Ajker Patrika

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থাকছে জুলাই সনদে, স্পষ্ট হলো নোট অব ডিসেন্ট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২: ৪৯
আজ শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়। ছবি: ফোকাস বাংলা
আজ শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়। ছবি: ফোকাস বাংলা

সিপিবি-বাসদসহ চারটি বামপন্থী দলের আপত্তির পর জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫-এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে সংবিধান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ পড়ছে না। স্বাক্ষর শেষে রাজনৈতিক দল ও আমন্ত্রিত অতিথিদের দেওয়া জুলাই সনদে বিষয়টি উল্লেখ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

একই সঙ্গে সনদে প্রতিটি প্রস্তাবের পাশে দলগুলোর আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) স্পষ্ট করে দিয়ে বলা হয়েছে—দলগুলো নির্বাচনে বিজয়ী হলে নির্বাচনী ইশতেহার উল্লেখপূর্বক ব্যবস্থা নিতে পারবে।

আজ শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে চূড়ান্ত জুলাই জাতীয় সনদের বই রাজনৈতিক নেতা ও আমন্ত্রিত অতিথিদের দেয় কমিশন। অন্যদিকে অঙ্গীকারনামার পঞ্চম ধারা পরিবর্তনের কথা জানানো হয়। সেটির পিডিএফ কপি দলগুলোর নেতাদের দেওয়া হয়েছে।

১৪ অক্টোবর সনদের যে অনুলিপি কমিশন দিয়েছিল, সেখানে বলা ছিল, বিদ্যমান সংবিধানের ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানসংক্রান্ত ১৫০(২) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। এ সিদ্ধান্তে নয়টি দল একমত ছিল না। সংবিধানের পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল যুক্ত করা হয়েছিল ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। পঞ্চম তফসিলে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ। ষষ্ঠ তফসিলে আছে ১৯৭১ সালের ‘২৫ মার্চ মধ্যরাত শেষে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে’ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা। আর সপ্তম তফসিলে আছে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারি করা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র—এখানে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

চূড়ান্ত সনদে বলা হয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০(২) সংশোধন করা হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম ও ষষ্ঠ তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। অর্থাৎ জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধানে যে সংস্কার আসবে, তাতে সংবিধানের তফসিলে ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা থাকবে না। তবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানের তফসিলে থাকবে।

চূড়ান্ত সনদে প্রতিটি প্রস্তাবের পাশে কোন কোন দলের ভিন্নমত, সেটা উল্লেখ করার পাশাপাশি একটি নোট দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘অবশ্য কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে, তাহলে তারা সেই মতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।’

ভিন্নমত থাকা সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এখন যেভাবে নোট দেওয়া হয়েছে, বিএনপি প্রস্তাব করেছিল, সনদের অঙ্গীকারনামায় যেন এভাবে একটি ধারা যুক্ত করা হয়। অঙ্গীকারনামায় যুক্ত করা না হলেও সেটি ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর পাশে নোট আকারে দেওয়া হয়েছে।

দাবির মুখে সনদ সংশোধন

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের আগে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফা সংশোধন করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আজ বেলা ২টার দিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সংশোধনের কথা জানানো হয়। দফাটিতে আগে ছিল, ‘গণ-অভ্যুত্থানপূর্ব ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।’

সংশোধিত দফায় বলা হয়েছে, ‘গণ-অভ্যুত্থানপূর্ব বাংলাদেশে ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যের দ্বারা সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারকে এবং জুলাই আহতদের রাষ্ট্রীয় বীর, আহত জুলাই বীর যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান যেমন মাসিক ভাতা, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসনব্যবস্থা এবং শহীদ পরিবার ও আহত বীর যোদ্ধাদের আইনগত দায়মুক্তি, মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।’

সংশোধনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আন্দোলনরত জুলাই বীর যোদ্ধাদের উদ্দেশে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই বীর যোদ্ধাদের সঙ্গে গতকালের আলোচনাসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফার পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জুলাই বীর যোদ্ধাদের দাবির প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রয়োজনীয় জরুরি সংশোধন করা হয়েছে। এ সময় তিনি সংশোধিত ভাষ্যটি পাঠ করেন।

কমিশনের সহসভাপতি আরও বলেন, কমিশন এই অঙ্গীকারনামা বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারকে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপন করবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনের কোনো মতপার্থক্য নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ