জুলাই অভ্যুত্থান
শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনায় সারা দেশে এ পর্যন্ত ৭৬১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির তালিকায় পুলিশের ১ হাজার ১৬৮ সদস্যও রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পুলিশের কয়েকজন সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) থেকে শুরু করে কনস্টেবল পদের সদস্যরা রয়েছেন। মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর কিংবা গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
দেড় হাজারের বেশি পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন মাত্র ৪২ জন। ঘটনার প্রায় ১১ মাস পরও কোনো মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। ফলে তদন্ত নিয়ে ধীরে চলার অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। তবে তদন্তের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বলছেন, এসব স্পর্শকাতর মামলা। পুলিশ সদস্যরা আসামি থাকায় তদন্ত করতে হবে নির্ভুল। কারণ, তাঁদের বেশির ভাগ বাহিনীতে কর্মরত থাকায় তাড়াহুড়োর তদন্তে ভুল হলে বাহিনীতে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে। তাই প্রশ্ন ও বিতর্কমুক্ত রাখতে মামলাগুলোর তদন্ত ধীরেসুস্থে করতে চান তাঁরা। একই কারণে কর্মরত সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে অকাট্য প্রমাণ না পেলে গ্রেপ্তারও করা হবে না।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আটটি রেঞ্জেই অতিরিক্ত ডিআইজি (অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক) পর্যায়ের কর্মকর্তা দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা কাজ করছেন।
জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলার তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে। একটি মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পুলিশের আট সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ইতিমধ্যে দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশের সূত্র বলছে, গত বছরের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে সারা দেশে হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন ঘটনায় ৭৬১টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মামলায় তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদেরও আসামি করা হয়। এসব মামলা করেন জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের স্বজন এবং আহত ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনেরা। এসব মামলায় আসামি হিসেবে আছেন পুলিশের ১ হাজার ১৬৮ পুলিশ সদস্য। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ৭ জন সাবেক আইজিপি, ৪১ অতিরিক্ত আইজিপি, ১২ সাবেক ডিআইজি ও ১১ জন বর্তমান ডিআইজি, ৪৯ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ৬৬ পুলিশ সুপার (এসপি), ৬৫ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৩৫ সহকারী পুলিশ সুপার, ১৮৭ পরিদর্শক, ৩৪০ উপপরিদর্শক (এসআই), ১১৭ এএসআই, ২২৪ জন কনস্টেবল। বাকিরা টিএসআই, এটিএসআই, নায়েক ও পদ উল্লেখ না থাকা পুলিশ সদস্য। তাঁদের মধ্যে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪২ জন।
পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের ৪৬ সদস্য নিহত হন।
বেশি মামলা ‘ডিবি’ হারুনের বিরুদ্ধে, দ্বিতীয় সাবেক আইজিপি মামুন মামলা হওয়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এ কে এম শহীদুল হক, ডিএমপির সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, যুগ্ম কমিশনার মশিউর রহমান, ডিআইজি মোল্লা নজরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম। সর্বশেষ গত শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয় সিএমপির সাবেক কমিশনার অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহারকে।
মামলার আসামি হলেও গ্রেপ্তার করা যায়নি বিতর্কিত সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির ডিবির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, মেহেদী হাসান, অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তারসহ অনেককে। তাঁদের অনেকে দেশত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
মামলাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ১৭৫টি মামলা হয়েছে ডিএমপির সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে। এরপর রয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (১৫৯টি), ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান (১১৮টি), যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার (১২৯টি), সাবেক আইজিপি শহীদুল হক (২৪টি), বেনজীর আহমেদ (১৩টি) ও জাবেদ পাটোয়ারী (২টি)।
ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের সাবেক উপকমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২৭টি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি গুলি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করার কৌশল নিয়ে আলোচনা করছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে।
৬৮ মামলার তদন্ত করছে পিবিআই
পুলিশ সদস্যরা আসামি থাকা মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ৬৮টি মামলার তদন্ত করছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে পুলিশের ৯৯ কর্মকর্তাকে। সিআইডি ও অন্য ইউনিটগুলোও বিভিন্ন মামলার তদন্ত করছে। তবে কোনোটির তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, পরিদর্শক থেকে কনস্টেবল—কেউ নিজের সিদ্ধান্তে গুলি চালান না। মাঠে দায়িত্ব পালন করা সবাই আদেশ পালন করেছেন। এখন কাকে ‘হত্যাকারী’ বলা হবে?
মাঠপর্যায়ের একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, মাঠে দায়িত্ব পালন করায় তাঁরা পরিস্থিতি বোঝেন। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রে সহকর্মীর নাম দিতে হলে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে অকাট্য প্রমাণের ভিত্তিতে। না হলে তিনি বাহিনীর অন্যদের রোষানলে পড়বেন। তাঁরা বলছেন, আসামি করা বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে। গুলি চালানোর স্পষ্ট প্রমাণ না থাকলে বা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে চিহ্নিত না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া কঠিন। তাই চাকরিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তারও করা যাচ্ছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরাসরি প্রমাণ ছাড়া শুধু মামলার আসামি হওয়ার কারণে সবাইকে গ্রেপ্তার করলে বাহিনীতে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে, যা তদন্ত ও বিচারকে ব্যাহত করবে।
জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুধু পুলিশের বিরুদ্ধে মামলাগুলো নয়, অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক হত্যা-হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে যত মামলা হয়েছে, সব কটির তদন্ত দ্রুত শেষে করা দরকার। যাঁরা নির্দোষ, তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং যাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা উচিত। এই মামলাগুলো নিয়ে ধীরগতির সুযোগ নেই।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও পুলিশের বিচার
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও শুরু হয়েছে জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার বিচারপ্রক্রিয়া। ট্রাইব্যুনালে ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎকালীন ১৮ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা, পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন, মহিউদ্দিন ফারুকী, এস এম তানভীর আরাফাত, আসাদুজ্জামান, আবদুল্লাহিল কাফী, জুয়েল রানা প্রমুখ।
ইতিমধ্যে চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যার মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাবিবুর রহমানের মৌখিক নির্দেশেই মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা ওই হত্যাকাণ্ড ঘটান।
জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের প্রক্রিয়া চলছে। যাঁরা পলাতক, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাঁদের অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে এবং রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাঁদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করবেন।
জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনায় সারা দেশে এ পর্যন্ত ৭৬১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির তালিকায় পুলিশের ১ হাজার ১৬৮ সদস্যও রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পুলিশের কয়েকজন সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) থেকে শুরু করে কনস্টেবল পদের সদস্যরা রয়েছেন। মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর কিংবা গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
দেড় হাজারের বেশি পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন মাত্র ৪২ জন। ঘটনার প্রায় ১১ মাস পরও কোনো মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। ফলে তদন্ত নিয়ে ধীরে চলার অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। তবে তদন্তের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বলছেন, এসব স্পর্শকাতর মামলা। পুলিশ সদস্যরা আসামি থাকায় তদন্ত করতে হবে নির্ভুল। কারণ, তাঁদের বেশির ভাগ বাহিনীতে কর্মরত থাকায় তাড়াহুড়োর তদন্তে ভুল হলে বাহিনীতে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে। তাই প্রশ্ন ও বিতর্কমুক্ত রাখতে মামলাগুলোর তদন্ত ধীরেসুস্থে করতে চান তাঁরা। একই কারণে কর্মরত সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে অকাট্য প্রমাণ না পেলে গ্রেপ্তারও করা হবে না।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আটটি রেঞ্জেই অতিরিক্ত ডিআইজি (অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক) পর্যায়ের কর্মকর্তা দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা কাজ করছেন।
জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলার তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে। একটি মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পুলিশের আট সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ইতিমধ্যে দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশের সূত্র বলছে, গত বছরের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে সারা দেশে হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন ঘটনায় ৭৬১টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মামলায় তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদেরও আসামি করা হয়। এসব মামলা করেন জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের স্বজন এবং আহত ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনেরা। এসব মামলায় আসামি হিসেবে আছেন পুলিশের ১ হাজার ১৬৮ পুলিশ সদস্য। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ৭ জন সাবেক আইজিপি, ৪১ অতিরিক্ত আইজিপি, ১২ সাবেক ডিআইজি ও ১১ জন বর্তমান ডিআইজি, ৪৯ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ৬৬ পুলিশ সুপার (এসপি), ৬৫ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৩৫ সহকারী পুলিশ সুপার, ১৮৭ পরিদর্শক, ৩৪০ উপপরিদর্শক (এসআই), ১১৭ এএসআই, ২২৪ জন কনস্টেবল। বাকিরা টিএসআই, এটিএসআই, নায়েক ও পদ উল্লেখ না থাকা পুলিশ সদস্য। তাঁদের মধ্যে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪২ জন।
পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের ৪৬ সদস্য নিহত হন।
বেশি মামলা ‘ডিবি’ হারুনের বিরুদ্ধে, দ্বিতীয় সাবেক আইজিপি মামুন মামলা হওয়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এ কে এম শহীদুল হক, ডিএমপির সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, যুগ্ম কমিশনার মশিউর রহমান, ডিআইজি মোল্লা নজরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম। সর্বশেষ গত শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয় সিএমপির সাবেক কমিশনার অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহারকে।
মামলার আসামি হলেও গ্রেপ্তার করা যায়নি বিতর্কিত সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির ডিবির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, মেহেদী হাসান, অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তারসহ অনেককে। তাঁদের অনেকে দেশত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
মামলাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ১৭৫টি মামলা হয়েছে ডিএমপির সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে। এরপর রয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (১৫৯টি), ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান (১১৮টি), যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার (১২৯টি), সাবেক আইজিপি শহীদুল হক (২৪টি), বেনজীর আহমেদ (১৩টি) ও জাবেদ পাটোয়ারী (২টি)।
ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের সাবেক উপকমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২৭টি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি গুলি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করার কৌশল নিয়ে আলোচনা করছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে।
৬৮ মামলার তদন্ত করছে পিবিআই
পুলিশ সদস্যরা আসামি থাকা মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ৬৮টি মামলার তদন্ত করছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে পুলিশের ৯৯ কর্মকর্তাকে। সিআইডি ও অন্য ইউনিটগুলোও বিভিন্ন মামলার তদন্ত করছে। তবে কোনোটির তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, পরিদর্শক থেকে কনস্টেবল—কেউ নিজের সিদ্ধান্তে গুলি চালান না। মাঠে দায়িত্ব পালন করা সবাই আদেশ পালন করেছেন। এখন কাকে ‘হত্যাকারী’ বলা হবে?
মাঠপর্যায়ের একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, মাঠে দায়িত্ব পালন করায় তাঁরা পরিস্থিতি বোঝেন। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রে সহকর্মীর নাম দিতে হলে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে অকাট্য প্রমাণের ভিত্তিতে। না হলে তিনি বাহিনীর অন্যদের রোষানলে পড়বেন। তাঁরা বলছেন, আসামি করা বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে। গুলি চালানোর স্পষ্ট প্রমাণ না থাকলে বা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে চিহ্নিত না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া কঠিন। তাই চাকরিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তারও করা যাচ্ছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরাসরি প্রমাণ ছাড়া শুধু মামলার আসামি হওয়ার কারণে সবাইকে গ্রেপ্তার করলে বাহিনীতে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে, যা তদন্ত ও বিচারকে ব্যাহত করবে।
জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুধু পুলিশের বিরুদ্ধে মামলাগুলো নয়, অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক হত্যা-হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে যত মামলা হয়েছে, সব কটির তদন্ত দ্রুত শেষে করা দরকার। যাঁরা নির্দোষ, তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং যাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা উচিত। এই মামলাগুলো নিয়ে ধীরগতির সুযোগ নেই।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও পুলিশের বিচার
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও শুরু হয়েছে জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার বিচারপ্রক্রিয়া। ট্রাইব্যুনালে ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎকালীন ১৮ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা, পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন, মহিউদ্দিন ফারুকী, এস এম তানভীর আরাফাত, আসাদুজ্জামান, আবদুল্লাহিল কাফী, জুয়েল রানা প্রমুখ।
ইতিমধ্যে চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যার মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাবিবুর রহমানের মৌখিক নির্দেশেই মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা ওই হত্যাকাণ্ড ঘটান।
জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের প্রক্রিয়া চলছে। যাঁরা পলাতক, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাঁদের অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে এবং রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাঁদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করবেন।
২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর যে সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়নের পথে শুরু থেকে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পরিবহন খাতের প্রভাবশালী মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। এখন পরিবহননেতারা আইন সংশোধনের সুপারিশ করে শাস্তি ও জরিমানার হার কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁরা আইনের সব ধারা জামিনযোগ্য করার...
৫ ঘণ্টা আগেছুটি নিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের সুখবর। আগামী জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে সাপ্তাহিক দুদিন ছুটি মিলিয়ে টানা তিন দিনের ছুটি ভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। কারণ আগামী ৬ জুলাই রোববার পবিত্র আশুরা পালিত হবে। এদিন সরকারি ছুটি। আর আগের দুদিন অর্থাৎ ৪ ও ৫ জুলাই শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
৮ ঘণ্টা আগেমহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, নারী ও শিশুরা পরিবার, কর্মক্ষেত্র, পাবলিক স্পেস, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অনলাইন, সাইবার স্পেসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নানা ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীর প্রতি সহিংসতার ধরনের ক্ষেত্র ও মাত্রা...
৯ ঘণ্টা আগেরায় বা আদেশ হওয়ার পর মামলার নথি সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করে যথাসময়ে অধস্তন আদালতে পাঠাতে নির্দেশনা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়।
৯ ঘণ্টা আগে