Ajker Patrika

ভোটের তফসিলের আগে ডিসি পদায়ন

  • যুগ্ম সচিব হলেও ২১ ডিসিকে তিন মাসেও প্রত্যাহার করা হয়নি
  • রদবদলে জনপ্রশাসন-বিষয়ক কমিটির দিকে তাকিয়ে মন্ত্রণালয়
  • তফসিলের আগে ডিসি-ইউএনওদের ব্যাপক রদবদলের গুঞ্জন
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫, ১৫: ৩৯
ভোটের তফসিলের আগে ডিসি পদায়ন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে মাঠ প্রশাসন ঠিক করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। এমনটাই ধারণা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের। তাঁরা বলছেন, এমন ভাবনার কারণেই ২১ জন জেলা প্রশাসক (ডিসি) তিন মাস আগে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেলেও তাঁদের ডিসি পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়নি। মাঠ প্রশাসনে রদবদলের কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না।

ডিসি পদায়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একক কর্তৃত্ব বর্তমানে নেই। অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জনপ্রশাসন-বিষয়ক কমিটির মতামত ছাড়া মন্ত্রণালয় ডিসি পদে রদবদল করতে পারবে না। এই কমিটি পদোন্নতি পাওয়ার পরও ডিসিদের আগের পদে সর্বোচ্চ কত দিন বহাল রাখা হয়েছিল, সেই তথ্যও মন্ত্রণালয় থেকে নিয়েছে। মন্ত্রণালয় ডিসি রদবদলে তাকিয়ে আছে কমিটির সিদ্ধান্তের দিকে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয়ের অনেক বিষয় ঝুলে থাকলেও উপদেষ্টাদের ব্যস্ততার কারণে জনপ্রশাসন কমিটির সভা ঠিকমতো হচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময়কে আমলে নিয়ে ডিসি-ইউএনও পদে ব্যাপক রদবদল করা হবে। কারণ, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনসংশ্লিষ্ট মাঠ প্রশাসনের সব পদায়ন-বদলির একক এখতিয়ার থাকবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, লন্ডনে গত শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী, সবকিছু সম্পন্ন হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে আগামী ডিসেম্বরে। সে হিসাবে তফসিলের বাকি আছে ছয় মাস। তাই আরেকটু অপেক্ষা করে ডিসিসহ মাঠ প্রশাসনে রদবদল করতে চায় সরকার।

দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া আজকের পত্রিকা'কে বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে আগে মাঠ প্রশাসনে রদবদল নিরপেক্ষ নির্বাচন কতটুকু নিশ্চিত করবে, সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার থাকবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। তবে কোনো ডিসিকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আপত্তি জানালে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারবে। সরকার এবং নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, এরা না চাইলে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না।

প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিব বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। জাতীয় নির্বাচনে বিভাগীয় শহরে বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলায় ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণত কোনো ডিসি যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেলে তাঁকে আর ওই দায়িত্বে রাখা হয় না। সর্বশেষ গত ২০ মার্চ যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। ডিসির দায়িত্বে থাকা ২১ কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব হয়েছেন। সূত্র জানায়, এই ২১ ডিসি এবং ২৪তম বিসিএস ব্যাচের পাঁচ কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে প্রত্যাহার করতে জনপ্রশাসন-বিষয়ক কমিটির কাছে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ (এপিডি উইং)। কিন্তু কমিটি এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর এর আগে ডিসিদের সর্বোচ্চ কত দিন পর্যন্ত আগের দায়িত্বে রাখা হয়েছিল সেই তথ্য চেয়েছিল জনপ্রশাসন-বিষয়ক কমিটি। মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, যুগ্ম সচিব হওয়ার পর কয়েকজনের ১০ মাস পর্যন্ত ডিসির দায়িত্বে থাকার নজির আছে। এরপর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ডিসিদের প্রত্যাহারের বিষয়টি আর এগোয়নি।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সব সরকারই ডিসি পদে দেখেশুনে পদায়ন করে। অন্তর্বর্তী সরকার দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদেরই ডিসি পদে পদায়ন করতে চাইবে। তবে এ ক্ষেত্রে কারও ব্যক্তিগত পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। তিনি শুনেছেন ডিসি পদায়ন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ব্যাপক চাপ রয়েছে।

বর্তমানে ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৩ কর্মকর্তা ডিসির দায়িত্বে আছেন। ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ডিসি নিয়োগ দিতে তাঁদের ফিট লিস্টও তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে জনপ্রশাসন-বিষয়ক কমিটির সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় ডিসি পদে রদবদল করতে পারেনি।

জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, যুগ্ম সচিব ও তার ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দিতে অর্থ উপদেষ্টাকে প্রধান করে গত ৮ জানুয়ারি জনপ্রশাসন-বিষয়ক কমিটি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

ডিসি পদায়নের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।’

ডিসি পদে একজন কর্মকর্তাকে কত দিন রাখা যাবে, সে বিষয়ে কোনো নিয়ম নেই। ফলে সরকার চাইলেই যেকোনো সময় যেকোনো ডিসিকে পদ থেকে প্রত্যাহার করতে পারে বা রেখে দিতে পারে। বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডিসি পদে ব্যাপক রদবদল করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এতে নিয়োগের এক মাসের মধ্যেও কাউকে কাউকে ডিসির পদ থেকে প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেছিল।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া আজকের পত্রিকা'কে বলেন, জনপ্রশাসন-বিষয়ক কমিটি মতামত না দেওয়ায় মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তিনি বলেন, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ডিসিরা বদলির অপেক্ষায় থাকায় আগের মতো কাজ করতে পারছেন না। গুরুত্বপূর্ণ কাজে হাত দিয়ে শেষ করতে পারবেন না মনে করে সেসবে হাত দিচ্ছেন না। আবার নতুন কোনো কাজে কেউ বিরাগভাজন হলে খারাপ পোস্টিং বা ওএসডি হওয়ার শঙ্কাও তাঁদের মধ্যে রয়েছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের সুযোগ দিল ইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দাবি-আপত্তি শেষে ১৮ নভেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। নতুন করে আর ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা না হলেও ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার সুযোগ দিয়েছে ইসি।

ঠিকানা পরিবর্তন করে স্থানান্তর হতে চাইলে ১০ নভেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তাদের ১৭ নভেম্বরের মধ্যে আবেদনগুলো অনুমোদন বা বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি সব উপজেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠির অনুলিপি ইসি সচিবালয়সহ মাঠপর্যায়ের সকল কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।

আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে ভোটার স্থানান্তরের আবেদন নিষ্পত্তি সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার আগে আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে ভোটার স্থানান্তরের আবেদন দাখিল ও দাখিলকৃত আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করতে বিস্তারিত সময়সূচি অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে হলে ১৩ নম্বর ফরম পূরণ করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হয়।

এদিকে মাঠপর্যায়ে পাঠানো আরেকটি নির্দেশনায়, প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধনের আবেদন আগামীকালের বৃহস্পতিবার মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী) খান আবি শাহানুর খান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি সব আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান। যেসব প্রবাসীর বায়োমেট্রিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে তাঁদের আবেদন সিএমএস পোর্টালের অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের এনআরবি মেনুতে পাওয়া যাবে। উপজেলা/থানা/রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা আবেদনকৃত ভোটার ফরম ও সংযুক্ত দলিলাদি প্রিন্ট করে সরেজমিনে তদন্ত সম্পন্ন করবেন।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসী নাগরিকেরা ভোটার রেজিস্ট্রেশনের জন্য যেসব আবেদন দাখিল করেছেন সেগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন ৬ নভেম্বরের মধ্যে আবশ্যিকভাবে তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। তবে, ১ সেপ্টেম্বর বা তার পরের আবেদনের সঙ্গে ডকুমেন্ট সংযুক্ত করা না থাকলে সেসব আবেদন রেখে প্রতিবেদন ছকে ‘ডকুমেন্ট সংযুক্ত নেই’ মর্মে উল্লেখ করতে হবে। পরবর্তীতে ডকুমেন্ট সংযুক্ত করা হলে তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন শেষে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে সংযুক্ত ছক মোতাবেক মহাপরিচালক, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ বরাবর প্রতিবেদন পাঠাতে হবে।

ডিসেম্বরের শুরুর দিকে তফসিল ঘোষণা করে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে: সেনাবাহিনী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৫
বুধবার দুপুরে সেনাসদরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সেনাসদরের ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুল রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
বুধবার দুপুরে সেনাসদরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সেনাসদরের ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুল রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের জনগণ যেমন চায়, সেনাবাহিনীও চায় সরকার ঘোষিত রূপরেখা অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। রূপরেখায় নির্ধারিত সময়সীমাও রয়েছে। নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে বলে আশা করে সেনাবাহিনী। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেনাবাহিনীও ব্যারাকে ফিরে যেতে পারবে।

আজ বুধবার দুপুরে সেনাসদরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদরের ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুল রহমান এসব কথা বলেন।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুল রহমান বলেন, সরকার যে রূপরেখা ঘোষণা করেছে, সেটির ভিত্তিতেই সেনাবাহিনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখন সীমিত পরিসরে হলেও নির্বাচনের সময়ে সেনাবাহিনীর করণীয়কে কেন্দ্র করে এর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শান্তিকালীন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হলো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। কিন্তু গত ১৫ মাস ধরে সেনাবাহিনী মাঠে দায়িত্ব পালন করছে। প্রয়োজনে নির্বাচন ও নির্বাচনের পরবর্তী কিছু সময়েও এই দায়িত্ব অব্যাহত রাখতে হতে পারে। ফলে সেনাবাহিনীর মূল প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে।

সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা গত ১৫ মাস দায়িত্ব পালন করেছি, তা একেবারেই সহজ ছিল না। বাংলাদেশ এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি প্রতিদিন হয় না। তাই আমরাও চাই, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এবং আমরা সেনানিবাসে ফিরে যাই।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেনাবাহিনীকে ঘিরে প্রচারিত বিভিন্ন গুজব প্রসঙ্গে মাইনুল রহমান বলেন, গত ১৫ মাস সেনাবাহিনী অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করেছে। এ সময় কিছু স্বার্থান্বেষী চক্র সেনাবাহিনীর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও সাজানো অপপ্রচার চালিয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য সেনাবাহিনীর প্রধান ও সিনিয়র লিডারশিপের প্রতি শতভাগ অনুগত। যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন সেনাবাহিনী আরও ঐক্যবদ্ধ, সুশৃঙ্খল এবং ভ্রাতৃত্ববোধে দৃঢ়।’

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুল রহমান বলেন, সেনাবাহিনী দেশের জনগণের সেনাবাহিনী; তাই জনগণের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় দায়িত্ব সেনাবাহিনী পালন করে যাবে।

দুদিন আগে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরপরই কিছু এলাকায় উত্তেজনা ও সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস অধিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেনকে সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন। জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্য সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করছে, ভবিষ্যতেও করবে।

নির্বাচনকালীন সরকার কিংবা নির্বাচন পেছানোর গুঞ্জনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মনজুর হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের ঘোষিত নির্দেশনা অনুযায়ী এবং নির্বাচন কমিশন যে পরিপত্র দেবে, তার আলোকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হবে—সে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান সাক্ষাৎ করেছেন। আলোচনার বিষয়বস্তু ইতিমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। আইনশৃঙ্খলা যাতে স্বাভাবিক থাকে, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করতে বদ্ধপরিকর।’

মনজুর হোসেন আরও বলেন, ‘নির্বাচনের সময় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ সেনাসদস্য মাঠে মোতায়েন থাকবে—যা এ যাবৎ সর্বোচ্চ। আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে জেলা, উপজেলা এমনকি আসনভিত্তিক ক্যাম্প স্থাপন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য যা যা প্রয়োজন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা করতে প্রস্তুত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: তদন্তে বিমান বিধ্বস্তের যে কারণ জানা গেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ১৩
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস বিফ্রিং করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস বিফ্রিং করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পাইলটের উড্ডয়নে ত্রুটির কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। তিনি বিমানটি উড্ডয়নের পর নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন।

আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।

শফিকুল আলম জানান, জননিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে ঢাকার বাইরে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পরিচালনা করার সুপারিশসহ ৩৩টি রিকমেন্ডেশন দিয়েছে তদন্ত কমিটি।

উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের হায়দার আলী ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম, স্কুলটির শিক্ষক, শিক্ষার্থী, আয়াসহ ৩৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয় শতাধিক মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার ঘোষণা পুলিশের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ২১
খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার ঘোষণা পুলিশের

‎পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে নগদ অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। উদ্ধার করা অস্ত্রের ধরন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে। ‎

আজ বুধবার পুলিশ ‎সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এলএমজি (লাইট মেশিনগান) উদ্ধার করলে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে ৫ লাখ টাকা, এসএমজি (সাব মেশিনগান) উদ্ধারে দেড় লাখ টাকা, চায়না রাইফেল উদ্ধারে ১ লাখ টাকা এবং পিস্তল বা শটগান উদ্ধারে পুরস্কার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া উদ্ধার করা প্রতিটি গুলির জন্য পুরস্কার দেওয়া হবে ৫০০ টাকা করে। ‎

‎এর আগে পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে যাঁরা পুলিশকে তথ্য দেবেন, তাঁদের পরিচয় ও তথ্য গোপন রাখা হবে এবং যথাযথ যাচাইয়ের পর পুরস্কার দেওয়া হবে।

‎সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের পর ভল্ট ভেঙে অস্ত্র লুটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত কয়েকটি ঘটনায় পুলিশের অস্ত্র ও গুলি খোয়া যাওয়ার পর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পুরস্কার ঘোষণার লক্ষ্য হলো দ্রুত এসব অস্ত্র উদ্ধার এবং অস্ত্রের অপব্যবহার ঠেকানো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত