Ajker Patrika

রক্তপাতে প্রথমকে ছাড়িয়ে গেল দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন

আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ৪৬
রক্তপাতে প্রথমকে ছাড়িয়ে গেল দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন

বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী স্থানীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে এটি। প্রথম ধাপের নির্বাচনে সংঘর্ষ-সহিংতায় প্রাণ গেছে ৫ জনের। আর আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ধাপের ভোটের দিন প্রাণ হারালেন আরও ৭ জন। অবশ্য দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরুর আগেই সংঘর্ষে নিহত বা নিরস্ত্র অবস্থায় কুপিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে ১৬ জনকে। 

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী, নরসিংদীর রায়পুরার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই গ্রুপের ৩ জন নিহত হয়েছেন। বুধবার মধ্যরাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের কয়েকটি কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে এক ব্যবসায়ী ছুরিকাঘাতে নিহত এবং একজন সদস্য প্রার্থী গুলিবিদ্ধ এবং অন্তত ১০ কর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছেন। 

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার বাওর খোলা ইউনিয়নের খিরারচর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং উপজেলার মানিকার চর ইউনিয়নের আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছেন।

কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া কমপক্ষে ৩ পুলিশসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। 

এবার ইউপি নির্বাচন ঘিরে শুরু থেকেই সারা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে ২৮ জনের। এখনো তৃতীয় ধাপের ভোট বাকি। এই যখন পরিস্থিতি তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নূরুল হুদা প্রার্থী, ভোটার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, পাড়া-মহল্লায় পুলিশ দিয়ে, পাহারা দিয়ে নির্বাচনী সহিংসতা থামানো যায় না। এ ক্ষেত্রে প্রার্থী, ভোটার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সহনশীল ও নির্বাচনসুলভ আচরণ দেখালেই এ সমস্যা থাকবে না। সহিংসতার দায় প্রশাসন, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনকে দিলে হবে না! 

এদিকে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গিয়ে প্রত্যন্ত এলাকাতেও রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। নির্বাচনের বাইরে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। এই সুযোগে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যেই সংঘাত প্রকাশ্যে আসছে। সহিংসতার ঘটনাগুলোও ক্ষমতাসীনদের মধ্যেই। কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েও বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে পারছে না আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ভোটারদের হুমকি-ধমকি দেওয়ার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে এসেছে। 

প্রথম ধাপের নির্বাচনেও ৬৪টি ইউপিতে বিনা ভোটে জয় পেয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৮১টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছেন। ৫টি ইউপিতে কোনো পদেই ভোট হয়নি। 

চলতি মাসে তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখন পর্যন্ত মাঠপর্যায় থেকে পাওয়া ইসির কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদে ৩১৩ প্রার্থীর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তাঁদের বিপক্ষে ভোটের লড়াইয়ে কেউ মনোনয়নপত্রও জমা দেননি। শেষ পর্যন্ত ১১ নভেম্বর কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সেদিনই তাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবেন। 

এর মধ্যে স্বাক্ষর জাল করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে নাম পাঠানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। ফলে দলীয় মনোনয়ন নিয়েই ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত তা সংঘাতে গড়িয়েছে। 

সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় নির্বাচনগুলোতেও বিনা ভোটে জয় পাওয়ার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তা গণতন্ত্রের জন্য দুঃসংবাদ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচনকে আরও অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশনের চেয়ে রাজনৈতিক দলের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

তেহরান ওপর থেকে সুন্দর, একদিন যেতে চাই: ইরানে বোমা ফেলা ইসরায়েলি পাইলট

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

বংশরক্ষায় মৃত ছেলের শুক্রাণু চান মা, সংরক্ষণের নির্দেশ মুম্বাই হাইকোর্টের

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত