Ajker Patrika

দখিনা দুয়ার খুলছে আজ

রাশেদ নিজাম, ঢাকা
আপডেট : ২৫ জুন ২০২২, ১০: ৩৫
দখিনা দুয়ার খুলছে আজ

সেদিনও ছিল শনিবার, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। যেদিন পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান বসেছিল। আজ ২৫ জুন ২০২২, কাকতালীয় হলেও আবার সেই শনিবার। এ যাত্রার শুরুতে বোধ হয় শনিই ভর করেছিল। কিন্তু প্রমত্তা নদীর পানি যেভাবে সব নুড়িপাথর নিচে ফেলে এগিয়ে যায় সমুদ্রের দিকে, সেভাবেই কেটে গেছে শনির দশা, পদ্মাকে রুখতে চাওয়ার ষড়যন্ত্রও। পদ্মার-এ প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত এখন ছোঁয়া যাবে হাওয়ার বেগে, তা-ও সড়ক, রেল একই সঙ্গে।

২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ ৪১ নম্বর স্প্যানটি বসানোর আগে প্রতিটি স্প্যানের ভাঁজে ভাঁজে জমা পড়েছিল হাজারো গল্প। কত মা সন্তানকে ঠিক সময়ে হাসপাতালে নিতে পারেননি, বাবার মরদেহটা

দেখা হয়নি শেষবারের মতো, নবজাতক সন্তানের মুখটা দেখতে নদী পার হওয়ার অপেক্ষা। বোনের বিয়ে, চাকরির পরীক্ষা মিস করা। বছরের পর বছর সেই মন খারাপের গল্পগুলো নতুন করে লিখবে একটি সেতু, যার নাম পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের সেই স্বপ্নের সেতুর শুভ উদ্বোধন আজ।

বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ, অর্থায়ন থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সরে যাওয়া, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগ, বাংলাদেশের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরির ঘোষণা—সবই এখন ইতিহাস। পদ্মায় হচ্ছে না সেতু, সেই সমালোচকদের জবাব দিচ্ছে খোদ স্থাপনাই। এ খবর যখন পাঠকের হাতে যাবে, ততক্ষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করে ফেলেছেন। তবে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের গর্বের পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলবে কাল থেকে।

 ২০০১ সালের ৪ জুলাই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই আজ সকাল ১০টায় পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশের পর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন পদ্মা সেতুর। এরপর জাজিরা প্রান্তে হবে জনসভা। জমকালো এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে আয়োজন করা হয়েছে সুধী সমাবেশের। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য ৩ হাজার ৫০০ জনের মতো অতিথিকে দাওয়াত দিয়েছে সেতু বিভাগ। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কর্মকর্তারা থাকবেন। বিদেশি রাষ্ট্রদূত, সরকারি আমলা, রাজনৈতিক নেতারা, বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ নানা উন্নয়ন-সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া থাকছেন সেতুর কাজে যুক্ত থাকা বিদেশি এবং দেশের বড় বড় প্রকৌশলী। সেতু বিভাগের পরিচালক (প্রশাসন) মো. রুপম আনোয়ার বললেন, গর্বের দিনে এই অতিথিরা উপস্থিত থেকে সাক্ষী হবেন নতুন ইতিহাসের।

স্বপ্ন দেখা শুরু
১৯৯৮ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বুনেছিলেন এই স্বপ্নের বীজ। তবে শুরুতে এ যাত্রা ছিল বন্ধুর। বিশ্বব্যাংক ২০১২ সালের ৩০ জুন পদ্মা সেতুর ১২০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার চুক্তি বাতিল করে। তাদের দেখাদেখি নিজেদের সরিয়ে নেয় জাইকা, এডিবি ও আইডিবি। ঋণদাতাদের চাপ, দেশে-বিদেশে নানা সমালোচনার মুখে সরিয়ে দেওয়া হয় ওই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের দিকেও অভিযোগের আঙুল ওঠে। প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের নাম কাটা পড়ে। ওই সময়ের সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌসকে যেতে হয় কারাগারে। মাঠে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরাও আসে তদন্তে। এরপর ২০১২ সালের জুলাইতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করবে বাংলাদেশ। সারা বিশ্ব অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে—পারবে তো বাংলাদেশ?

২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর শুরু হলো পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। পদ্মা সেতু নির্মাণে সবচেয়ে বড় জটিলতা তৈরি হয়েছিল এর পাইল ড্রাইভিং নিয়ে। সেতুর কাজ শুরুর পর দেখা গেল, নদীর নিচে মাটির যে স্তর পাওয়া গেছে, তা পিলার গেঁথে রাখার উপযোগী নয়। এ অবস্থায় দুটি বিকল্প রয়েছে। প্রথমত, পাইল নিয়ে যেতে হবে আরও গভীরে। কত গভীরে? ১৩০ মিটার। বাকি থাকে দ্বিতীয় বিকল্প। আর তা হলো—গভীরতা কমিয়ে পাইলের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া। গোটা বিশ্বে এই পদ্ধতি প্রয়োগের নজির খুব একটা নেই।

পৃথিবীর অন্য কোথাও কোনো সেতুতে ১২০ থেকে ১২২ মিটার গভীরে পাইল প্রবেশ করাতে হয়নি। এর মধ্যে সর্বোচ্চটি ১৫০ দশমিক ১২ মিটার বা ৪৯২ দশমিক ৫ ফুট। অর্থাৎ, সেতুটি নির্মাণের জন্য এমনকি প্রায় ৫০ তলা ভবনের উচ্চতার সমান দৈর্ঘ্যের পিলার স্থাপন করতে হয়েছে।

আরেকটি রেকর্ড হলো এতে ব্যবহৃত বেয়ারিং। পদ্মা সেতু নির্মাণে পিলার ও স্প্যানের মাঝে প্রতিটি ১০০ টন ওজনের ৯৬টি বিয়ারিং ব্যবহৃত হয়েছে। বিশ্বে এর আগে এত বড় বিয়ারিং আর কোনো সেতুতে ব্যবহার করা হয়নি। এখন রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকবে সেতুটি।

নদীশাসনের কাজেও হয়েছে রেকর্ড। এই সেতু নির্মাণে ১৪ কিলোমিটার এলাকা নদীশাসনের আওতায় আনা হয়েছে। ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের এই নদীশাসনের কাজটি করেছে চায়না সিনোহাইড্রো করপোরেশন। কোনো সেতু নির্মাণে নদীশাসনের জন্য এখন পর্যন্ত এত বড় চুক্তি আর কোথাও হয়নি।

পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত ক্রেনটিও রেকর্ড করেছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পিলারের ওপর স্প্যান বসাতে যে ক্রেনটি ব্যবহৃত হয়েছে, সেটি আনা হয়েছে চীন থেকে। প্রতি মাসে এর ভাড়া বাবদ গুনতে হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। সাড়ে তিন বছরে মোট খরচ হয়েছে ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিশ্বে এই প্রথম কোনো সেতু নির্মাণে এত দীর্ঘ সময় ক্রেনটি ভাড়ায় থেকেছে। ক্রেনটির বাজারদর ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

মূল সেতুতে ৩০টি উপকরণের ব্যবহার বেশি হয়েছে। পদ্মা সেতুতে সিমেন্ট লেগেছে আড়াই লাখ টনের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশে তৈরি রড ব্যবহৃত হয়েছে ৯২ হাজার টনের বেশি। সেতুতে বালু লেগেছে সাড়ে তিন লাখ টন। বিদ্যুৎ-ব্যবস্থার জন্য সোয়া ৪ কোটি লিটার ডিজেল পোড়ানো হয়েছে। বিটুমিন লেগেছে দুই হাজার টনের বেশি। দেশে তৈরি বিদ্যুতের কেব্‌ল ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় পৌনে তিন লাখ মিটার এবং পাইপ ১ লাখ ২০ হাজার মিটার। পদ্মা সেতুর পাইলিংয়ের ওপরের অংশে মাটিকে বেশি ওজন বহনে সক্ষম করতে একধরনের বিশেষ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়, যাকে মাইক্রোফাইন বা অতি মিহি সিমেন্ট বলা হয়। সিঙ্গাপুর থেকে আনা ২ হাজার টন এই সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। কংক্রিটের পথের ওপর প্রথমে দুই মিলিমিটারের পানিনিরোধক একটি স্তর বসানো হয়েছে, যা ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন নামে পরিচিত। ৫৬০ টন পানিনিরোধক উপকরণ এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। সেতুর পাশে রেলিংয়ের অ্যালুমিনিয়ামও এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে।

যেকোনো সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেই এতে চলাচলকারী যানবাহনের নিরাপত্তা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোথাও ধাতব রেলিং দিয়েই কাজ সারা হয়। আবার কোথাও ব্যবহার করা হয় কংক্রিটের দেয়াল। বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন হলে সাধারণত কংক্রিটের দেয়ালকেই বেছে নেওয়া হয়, যাকে প্রকৌশলের ভাষায় প্যারাপেট ওয়াল বলে। পদ্মা সেতুতে এই প্যারাপেট ওয়াল ব্যবহার করা হয়েছে।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুর দুই পাশে এমন দেয়াল রয়েছে মোট ১২ হাজার ৩৯০টি। সঙ্গে অবশ্য স্টিলের রেলিংও বসছে। পদ্মা সেতুর মূল কাঠামোর পাশাপাশি সেতুর ভায়াডাক্টেও এই প্যারাপেট ওয়াল আছে। শুধু সেতুর সড়কপথেই নয়, নিচের রেললাইনের দুই পাশেও একই ধরনের প্যারাপেট ওয়াল বসানো হয়েছে।

শ্রমিক-প্রকৌশলীসহ প্রায় ১২ হাজার কর্মীর মেধা ও শ্রমে তৈরি হয়েছে পদ্মা সেতু। যদি দেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটি ধরা হয়, তার অর্ধেকের উপকারে এলেও সাড়ে সাত শ মানুষের স্বপ্নপূরণের জন্য শ্রম দিয়েছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করা একেকজন মানুষ।

সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, সেতুর কাজ শুরুর পর এক দিনের জন্যও নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়নি। লোকবলের মধ্যে চীনের শ্রমিক-প্রকৌশলী ছিল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ জন। এর বাইরে সবাই ছিলেন বাংলাদেশের।

পদ্মা সেতু রিখটার স্কেলে প্রায় ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে। ধাক্কা সামলানোর শক্তি আছে চার হাজার ডেড ওয়েট টনেজ (ডিডব্লিউটি) ক্ষমতার জাহাজেরও। এমনকি ৬২ মিটার মাটি সরে যাওয়া, আট মাত্রার ভূমিকম্প ও জাহাজের ধাক্কা—এই তিনটি একসঙ্গে ঘটলেও সেতুর কোনো সমস্যা হবে না। 

মাওয়ায় হবে পদ্মা সেতু জাদুঘর
পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য মানুষের সামনে তুলে ধরতে এর মাওয়া প্রান্তে নির্মাণ করা হবে জাদুঘর, যার নাম হবে ‘পদ্মা সেতু জাদুঘর’। এ জাদুঘরের জন্য এরই মধ্যে দুই হাজারের বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী বছর এই জাদুঘরের নির্মাণকাজ শুরু হবে।

যোগাযোগের অপার সম্ভাবনা 
পদ্মা সেতু নির্মাণে যে ব্যয় হয়েছে, এই স্থাপনার কারণে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে তিন গুণ অর্থ যোগ হবে বলে হিসাব দেখিয়েছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান। ২১ জুন জাতীয় অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব শীর্ষক অর্থনীতিবিদদের সংলাপে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু হবে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এই সেতুর ফলে আমাদের জিডিপিতে অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে।’

দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন আলো নিয়ে এসেছে পদ্মা সেতু। সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ১৩টি দারিদ্র্যপীড়িত জেলার উন্নয়ন বেগবান হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার ৩ কোটি মানুষ সরাসরি উপকার পাবেন। দৈনিক এই সেতু দিয়ে পার হতে পারবে ৭৫ হাজার যানবাহন।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা সেতু প্রকল্পে বাংলাদেশসহ অন্তত ২০টি দেশের মানুষ সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ১০টি দেশের বিপুল উপকরণ এবং প্রায় ৫০টি দেশের কিছু না কিছু উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। এসব দেশের মানুষেরাও জানবেন বাংলাদেশের স্বপ্ন এবং বাস্তবতার গল্প। যে গল্পের নাম পদ্মা সেতু। 

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পদায়নের জন্য রাজনৈতিক পদলেহন করবেন না—বিদায়ী ভাষণে বিচারকদের প্রধান বিচারপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ফাইল ছবি
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ফাইল ছবি

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, পছন্দসই পদায়নের জন্য রাজনৈতিক পদলেহন পরিহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আইন বৃহত্তর রাজনীতির একটা অঙ্গ হলেও বিচারকদের রাজনীতির উর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস রপ্ত করতে হয়। কেবল ক্ষমতাবান শাসকশ্রেণির পক্ষে প্রয়োজনীয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব নিলে বিচার বিভাগের আলাদা কোনো অস্তিত্বেরই প্রয়োজন নেই। সে কাজের জন্য নির্বাহী বিভাগ ও পুলিশই যথেষ্ট। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ভিত্তি যে আদর্শকেই ধারণ করে গড়ে ওঠুক না কেন, বিচারকদের সুনীতি ও সুবিবেচনা বজায় রেখে কাজ করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে আজ রোববার জেলা ও মহানগর দায়রা জজ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে দেওয়া বিদায়ী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তারা।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গত বছরের ১১ আগস্ট ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন রেফাত আহমেদ। অবসর নেওয়ার আগে আজ বিদায়ী ভাষণ দেন তিনি। ২৭ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন রেফাত আহমেদ।

প্রধান বিচারপতি বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, অসৎ ও অসাধু বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচারকদের দ্বারা সৃষ্ট যাবতীয় অন্যায়ের জন্য এখন থেকে অন্যের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ বন্ধ করতে হবে। জনগণের জন্য সংক্ষিপ্ত সময়ে সুবিচার নিশ্চিত করতে শতভাগ দায়িত্ব পালন করতে হবে। শুনানিকালে কোনো বিশেষ পদবিধারী ব্যক্তি বা ক্ষমতাবান পক্ষকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া বিচারকের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়।

সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘এই পৃথক সচিবালয় (সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়) প্রতিষ্ঠার কোনো স্বার্থকতা নেই, যদি না আমরা ব্যক্তিগত অসততার ব্যাপারে সতর্ক থাকি। একটি স্বাধীন সচিবালয় কেবল শুরু, সর্বশেষ উদ্দেশ্য নয়। আপনাদের উচিত, সততা আর যোগ্যতার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়া। অনুপার্জিত অর্থের বাসনা, অন্যায্য বিলাসী জীবন এবং অসংগত ক্ষমতার প্রতিপত্তি যদি আমাদের মনকে কলুষিত করে রাখে, তাহলে পৃথিবীর কোনো আইনি বিধানই আমাদের সামষ্টিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারবে না।’

বিচারকদের উদ্দেশে রেফাত আহমেদ আরও বলেন, ‘উন্নত জীবনমান ও কর্মপরিবেশের প্রতি প্রত্যাশা কখনোই ব্যক্তিগত ভোগ, আত্মতুষ্টি কিংবা সামাজিক মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্য হতে পারে না। এর অন্তরে থাকতে হবে বিচারিক সক্ষমতার উন্নয়ন, জ্ঞানচর্চার সম্প্রসারণ এবং উচ্চমানের কর্মদক্ষতা অর্জনের সৎ প্রেরণা। এটি অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ সংস্কৃতি এখনো কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায়নি। প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আমরা এখনো একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারিনি। তবে বিদ্যমান সুযোগের ন্যূনতম সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বিচারকদের বড় অংশের অনীহা ও কার্পণ্য পরিলক্ষিত হয়। তাই আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ—জ্ঞান অর্জন ও পাঠাভ্যাসকে আপনারা জীবনের পরম দায় হিসেবে নেবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কা থাকলেও ভোট নিয়ে শঙ্কা দেখছে না ইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. সানাউল্লাহ। ছবি: বাসস
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. সানাউল্লাহ। ছবি: বাসস

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনার পর আরও চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কা দেখছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এতে নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই বলে জানানো হয়েছে।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

সানাউল্লাহ বলেন, ‘আজকে একটা বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের ডেকেছিলাম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এতে তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই পর্যন্ত উদ্ভূত বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। সামনের আমাদের কার্যক্রম এবং কৌশল কী হওয়া উচিত—সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি এবং তাঁদের বিভিন্ন মত শুনেছি।’

সানাউল্লাহ আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময় একটা ঘটনা, যেটা আমাদের সবার সবাইকে উদ্বিগ্ন করেছে। শরিফ ওসমান হাদির ওপরে চোরাগোপ্তা হামলা। সেটা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত বলছি না। সেখানকার আরও কিছু বিষয় সম্বন্ধে আমরা অবহিত হয়েছে। যেগুলোর সাথে নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনের স্বার্থ জড়িত।’

সানাউল্লাহ বলেন, ‘এখানে কয়েকটা বিষয় উঠে এসেছে যে ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হচ্ছে সন্দেহভাজন হিসেবে। তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই একটা সখ্যতা গড়ে তুলে অত্যন্ত কাছে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে যে তার একটা অতীত আছে, পেছনে তার একটা রাজনৈতিক ইন্টারেসিডেন্স (মধ্যস্থতা বা হস্তক্ষেপ) আছে এবং তার একটা ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে। সেটা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে আমরা জানতে পারলাম যে রেবেল হান্ট বিশেষ করে—এক শুরু হওয়ার পর থেকে যেসব সন্ত্রাসীদের অ্যারেস্ট করা হয়েছিল, তাদের একটা বড় সংখ্যা ইতিমধ্যে জামিন পেয়ে গেছে এবং তারা সমাজে বিরাজ করছে। এটা নিয়ে আমাদের কী করণীয়—সেটা নিয়ে আমরা কথা বলেছি।’

দেশে চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সামনেও যে এটা সম্ভাবনা নাই, তা-ও বলছি না। আজকের মূল উদ্দেশ্য ছিল যাতে করে এই ধরনের হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে বা এগুলো যাতে কঠোর হস্তে দমন করা হয় ... নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মেসেজ ইজ ভেরি ক্লিয়ার। নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা নাই।’

প্রার্থীদের বৈধ অস্ত্র ও লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য নজরে আনলে এই নির্বাচন কমিশনার বলে, ‘আমার সাথে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কমিশনের সাথে কোনো আলোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নাই। উনি কী মন্তব্য করেছেন, কোন প্রেক্ষাপটে করেছেন, আমি যদি জানি পরে আমি আলোকপাত করতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে স্কাই ডাইভিং করবেন আশিক চৌধুরী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি আঁকা হেলমেট হাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি আঁকা হেলমেট হাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ

মহান বিজয় দিবসের ৫৪তম বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন উপলক্ষে ৫৪টি জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ৫৪ জন প্যারাট্রুপার। এই দলে থাকবেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে স্কাই ডাইভিং করবেন তিনি।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এই তথ্য জানানো হয়।

পোস্টে বলা হয়, ‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে প্যারাট্রুপিং করে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। এই ৫৪ জনের একজন আশিক চৌধুরী জাম্প করবেন ওসমান হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে। বিজয়ের দিনে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় সকলকে দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানাই।’

এদিন একই পেজে দেওয়া আরেক পোস্টে বলা হয়, ‘এই বিজয় দিবসে চলে আসুন দলে দলে, এক অবিস্মরণীয় এয়ার শো দেখতে। বিজয়ের ৫৪তম বছরে, ৫৪ জন প্যারাট্রুপার, ৫৪টি জাতীয় পতাকা হাতে বিমান থেকে অবতরণ করবেন, গড়বেন বিশ্ব রেকর্ড। এয়ার শো উপভোগ করতে ব্যবহার করবেন আইডিবির উল্টো পাশের তালতলা গেট। গেট খোলা হবে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৮টায়। ১০টার মধ্যেই সবাইকে নির্ধারিত স্থানে সমবেত হওয়ার অনুরোধ করা যাচ্ছে।’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গত সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদ্‌যাপনে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার পতাকা হাতে স্কাই ডাইভিং করবেন। এটি হবে বিশ্বের বুকে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং, যা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে পুলিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে পুলিশ

আসন্ন এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল সরবরাহ করবে পুলিশ।

আজ রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

এতে বলা হয়, এই প্রটোকলে রাজনৈতিক নেতা ও আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাঁদের বাসস্থান, কার্যালয়, চলাচল, জনসভা ও সাইবার স্পেসে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন—সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে।

এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারির নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত