Ajker Patrika

এক-এগারো বিএনপির সৃষ্টি, এখন ঘাবড়ানোর কিছুই নেই: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ২১: ০০
এক-এগারো বিএনপির সৃষ্টি, এখন ঘাবড়ানোর কিছুই নেই: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

দেশে এক-এগারোর পুনরাবৃত্তির শঙ্কা তুলে ধরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপির দুঃশাসনের কারণে এক-এগারো ঘটেছিল। এবার ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমরা আছি না? কোনো চিন্তা নেই।’

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে জাপার সংসদ সদস্যের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে অস্থিরতাকে কেন্দ্র ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, যা এক-এগারোর সরকার হিসেবেই পরিচিত। এ প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা জানি, আজকে কিন্তু এক-এগারো। … দেশের যে পরিস্থিতি আমরা জানি, আমাদের দেশে প্রজ্ঞাবান নেতা আছে, অনুধাবনের ক্ষমতা—এক-এগারো আসবে না আবার। তবু আমার জিজ্ঞাসা—সব পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে পা বাড়ানোর বোধ হয় এখনই সময়। আপনি কী মনে করেন?’

জবাবে বিএনপির দুঃশাসন, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, ভুয়া ভোটার সৃষ্টির কারণে এক-এগারো এসেছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘাবড়ানোর কিছুই নেই, এতটুকু বলতে পারি। ঘাবড়াবেন না, আমরা আছি না? কোনো চিন্তা নেই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের বিজয় অনিবার্য জেনে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছিল। ২০১৮ সালে তারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে মনোনয়ন-বাণিজ্য করে। মাঝপথে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় এবং নির্বাচন নিয়ে নানা অপপ্রচার চালাতে থাকে। তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পেরেছে। কিন্তু জনগণের আস্থা, বিশ্বাস আওয়ামী লীগের ওপরে আছে।

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই মানুষ ভোটটা শান্তিতে দিতে পারছে। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ করার দরকার নেই। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়, কারণ তারা জানে, আওয়ামী লীগ যে ওয়াদা দেয় তা রাখে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা নির্বাচনকে কলুষিত করেছে,, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেছে, মানুষের ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে, যারা মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, তারাই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে।’

বিএনপির অতীতের আন্দোলনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকারে যখন আছি, জনগণের জানমাল রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। এমন কোনো শক্তি তৈরি হয়নি, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান, এইচ এম এরশাদ, খালেদা জিয়া—সবাই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না। আওয়ামী লীগের শিকড় অনেক গভীরে। 
 
জাতীয় সংসদে সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।গণফোরামের মোকাব্বিরকে প্রধানমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ
মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটাকে অমূলক আখ্যায়িত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে চালেঞ্জে ছুড়ে দিয়ে কোথায়, কত দুর্নীতি হয়েছে, তা স্পষ্ট করতে বলছেন। স্পষ্ট করে বললে তার জবাবও তিনি দেবেন বলে উল্লেখ করেন।

সম্পূরক প্রশ্নে মোকাব্বির খান মেগা প্রকল্প, কুইক রেন্টালসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির অভিযোগ করেন। মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে আজকের সংকটে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই কেবল দায়ী নয়, আমাদের অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয় আছে। আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা, মেগা প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক লুটপাট এবং বিদ্যুৎ খাতে কুইক রেন্টালের ইনডেমনিটি—এগুলো অনেক কিছুই দায়ী। এর ফলাফল কী হয়েছে? ডলার সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা আজ দুর্বিষহ। প্রধানমন্ত্রী এই সত্যতা স্বীকার করে ব্যবস্থা নেন বলে তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।

জবাবে মোকাব্বির খানের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে হচ্ছে, আমাদের সংসদ সদস্য বিরোধী দলে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যেসব অভিযোগ তিনি এনেছেন, তা সম্পূর্ণ অমূলক। তিনি মেগা প্রকল্প নিয়ে কথা বলেছেন। এই মেগা প্রকল্পের সুবিধাভোগী কারা? এ দেশের সাধারণ মানুষ। এই মেগা প্রকল্প অন্য কোনো সরকার করতে পারেনি, আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে আমরা করেছি। মেট্রোরেল—এটাও সাধারণ মানুষের যোগাযোগের জন্য। মেট্রোরেলে চলে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অল্প সময়ে আসতে পারছে স্বল্প খরচে। এটা সাধারণ মানুষ ভোগ করছে। সংসদ সদস্য অনেক অর্থশালী ও সম্পদশালী, গাড়িতে চড়েন—ওনার এসব সমস্যা জানার কথা নয়।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, মাননীয় স্পিকার, আপনার মাধ্যমে মাননীয় সম্পূরক প্রশ্নকর্তাকে আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি—কোথায়, কত দুর্নীতি হয়েছে। সেই কথাটা তাঁকে এখানে স্পষ্ট বলতে হবে। যার জবাব আমি দেব। 

মোকাব্বির খানের উদ্দেশে সংসদ নেতা আরও বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক। ওনার একটা সেকেন্ড হোমও আছে। সেই সেকেন্ড হোম যেখানে অর্থাৎ ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম কত শতাংশ বেড়েছে। সেখানে বিদ্যুতের দাম দেড় শ পার্সেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে ভোগ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সেখানে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হয়। নির্দেশনা নিয়ে তা মনিটরিং করা হয়। নিয়মের ব্যত্যয় হলে জরিমানা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো সেই অবস্থায় নয়।

কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সরকার মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারছে বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, বড় বড় মহারথী আমাদের দুর্নীতির খোঁজ পায়নি। সেখানে কিছু লোক ভাঙা রেকর্ডের মতো বলেই যাচ্ছেন কুইক রেন্টাল, কুইক রেন্টাল। সব বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হতো, আওয়ামী লীগ সরকার এসে যতগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছে, সেই সবগুলো যদি বন্ধ করে দিই। কী অবস্থা হবে আপনাদের? বলেন? কয়েক দিন মাত্র লোডশেডিং দিয়েছিলাম, তাই চারদিকে হাহাকার। সেই লোডশেডিং যাতে না হয়, সে জন্য কুইক রেন্টাল আবার চালু রাখতে হয়েছে। নিজেরা ভোগ করবেন আর বলার সময়ে অভিযোগ করবেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না। কাজেই যারা এর পরে বেশি বললেন, তাদের বিদ্যুৎ চাওয়াটা বন্ধ করে দেব। তখন দেখি কী হয়? 

সরকারি দলের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ব্যবসায়ী, যারা ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা করে। আসলে এটা খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয়, রোজা-উৎসব বা চাহিদার সময়ে তারা যে করে হোক দাম বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পৃথিবীর অন্য দেশে দেখি উৎসব পার্বণে দাম কমায়। আমাদের এখানে উল্টো কাণ্ড। শুধু তা-ই নয়, অনেক সময় তারা পণ্য আমদানি করতেও ঢিলেমি করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিনিসের দাম ও চাহিদা বাড়িয়ে তারা ব্যবসা করতে চায়। এটা আসলে অমানবিক। যারা মজুতদারি, কালোবাজারি, এলসি খোলা নিয়ে দুই নম্বরি করবে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি এবং নেব। প্রয়োজনে আরও কঠোর ব্যবস্থা আমরা নেব। মানুষের কষ্ট যেন না হয়, সেদিকে আমরা দৃষ্টি দেব।

প্রধানমন্ত্রী পানি, বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাসসহ সবকিছু ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান। যত কম ব্যবহার করা যায়। যত সাশ্রয় করা যায়; যারা সাশ্রয়ী হবেন, তাদের বিলও কম আসবে। এতে মানুষের জীবনযাত্রাও সহজ হবে।

আহসানুল ইসলাম টিটুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোগ্যপণ্য কেউ মজুতদারি করলে তাঁর বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। রমজান মাসে যে পণ্যগুলো প্রয়োজন, তার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। মানুষ রোজার সময় যেন কষ্ট না পায়। ওই সময় যে পণ্যগুলো একান্তভাবে প্রয়োজনীয়, তা যেন জনগণ যথাযথভাবে পায়, তার জন্য এসব পণ্য আমদানির এলসি খোলার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোগ্যপণ্য আমদানির এলসি খুলতে কোনো রকম সমস্যা হচ্ছে না। মনিটরিংরে মাধ্যমে পণ্যের যোগ্য মূল্যে এলসি খোলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কেউ এটা নিয়ে অন্য রকম কিছু করতে গেলে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কেউ মজুত করার চেষ্টা করলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোটের সব প্রস্তুতি নভেম্বরেই শেষ করবে কমিশন

মো. হুমায়ূন কবীর, ঢাকা 
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি চলতি নভেম্বরেই সম্পন্ন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেনাকাটাও প্রায় শেষ। তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে। কয়েক দিনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে।

নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়ে বলেছে, ইসি কোনো ঘাটতি রাখতে চায় না। তবে গণভোটের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় এ নিয়ে কিছু করছে না ইসি।

জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা হবে। গণভোটের কারণে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গণভোটের বিষয়ে এখনো কিছু জানি না।’

সূত্র বলেছে, নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ১৩ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ইসির সংলাপ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের আচরণ বিধিমালা পেতে দেরি হলে সংলাপের তারিখ কিছুটা পেছাতে পারে। সংলাপে প্রতি পর্বে পাঁচটি দল রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। সকাল ও বিকেলে দুই পর্বে হবে সংলাপ। সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নারীনেত্রী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গে এরই মধ্যে মতবিনিময় করেছে কমিশন।

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে ইসির সচিব বলেন, প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের আচরণ বিধিমালা হাতে পেলেই সংলাপের নথি কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলেই সংলাপ শুরু করা হবে। নিবন্ধিত সব দলকে সংলাপে ডাকা হবে কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, সব দলের নাম দিয়েই নথি উপস্থাপন করা হবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকলে দলটি আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক অন্য দলগুলোর ভোটে অংশ নেওয়ায় এখনো কোনো আইনি বাধা দেখছে না কমিশন।

সূত্র জানায়, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী মালপত্র কেনাকাটা প্রায় শেষ করেছে ইসি। প্রায় এক লাখ বড় হেসিয়ান ব্যাগ, প্রায় ৬০ হাজার ছোট হেসিয়ান ব্যাগ, প্রায় ১ লাখ গানি ব্যাগ, প্রায় ২০ হাজার কেজি গালা ও ৪০ লাখ ব্যালট বাক্সের লক কিনেছে ইসি। পর্যাপ্ত ব্যালট বাক্স ইসির সংগ্রহে থাকায় এবার ব্যালট বাক্স কিনতে হবে না। ব্যালট পেপার, ২১ প্রকার ফরম, ১৭ প্রকার প্যাকেট, পাঁচ প্রকার পরিচয়পত্র, আচরণবিধি, প্রতীকের পোস্টার, নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল, নির্দেশিকাসহ ৫৩ ধরনের নির্বাচনী সামগ্রী ছাপানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ সংগ্রহ করে রেখেছে বিজি প্রেস। অমোচনীয় কালি ইউএনডিপির সহায়তায় ২০ নভেম্বরের মধ্যে ইসির কাছে পৌঁছার কথা রয়েছে। তবে সংসদ নির্বাচন করার মতো প্রয়োজনীয় অমোচনীয় কালি ইসির সংগ্রহে রয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলকে (মার্ক্সবাদী) নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ১২ নভেম্বর পর্যন্ত এসব দলের বিরুদ্ধে দাবি-আপত্তি জানানো যাবে। এরপর সেগুলো নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। ইতিমধ্যে ৬৬টি দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছে কমিশন। ১৬টিকে প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ করে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ২৭ নভেম্বরের মধ্যে এগুলোর বিষয়ে দাবি-আপত্তি থাকলে ইসিতে জানানো যাবে। তারপর তা নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত করবে কমিশন।

সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ৩০০ আসনে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্রও চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ থাকবে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি। এ ছাড়া অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ১৪টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষ ১২ হাজারের মতো। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হবে ১৮ নভেম্বর। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করা হয়েছে। প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধনের জন্য পোস্টাল ভোটবিডি অ্যাপ ১৮ নভেম্বর উদ্বোধন করা হবে। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের খসড়া প্যানেল প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রবাসী ভোটারদের জন্য চলতি মাসেই ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। কারাবন্দীদের জন্য ভোটের দুই সপ্তাহ আগে ব্যালট পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, আপাতত কমিশনের সব মনোযোগ সংসদ নির্বাচনে। গণভোটের বিষয়ে সরকার থেকে কিছু না জানানোয় ইসি কিছু করছে না। সরকারের নির্দেশ পেলে সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন করবে। সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট হলে ইসিকে তেমন বেগ পেতে হবে না। এ ক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্র কিছুটা বাড়ানো লাগতে পারে। আর গণভোটের জন্য আলাদা ব্যালট এবং বাড়তি কিছু ব্যালট বাক্স লাগবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন গতকাল রোববার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে আমাদের জন্য একটা মাইলফলক। আপনার ভোট আপনার শক্তি। নিজে ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন এবং অন্যকেও ভোটদানে উৎসাহিত করুন।’

সূত্র জানায়, পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের ৮ হাজার ২২৬টি কেন্দ্রকে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’, ২০ হাজার ৪৩৭টি কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সাড়ে ১০ হাজারের মতো ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কেন্দ্র ছিল।

সূত্র আরও জানায়, পুরো দেশকে লাল, হলুদ ও সবুজ—এই তিন জোনে ভাগ করে নিরাপত্তা ছক সাজানো হবে। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি। এ ছাড়া নির্বাচন-পূর্ব সময়েও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এখন থেকে সব বাহিনীকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার রোধে আগাম প্রস্তুতিও রাখতে বলা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় ঈদগাহ মাঠে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সুপ্রিম কোর্ট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনসংলগ্ন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই বিষয়ে আজ রোববার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট দেশের বিচার অঙ্গনের সর্বোচ্চ স্থান। প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টে বিচারকার্য পরিচালনা করে থাকেন। এ ছাড়া দেশের বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মামলার নথিসহ কয়েক লাখ মামলার নথি এই কোর্টে রক্ষিত আছে।

সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে সুপ্রিম কোর্টের মালিকানাধীন জাতীয় ঈদগাহ মাঠ ও সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশের জন্য ব্যবহৃত মূল ফটকসংলগ্ন ফোয়ারা এলাকায় বহিরাগত ও অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে; যা সুপ্রিম কোর্ট ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট এলাকা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনসংলগ্ন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই নিলামে বিক্রির যে ব্যাখ্যা দিল বাংলা একাডেমি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সংগ্রহে থাকা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই নিলামে বিক্রি করা নিয়ে সম্প্রতি যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলা একাডেমি।

আজ রোববার এক বিবৃতিতে একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেছেন, ‘দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে ৮ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে “জাহানারা ইমামের দেওয়া বই বিক্রি করেছে বাংলা একাডেমি, এখন দাম হাঁকা হচ্ছে লাখ টাকা” শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে কিছু আংশিক সত্য উপস্থাপন করা হয়েছে; কিছু অংশ এমনভাবে হাইলাইট করা হয়েছে, যাতে প্রতিবেদনে অন্য রকম উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও পাঠক বিভ্রান্তির মধ্যে পড়বেন।

অনলাইনে বিভ্রান্তিকর শিরোনাম ও হাইলাইটস ব্যাপকভাবে টেমপ্লেট আকারে প্রচারিত হয়েছে। অন্য অনেকে একই ধরনের হাইলাইট ব্যবহার করে সংবাদ প্রচার করেছে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বভাবতই এ স্পর্শকাতর বিষয়ে বহুজন নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছেন। বহুজনের মনোযোগের বিষয় হয়ে ওঠার কারণে আমরা শুধু সংশ্লিষ্ট পত্রিকায় বাংলা একাডেমির বক্তব্য না পাঠিয়ে সাধারণ বিবৃতি আকারে দিচ্ছি। আশা করি, সংশ্লিষ্ট পত্রিকা বিষয়টি যথাযথভাবে উপস্থাপন করবে এবং অন্যরাও বিষয়টি সম্পর্কে পুনর্মূল্যায়ন করতে পারবেন। প্রয়োজনে প্রকৃত তথ্য-উপাত্তসহ সংবাদ পরিবেশনেরও সুযোগ তৈরি হবে।’

মোহাম্মদ আজম বলেন, বাংলা একাডেমি গত ২৫/৬/২৫ থেকে ২৩/১০/২৫ তারিখে পরিত্যক্ত হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মজুত করা কয়েক হাজার বই ও অন্য কাগজপত্র বিধিমোতাবেক নিলামে বিক্রি করে। এর মধ্যে আছে বইমেলায় জমা হওয়া বিপুলসংখ্যক বই, যে বইগুলো প্রতি বছর কমিটির মাধ্যমে বাছাই করে মানহীন ও পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়; আছে গ্রন্থাগারের যে বইগুলো ব্যবহার অযোগ্য ঘোষিত হয়, সেগুলো এবং বাংলা একাডেমির নিজস্ব প্রকাশনার যেসব বই নানা কারণে বিক্রয় অযোগ্য হয়ে ওঠে, সেগুলো। এ ধরনের বইপুস্তক বহুদিন ধরে গ্রন্থাগারসংলগ্ন একটি ঘরে গুদামজাত করা হয়। এটি পরিত্যক্ত বইয়ের গুদাম। এখানকার বইগুলোই সম্প্রতি নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। এসব বই এখন বিক্রি করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে এ জন্য যে, এ ঘর সম্পূর্ণ ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। আগামী মেলায় প্রাপ্ত বই ও অন্য সব কারণে পরিত্যক্ত হওয়া সম্ভাব্য বই রাখার কোনো জায়গা ওই ঘরে আর অবশিষ্ট ছিল না। ফলে ঘর খালি করার প্রয়োজন হয়েছিল। বিক্রির আগে গ্রন্থাগার ও সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হয়েছিল। তারা নিশ্চিত করেছে যে, এগুলো বহু বছর ধরে জমা হওয়া পরিত্যক্ত বই।

মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘এখন প্রশ্ন, বাংলা একাডেমি কি জাহানারা ইমাম, আহমদ শরীফ, মুক্তাগাছা সংগ্রহ বা অন্য কোনো তালিকার বই বিক্রি করেছে? আসলে এ ধরনের কিছুই ঘটেনি। কয়েক বছর আগে থেকে জাহানারা ইমামসহ অন্যদের দেওয়া বইগুলো যেভাবে ছিল ঠিক সেভাবেই আছে। এ বিষয়ে কোনো নতুন কমিটি গঠিত হয়নি, বা সংগ্রহশালা পুনর্মূল্যায়নের কোনো ঘটনাও ঘটেনি। অন্তত এক দশক ধরে জমা হওয়া পরিত্যক্ত বইগুলোই কেবল বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে গত এক বছরে নতুন যুক্ত হয়েছে কেবল গত বছরের বইমেলায় প্রাপ্ত মানহীন ও পরিত্যক্ত ঘোষিত বইগুলো। বর্তমান বিতর্কের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে জরুরি প্রশ্নটি হলো, তাহলে এ তালিকায় জাহানারা ইমাম সংগ্রহের বেশ কিছু বই কীভাবে যুক্ত হয়েছে?’

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে “বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগার পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত কমিটি” গঠিত হয়। এ কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৩. ০১. ২০১৪ তারিখ সোমবার বিকাল ৫ টায়। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন জনাব শামসুজ্জামান খান, অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, ফরিদা পারভীন, রেজিনা আক্তার ও মো. মোবারক হোসেন। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের ২য়টি ছিল–‌“একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে সে অনুযায়ী গ্রন্থাগার থেকে কিছু বই ছাঁটাই করতে হবে। এজন্য মো. মোবারক হোসেন, অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ, সুব্রত বড়ুয়া, বিশ্বজিৎ ঘোষ ও রেজিনা আক্তার–এই পাঁচ ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি উপকমিটি গঠন করা হলো।” এ কমিটি দীর্ঘদিন ধরে অনেকগুলো সভা করেছে এবং কোন বইগুলো গ্রন্থাগারে থাকবে না তা নির্ধারণ করেছে।’

মহাপরিচালক বলেন, ‘বাংলা একাডেমিতে রক্ষিত তালিকা থেকে দেখা যায়, পরিবারের পক্ষ থেকে জাহানারা ইমামের মোট ৩৫৯টি বই দেওয়া হয়েছিল। বাছাইয়ের পরে অধিকাংশ বই সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট হয়। “বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগারে সংরক্ষণার্থে গ্রন্থ বাছাই কমিটির বাছাইকৃত গ্রহণযোগ্য বইয়ের তালিকা (জাহানারা ইমাম)” প্রণয়ন করা হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। ওই বইগুলো বাংলা একাডেমির নির্দিষ্ট সেলফে মজুদ আছে। সেখানে বইয়ের সংখ্যা ৩০৮টি। তিনতলার নির্ধারিত স্থানে যে কেউ বইগুলো দেখতে এবং ব্যবহার করতে পারবেন। জাহানারা ইমামসহ অন্য সংগ্রহের যেসব বই গ্রন্থাগারের জন্য উপযোগী বিবেচিত হয়নি, সেগুলো আলাদা করে আর্কাইভ করা যেত। কিন্তু এ ধরনের পরিকল্পনা তখনকার দায়িত্বশীলরা কেন করেননি তা এখন অনুমান করা কঠিন। তখন একাডেমি-প্রশাসনের প্রধান পদগুলোতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনেকেই গত হয়েছেন; অন্যরাও এখন আর একাডেমিতে কর্মরত নেই। তখন গ্রন্থাগারের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরাও কেউ নেই। ফলে এই পরিত্যক্ত বইয়ের ভান্ডারে জাহানারা ইমাম সংগ্রহের কোনো বই তো দূরের কথা, কোনো ব্যবহার্য বই থাকতে পারে এমন দূরতম অনুমান করারও বাস্তবতা ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমির বর্তমান দায়িত্বরতদের সম্পর্কে বলা যায়, বইগুলো বিক্রির আগে আরেকবার পরীক্ষা করা যেত। কিন্তু বইয়ের সংখ্যা ছিল আক্ষরিক অর্থেই হাজার হাজার। তদুপরি, গুরুত্বপূর্ণ কোনো বই এখানে থাকতে পারে, এমন সম্ভাবনাও সংশ্লিষ্ট কারো অভিজ্ঞতায় ছিল না। এমতাবস্থায়, প্রথম আলোর প্রতিবেদক সাদিয়া মাহ্‌জাবীন ইমামের প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাংবাদিকতার একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ প্রতিবেদকের সাথে আমার বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। তাঁকে পুরো বিষয়টি অনেকবার বলা হয়েছে। তবু তিনি এমন শিরোনাম করেছেন, যাতে মনে হবে, জাহানারা ইমামের বই আলাদা করে অথবা শনাক্ত করে অথবা ইচ্ছা করে বিক্রি করা হয়েছে এবং কাজটা করেছে বর্তমান প্রশাসন। তিনি লিখেছেন, “বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম অবশ্য বলছেন, ২০১৪ সালে গঠিত একটি কমিটি একাডেমির সংগ্রহশালায় একাধিক কপি থাকা এবং অসংরক্ষণযোগ্য কিছু বই বাতিল বলে নির্ধারণ করেছিল, সেগুলোই বিক্রি করা হয়েছে।” এ বাক্য পড়লে যে কারো মনে হবে, বইগুলো আলাদা করে রাখা ছিল। মোটেই তা নয়। বইগুলো বহু বছর আগে থেকেই কয়েক হাজার বইয়ের পরিত্যক্ত মজুদের সাথে রাখা ছিল এবং সে তথ্য এখন কর্মরত একাডেমির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে ছিল না।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একই ভঙ্গি অক্ষুণ্ন রেখে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, “বাড়তি কিংবা অসংরক্ষণযোগ্য বই বিক্রির যুক্তি বাংলা একাডেমি দিলেও এক্ষেত্রে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের নীতি পরিপন্থি কাজ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশে এবং বিদেশে গ্রন্থাগার পরিচালনার কাজে যুক্ত থাকা বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী।” তিনি বলছেন, বিশিষ্ট ব্যক্তির সংগ্রহশালার বই এভাবে বিক্রি করা “স্পষ্ট অন্যায়”। বাংলা একাডেমি আসলে “বাড়তি কিংবা অসংরক্ষণযোগ্য বই বিক্রির যুক্তি” দেয়নি। প্রায় এক যুগ আগে সংঘটিত একটা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে কেবল। যেখানে বইগুলো চিহ্নিতই ছিল না, সেখানে “স্পষ্ট অন্যায়”টা কার, তা স্পষ্ট না করে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেন জাহানারা ইমামের বইগুলোই বিক্রি করা হয়েছে। তাঁর অসঙ্গত মনোভাব এবং উদ্দেশ্য প্রকাশ পেয়েছে প্রতিবেদনের এ অংশে–“বাংলা একাডেমির নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় জাহানারা ইমামসহ কয়েকজনের ব্যক্তিগত বইয়ের সংগ্রহ এখনো আছে। সেখানে আলমারির ওপর নাম লিখে রাখা আছে, কার সংগ্রহ কোনটি। তার কিছু বই–ই বিক্রি করা হয়েছে।” এ অংশ, বিশেষত শেষ লাইনটি পড়লে যে কারো মনে হবে, আলমারিতে রাখা বইগুলো থেকে কিছু বই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা উপরে ব্যাখ্যা করেছি যে, ঘটনা এর ধারেকাছেও কিছু নয়।’

মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘প্রতিবেদক ছাঁটাই কমিটি সম্পর্কেও মনগড়া তথ্য দিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার বাংলা একাডেমির গ্রন্থাগার বিভাগের ছিল বলে জানান ওই উপকমিটির সদস্য রেজিনা আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোন বইটি বাতিল করা হবে বা সংরক্ষণযোগ্য না, সে সিদ্ধান্ত নেয় গ্রন্থাগার বিভাগ।” আসলে যাচাই-বাছাই না করে স্রেফ একজন সদস্যের কথার ভিত্তিতে এখানে যা বলা হয়েছে, তা মোটেই সত্য নয়। আমি এখানে ১৭/৭/২০১৪ তারিখ বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় অনুষ্ঠিত ছাঁটাই উপকমিটির ষষ্ঠ সভার উপস্থিতিপত্র যোগ করছি। কমিটি গঠিত হওয়ার এক মাসের মধ্যে এতগুলো সভায় সদস্যগণ বই বাছাইয়ের কাজ করেছিলেন বলে গ্রন্থাগারের তখনকার কর্মী এবং ছাঁটাই কমিটির একজন সদস্য নিশ্চিত করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এ কমিটি পরে আরো বহুদিন কাজ করেছেন। যদি তাঁরা বই বাছাইয়ের কাজই না করবেন, তাহলে এতগুলো সভা কেন হলো?”

তিনি বলেন, ‘আমি এ প্রতিবেদককে ২০১৪ সালে গঠিত কমিটির রিপোর্টসহ আরো লিখিত তথ্য দিয়েছি। এবং অনুরোধ করেছি, তিনি যেন সরেজমিন ব্যাপারটা দেখেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর এত সময় নেই। স্পষ্টতই খুব স্পর্শকাতর একটি ইস্যুকে পুঁজি করে “ভাইরাল” প্রতিবেদন প্রণয়নই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। তার অন্যতম প্রমাণ এই যে, আহমদ শরীফ, সিকান্‌দার আবু জাফরসহ আরো কয়েকজনের বই পাওয়া গেলেও তিনি সে তথ্যটিকে উচ্চকিত হতে দেননি। আমরা সংবাদমাধ্যম এবং আগ্রহী সকলকে অনুরোধ করব, তাঁরা যেন বাংলা একাডেমির গ্রন্থাগারে এসে সংগ্রহশালা দেখেন। তাহলেই বোঝা যাবে, বহু বছর আগে এ সংগ্রহশালার যে তালিকা নির্দিষ্ট করা হয়েছিল, তা অক্ষত আছে। জাহানারা ইমামসহ আমাদের দেশের শ্রদ্ধেয় মানুষদের বেশ কিছু বই বাংলা একাডেমির সিলসহ নীলক্ষেতে কিংবা অনলাইন প্লাটফর্মে বিক্রি হচ্ছে–এ ঘটনায় নিঃসন্দেহে বাংলা একাডেমির দায় আছে। কিন্তু বহু বছর আগে ঘটে যাওয়া একটা দায় কৌশলে বহুগুণ বাড়িয়ে বর্তমান প্রশাসনের ওপর বর্তানো নিশ্চয়ই সুরুচির পরিচয় নয়, সাংবাদিকতার তো নয়ই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত, অবস্থান কর্মসূচি চলবে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান পালন করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান পালন করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারের আশ্বাসে কর্মবিরতির কর্মসূচি ‘আপাতত’ স্থগিত করেছেন আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা। তবে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে।

সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আজ রোববার (৯ নভেম্বর) রাতে এ তথ্য জানান প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ। তিনি বলেন, আগামীকাল সোমবার বিকেল ৫টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবার বৈঠক হবে। সরকারের আশ্বাসে আপাতত কর্মবিরতি কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তবে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চলবে।

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর গতকাল শনিবার কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ফলে দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে আজ বন্ধ ছিল পাঠদান কার্যক্রম।

কর্মবিরতির পাশাপাশি প্রধান কর্মসূচি হিসেবে রাজধানীর শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকেরা। এ সময় তাঁরা ‘পুলিশের হামলার প্রতিবাদে’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের পদত্যাগ দাবি করেন।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বিকেলে বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালাব। তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না করা, শাহবাগে নিরীহ শিক্ষকদের ওপর অতর্কিতে হামলা, রাবার বুলেট, জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে শত শত শিক্ষককে আহত করার দায় হিসেবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছি।’

শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ১১৪ নম্বর ওমর ব্যাপারীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ‘দাবি আদায় বা কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত লাগাতার ক্লাস বর্জন করে কর্মবিরতি পালন করা হবে। শিক্ষকদের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

বরিশালের হিজলা উপজেলার পশ্চিম চরবাউশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ হাসান মাহমুদও জানিয়েছেন কর্মবিরতি চলার কথা।

এদিকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেকাংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছে। এ মোর্চাভুক্ত সংগঠনগুলোর শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন না।

দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও শিক্ষকদের বাকি দুটি দাবি হলো চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা। দাবি আদায়ে শনিবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ‘কলমবিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় শাহবাগ থানার সামনে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস শেল নিক্ষেপে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় শতাধিক আহত হওয়ার দাবি করেন শিক্ষকেরা।

পরে শহীদ মিনারে ফিরে এসে আজ থেকে কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষকেরা। আর শনিবার মধ্যরাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে শিক্ষকেরা ‘পুলিশের হামলার’ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন দুই ধাপ বাড়িয়ে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বছরে অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ৮৩১ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে লিখিতভাবে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তার আগে একই প্রস্তাব অর্থ বিভাগেও পাঠানো হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কাজের গুণগত ও পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বাড়িয়ে ১০তম করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সম্মতি দিয়েছেন। তাই যৌক্তিকতা বিবেচনা করে সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১১তম গ্রেডে উন্নীত করা প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত