Ajker Patrika

নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ২০%, সংকটে ঠিকাদারেরা

রেজাউর রহিম, ঢাকা 
আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১৪: ১৫
নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ২০%, সংকটে ঠিকাদারেরা

দেশে সিমেন্ট-রডসহ নির্মাণকাজের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম দিন দিন মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়ছে। চলতি বছর দেশে অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যহত হচ্ছে। এতে সংকটের মুখে পড়েছে পুরো নির্মাণ খাত এবং এর সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টরা।

নির্মাণসামগ্রীর মধ্যে সিমেন্ট, রড ও ইটের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এ অবস্থায় সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি অনেক অবকাঠামো নির্মাণকাজ ব্যাহত হচ্ছে। একদিকে করোনা মহামারি, অন্যদিকে প্রায় এক বছর ধরে দেশে রড, সিমেন্ট ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর দামের ঊর্ধ্বগতির ফলে এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

রডের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি টনের দাম এখন ৭৫ হাজার টাকায় উঠেছে। দাম বেড়েছে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত অ্যাঙ্গেল, শিট, মোটা ও পাতলা প্লেট, বালি, পাথর এবং সিমেন্টের। এই পরিস্থিতিতে আবাসন খাতেও চলছে প্রায় স্থবির অবস্থা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের হাতে এখন ছোট-বড় ও মাঝারি বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ২ হাজার প্রকল্পের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণকাজও চলমান। এ ছাড়া আবাসন চাহিদা পূরণেও খাতসংশ্লিষ্টদের হাতে রয়েছে সহস্রাধিক প্রকল্প। উৎপাদনমুখী বিভিন্ন খাতেও শিল্প কারখানার নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে।

উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রাখা এবং বাজারে মূল্য স্থিতিশীল রাখতে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ইস্পাত ও সিমেন্ট শিল্পে আগাম কর প্রত্যাহার করে। পাশাপাশি লৌহজাত পণ্য প্রস্তুতে ব্যবহার্য কয়েকটি কাঁচামাল, স্ক্র্যাপ ভেসেল ও পিভিসি, পিইটি রেজিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ইথানল গ্লাইকলসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে আগ্রীম করও অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দাম না কমে বরং বাজারে নির্মাণসামগ্রীর দাম আরও বেড়েছে। কতটা বেড়েছে?

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত রডের দাম গড়ে ৪০ শতাংশ, পাথর প্রায় ৩৫, সিমেন্ট প্রায় ১৫ এবং ইটের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর প্রভাবে চলতি বছর দেশে অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।

রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামীন বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণে এখন নতুন কোনো প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, নির্মাণ উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে আবাসন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উন্নয়নকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, নির্মাণ সামগ্রীর দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ায় সরকারি-বেসরকারি খাতের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড আগের নির্ধারিত দরপত্রের মূল্যে সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় চলমান অনেক প্রকল্পকাজের গতিও কমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকায় থাকা (মেগা প্রকল্প) পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেলসহ হাতেগোনা কয়েকটি প্রকল্প ছাড়া অন্য সব প্রকল্পে অনেকটাই অচলাবস্থা বিরাজ করছে।

প্রকৌশল বিধি অনুযায়ী অবকাঠামোগত প্রকল্পের গুরুত্ব অনুযায়ী ৩৮ থেকে ৪২ শতাংশ রড, ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ ইট বা পাথর এবং ১৮-২২ শতাংশ পর্যন্ত সিমেন্ট ব্যবহার করতে হয়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মার্চ থেকে বাড়তে থাকা রডের দাম জুন মাসের দিকে কিছুটা কমে টনপ্রতি ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকায় নেমে আসে। এর পর করোনা পরিস্থিতির কারণে টানা লকডাউনের মধ্যে আবার বাড়তে থাকে দাম। বর্তমানে ভালো মানের রডের টনপ্রতি দাম ৭৫ হাজার টাকায় উঠেছে। চার মাস আগে মোটা প্লেট প্রতি টন ৬০ হাজার টাকা থাকলেও, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ টাকায়। বাজারে পাতলা প্লেটের দাম প্রতি টনে ৭৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে এখন ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। কয়েক মাস আগেও এক টন অ্যাঙ্গেলের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫২ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকায় উঠেছে।

রডসহ এই পণ্যগুলোর দাম বাড়ার পেছনে কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারের কথা বলা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঁচামালের দাম বাড়ায় রডের দাম বেড়েছে। তবে উৎপাদন পর্যায়ের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়েছে অভিযোগ খুচরা ব্যাবসায়ীদের। নির্মাণ সামগ্রী বিক্রেতারা জানান, বিশ্ববাজারে এসব নির্মাণ সামগ্রীর কাঁচামাল ও জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে দেশীয় উৎপাদকেরা দাম ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছেন।

দেশে বর্তমানে ছোট-বড় প্রায় ৪০০টি ইস্পাত কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৮০ লাখ টন। আর অভ্যন্তরীণ ইস্পাত ব্যবহারের পরিমাণ ৭৫ লাখ টন। বাংলাদেশে স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) সূত্র জানায়, স্টিল ও রডের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বিলেট ও স্ক্র্যাপের প্রায় শতভাগ আমদানিনির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে এ কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ছয় মাস আগে প্রতি টন স্ক্র্যাপের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ছিল ২৭০-৩৫০ ডলারের মধ্যে। এখন তা ৫৬০-৫৭০ ডলারে উঠেছে। বিলেটের বাজারমূল্য ছিল ৭৫০-৮০০ ডলারের মধ্যে। এখন তা ১ হাজার ৩৫০ ডলার ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া মেল্টিং মেটাল আমদানিতেও ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

একই অবস্থা সিমেন্টের ক্ষেত্রেও। চার মাস আগে প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের দাম গড়ে ৪০০ টাকা থাকলেও এখন তা বেড়ে ৪৪০ থেকে ৪৭০ টাকা হয়েছে। দেশে বর্তমানে ৩৪টি সিমেন্ট কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৪ কোটি টন। কিন্তু বর্তমানে চাহিদা থাকলেও আড়াই থেকে সোয়া ৩ কোটি টন সিমেন্ট উৎপাদন করছে এ কোম্পানিগুলো। 

সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ক্লিঙ্কার আমদানি ও জাহাজভাড়া বাড়ায় টনপ্রতি ক্লিংকারের দাম পড়ছে এখন ৫৫ থেকে ৫৬ ডলার। গত অর্থবছরেও দেশে ১ কোটি ৮৭ লাখ টন ক্লিঙ্কার আমদানি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধির কারণে আমদানি খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশে সিমেন্ট উৎপাদনে এবং সেই সূত্রে সিমেন্টের দামে।

বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সভাপতি আলমগীর কবির বলেন, দেশে সিমেন্ট উৎপাদনের কাঁচামাল ক্লিঙ্কারের ৭৫ শতাংশ আমদানিনির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে এই ক্লিঙ্কারের দাম বাড়ার পাশাপাশি দেশে জাহাজীকরণের খরচও বেড়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ায় এখন দেশে প্রস্তুত সিমেন্টের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে দ্বৈত কর সমন্বয় জরুরি।

এদিকে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বিএসিআই) সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণ সামগ্রীর মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণে বাড়তি খরচ সমন্বয়ের সুযোগ না থাকায় ঠিকাদারেরা লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারেরা কাজ চালিয়ে নিতে হিমসিম খাচ্ছেন। এতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নও হুমকির মুখে পড়েছে। 

বিএসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও স্বনামধন্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠান দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর ব্যয় দরপত্রের সময় নির্ধারণ হয়। প্রকল্প সম্পাদনের নির্দিষ্ট সময়ও এই দরপত্রে উল্লেখ থাকে। কিন্তু দেশে নির্মাণ সামগ্রীর দাম লাগামহীনভাবে বাড়ায় অনেক প্রকল্পের কাজ এখন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। 

বেড়েছে ইটের দামও। বর্তমানে ১ হাজার ভালো মানের ইট বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকায়, আর দ্বিতীয় গ্রেডের ইট বিক্রি হচ্ছে ৯ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকায়। অথচ ভালো মানের ইটের দাম কয়েক মাস আগেও ছিল ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। ইট পোড়ানোর প্রধান কাঁচামাল কয়লার দাম ও এর আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এমনটা হয়েছে। প্রতি টন কয়লার দাম বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার টাকা, যা কয়েক মাস আগেও ছিল ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা।

এদিকে নির্মাণকাজের আরেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পাথরের দামও বেড়েছে। প্রায় ২৫ টাকা বেড়ে ভোলাগঞ্জের প্রতি ঘনফুট পাথর এখ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে ভারতীয় কালো পাথর বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকায়, আর দুবাইয়ের পাথর ১৮৫ টাকায়। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের বালি। বর্তমানে প্রায় তিন টাকা বেড়ে প্রতি ঘনফুট সাদা বালি বিক্রি হচ্ছে ১৬ টাকা দরে। আর লাল বালি প্রতি ঘনফুট বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়, যা কয়েক মাস আগেও ছিল ৪০ টাকা। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) তথ্যমতে, প্রতি বছর দেশে পাথরের চাহিদা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টন। এর প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানিনির্ভর। প্রতি বছর দেশে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টন পাথর আমদানি করতে হয়। ফলে পাথর ও বালির দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে নানা নির্মাণ প্রকল্পের ওপর।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন

বিএসিআইয়ের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বলেন, জরুরি বিবেচনায় কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও উপকরণের বাড়তি দামের কারণে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন ঠিকাদারেরা। এ অবস্থায় নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে মূল্য সমন্বয় (প্রাইস আ্যডজাস্টমেন্ট) জরুরি। না হলে ঠিকাদারেরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়বেন। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলসে (পিপিআর) ভবিষ্যতে সব দরপত্রের মূল্য সমন্বয়ের ধারা অন্তর্ভুক্ত না করলে প্রকল্পের বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও ঠিকাদারদের লোকসান কমানো যাবে না। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে বিএসিআই আলোচনা করছে।

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই নিলামে বিক্রির যে ব্যাখ্যা দিল বাংলা একাডেমি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সংগ্রহে থাকা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই নিলামে বিক্রি করা নিয়ে সম্প্রতি যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলা একাডেমি।

আজ রোববার এক বিবৃতিতে একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেছেন, ‘দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে ৮ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে “জাহানারা ইমামের দেওয়া বই বিক্রি করেছে বাংলা একাডেমি, এখন দাম হাঁকা হচ্ছে লাখ টাকা” শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে কিছু আংশিক সত্য উপস্থাপন করা হয়েছে; কিছু অংশ এমনভাবে হাইলাইট করা হয়েছে, যাতে প্রতিবেদনে অন্য রকম উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও পাঠক বিভ্রান্তির মধ্যে পড়বেন।

অনলাইনে বিভ্রান্তিকর শিরোনাম ও হাইলাইটস ব্যাপকভাবে টেমপ্লেট আকারে প্রচারিত হয়েছে। অন্য অনেকে একই ধরনের হাইলাইট ব্যবহার করে সংবাদ প্রচার করেছে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বভাবতই এ স্পর্শকাতর বিষয়ে বহুজন নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছেন। বহুজনের মনোযোগের বিষয় হয়ে ওঠার কারণে আমরা শুধু সংশ্লিষ্ট পত্রিকায় বাংলা একাডেমির বক্তব্য না পাঠিয়ে সাধারণ বিবৃতি আকারে দিচ্ছি। আশা করি, সংশ্লিষ্ট পত্রিকা বিষয়টি যথাযথভাবে উপস্থাপন করবে এবং অন্যরাও বিষয়টি সম্পর্কে পুনর্মূল্যায়ন করতে পারবেন। প্রয়োজনে প্রকৃত তথ্য-উপাত্তসহ সংবাদ পরিবেশনেরও সুযোগ তৈরি হবে।’

মোহাম্মদ আজম বলেন, বাংলা একাডেমি গত ২৫/৬/২৫ থেকে ২৩/১০/২৫ তারিখে পরিত্যক্ত হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মজুত করা কয়েক হাজার বই ও অন্য কাগজপত্র বিধিমোতাবেক নিলামে বিক্রি করে। এর মধ্যে আছে বইমেলায় জমা হওয়া বিপুলসংখ্যক বই, যে বইগুলো প্রতি বছর কমিটির মাধ্যমে বাছাই করে মানহীন ও পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়; আছে গ্রন্থাগারের যে বইগুলো ব্যবহার অযোগ্য ঘোষিত হয়, সেগুলো এবং বাংলা একাডেমির নিজস্ব প্রকাশনার যেসব বই নানা কারণে বিক্রয় অযোগ্য হয়ে ওঠে, সেগুলো। এ ধরনের বইপুস্তক বহুদিন ধরে গ্রন্থাগারসংলগ্ন একটি ঘরে গুদামজাত করা হয়। এটি পরিত্যক্ত বইয়ের গুদাম। এখানকার বইগুলোই সম্প্রতি নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। এসব বই এখন বিক্রি করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে এ জন্য যে, এ ঘর সম্পূর্ণ ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। আগামী মেলায় প্রাপ্ত বই ও অন্য সব কারণে পরিত্যক্ত হওয়া সম্ভাব্য বই রাখার কোনো জায়গা ওই ঘরে আর অবশিষ্ট ছিল না। ফলে ঘর খালি করার প্রয়োজন হয়েছিল। বিক্রির আগে গ্রন্থাগার ও সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হয়েছিল। তারা নিশ্চিত করেছে যে, এগুলো বহু বছর ধরে জমা হওয়া পরিত্যক্ত বই।

মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘এখন প্রশ্ন, বাংলা একাডেমি কি জাহানারা ইমাম, আহমদ শরীফ, মুক্তাগাছা সংগ্রহ বা অন্য কোনো তালিকার বই বিক্রি করেছে? আসলে এ ধরনের কিছুই ঘটেনি। কয়েক বছর আগে থেকে জাহানারা ইমামসহ অন্যদের দেওয়া বইগুলো যেভাবে ছিল ঠিক সেভাবেই আছে। এ বিষয়ে কোনো নতুন কমিটি গঠিত হয়নি, বা সংগ্রহশালা পুনর্মূল্যায়নের কোনো ঘটনাও ঘটেনি। অন্তত এক দশক ধরে জমা হওয়া পরিত্যক্ত বইগুলোই কেবল বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে গত এক বছরে নতুন যুক্ত হয়েছে কেবল গত বছরের বইমেলায় প্রাপ্ত মানহীন ও পরিত্যক্ত ঘোষিত বইগুলো। বর্তমান বিতর্কের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে জরুরি প্রশ্নটি হলো, তাহলে এ তালিকায় জাহানারা ইমাম সংগ্রহের বেশ কিছু বই কীভাবে যুক্ত হয়েছে?’

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে “বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগার পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত কমিটি” গঠিত হয়। এ কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৩. ০১. ২০১৪ তারিখ সোমবার বিকাল ৫ টায়। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন জনাব শামসুজ্জামান খান, অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, ফরিদা পারভীন, রেজিনা আক্তার ও মো. মোবারক হোসেন। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের ২য়টি ছিল–‌“একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে সে অনুযায়ী গ্রন্থাগার থেকে কিছু বই ছাঁটাই করতে হবে। এজন্য মো. মোবারক হোসেন, অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ, সুব্রত বড়ুয়া, বিশ্বজিৎ ঘোষ ও রেজিনা আক্তার–এই পাঁচ ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি উপকমিটি গঠন করা হলো।” এ কমিটি দীর্ঘদিন ধরে অনেকগুলো সভা করেছে এবং কোন বইগুলো গ্রন্থাগারে থাকবে না তা নির্ধারণ করেছে।’

মহাপরিচালক বলেন, ‘বাংলা একাডেমিতে রক্ষিত তালিকা থেকে দেখা যায়, পরিবারের পক্ষ থেকে জাহানারা ইমামের মোট ৩৫৯টি বই দেওয়া হয়েছিল। বাছাইয়ের পরে অধিকাংশ বই সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট হয়। “বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগারে সংরক্ষণার্থে গ্রন্থ বাছাই কমিটির বাছাইকৃত গ্রহণযোগ্য বইয়ের তালিকা (জাহানারা ইমাম)” প্রণয়ন করা হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। ওই বইগুলো বাংলা একাডেমির নির্দিষ্ট সেলফে মজুদ আছে। সেখানে বইয়ের সংখ্যা ৩০৮টি। তিনতলার নির্ধারিত স্থানে যে কেউ বইগুলো দেখতে এবং ব্যবহার করতে পারবেন। জাহানারা ইমামসহ অন্য সংগ্রহের যেসব বই গ্রন্থাগারের জন্য উপযোগী বিবেচিত হয়নি, সেগুলো আলাদা করে আর্কাইভ করা যেত। কিন্তু এ ধরনের পরিকল্পনা তখনকার দায়িত্বশীলরা কেন করেননি তা এখন অনুমান করা কঠিন। তখন একাডেমি-প্রশাসনের প্রধান পদগুলোতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনেকেই গত হয়েছেন; অন্যরাও এখন আর একাডেমিতে কর্মরত নেই। তখন গ্রন্থাগারের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরাও কেউ নেই। ফলে এই পরিত্যক্ত বইয়ের ভান্ডারে জাহানারা ইমাম সংগ্রহের কোনো বই তো দূরের কথা, কোনো ব্যবহার্য বই থাকতে পারে এমন দূরতম অনুমান করারও বাস্তবতা ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমির বর্তমান দায়িত্বরতদের সম্পর্কে বলা যায়, বইগুলো বিক্রির আগে আরেকবার পরীক্ষা করা যেত। কিন্তু বইয়ের সংখ্যা ছিল আক্ষরিক অর্থেই হাজার হাজার। তদুপরি, গুরুত্বপূর্ণ কোনো বই এখানে থাকতে পারে, এমন সম্ভাবনাও সংশ্লিষ্ট কারো অভিজ্ঞতায় ছিল না। এমতাবস্থায়, প্রথম আলোর প্রতিবেদক সাদিয়া মাহ্‌জাবীন ইমামের প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাংবাদিকতার একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ প্রতিবেদকের সাথে আমার বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। তাঁকে পুরো বিষয়টি অনেকবার বলা হয়েছে। তবু তিনি এমন শিরোনাম করেছেন, যাতে মনে হবে, জাহানারা ইমামের বই আলাদা করে অথবা শনাক্ত করে অথবা ইচ্ছা করে বিক্রি করা হয়েছে এবং কাজটা করেছে বর্তমান প্রশাসন। তিনি লিখেছেন, “বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম অবশ্য বলছেন, ২০১৪ সালে গঠিত একটি কমিটি একাডেমির সংগ্রহশালায় একাধিক কপি থাকা এবং অসংরক্ষণযোগ্য কিছু বই বাতিল বলে নির্ধারণ করেছিল, সেগুলোই বিক্রি করা হয়েছে।” এ বাক্য পড়লে যে কারো মনে হবে, বইগুলো আলাদা করে রাখা ছিল। মোটেই তা নয়। বইগুলো বহু বছর আগে থেকেই কয়েক হাজার বইয়ের পরিত্যক্ত মজুদের সাথে রাখা ছিল এবং সে তথ্য এখন কর্মরত একাডেমির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে ছিল না।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একই ভঙ্গি অক্ষুণ্ন রেখে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, “বাড়তি কিংবা অসংরক্ষণযোগ্য বই বিক্রির যুক্তি বাংলা একাডেমি দিলেও এক্ষেত্রে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের নীতি পরিপন্থি কাজ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশে এবং বিদেশে গ্রন্থাগার পরিচালনার কাজে যুক্ত থাকা বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী।” তিনি বলছেন, বিশিষ্ট ব্যক্তির সংগ্রহশালার বই এভাবে বিক্রি করা “স্পষ্ট অন্যায়”। বাংলা একাডেমি আসলে “বাড়তি কিংবা অসংরক্ষণযোগ্য বই বিক্রির যুক্তি” দেয়নি। প্রায় এক যুগ আগে সংঘটিত একটা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে কেবল। যেখানে বইগুলো চিহ্নিতই ছিল না, সেখানে “স্পষ্ট অন্যায়”টা কার, তা স্পষ্ট না করে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেন জাহানারা ইমামের বইগুলোই বিক্রি করা হয়েছে। তাঁর অসঙ্গত মনোভাব এবং উদ্দেশ্য প্রকাশ পেয়েছে প্রতিবেদনের এ অংশে–“বাংলা একাডেমির নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় জাহানারা ইমামসহ কয়েকজনের ব্যক্তিগত বইয়ের সংগ্রহ এখনো আছে। সেখানে আলমারির ওপর নাম লিখে রাখা আছে, কার সংগ্রহ কোনটি। তার কিছু বই–ই বিক্রি করা হয়েছে।” এ অংশ, বিশেষত শেষ লাইনটি পড়লে যে কারো মনে হবে, আলমারিতে রাখা বইগুলো থেকে কিছু বই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা উপরে ব্যাখ্যা করেছি যে, ঘটনা এর ধারেকাছেও কিছু নয়।’

মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘প্রতিবেদক ছাঁটাই কমিটি সম্পর্কেও মনগড়া তথ্য দিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার বাংলা একাডেমির গ্রন্থাগার বিভাগের ছিল বলে জানান ওই উপকমিটির সদস্য রেজিনা আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোন বইটি বাতিল করা হবে বা সংরক্ষণযোগ্য না, সে সিদ্ধান্ত নেয় গ্রন্থাগার বিভাগ।” আসলে যাচাই-বাছাই না করে স্রেফ একজন সদস্যের কথার ভিত্তিতে এখানে যা বলা হয়েছে, তা মোটেই সত্য নয়। আমি এখানে ১৭/৭/২০১৪ তারিখ বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় অনুষ্ঠিত ছাঁটাই উপকমিটির ষষ্ঠ সভার উপস্থিতিপত্র যোগ করছি। কমিটি গঠিত হওয়ার এক মাসের মধ্যে এতগুলো সভায় সদস্যগণ বই বাছাইয়ের কাজ করেছিলেন বলে গ্রন্থাগারের তখনকার কর্মী এবং ছাঁটাই কমিটির একজন সদস্য নিশ্চিত করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এ কমিটি পরে আরো বহুদিন কাজ করেছেন। যদি তাঁরা বই বাছাইয়ের কাজই না করবেন, তাহলে এতগুলো সভা কেন হলো?”

তিনি বলেন, ‘আমি এ প্রতিবেদককে ২০১৪ সালে গঠিত কমিটির রিপোর্টসহ আরো লিখিত তথ্য দিয়েছি। এবং অনুরোধ করেছি, তিনি যেন সরেজমিন ব্যাপারটা দেখেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর এত সময় নেই। স্পষ্টতই খুব স্পর্শকাতর একটি ইস্যুকে পুঁজি করে “ভাইরাল” প্রতিবেদন প্রণয়নই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। তার অন্যতম প্রমাণ এই যে, আহমদ শরীফ, সিকান্‌দার আবু জাফরসহ আরো কয়েকজনের বই পাওয়া গেলেও তিনি সে তথ্যটিকে উচ্চকিত হতে দেননি। আমরা সংবাদমাধ্যম এবং আগ্রহী সকলকে অনুরোধ করব, তাঁরা যেন বাংলা একাডেমির গ্রন্থাগারে এসে সংগ্রহশালা দেখেন। তাহলেই বোঝা যাবে, বহু বছর আগে এ সংগ্রহশালার যে তালিকা নির্দিষ্ট করা হয়েছিল, তা অক্ষত আছে। জাহানারা ইমামসহ আমাদের দেশের শ্রদ্ধেয় মানুষদের বেশ কিছু বই বাংলা একাডেমির সিলসহ নীলক্ষেতে কিংবা অনলাইন প্লাটফর্মে বিক্রি হচ্ছে–এ ঘটনায় নিঃসন্দেহে বাংলা একাডেমির দায় আছে। কিন্তু বহু বছর আগে ঘটে যাওয়া একটা দায় কৌশলে বহুগুণ বাড়িয়ে বর্তমান প্রশাসনের ওপর বর্তানো নিশ্চয়ই সুরুচির পরিচয় নয়, সাংবাদিকতার তো নয়ই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত, অবস্থান কর্মসূচি চলবে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান পালন করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান পালন করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারের আশ্বাসে কর্মবিরতির কর্মসূচি ‘আপাতত’ স্থগিত করেছেন আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা। তবে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে।

সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আজ রোববার (৯ নভেম্বর) রাতে এ তথ্য জানান প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ। তিনি বলেন, আগামীকাল সোমবার বিকেল ৫টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবার বৈঠক হবে। সরকারের আশ্বাসে আপাতত কর্মবিরতি কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তবে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চলবে।

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর গতকাল শনিবার কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ফলে দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে আজ বন্ধ ছিল পাঠদান কার্যক্রম।

কর্মবিরতির পাশাপাশি প্রধান কর্মসূচি হিসেবে রাজধানীর শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকেরা। এ সময় তাঁরা ‘পুলিশের হামলার প্রতিবাদে’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের পদত্যাগ দাবি করেন।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বিকেলে বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালাব। তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না করা, শাহবাগে নিরীহ শিক্ষকদের ওপর অতর্কিতে হামলা, রাবার বুলেট, জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে শত শত শিক্ষককে আহত করার দায় হিসেবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছি।’

শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ১১৪ নম্বর ওমর ব্যাপারীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ‘দাবি আদায় বা কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত লাগাতার ক্লাস বর্জন করে কর্মবিরতি পালন করা হবে। শিক্ষকদের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

বরিশালের হিজলা উপজেলার পশ্চিম চরবাউশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ হাসান মাহমুদও জানিয়েছেন কর্মবিরতি চলার কথা।

এদিকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেকাংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছে। এ মোর্চাভুক্ত সংগঠনগুলোর শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন না।

দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও শিক্ষকদের বাকি দুটি দাবি হলো চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা। দাবি আদায়ে শনিবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ‘কলমবিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় শাহবাগ থানার সামনে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস শেল নিক্ষেপে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় শতাধিক আহত হওয়ার দাবি করেন শিক্ষকেরা।

পরে শহীদ মিনারে ফিরে এসে আজ থেকে কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষকেরা। আর শনিবার মধ্যরাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে শিক্ষকেরা ‘পুলিশের হামলার’ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন দুই ধাপ বাড়িয়ে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বছরে অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ৮৩১ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে লিখিতভাবে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তার আগে একই প্রস্তাব অর্থ বিভাগেও পাঠানো হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কাজের গুণগত ও পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বাড়িয়ে ১০তম করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সম্মতি দিয়েছেন। তাই যৌক্তিকতা বিবেচনা করে সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১১তম গ্রেডে উন্নীত করা প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আরও ১৪ জেলায় নতুন ডিসি

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৩
আরও ১৪ জেলায় নতুন ডিসি

আরও ১৪ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে দুজন ডিসির জেলা বদল এবং ১২ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আজ রোববার (৯ নভেম্বর) নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। গতকাল শনিবার রাতে ১৫ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয় সরকার। এ নিয়ে দুদিনে ২৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হলো।

নড়াইলের ডিসি শারমিন আক্তার জাহানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং মেহেরপুরের ডিসি ড. মোহাম্মদ আব্দুল ছালামকে নড়াইলের ডিসি পদে বদলি করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদকে ঝিনাইদহ, খুলনার ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মো. ইউসুপ আলীকে জামালপুর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব লুৎফুন নাহারকে মেহেরপুর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসলাম মোল্লাকে কিশোরগঞ্জ, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মমিন উদ্দিনকে ঝালকাঠি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপসচিব মো. আরিফ-উজ-জামানকে গোপালগঞ্জের ডিসি করা হয়েছে।

এ ছাড়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ কামাল হোসেন চুয়াডাঙ্গা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী মো. সায়েমুজ্জামান পঞ্চগড়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক (উপসচিব) মো. আল-মামুন মিয়া জয়পুরহাট, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাইফুর রহমান ময়মনসিংহ, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক নাজমুন আরা সুলতানা মানিকগঞ্জ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক (উপসচিব) মো. নাজমুল ইসলাম সরকার চাঁদপুরের ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০২৬ সালের কোন দিন কিসের ছুটি, তালিকা দেখুন

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ৫৮
২০২৬ সালের কোন দিন কিসের ছুটি, তালিকা দেখুন

উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর সব সরকারি ও আধা সরকারি অফিস, সংবিধিবদ্ধ, স্বায়ত্তশাসিত এবং আধা সরকারি সংস্থার ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-৬ শাখা আজ রোববার এক প্রজ্ঞাপনে এই তালিকা প্রকাশ করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়। আগামী বছর নির্বাহী আদেশে ২৮ দিন সরকারি ছুটি থাকবে। এর মধ্যে ১১ দিন পড়েছে শুক্র ও শনিবার।

২০২৪ সাল পর্যন্ত নির্বাহী আদেশে ২২ দিন সাধারণ ছুটি ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২৫ সালে রোজার ঈদে পাঁচ দিন, কোরবানির ঈদে ছয় দিন এবং দুর্গাপূজায় দুই দিন করে ছুটি ঘোষণা করেছিল। ফলে সাধারণ ছুটি বেড়ে ২৮ দিন হয়।

২০২৬ সালেও রোজার ঈদে পাঁচ দিন, কোরবানির ঈদে ছয় দিন এবং দুর্গাপূজায় দুই দিন করে ছুটি রাখা হয়েছে।

সাধারণ ছুটি: ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২০ মার্চ জুমাতুল বিদা, ২১ মার্চ ঈদুল ফিতর, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, ১৩ এপ্রিল চৈত্রসংক্রান্তি (শুধু রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার জন্য), ১ মে মে দিবস, ১ মে বুদ্ধপূর্ণিমা (বৈশাখী পূর্ণিমা), ২৮ মে ঈদুল আজহা, ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস, ২৬ আগস্ট ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.), ৪ সেপ্টেম্বর জন্মাষ্টমী, ২১ অক্টোবর দুর্গাপূজা (বিজয়া দশমী), ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং ২৫ ডিসেম্বর যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন (বড়দিন)।

নির্বাহী আদেশে ছুটি: ৪ ফেব্রুয়ারি শবে বরাত; ১৭ মার্চ শবে কদর; ১৯, ২০, ২২ ও ২৩ মার্চ (ঈদের আগের দুই দিন ও পরের দুই দিন) ঈদুল ফিতর; ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ; ২৫, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১ মে (ঈদের আগের দুই দিন ও পরের তিন দিন) ঈদুল আজহা; ২৬ জুন আশুরা এবং ২০ অক্টোবর দুর্গাপূজা (নবমী)।

ঐচ্ছিক ছুটি (মুসলিম পর্ব): ১৭ জানুয়ারি শবে মেরাজ, ২৪ মার্চ ঈদুল ফিতর (ঈদের পরের তৃতীয় দিন), ১ জুন ঈদুল আজহা (ঈদের পরের চতুর্থ দিন), ১২ আগস্ট আখেরি চাহার সোম্বা এবং ২৪ সেপ্টেম্বর ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহাম।

ঐচ্ছিক ছুটি (হিন্দু পর্ব): ২৩ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা; ১৫ ফেব্রুয়ারি শিবরাত্রি ব্রত; ৩ মার্চ দোলযাত্রা; ১৭ মার্চ হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব; ১০ অক্টোবর মহালয়া; ১৮ ও ১৯ অক্টোবর দুর্গাপূজা (সপ্তমী ও অষ্টমী); ২৫ অক্টোবর লক্ষ্মীপূজা এবং ৮ নভেম্বর শ্যামা পূজা।

ঐচ্ছিক ছুটি (খ্রিষ্টান পর্ব): ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ; ১৮ ফেব্রুয়ারি ভস্ম বুধবার; ২ এপ্রিল পুণ্য বৃহস্পতিবার; ৩ এপ্রিল পুণ্য শুক্রবার; ৪ এপ্রিল পুণ্য শনিবার; ৫ এপ্রিল ইস্টার সানডে এবং ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর যিশুখ্রিষ্টের জন্মোৎসব (বড়দিনের আগে ও পরের দিন)।

ঐচ্ছিক ছুটি (বৌদ্ধ পর্ব): ১ ফেব্রুয়ারি মাঘী পূর্ণিমা; ১৩ এপ্রিল চৈত্রসংক্রান্তি (তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া অন্য সব জেলার জন্য); ৩০ এপ্রিল ও ২ মে বুদ্ধপূর্ণিমা; ২৯ জুলাই আষাঢ়ী পূর্ণিমা; ২৬ সেপ্টেম্বর মধু পূর্ণিমা (ভাদ্র পূর্ণিমা) এবং ২৫ অক্টোবর প্রবারণা পূর্ণিমা (আশ্বিনী পূর্ণিমা)।

ঐচ্ছিক ছুটি (পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা ও এর বাইরে কর্মরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত কর্মচারীদের জন্য): ১২ ও ১৫ এপ্রিল বৈসাবি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর অনুরূপ সামাজিক উৎসব।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, একজন কর্মচারীকে তাঁর নিজ ধর্ম অনুযায়ী বছরে সর্বোচ্চ তিন দিনের ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করার অনুমতি দেওয়া যাবে। তবে এ জন্য বছরের শুরুতে প্রত্যেক কর্মচারীকে নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী তিন দিনের ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করার জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনুমোদন নিতে হবে। সাধারণ ছুটি, নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি এবং সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে যুক্ত করে ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করার অনুমতি দেওয়া যাবে।

যেসব অফিসের সময়সূচি ও ছুটি তাদের নিজস্ব আইনকানুন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয় অথবা যেসব অফিস, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের চাকরি সরকার অত্যাবশ্যক হিসেবে ঘোষণা করেছে, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অফিস, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আইনকানুন অনুযায়ী জনস্বার্থ বিবেচনা করে এই ছুটি ঘোষণা করবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত