জিন্নাত আরা ঋতু
সালটা ২০১৭। শ্রেণিকক্ষে বসা শিক্ষার্থীরা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন হোয়াইট বোর্ডে। প্রজেক্টর দিয়ে হোয়াইট বোর্ডে চলছে শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনী। শিক্ষার্থীদের সারিতে চেয়ার নিয়ে বসে থাকা শিক্ষিকাও তা দেখছেন। ফিল্ম অ্যান্ড থিওরি অ্যাপেয়ারেন্স ক্লাস চলছে। প্রদর্শিত শর্ট ফিল্মটির নাম ‘দ্য বাটারফ্লাই সারকাস।’ জোশুয়া ওয়েইগেলের এই শর্ট ফিল্মটি অনুপ্রেরণামূলক, যা একজন অঙ্গহীন ব্যক্তির জীবনকে কেন্দ্র করে তৈরি, যিনি একটি কার্নিভ্যালের আপত্তিকর সাইড শোয়ে কাজ করেন। যাঁর ইচ্ছাশক্তির কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মানে।
শর্ট ফিল্মটিতে উইল চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অনুপ্রেরণাদানকারী বক্তা নিক ভুজিসিক। যাঁর জন্ম থেকেই দুই হাত ও দুই পা নেই। ঠিক সিনেমার গল্পের মতোই তাঁর জীবন। বাস্তবতার সঙ্গে লড়েছেন, প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। বিশ্বখ্যাত মোটিভেশন স্পিকারদের মধ্যে তিনিও একজন। ১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে জন্ম নিক ভুজিসিকের। জন্মগতভাবে টেট্রা-অ্যামেলিয়া সিনড্রোমে আক্রান্ত তিনি, তবু সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে ৭৮টি দেশে ৩ হাজার ৫০০-এর বেশি বক্তৃতা দিয়েছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে। তিনি তাঁর গল্প দ্বারা শিখিয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দুর্বলতা নয়, আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাফল্যের পথে মানুষ এগিয়ে যায়। নিক আশা, বিশ্বাস ও জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলার বক্তব্য দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করেন।
বর্তমানে মোটিভেশনাল স্পিকার ও ইনফ্লুয়েন্সারদের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাঁদের কাজ সম্পর্কে কম-বেশি সবারই ধারণা আছে। সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি, জীবনধারা ও ট্রেন্ড তৈরিসহ মানুষকে অনুপ্রাণিত করা তাঁদের কাজ। এককথায় তাঁরা আধুনিক যুগের সামাজিক শক্তি। তবে সবাই কি নিক ভুজিসিকের মতো অনুপ্রেরণা জোগাতে পেরেছেন? আইডল হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে পেরেছেন?
ইনফ্লুয়েন্সাররা অনুপ্রেরণা দেন তাঁদের ব্যক্তিগত গল্প ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করে। তাঁরা নিজেদের জীবনের চ্যালেঞ্জ, সাফল্য ও ব্যর্থতার কথা বলেন, যা অন্যদের এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। অনেক সময় তাঁরা সাহস ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলেন, বিশেষ করে যখন কেউ নতুন কিছু শিখতে বা চেষ্টা করতে চায়। নতুন ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে তাঁরা মানুষের চিন্তার জগতে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করেন। তাঁদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তা অনেককে নতুন কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করে। তাঁদের আশাবাদী কথায় অনেক হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি দিশা খুঁজে পান।
ইনফ্লুয়েন্সাররা সঠিক তথ্য ও গাইডলাইন দেন, যা মানুষকে ক্যারিয়ার, স্বাস্থ্য বা শিক্ষার ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইনফ্লুয়েন্সাররা তাঁদের কমিউনিটির মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তা ও সমর্থন দেন। তাঁদের কথা, পরামর্শ ও কার্যক্রম অনেকের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে, যা মানুষকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে।
কিন্তু আমাদের দেশের ইনফ্লুয়েন্সারদের চিত্র কী? ঢালাওভাবে সবাই না হলেও অনেক ইনফ্লুয়েন্সার নানান সময় জড়িয়ে পড়ছেন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে। বেফাঁস মন্তব্য, প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাগ্যুদ্ধ, অসম্মানজনক ও অসৌজন্যমূলক আচরণ—এসব দিয়েই আলোচনায় থাকেন তাঁরা। কেউ কেউ এই ‘আলোচনায়’ থাকার জন্য যাচাই না করেই তথ্য প্রচার করার মতো নজিরও রেখেছেন। যে যত বেশি নজির রাখতে পারেন আলোচিত বা বলা ভালো সমালোচিত হতে—এটাই যেন তাঁদের জন্য বর্তমান ট্রেন্ড! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকলে এসব উদাহরণ অহরহ পাওয়া যায়। ইফ্লুয়েন্সারদের এহেন কাণ্ডে প্রশ্ন ওঠে—তাঁদের দ্বারা কীভাবে অনুপ্রাণিত হবে সাধারণ মানুষ? কেনই-বা মানুষ তাঁদের অনুসরণ করবে? অথবা কীভাবে তাঁরা জনমত গঠনে ভূমিকা রাখবেন?
ইনফ্লুয়েন্সাররা শুধু ব্র্যান্ড প্রচার করেন না, বরং সামাজিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁরা সচেতনতা বৃদ্ধি, অনুপ্রেরণা দেওয়া এবং জনমত গঠনেও সাহায্য করেন। সমাজের কর্ণধার হিসেবে সবার আগে তাঁদের নিজের আচার-ব্যবহার মার্জিত করতে হবে। বিতর্কিত মন্তব্য না করে সহিষ্ণুতার সঙ্গে প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার গুণাবলি থাকতে হবে তাঁদের মধ্যে।
লেখক: সাংবাদিক
সালটা ২০১৭। শ্রেণিকক্ষে বসা শিক্ষার্থীরা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন হোয়াইট বোর্ডে। প্রজেক্টর দিয়ে হোয়াইট বোর্ডে চলছে শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনী। শিক্ষার্থীদের সারিতে চেয়ার নিয়ে বসে থাকা শিক্ষিকাও তা দেখছেন। ফিল্ম অ্যান্ড থিওরি অ্যাপেয়ারেন্স ক্লাস চলছে। প্রদর্শিত শর্ট ফিল্মটির নাম ‘দ্য বাটারফ্লাই সারকাস।’ জোশুয়া ওয়েইগেলের এই শর্ট ফিল্মটি অনুপ্রেরণামূলক, যা একজন অঙ্গহীন ব্যক্তির জীবনকে কেন্দ্র করে তৈরি, যিনি একটি কার্নিভ্যালের আপত্তিকর সাইড শোয়ে কাজ করেন। যাঁর ইচ্ছাশক্তির কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মানে।
শর্ট ফিল্মটিতে উইল চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অনুপ্রেরণাদানকারী বক্তা নিক ভুজিসিক। যাঁর জন্ম থেকেই দুই হাত ও দুই পা নেই। ঠিক সিনেমার গল্পের মতোই তাঁর জীবন। বাস্তবতার সঙ্গে লড়েছেন, প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। বিশ্বখ্যাত মোটিভেশন স্পিকারদের মধ্যে তিনিও একজন। ১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে জন্ম নিক ভুজিসিকের। জন্মগতভাবে টেট্রা-অ্যামেলিয়া সিনড্রোমে আক্রান্ত তিনি, তবু সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে ৭৮টি দেশে ৩ হাজার ৫০০-এর বেশি বক্তৃতা দিয়েছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে। তিনি তাঁর গল্প দ্বারা শিখিয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দুর্বলতা নয়, আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাফল্যের পথে মানুষ এগিয়ে যায়। নিক আশা, বিশ্বাস ও জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলার বক্তব্য দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করেন।
বর্তমানে মোটিভেশনাল স্পিকার ও ইনফ্লুয়েন্সারদের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাঁদের কাজ সম্পর্কে কম-বেশি সবারই ধারণা আছে। সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি, জীবনধারা ও ট্রেন্ড তৈরিসহ মানুষকে অনুপ্রাণিত করা তাঁদের কাজ। এককথায় তাঁরা আধুনিক যুগের সামাজিক শক্তি। তবে সবাই কি নিক ভুজিসিকের মতো অনুপ্রেরণা জোগাতে পেরেছেন? আইডল হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে পেরেছেন?
ইনফ্লুয়েন্সাররা অনুপ্রেরণা দেন তাঁদের ব্যক্তিগত গল্প ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করে। তাঁরা নিজেদের জীবনের চ্যালেঞ্জ, সাফল্য ও ব্যর্থতার কথা বলেন, যা অন্যদের এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। অনেক সময় তাঁরা সাহস ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলেন, বিশেষ করে যখন কেউ নতুন কিছু শিখতে বা চেষ্টা করতে চায়। নতুন ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে তাঁরা মানুষের চিন্তার জগতে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করেন। তাঁদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তা অনেককে নতুন কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করে। তাঁদের আশাবাদী কথায় অনেক হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি দিশা খুঁজে পান।
ইনফ্লুয়েন্সাররা সঠিক তথ্য ও গাইডলাইন দেন, যা মানুষকে ক্যারিয়ার, স্বাস্থ্য বা শিক্ষার ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইনফ্লুয়েন্সাররা তাঁদের কমিউনিটির মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তা ও সমর্থন দেন। তাঁদের কথা, পরামর্শ ও কার্যক্রম অনেকের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে, যা মানুষকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে।
কিন্তু আমাদের দেশের ইনফ্লুয়েন্সারদের চিত্র কী? ঢালাওভাবে সবাই না হলেও অনেক ইনফ্লুয়েন্সার নানান সময় জড়িয়ে পড়ছেন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে। বেফাঁস মন্তব্য, প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাগ্যুদ্ধ, অসম্মানজনক ও অসৌজন্যমূলক আচরণ—এসব দিয়েই আলোচনায় থাকেন তাঁরা। কেউ কেউ এই ‘আলোচনায়’ থাকার জন্য যাচাই না করেই তথ্য প্রচার করার মতো নজিরও রেখেছেন। যে যত বেশি নজির রাখতে পারেন আলোচিত বা বলা ভালো সমালোচিত হতে—এটাই যেন তাঁদের জন্য বর্তমান ট্রেন্ড! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকলে এসব উদাহরণ অহরহ পাওয়া যায়। ইফ্লুয়েন্সারদের এহেন কাণ্ডে প্রশ্ন ওঠে—তাঁদের দ্বারা কীভাবে অনুপ্রাণিত হবে সাধারণ মানুষ? কেনই-বা মানুষ তাঁদের অনুসরণ করবে? অথবা কীভাবে তাঁরা জনমত গঠনে ভূমিকা রাখবেন?
ইনফ্লুয়েন্সাররা শুধু ব্র্যান্ড প্রচার করেন না, বরং সামাজিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁরা সচেতনতা বৃদ্ধি, অনুপ্রেরণা দেওয়া এবং জনমত গঠনেও সাহায্য করেন। সমাজের কর্ণধার হিসেবে সবার আগে তাঁদের নিজের আচার-ব্যবহার মার্জিত করতে হবে। বিতর্কিত মন্তব্য না করে সহিষ্ণুতার সঙ্গে প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার গুণাবলি থাকতে হবে তাঁদের মধ্যে।
লেখক: সাংবাদিক
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
৩ ঘণ্টা আগেগত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
৩ ঘণ্টা আগেপ্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
৩ ঘণ্টা আগেজুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১ দিন আগে