Ajker Patrika

বিদ্যুতে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি, দল ঘনিষ্ঠদের লুটের সুযোগ

আরিফুজ্জামান তুহিন, ঢাকা
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ০৮
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে গত ১৫ বছরে ৮২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে সরকার। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধু ক্যাপাসিটি চার্জই (কেন্দ্রভাড়া) নিয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বিনা দরপত্রে কেন্দ্র দেওয়ায় বিদ্যুতের দামও পড়েছে বেশি। সেই বাড়তি দাম গিয়ে পড়েছে সাধারণ ভোক্তার কাঁধে। সরকারকেও দিতে হয়েছে বছরে গড়ে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি। আর এসব অর্থের পুরোটাই গেছে আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের পকেটে। এ নিয়ে যাতে আইনি প্রশ্ন তোলা না যায়, সে জন্য ‍২০০৯ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন প্রণয়ন করে আওয়ামী লীগ সরকার। এই আইনে দেওয়া হয় দায়মুক্তি।

ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আটটি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই ফর্মুলাকে আদর্শ ধরে ৩২টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল এবং ৪২টি ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার (আইপিপি) কেন্দ্রের অনুমতি দেয়। বিনা দরপত্রে বিশেষ বিধানে দেওয়া এসব কেন্দ্রকেও ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্রভাড়া দেওয়ার বিধান রাখা হয়। এগুলো যাঁরা পেয়েছেন তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী। কেউ কেউ দলটির সংসদ সদস্যও ছিলেন।

শীর্ষে সামিট পাওয়ার: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানের পারিবারিক ব্যবসা সামিট গ্রুপ। দেশের দুজন শীর্ষ বিদ্যুৎ উদ্যোক্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে সামিট চিনির ব্যবসা করত, সেবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে খুলনায় একটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দরপত্র আহ্বান করে। সেখানে ইউনাইটেড পাওয়ার অংশ নেয়, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় ইউনাইটেড যদি কাজটি পেতে চায় তবে সামিটকে সঙ্গে নিতে হবে। এ শর্ত মেনে খুলনা পাওয়ার কোম্পানি নামের একটি কোম্পানি (কেপিসিএল) খোলা হয়, যেখানে সামিটকে মালিকানা দেওয়া হয়। সে কাজটি কেপিসিএল পেয়েছিল; সেটাই ছিল উদ্যোক্তা হয়ে সামিটের বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঢোকার প্রথম ঘটনা।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সামিট গ্রুপ বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা বিনা দরপত্রে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি পায়। এ সময় তারা ১৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি পেয়েছে, যার সম্মিলিত ক্ষমতা ২ হাজার ১১০ মেগাওয়াট। সব থেকে বেশি ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্রভাড়া নিয়েছে সামিট। বছরে সামিট এখন প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি কেন্দ্রভাড়া নিয়ে থাকে।

ইউনাইটেড দ্বিতীয়: দেশের অন্যতম ধনী গ্রুপ ইউনাইটেড। এ প্রতিষ্ঠানটির নানা ধরনের ব্যবসা থাকলেও বিদ্যুৎ খাতের ব্যবসা সব থেকে বেশি, এটি সামিটের পরই দ্বিতীয় বলা যায়। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সামিটের শুরুতে সখ্য থাকলেও পরে বাড়ে ব্যবসায়িক দীর্ঘ দ্বন্দ্ব। এ কারণে সামিটের তুলনায় ইউনাইটেড বাড়তে পারেনি বা বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি পায়নি। গত ১৫ বছরে ইউনাইটেড ১ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি পেয়েছে, যার মধ্যে উৎপাদনে রয়েছে ৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬৫ মেগাওয়াট। আর চট্টগ্রামে ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রের অনুমতি পেলেও সেখানে গ্যাস-সংযোগ না পাওয়ায় কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসেনি। চালু থাকা কেন্দ্রগুলো থেকে ইউনাইটেড বছরের প্রায় ৬৭০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নিচ্ছে।

ওরিয়ন: বিএনপির আমলে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের কাজ পাওয়া ওরিয়ন গ্রুপ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। প্রতিষ্ঠানটি ৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি পেয়েছিল, যার মধ্যে ৩টি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র গত সরকারই বাতিল করে দেয়। ওরিয়নের ৫০৫ মেগাওয়াটের ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রয়েছে, এসব কেন্দ্র নিয়মিত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নিচ্ছে। বিশেষ আইনে দরপত্র ছাড়াই অনুমতি পাওয়া এসব কেন্দ্র বছরে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নিচ্ছে।

সবগুলো কেন্দ্রের চুক্তি খতিয়ে দেখতে হবে। এ ছাড়া এ কেন্দ্রগুলো যারা দিয়েছে, সেসব সরকারি আমলা ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকার মামলা করুক। অধ্যাপক এম শামসুল আলম,জ্বালানি উপদেষ্টা, ক্যাব

তাহজীবের ডরিন: ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হলো ডরিন পাওয়ার। তিনি ‘ঝিনাইদহ-২ আসনের দুবারের সংসদ সদস্য, যদিও শেষ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে নৌকা প্রতীক নিয়ে হেরে যান। তাহজীবের ডরিন পাওয়ার ৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি পেয়েছে, যদিও তাঁর অনুমতি পাওয়া কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা কম। ছয়টি কেন্দ্রের ৩১২ মেগাওয়াট। এসব কেন্দ্রের জন্য বছরে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পেত ডরিন পাওয়ার।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রকৌশলীরা বলছেন, ডরিন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দরকার না থাকলেও বাধ্য করা হয় বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে। এ জন্য পিডিবির প্রকৌশলীদের তাহজীব নিজে গিয়ে ধমক দিতেন।

অন্য যাঁরা: প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের দেশ এনার্জি পেয়েছে ২০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদারের সিকদার গ্রুপ দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি পেয়েছিল, যার সম্মিলিত ক্ষমতা হলো ১৯৫ মেগাওয়াট। রাজধানী মিরপুরে আওয়ামী লীগের কয়েকবারের সংসদ সদস্য আসলামুল হক দুটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি পেয়েছিলেন। এর মধ্যে ১০৯ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসে।

পিডিবির দুজন প্রকৌশলী নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলামুল হকের ১০৯ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি মূলত ৯৮ মেগাওয়াট উৎপাদন করার সক্ষমতা রাখে, এটি আমরা পরীক্ষা করেও পাই। এরপর আসলামুল হক নিজে এসে হুমকি দেন যে, কেন্দ্রটির সক্ষমতা ১০৯ মেগাওয়াট দেখাতে হবে, আমরা বাধ্য হয়ে ১০৯ মেগাওয়াট সক্ষমতায় সই করি, তিনি প্রতিবছর এ কেন্দ্রটি থেকে জোর করে ১১ কোটি টাকা বাড়তি নিয়ে যাচ্ছেন, এসব নিয়ে সরকারের ওপরের দিকে বলা হলেও এটি থামানো যায়নি। এ ছাড়া বিনা দরপত্রে কনফিডেন্স গ্রুপ বিনা দরপত্রে ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পেয়েছে।

বেশি দামের বিদ্যুৎকেন্দ্র: ৮২টি আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মিলিত উৎপাদনক্ষমতা প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট। পিডিবি গত ১৫ বছরে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রকে শুধু কেন্দ্রভাড়া বা ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। পিডিবির বার্ষিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে আইপিপি ও রেন্টাল কেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয় প্রায় সাড়ে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। এর পরের পাঁচ বছরে অর্থাৎ, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয় প্রায় ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দরপত্রের মাধ্যমে কেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দিলে বেসরকারি বিদ্যুতের দাম এত বেশি হতো না। এতে বাড়ত না বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুতের দাম না বাড়লে অর্থনীতির ওপরও এত চাপ পড়ত না।

পিডিবির তথ্যমতে, দেশে প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। গ্রীষ্মে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই পাঁচ মাস পিক-আওয়ারে (সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত) সর্বোচ্চ বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় ১৬ হাজার থেকে ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ পিক- আওয়ারেই সক্ষমতার অন্তত ৪০ শতাংশ কেন্দ্র বসে থাকে। এরপরও গত বছর পাঁচটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

পিডিবি গত ১৫ বছরে বিদ্যুতের ভুল নীতির কারণে লোকসান গুনেছে ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসান প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা। অথচ ১৫ বছর আগে বছরে লোকসান ছিল মাত্র ৮২৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে লোকসান দেয় ৫১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ খাতের সার্বিক বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, জরুরি জ্বালানি বিদ্যুৎ আইনের দায়মুক্তির বিধান বাতিল করেছেন আদালত। সবগুলো কেন্দ্রের চুক্তি খতিয়ে দেখতে হবে। এ ছাড়া এ কেন্দ্রগুলো যারা দিয়েছে, সেসব সরকারি আমলা ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকার মামলা করুক। মামলা সরকার না করলে জনগণ তাদের বিচারের দাবি ছাড়বে না, প্রয়োজন হলে তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবে, আদালতে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

  • যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা
  • বিপিসির নথি বলছে, আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি আছে
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

বোরো ধানের মৌসুমে দেশে জ্বালানি মজুতে টান পড়েছে। বর্তমান ডিজেলের মজুত একেবারেই তলানিতে রয়েছে। সরকারি তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলে মজুত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুত রয়েছে। যদিও বিপিসির দাবি, দেশে জ্বালানি-সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিপিসির মজুত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ডিজেল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৭ টন মজুত রয়েছে। এর মধ্যে দেশের ২৪টি ডিপোর ট্যাংকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৯ টন মজুত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন লাইটার জাহাজসহ ট্রানজিটে রয়েছে ৪৯ হাজার ৬৬৮ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১৬ হাজার ৬০১ টন ডিজেল সারা দেশে বিক্রি করা হয়েছে। সে হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানে বিপিসির কাছে ২০ দিনের ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে বিপিসি বিভিন্ন ডিপোতে পেট্রল মজুত আছে ২২ হাজার ১১৪ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৬১৮ টন পেট্রল বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে পেট্রল ১৩ দিনের মজুত আছে।

বিপিসির ২৩ ডিসেম্বরের স্টক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে মোট ২৮ হাজার ২৭০ টন অকটেন মজুত রয়েছে। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৮৮৫ টন অকটেন বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে ১৫ দিনের অকটেন মজুত আছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান জানান, সারা দেশে ২৫ দিনের অকটেন ও পেট্রল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ডিজেল ৩৫ দিনের মজুত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। দেশে ডিজেলের মজুত কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে সব জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। তাই ডিজেলের চাহিদা কম।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৫ হাজার ৬৯৫ টন অকটেন মজুত রয়েছে। আর পেট্রল মজুত রয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ টন। সারা দেশের ১৭টি ডিপোতে ৯২ হাজার ৮৯৫ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে সরকারি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৮০ হাজার ২১৩ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯১৪ টন পেট্রল এবং ৪ হাজার ১৮৭ টন অকটেন মজুত রয়েছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফতুল্লা, রাজশাহী, হরিয়ান, চিলমারী ডিপোতে কোনো জ্বালানি তেল নাই। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের নাটোর ডিপোতে ৩০ টন, রংপুর ডিপোতে ৫৭ টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিপোতে ২ টন ডিজেল রয়েছে।

নাম না প্রকাশে সরকারি তেল বিপণনকারী এক কর্মকর্তা জানান, বিপিসির আমদানি করা জ্বালানি তেলের মজুত আশঙ্কাজনকভাবে কম রয়েছে। ডিজেলের মজুত একবারেই কম। তাঁর মতে ১৩ থেকে ১৫ দিনের জ্বালানি মজুত রয়েছে বর্তমানে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আসিফ মালিক বলেন, দেশে পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত রয়েছে। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেলের জাহাজ আসা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান।

তবে গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল মোমিন বলেন, দেশে ধান উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম হচ্ছে বর্তমান বোরো মৌসুম। এ সময় প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এই মৌসুমে জ্বালানি-সংকট হলে সেটা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ছেদ পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় গত বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা, চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যেকোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।

সরকারসংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।

আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনে বঙ্গভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎস বড়দিনে খ্রিষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে বঙ্গভবনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্ববাসীর প্রতি বড় দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চিরকাল অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত