Ajker Patrika

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫ অভিযোগ

  • শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন।
  • মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে উসকানি ও সরাসরি নির্দেশ।
  • দেড় হাজার মানুষকে হত্যা, ২৫ হাজার মানুষকে আহত।
  • তিন সপ্তাহের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল।
  • রাজপথের চাপের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো বিচার করা সম্ভব হবে না: চিফ প্রসিকিউটর
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ১৯: ২৯
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ছবি: বাসস
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ছবি: বাসস

গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে গণহত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। প্রতিবেদনে তাঁদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে উসকানি, সরাসরি নির্দেশসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

শেখ হাসিনা ছাড়া অপর দুজন হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তদন্ত সংস্থার প্রতিনিধিদল গতকাল প্রতিবেদনটি জমা দেয়। পরে প্রতিবেদনের বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এখন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে তিন সপ্তাহের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে উসকানি ও সরাসরি নির্দেশ। এ বিষয়ে শেখ হাসিনার বহু কলরেকর্ড, অডিও-ভিডিও পাওয়া গেছে। পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট তিনটি ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। তবে সেগুলো এখনই জানাতে অপারগতা জানান তিনি।

মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেদনে এসেছে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে; ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে গুলি করে আহত করা হয়েছে; নারীদের ওপর বিশেষভাবে সহিংসতা চালানো হয়েছে; লাশ একত্র করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে; আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিতে, চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতে ও ময়নাতদন্ত করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে শেখ হাসিনা নিজে গিয়ে বলেছিলেন, এসব ভর্তি রোগীর যাতে চিকিৎসা দেওয়া না হয়। রোগীরা যখন যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে হাসপাতাল থেকে চলে যেতে চেয়েছিলেন, তাঁদের সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। যাতে পচে গেলে কেটে ফেলতে হয়, সে রকম নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া আন্দোলনকারীদের ওপর দায় চাপানোর জন্য বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় নিজেদের লোকজন দিয়ে অগ্নিসংযোগের নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এটি কোনো সাধারণ বিচার নয়। রাজপথের চাপের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো বিচার করা সম্ভব হবে না। সেটা করতে গেলে সঠিকভাবে বিচার করা সম্ভব হবে না। এখানে তদন্ত ও আইনের অনেক জটিল বিষয় আছে। চাপ দিলে এটা কখনো করা যাবে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। সঠিক বিচারটা যাতে হয়। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে মামলাটি যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে আমাদের জাতির আকাঙ্ক্ষা কখনো পূরণ হবে না এবং সেটি ন্যায়বিচার হবে না। এ জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন হয়, ততটুকু সময় এই ট্রাইব্যুনাল, প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থাকে দিতে হবে। আমরা চাইব, বিচারে কোনো রকম অনিয়ম না হোক, মানবাধিকার লঙ্ঘন না হোক, কোনো ত্রুটি–বিচ্যুতি না হোক এবং কোনো প্রশ্ন না উঠুক।’

দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, তদন্ত সংস্থা মনে করলে আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে তদন্তপ্রক্রিয়া শুরু হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, আব্দুস সোবহান তরফদার, গাজী এম এইচ তামিম, এস এম মইনুল করিম, বি এম সুলতান মাহমুদ, তারেক আব্দুল্লাহ, শাইখ মাহদী, আব্দুস সাত্তার পালোয়ান প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত