Ajker Patrika

মিডলইস্ট আইয়ের প্রতিবেদন

পাকিস্তানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংসে ভারত-ইসরায়েলের যৌথ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় যেভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ১০: ৩১
পাকিস্তানের একটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র। ছবি: গুগল
পাকিস্তানের একটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র। ছবি: গুগল

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক প্রধান জর্জ টেনেট তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেনের মতোই বিপজ্জনক’ বলে মনে করতেন। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান সাবতাই শাভিত আফসোস করে বলেছিলেন, সুযোগ পেলে তিনি তাঁকে হত্যা করতেন।

যাঁর কথা বলছিলাম, তিনি প্রায় ২৫ কোটি পাকিস্তানির কাছে পরিচিত এক নাম—আবদুল কাদির খান। পাকিস্তানিদের কাছে তিনি এক কিংবদন্তি, জাতীয় বীর। পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির জনক হিসেবে পরিচিত তিনি। ১৯৩৬ সালে জন্ম নেওয়া এই পরমাণুবিজ্ঞানী ২০২১ সালে ৮৫ বছর বয়সে মারা যান। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশকে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে তিনিই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন।

আবদুল কাদির খান অতি গোপনে ও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতেন, যার মাধ্যমে ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। এই তিন দেশের মধ্যে উত্তর কোরিয়া শেষ পর্যন্ত প্রতীক্ষিত সামরিক মর্যাদার সেই প্রতীক, অর্থাৎ পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনে সক্ষম হয়।

ইসরায়েল নিজেও পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, যদিও তারা কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করেনি। পাকিস্তান যাতে পারমাণবিক শক্তি অর্জন করতে না পারে, তা ঠেকাতে ইসরায়েল নানাভাবে আবদুল কাদির খানকে হত্যাচেষ্টা ও হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে ইসরায়েল ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার এই পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়ায়।

পাকিস্তান পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের দেখানো পথ অনুসরণ করে। ১৯৭৪ সালের ১৮ মে ভারত তাদের প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, যার নাম দেওয়া হয় ‘স্মাইলিং বুদ্ধ।’ এরপর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষণা দেন, তাঁর দেশও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে।

ভুট্টো বলেছিলেন, ‘আমরা ঘাস খাব, পাতা খাব, না খেয়ে থাকব, তবুও নিজেদের পারমাণবিক বোমা তৈরি করব।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বিশ্বে রয়েছে খ্রিষ্টান বোমা, ইহুদি বোমা, হিন্দু বোমা। তাহলে ইসলামি বোমা কেন থাকবে না?’

ব্রিটিশ শাসিত উপমহাদেশে জন্ম নেওয়া আবদুল কাদির খান ১৯৬০ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি নেন। এরপর বার্লিনে মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েন। পরে নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামেও পড়াশোনা করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি আমস্টারডামে ইউরেনকো নামে একটি বড় পরমাণু জ্বালানি সংস্থায় চাকরি পান।

এই কোম্পানি ইউরোপের পারমাণবিক চুল্লির জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম জ্বালানি সরবরাহ করত। খান ওই প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত গোপনীয় এলাকায় প্রবেশের সুযোগ পান এবং বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তির নকশাও হাতে পান, যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে অস্ত্র তৈরির জন্য উপযোগী করে তোলে।

১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি হঠাৎ নেদারল্যান্ডস ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরে আসেন। বলেন, তিনি এমন এক প্রস্তাব পেয়েছেন, যেটা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। পরে তাঁকে নেদারল্যান্ডসের কাছ থেকে ইউরেনিয়াম সেন্ট্রিফিউজের নকশা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।

সে বছরের জুলাইয়ে তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে একটি গবেষণা ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেন, যা পাকিস্তানের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ইউরেনিয়াম প্রস্তুত করত। প্রথম দিকে পুরো প্রকল্পটি অত্যন্ত গোপনে চলছিল। ভুয়া কোম্পানির নামে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করা হতো, বাইরে প্রচার করা হতো এগুলো টেক্সটাইল কারখানার জন্য।

প্রমাণ আছে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এই প্রকল্পে আবদুল কাদির খানকে সরাসরি সহযোগিতা করেছিল। তবে তখনকার বেসামরিক সরকারগুলো এসবের কিছুই জানত না। ব্যতিক্রম শুধু প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। এমনকি তাঁর কন্যা, পরে প্রধানমন্ত্রী হওয়া বেনজির ভুট্টোও বিষয়টি জানতেন না। ১৯৮৯ সালে তেহরানে এক বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানি যখন তাঁকে ‘বিশেষ প্রতিরক্ষাবিষয়ক’ চুক্তি নবায়নের কথা বলেন, বেনজির ভুট্টো তখন হতবাক হয়ে জানতে চান, তিনি কী বলতে চাচ্ছেন। রাফসানজানি স্পষ্ট করে বলেন, ‘পারমাণবিক প্রযুক্তি, ম্যাডাম প্রধানমন্ত্রী, পারমাণবিক প্রযুক্তি।’ বেনজির ভুট্টো হতভম্ব হয়ে যান।

১৯৭৯ সালের জুনে ‘এইট ডেজ’ নামের একটি ম্যাগাজিন পাকিস্তানের এই গোপন পারমাণবিক কর্মসূচির খবর প্রকাশ করে। বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ইসরায়েল ডাচ সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানায়। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালে এক ডাচ আদালত খানকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। যদিও পরে কারিগরি কারণে সেই রায় বাতিল হয়ে যায়। তবে প্রকল্প থেমে থাকেনি।

১৯৮৬ সালের মধ্যে খান নিশ্চিত হন, পাকিস্তান পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম। তাঁর এই কর্মকাণ্ডের পেছনে আদর্শিক চিন্তাধারাই সবচেয়ে বড় প্রেরণা ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘আমেরিকান আর ব্রিটিশদের এত সাধু সাজার অধিকার কে দিয়েছে? এরা কি পৃথিবীর স্বঘোষিত অভিভাবক?’

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এই প্রকল্প থামাতে নানাভাবে চেষ্টা করেছে। ইউরোপের যেসব কোম্পানি খানের সঙ্গে ব্যবসা করছিল, তাদের নির্বাহীদের টার্গেট করা হয়। জার্মানিতে এক নির্বাহীর বাড়িতে বোমা পাঠানো হয়। যদিও তিনি বেঁচে যান, কিন্তু তাঁর কুকুরটি মারা যায়।

আরেকটি বোমা হামলা হয় সুইজারল্যান্ডের কোর-আ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ওপর। এই কোম্পানি পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্পে যুক্ত ছিল। ইতিহাসবিদদের মতে, মোসাদ বারবার হুমকি দিয়েছে, হত্যাচেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তিধর হওয়া ঠেকাতে পারেনি।

সুইজারল্যান্ডের ব্যবসায়ী সিগফ্রিড শার্টলার জানিয়েছেন, মোসাদের এজেন্টরা তাঁকে ও তাঁর কর্মীদের ফোন করে হুমকি দিত। এমনকি জার্মানিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের এক কর্মকর্তা তাঁকে বলেন, এই পারমাণবিক প্রকল্পে সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে। পাকিস্তানের সাবেক পারমাণবিক কর্মকর্তা ফিরোজ খান জানিয়েছেন, ইসরায়েল কোনো মুসলিম দেশের হাতে পারমাণবিক বোমা দেখতে চায়নি।

১৯৮০-এর দশকের শুরুতে ইসরায়েল ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির কাছে কাহুটা পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করে। তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অনুমোদনও দেন। ইসরায়েলি এফ-১৬ ও এফ-১৫ যুদ্ধবিমান ভারতের গুজরাটের জামনগর বিমানঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে ওই হামলা চালানোর কথা ছিল। কিন্তু পরে ইন্দিরা গান্ধী সিদ্ধান্ত বদলে পরিকল্পনা বাতিল করেন।

ইন্দিরার ছেলে রাজীব গান্ধীর আমলে ১৯৮৭ সালে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল সুন্দরজি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করেন, যাতে ওই পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো যায়। ৫ লাখ ভারতীয় সেনা, শত শত ট্যাংক আর সাঁজোয়া যান পাকিস্তান সীমান্তে মোতায়েন করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর চীনও গোপনে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করে। চীন সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম, ট্রিটিয়াম ও বিজ্ঞানী পাঠায়। আর যুক্তরাষ্ট্র তখন শীতল যুদ্ধের কারণে পাকিস্তানকে পাশে পেতে চায়। ১৯৭৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার পাকিস্তানের প্রতি অর্থনৈতিক সহযোগিতা বন্ধ করলেও কয়েক মাসের মধ্যে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর সেই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পরমাণুবিজ্ঞানীদের গোপনে প্রশিক্ষণ দেয় এবং পুরো কর্মসূচির দিকে চোখ বন্ধ রাখে।

কিন্তু শীতল যুদ্ধ শেষ হতেই চিত্র বদলে যায়। ১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পাকিস্তান জানায়, তারা পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজ থামাবে। কিন্তু কাদির খান পরে জানান, প্রকৃতপক্ষে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ গোপনে চলতেই থাকে।

১৯৯৮ সালের ১১ মে ভারত তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। একই মাসে পাকিস্তান বেলুচিস্তানের মরুভূমিতে সফল পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। যুক্তরাষ্ট্র তখন ভারত ও পাকিস্তান, দুই দেশের ওপরই নিষেধাজ্ঞা দেয়। পাকিস্তান হয়ে ওঠে বিশ্বের সপ্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। কাদির খান তখন জাতীয় নায়ক। তাঁর গাড়িবহর ছিল প্রধানমন্ত্রীর মতোই, নিরাপত্তা দিত সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা। তাঁর নামে রাস্তা, স্কুল এমনকি ক্রিকেট দলও গড়া হয়।

টেলিভিশনে এসে কাদির খান ঘোষণা দেন, ‘পারমাণবিক বোমা কে বানিয়েছে? আমি বানিয়েছি। ক্ষেপণাস্ত্র কে বানিয়েছে? আমি বানিয়েছি।’ কিন্তু এর বাইরেও তিনি আরেকটি দুঃসাহসী কাজ করেছিলেন। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি একটি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতেন, যার মাধ্যমে ইরান, উত্তর কোরিয়া ও লিবিয়াকে প্রযুক্তি ও ডিজাইন সরবরাহ করা হতো। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রয়োজনের চেয়ে দ্বিগুণ যন্ত্রপাতি আনাতেন। অতিরিক্ত অংশগুলো তিনি অন্য দেশে বিক্রি করতেন।

ইরানের বিপ্লবী নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি পারমাণবিক বোমাকে ইসলামে নিষিদ্ধ মনে করলেও দেশটির সরকার পাকিস্তানের সামরিক শাসক জিয়াউল হকের কাছ থেকে সাহায্য নেয়। ১৯৮৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ইরানকে পরমাণু বোমা তৈরির কিছু যন্ত্রপাতি দেয়, যদিও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাদির খান পাকিস্তানের জন্য রেখে দেন।

মোসাদ কাদির খানের ওপর নজরদারি করলেও তিনি আসলে কী করছেন, তা তারা বুঝতে পারেনি। পরে মোসাদের প্রধান শাভিত বলেন, যদি তিনি আগে বুঝতেন, তাহলে ‘ইতিহাস বদলাতে খানকে হত্যা করার কথা ভাবতেন।’

এরপর, ২০০৩ সালে লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি মার্কিন সমর্থন পাওয়ার জন্য পুরো নেটওয়ার্ক ফাঁস করে দেন। তিনি জানান, কাদির খান লিবিয়ার জন্যও পরমাণু স্থাপনা বানাচ্ছিলেন। আর এই কাজ চলছিল কিছু স্থাপনা ছাগলের খামার বা মুরগির খামারের ছদ্মবেশে। মিসরের সুয়েজ খাল দিয়ে পাঠানোর সময় যুক্তরাষ্ট্র সেসব যন্ত্রপাতি জব্দ করে। ইসলামাবাদের একটি ড্রাই ক্লিনারের ব্যাগে অস্ত্রের নকশাও পাওয়া যায়।

পরে ২০০৪ সালে কাদির খান স্বীকার করেন, তিনি ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এককভাবে তিনি কাজ করেছেন, পাকিস্তান সরকার জড়িত নয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ তাঁকে ‘আমার বীর’ বলে আখ্যায়িত করেন। তবে মার্কিন চাপের মুখে খানকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়, যা ২০০৯ পর্যন্ত চলে।

গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তির পর কাদির খান বলেন, তিনি প্রথমবার পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তি দিয়ে বাঁচিয়েছেন, দ্বিতীয়বার পুরো দায় নিজের কাঁধে নিয়ে দেশকে রক্ষা করেছেন। ২০০৬ সালে তাঁর প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে, অস্ত্রোপচারে তিনি সুস্থ হন। প্রচুর ধনী হয়ে ওঠা কাদির খান জীবনের শেষদিকে ইসলামাবাদে একটি কমিউনিটি সেন্টার বানান। তাঁর ঘনিষ্ঠদের ভাষায়, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন—যা করেছেন, তা সঠিক ছিল। তিনি পশ্চিমাদের চোখ রাঙিয়ে মুসলিম দেশগুলোকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দিতে চেয়েছিলেন।

এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘তিনি বলতেন, মুসলিম দেশকে প্রযুক্তি দেওয়া কোনো অপরাধ নয়।’ ২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাঁকে ‘জাতীয় প্রতীক’ বলে অভিহিত করেন। এখনো অধিকাংশ পাকিস্তানির কাছে তিনি সেভাবেই স্মরণীয়। ২০১৯ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘দেশবাসী নিশ্চিত থাকতে পারে, পাকিস্তান একটি নিরাপদ পারমাণবিক শক্তি। কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

৬৯ বছর বয়সী এ নেতার ভাষণের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজয়বর্গীয় তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন, সম্রাট শাহজাহান একটি মন্দিরকে কবরে রূপান্তরিত করে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।

বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতাজকে প্রথমে বুরহানপুরে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে তাঁর দেহ এমন একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেই মন্দিরের ওপরই বর্তমান তাজমহল দাঁড়িয়ে রয়েছে।

একই অনুষ্ঠানে বিজেপির জাতীয় কার্যকরী সভাপতি নীতিন নবীনের উদ্দেশে বিজয়বর্গীয় বলেন, বিহারে জন্ম নিলেই যে একজন মানুষকে নম্র হতে হবে, তার কোনো মানে নেই, তবে নীতিন নবীন অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই মন্তব্যকে বিহারিদের প্রতি অবমাননাকর হিসেবে দেখছেন অনেকে।

বিজয়বর্গীয়ের এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, বিজেপি মন্ত্রীরা সব সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ভূপেন্দ্র গুপ্ত বিদ্রূপ করে বলেন, একজন মন্ত্রী বলছেন ভাস্কো দা গামা ভারত আবিষ্কার করেননি, আরেকজন বলছেন তাজমহল আসলে মন্দির। তাঁদের উচিত বিশ্ববাসীর জন্য ইতিহাসের একটি নতুন বই লেখা। তাহলেই বোঝা যাবে, পৃথিবী তাঁদের সম্পর্কে কী ভাবে।

ভূপেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, যদি বিহারিদের সম্পর্কে বিজেপির এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে কেন তারা সেখানে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করছে?

তবে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের জন্য বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন।

সম্প্রতি ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলীয় নারী ক্রিকেটার হেনস্তার শিকার হলে তিনি দায়ীদের ধরার বদলে খেলোয়াড়দেরই ‘শিক্ষা নেওয়া’র পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারীদের পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘অল্প পোশাকে’ মেয়েদের দেখলে তাঁর ভালো লাগে না। এ ছাড়া রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আন্তরিকতাকে ‘বিদেশি মূল্যবোধ’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।

অনেকে বলছেন, তাজমহল নিয়ে এমন দাবি উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। তবে একজন দায়িত্বশীল কেবিনেট মন্ত্রীর মুখে এমন কথা সামাজিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ভারত, মধ্যপ্রদেশ, তাজমহল, বিতর্ক, মন্তব্য, মন্ত্রী, মন্দির, ইতিহাস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে

ভারতে বড়দিন উদ্‌যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।

নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করেন।

তবে বড়দিন উদ্‌যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপিশাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালান এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেন। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে বিজেপিশাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্‌যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।

রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তরচেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রিসমাসের প্রার্থনায় পুতিনের মৃত্যু চাইলেন জেলেনস্কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।

পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’

তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’

একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।

দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।

এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৭
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত