Ajker Patrika

মহামারিতে কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন, ঠিকাদারদের টাকা দ্রুত দেওয়ার সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
মহামারিতে কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন, ঠিকাদারদের টাকা দ্রুত দেওয়ার সুপারিশ

করোনাভাইরাসের মহামারির সময় জরুরি ভিত্তিতে সাড়ে তিনশ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সুরক্ষা সামগ্রী কেনা হয়। এই কেনাকাটার ঠিকাদারদের টাকা দ্রুত পরিশোধ করতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। 

রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম গণমাধ্যমকে বলেন, করোনার শুরুতে জরুরি ভিত্তিতে কেনাকাটা হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদারদের সেই টাকা পরিশোধ হয়নি। 

তিনি বলেন, ‘এখন বলছে, ওই সময় নিয়ম না মেনে কেনাকাটা হয়েছে। কিন্তু যারা সরবরাহকারী তারাতো মালপত্র দিয়েছে। তাদেরতো দোষ নেই। আমরা বলেছি আমলাতান্ত্রিকতা না করে টাকা দিয়ে দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত উল্লেখ করে সভাপতি বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় এখানে আপত্তি দিচ্ছে। আমরা বলেছি, তার কাছে একটা চিঠি পাঠাতে। তিনি যেভাবে বলবেন টাকা সেভাবে পরিশোধ করতে হবে।’

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রথম তিন মাসে (২০২০ সালের মার্চ-মে) সরকারের কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) জন্য ৩৫৪ কোটি টাকার সুরক্ষা সামগ্রী কেনা হয়। সে সময় ৫৭ প্যাকেজে এসব সুরক্ষা, করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসাসামগ্রী কেনা হয়। এর মধ্যে ৩৪৩ কোটি টাকা গত বছরের ১২ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয় সিএমএসডিকে সরবরাহকারীদের দেওয়ার জন্য বরাদ্দ দেয়। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সঠিক কোনো নির্দেশনা না দেওয়ায় সিএমএসডি সেই অর্থ সরবরাহকারীদের দিতে পারছে না।

জানা গেছে, সিএমএসডির সাবেক পরিচালক প্রয়াত মোহম্মদ শহীদুল্লাহর সময় হওয়ায় এসব কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগ এনে সে সময়ের সব ধরনের সরবরাহের বিল আটকে দেন পরের পরিচালক আবু হেনা মোর্শেদ জামান। তাঁর মূল অভিযোগ, এসব কেনাকাটায় বিধিবিধান ঠিকমতো অনুসরণ করা হয়নি।

এসব অভিযোগ তদন্ত করে বিল পরিশোধের ব্যাপারে সিএমএসডিকে সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সিএমএসডির পক্ষ থেকে গত বছর তিনটি চিঠি দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি এবং ২ ও ২৩ মে দেওয়া চিঠিতে কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগ, ব্যাখ্যা এবং সমাধানে নির্দেশনা চায় সিএমএসডি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনো চিঠিরই উত্তর দেয়নি মন্ত্রণালয়।

পরে এ নিয়ে তদন্তও শুরু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই ঠিকাদারেরা সংসদীয় কমিটির কাছেও তাঁদের দাবির কথা জানান। এর আগে সংসদীয় কমিটি বিষয়টি একবার আলোচনাও করে। তবে তা নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

বৈঠকে শেষে শেখ সেলিম বলেন, ‘ওই সময় যদি অনিয়ম হয়, তাহলে সেটাতো সরবরাহকারীরা করেনি। তাহলে তাদের টাকা কেন আটকে রাখবে? আমরা সেটাই বলেছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও এই টাকা দিয়ে দিতে চান। অনিয়ম যদি হয়ে থাকে সেটা সিএমএসডি করেছে। সরবরাহকারীরাতো করেনি। তাহলে তাঁদের টাকা আটকে রাখবে কেন?’

সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে করোনার শুরুতে যেসব প্রতিষ্ঠান সিএমএসডিতে মালামাল সরবরাহ করেছে তাদের বিল পরীক্ষা নিরীক্ষা পূর্বক দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

এদিকে গোপালগঞ্জে এসেনশিয়াল ড্রাগসের প্ল্যান্টে টিকা উৎপাদন ও বোতলজাত করার প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) আগ্রহী বলে জানান কমিটির সভাপতি। তিনি বলেন, ‘এডিবি পরিদর্শন করে এসেছে। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা মিটে গেছে। আমরা বলেছি দ্রুত যাতে বোতলজাত শুরু করতে পারি সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন যদি কনসালট্যান্ট নিয়োগ করে, টেন্ডার করে শুরু করে তাহলে আরও দেরি হবে। আমরা বলেছি দ্রুত করার জন্য কোনো প্রক্রিয়া থাকলে সেটা অনুসরণ করতে হবে।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ছাড়া গোপালগঞ্জে টিকা তৈরি এবং গবেষণা প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠার অগ্রগতির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়।

কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, আ ফ ম রুহুল হক, মুহিবুর রহমান মানিক, মনসুর রহমান, আব্দুল আজিজ, সৈয়দা জাকিয়া নুর, আমিরুল আলম মিলন উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত