল, সেটা যে কেউ গুগলে সার্চ করে পড়ে নিলেই বুঝতে পারবেন। মেদহীন, প্রাঞ্জল ছিল তাঁর লেখার হাত।
আমাকে স্নেহ করতেন খুব। কখনো বলতেন, ‘ব্যাংকে কত টাকা আছে? ধার দাও! অমুক মাসের অমুক তারিখে পাবে।’ বহুবার ধার নিয়েছেন এবং কোনো দিন ধার শোধ করতে ভুল করেননি। জিলিপির প্যাঁচ পেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মানুষের ভিড়ে অরুণদা ছিলেন একজন পরিষ্কার মনের মানুষ। ৭ অক্টোবর কোভিড তাঁকে কেড়ে নিল। সংবাদ পেয়ে অনেকক্ষণ নির্বাক হয়ে বসে থাকলাম। চকিতেই মনে হলো, তিনি পৃথিবী ছেড়ে তো চলে গেলেন, দেশ ছেড়ে চলে গেলেন কি?
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
অরুণ বসুর সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৮৪ সালের উত্তাল সময়ে। এরশাদবিরোধী আন্দোলন তত দিনে দানা বেঁধেছে। সে সময় সদ্য এইচএসসি পাস করে টিএসসির কণ্ঠশীলনের আবর্তনে যোগ দিয়েছি। কণ্ঠশীলনের প্রাণ ছিলেন বিপ্লব বালা, তাঁর সারথি ছিলেন অরুণ বসু। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অরুণদা হয়ে গেলেন।
১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ছড়ায়-কবিতায়-নাটকে পরিচয় প্রগাঢ় হতে থাকল। বিপ্লব বালা এবং অরুণ বসু, দুজনের মাধ্যমেই আমরা শম্ভু মিত্রের আবৃত্তি ও নাটকের সঙ্গে পরিচিত হই।
অরুণদার নেতৃত্বে কণ্ঠশীলন অংশ নিয়েছিল চট্টগ্রামে পঞ্চম রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনে। তৃতীয় শ্রেণির ওয়াগনে আমরা সবাই মহানন্দে ট্রেনভ্রমণ উপভোগ করেছিলাম। বয়স কম থাকায় আমরা দরোজায় দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করছি, চিৎকার করে গান গাইছি। অরুণদা মাঝে মাঝে শাসাচ্ছেন! মনে আছে। সম্মেলনের মধ্যেই একদিন একফাঁকে বাটালি পাহাড়েও যাওয়া হলো সবাই মিলে। সেখানে তোলা ছবিগুলো দেখতে গিয়ে এখনো মন বেদনায় সিক্ত হয়।
এরপর ১০ বছরের জন্য আমি চলে গিয়েছিলাম সোভিয়েত ইউনিয়নে। ফিরে এসে আমাদের সেই মিলনস্থলে বিপ্লবদা বা অরুণদাকে পেলাম না। তাঁরা দুজনই তখন ছিলেন গণ সাহায্য সংস্থায়। এরপর দীর্ঘদিন অরুণদার সঙ্গে প্রথম আলোয় চাকরি করেছি। অরুণদা সুযোগ পেলেই পড়তেন। ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে সখ্যের কারণে দেশের ও ভারতের সাহিত্যজগতের অনেকের সঙ্গেই ছিল তাঁর জানাশোনা।
একবার খবর পেলেন শঙ্খ ঘোষ ঢাকায় এসেছেন। হন্তদন্ত হয়ে আমাকে সে খবর দিলেন। তারপর দুজনেই ছুটলাম ধানমন্ডির অরণি বিদ্যালয়ে। তারই ওপরতলায় উঠেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। অনেকটা সময় কাটিয়েছিলাম সে বাড়িতে। আমি ছোট্ট একটা সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। আমার লেখাটা অরুণদা সম্পাদনা করে দিয়েছিলেন।
অন্যের বাজে লেখা সম্পাদনা করে ঝরঝরে গদ্য তৈরি করার হাত ছিল অরুণদার। লেখার দখল নেই, অথচ সাংবাদিক, এ রকম সাংবাদিক আছে ভূরি ভূরি। তাদের লেখা সম্পাদনা করা যে কত পরিশ্রমসাপেক্ষ, সেটা অরুণদা জানতেন। মাঝে মাঝেই এসে আক্ষেপ করতেন, ‘লিখতে জানে না, আবার সাংবাদিক!’ কেউ ভালো কিছু লিখলে অফিসজুড়ে তাঁর তারিফ করতেন। জনে জনে ডেকে সেই লেখার চুম্বক অংশ পড়ে শোনাতেন। এই উদারতা খুব কম মানুষের থাকে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ঘাটতি তিনি পূরণ করেছিলেন অগাধ পড়াশোনা করে। আর তাঁর সেই আলোয় প্রতিষ্ঠিত অনেক তারকা লেখকও ম্লান হয়ে যেতেন। বেশ কিছু লেখার ভিড়ে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ‘দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাব না’ শিরোনামে একটি উপসম্পাদকীয় লিখেছিলেন। সে লেখার ভাষা কতটা অনবদ্য ছিল, সেটা যে কেউ গুগলে সার্চ করে পড়ে নিলেই বুঝতে পারবেন। মেদহীন, প্রাঞ্জল ছিল তাঁর লেখার হাত।
আমাকে স্নেহ করতেন খুব। কখনো বলতেন, ‘ব্যাংকে কত টাকা আছে? ধার দাও! অমুক মাসের অমুক তারিখে পাবে।’ বহুবার ধার নিয়েছেন এবং কোনো দিন ধার শোধ করতে ভুল করেননি। জিলিপির প্যাঁচ পেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মানুষের ভিড়ে অরুণদা ছিলেন একজন পরিষ্কার মনের মানুষ। ৭ অক্টোবর কোভিড তাঁকে কেড়ে নিল। সংবাদ পেয়ে অনেকক্ষণ নির্বাক হয়ে বসে থাকলাম। চকিতেই মনে হলো, তিনি পৃথিবী ছেড়ে তো চলে গেলেন, দেশ ছেড়ে চলে গেলেন কি?
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
নেপাল ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কেবল ভৌগোলিক নয়, হাজার বছরের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বন্ধনে আবদ্ধ। উন্মুক্ত সীমান্ত, অভিন্ন হিন্দু ঐতিহ্য এবং ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও নেপালে ভারতবিরোধী মনোভাব একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল বাস্তবতা।
১০ ঘণ্টা আগেআগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা-সংশয় যা-ই বলি, এত দিন সে বিষয়টির পরিসর সীমিত ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্য এবং সাধারণত নির্বাক থাকা দেশের আমজনতার মনোজগতে। কিন্তু এখন যখন সরকারপ্রধান নিজেই সেই শঙ্কার কথা ব্যক্ত করছেন, তখন বিষয়টি যে মোটেই অমূলক নয়, তা স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা থাকতে পারে না
১ দিন আগেআজ থেকে খুব বেশি দিন না, এই ধরেন, বারো-সাড়ে বারো শ বছর আগের কথা। হীরকরাজ্যে তখনো জ্ঞান-বিজ্ঞান, বিদ্যা-শিক্ষার চর্চা হতো। রীতিমতো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। ৩০০ বছর ধরে শুধু উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই নয়, বরং চীন, তিব্বত, ব্রহ্মদেশ (মিয়ানমার), শ্যামদেশ (থাইল্যান্ড), মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়াসহ
১ দিন আগে৭ সেপ্টেম্বর বদরুদ্দীন উমরের জীবনের প্রস্থান হয়েছে। তাঁর এই প্রস্থানের মধ্য দিয়ে তিন পুরুষের রাজনৈতিক ধারারও সমাপ্তি ঘটেছে। তাঁর দাদা আবুল কাসেম ছিলেন তৎকালীন জাতীয় কংগ্রেসের পার্লামেন্টারিয়ান বোর্ডের সদস্য। বাবা আবুল হাশিম ছিলেন মুসলিম লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আর তিনি ছিলেন কমিউনিস্ট ধারার নেতা।
১ দিন আগে