Ajker Patrika

মুরাদনগরের মা, মেয়ে ও ছেলে হত্যাকাণ্ডের হোতা চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল, নেপথ্যে মাসোহারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও কুমিল্লা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৫, ১৭: ৫৬
শিমুল বিল্লাল
শিমুল বিল্লাল

কুমিল্লার মুরাদনগরের আকুবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে মা, মেয়ে ও ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লালের নাম। বিগত ১৭ বছরে দলীয় প্রভাব বিস্তার করে শূন্য থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মাটি ভরাট, ড্রেজার ব্যবসা, চাঁদাবাজি, সালিস-বাণিজ্য, মাদক কারবার থেকে মাসোহারা নেওয়ার মতো নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ বহুদিনের। চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক।

এদিকে এ ঘটনায় জড়িত আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। এ নিয়ে এ ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।

গ্রেপ্তার নতুন ছয়জন হলেন বায়েজ মাস্টার, মুরাদনগরের আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মিয়া, রবিউল আউয়াল, আতিকুর রহমান, দুলাল ও আকাশ। তাঁদের গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর বনশ্রী ও কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানায় হস্তান্তর করা হয় বলেও জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ। তিনি বলেন, আকুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মিয়াসহ কয়েকজনের ইন্ধনে এই মব ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ি এলাকায় মোবাইল ফোন চুরিকে কেন্দ্র করে এই মব সৃষ্টি করা হয়।

নেপথ্যে মাদকের মাসোহারা

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া, আনু মিয়া, যুবলীগ কর্মী রাসেলসহ একটি চক্র পুরো ইউনিয়নে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করত। শিমুল বিল্লাল আওয়ামী লীগে যুক্ত হয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের ছত্রচ্ছায়ায় দ্রুত ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন। টিনশেড ঘরে বসবাস করা শিমুল এখন আকুবপুরে দোতলা বাড়ির মালিক। ঢাকায় রয়েছে ফ্ল্যাট ও জমি। গাজীরহাটে রয়েছে কোটি টাকার দোকান। তিনি ঠিকাদারিও করেন। বর্তমানে তাঁর নামে ১৩ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের কাজ চলছে।

স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য, নিহত রোখসানা বেগম রুবি ছিলেন এলাকার কুখ্যাত মাদক কারবারি। তাঁর কাছ থেকে প্রতি মাসে চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ৩০ হাজার, ইউপি সদস্য আনু মিয়া ও যুবলীগ কর্মী রাসেল ১০ হাজার টাকা করে মাসোহারা নিতেন। সম্প্রতি তাঁরা মাসোহারা বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা দাবি করলে দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে।

মোবাইল ফোন চুরির সূত্রে হত্যাকাণ্ড

মঙ্গলবার (১ জুলাই) স্থানীয় এক শিক্ষকের মোবাইল ফোন চুরি হলে রুবির পরিবারের লোকজনকে সন্দেহ করা হয়। বোরহান নামের এক তরুণকে ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া ও ব্যবসায়ী বাছির উদ্দিন মারধর করেন। রুবি গিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনতে চাইলে কথা-কাটাকাটি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আবার উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে রুবি বাচ্চু মিয়াকে চড় মারেন।

র‍্যাবের কর্মকর্তা লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ফোন চুরি নিয়ে ১ জুলাই সালিস হয়। সালিস করেন ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া। তবে কোনো মীমাংসা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। এমনকি বোরহানকেও তাঁর পরিবার আর খুঁজে পাচ্ছিল না। এখনো তাঁকে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে বোরহানের বাবা স্থানীয় থানায় বাচ্চু মেম্বারসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দেন। এতে বাচ্চু মেম্বারসহ স্থানীয় ব্যক্তিরা ক্ষিপ্ত হন। ২ জুলাই রাতে ওই এলাকায় একটি সভা হয়। ওই সভায় রুবির পরিবারকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেন বাচ্চু মেম্বারসহ অন্যরা।

৩ জুলাই সকালে চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও মেম্বার বাচ্চু মিয়াসহ শতাধিক ব্যক্তি রুবির ওই বাড়িতে যান। এ সময় রুবি ও তাঁর মেয়ের সঙ্গে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরপর সেখানে উপস্থিত সবাই হামলা করেন। তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করেন তাঁরা।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন রোকসানা বেগম রুবি (৫৩), তাঁর মেয়ে লিজা আক্তার (১৮) ও ছেলে রাসেল হোসেন (১৬। গুরুতর আহত হন আরও একজন। এ ঘটনায় প্রায় ৩৯ ঘণ্টা পর নিহত রুবির মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লালসহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

এলাকা থমথমে, আতঙ্কে মানুষজন

হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পুরো কড়ইবাড়ি গ্রামে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক বাসিন্দা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। দোকানপাট বন্ধ, রাস্তাঘাট ফাঁকা। সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল চলছে।

নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার বলেন, ‘বাছির নেতৃত্ব দিয়ে পুরো হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছে। বাছিরের পরিবারের অনেক লোক হত্যাকাণ্ডে জড়িত। চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও মেম্বারের ইন্ধনে বাছির নেতৃত্ব দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। চেয়ারম্যান ঘটনার আগের দিনও এসেছিলেন কড়ইবাড়ি। ঘটনার দিন সকালে তিনি এখানেই ছিলেন। চেয়ারম্যান ও মেম্বার পুরো ঘটনায় জড়িত। তাঁরাই যুক্তি করে আমার স্বামীর পরিবারকে শেষ করে দিয়েছেন। আমি তাঁদের বিচার চাই।’

এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল বিগত ১৭ বছরে দলীয় প্রভাব বিস্তার করে বিপুল সম্পদের মালিক হন। এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর তিনি এনসিপির লোকদের সঙ্গে চলাফেরা শুরু করেন।

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেও চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লালের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা যায়।

মুরাদনগর বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, শুক্রবার রাতে পুলিশের নিরাপত্তায় নিহত তিনজনের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়। গ্রেপ্তার ৮ জনকে গতকাল বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

  • যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা
  • বিপিসির নথি বলছে, আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি আছে
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

বোরো ধানের মৌসুমে দেশে জ্বালানি মজুতে টান পড়েছে। বর্তমান ডিজেলের মজুত একেবারেই তলানিতে রয়েছে। সরকারি তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলে মজুত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুত রয়েছে। যদিও বিপিসির দাবি, দেশে জ্বালানি-সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিপিসির মজুত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ডিজেল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৭ টন মজুত রয়েছে। এর মধ্যে দেশের ২৪টি ডিপোর ট্যাংকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৯ টন মজুত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন লাইটার জাহাজসহ ট্রানজিটে রয়েছে ৪৯ হাজার ৬৬৮ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১৬ হাজার ৬০১ টন ডিজেল সারা দেশে বিক্রি করা হয়েছে। সে হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানে বিপিসির কাছে ২০ দিনের ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে বিপিসি বিভিন্ন ডিপোতে পেট্রল মজুত আছে ২২ হাজার ১১৪ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৬১৮ টন পেট্রল বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে পেট্রল ১৩ দিনের মজুত আছে।

বিপিসির ২৩ ডিসেম্বরের স্টক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে মোট ২৮ হাজার ২৭০ টন অকটেন মজুত রয়েছে। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৮৮৫ টন অকটেন বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে ১৫ দিনের অকটেন মজুত আছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান জানান, সারা দেশে ২৫ দিনের অকটেন ও পেট্রল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ডিজেল ৩৫ দিনের মজুত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। দেশে ডিজেলের মজুত কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে সব জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। তাই ডিজেলের চাহিদা কম।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৫ হাজার ৬৯৫ টন অকটেন মজুত রয়েছে। আর পেট্রল মজুত রয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ টন। সারা দেশের ১৭টি ডিপোতে ৯২ হাজার ৮৯৫ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে সরকারি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৮০ হাজার ২১৩ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯১৪ টন পেট্রল এবং ৪ হাজার ১৮৭ টন অকটেন মজুত রয়েছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফতুল্লা, রাজশাহী, হরিয়ান, চিলমারী ডিপোতে কোনো জ্বালানি তেল নাই। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের নাটোর ডিপোতে ৩০ টন, রংপুর ডিপোতে ৫৭ টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিপোতে ২ টন ডিজেল রয়েছে।

নাম না প্রকাশে সরকারি তেল বিপণনকারী এক কর্মকর্তা জানান, বিপিসির আমদানি করা জ্বালানি তেলের মজুত আশঙ্কাজনকভাবে কম রয়েছে। ডিজেলের মজুত একবারেই কম। তাঁর মতে ১৩ থেকে ১৫ দিনের জ্বালানি মজুত রয়েছে বর্তমানে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আসিফ মালিক বলেন, দেশে পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত রয়েছে। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেলের জাহাজ আসা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান।

তবে গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল মোমিন বলেন, দেশে ধান উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম হচ্ছে বর্তমান বোরো মৌসুম। এ সময় প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এই মৌসুমে জ্বালানি-সংকট হলে সেটা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ছেদ পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় গত বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা, চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যেকোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।

সরকারসংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।

আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনে বঙ্গভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎস বড়দিনে খ্রিষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে বঙ্গভবনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্ববাসীর প্রতি বড় দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চিরকাল অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত