Ajker Patrika

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক

দায়িত্বে অবহেলায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের শাস্তি বাড়ছে

  • গড়িমসি করলে শাস্তি পাবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষও।
  • ইসির অধীনেই থাকছে এনআইডি সেবা।
  • ইসির জনবল নিয়োগে নির্বাচন কমিশন সার্ভিস।
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩: ২৯
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি

নির্বাচনের দায়িত্বে অবহেলার জন্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জেল-জরিমানার পরিমাণ বাড়াতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, দায়িত্বে অবহেলাকারীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করলে তাদের বিরুদ্ধেও শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং অর্থ-সংক্রান্ত কতিপয় আইন (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ এবং নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়া গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।

নির্বাচন কর্মকর্তার সংজ্ঞা পরিবর্তন করে কারা কারা এ দায়িত্বে থাকবেন, তা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান আইন অনুযায়ী, কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশন বা ক্ষেত্রমতো রিটার্নিং কর্মকর্তার কোনো আদেশ বা নির্দেশ পালন না করলে বা অস্বীকৃতি জানালে বা নির্বাচন-সংক্রান্ত কোনো আইনের বিধান ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করলে বা এর অধীন কোনো অপরাধ করলে তিনি অসদাচরণ করেছেন বলে গণ্য হবে। এ জন্য কমিশন, কমিশনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা কমিশনের সম্মতিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা চাকরিবিধি অনুযায়ী দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিতে পারবেন।

বর্তমান আইনে বলা আছে, কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা অসদাচরণ করলে তাঁর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণ, বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর, পদাবনতি, পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি অনধিক দুই বছরের জন্য স্থগিত করতে পারবেন।

নির্বাচনী দায়িত্বে পালনে অসদাচরণের জন্য কোনো নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিশন, কমিশনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা কমিশনের সম্মতিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা বা কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তাব পাঠাবেন। এ প্রস্তাব পাওয়ার এক মাসের মধ্যে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। এই আদেশ পালন বা কার্যকর না করলে সংশ্লিষ্টদের সর্বনিম্ন ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর জেল, ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। এত দিন এই অপরাধের জন্য ৬ মাস কারাদণ্ড, ২ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হতো।

আইনে নতুন ধারা যুক্ত করে বলা হয়েছে, কমিশনের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নথি, চাকরি বই এবং বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে লিপিবদ্ধ ও ডসিআরে অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং এ বিষয়ে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। সরকার ও কমিশনের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো মতভেদ দেখা দিলে কমিশনের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিতে হবে। কমিশনের কাছে যদি প্রতীয়মান হয়, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তব্যে অবহেলা করেছেন, তাহলে ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কমিশন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

এত দিন কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা দায়িত্ব গ্রহণে বা পালনে অপারগতা বা অস্বীকৃতি জানালে ১ বছর কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দেওয়া হতো। আইন সংশোধন করে এই অপরাধের জন্য ১ বছর কারাদণ্ডের সঙ্গে অর্থদণ্ড বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা হয়েছে, চাইলে উভয় দণ্ডও দেওয়া যাবে।

গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন পরিচালনায় যাঁরা অবহেলা করবেন তাঁদের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের কাজকে গতিশীল করা এবং তাদেরকে আরও শক্তিশালী করা। নির্বাচনকালে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেন তাঁদেরকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা এবং শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আগে শাস্তির বিষয়টি স্পষ্ট ছিল না।

ইসির অধীনেই থাকছে এনআইডি

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এত দিন জাতীয় নির্বাচনের ভোটার তালিকা প্রস্তুত করত। আইন সংশোধন করে তাদের ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার প্রস্তুত ও সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বর্তমান আইনে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন করা রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ ও সংরক্ষণকরণের দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের। এ দায়িত্বের সঙ্গে তাদের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের রেজিস্টার সংরক্ষণ, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং সংলাপ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ভোট গ্রহণের রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেট, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং পোলিং অফিসারদের জন্য প্যানেল তৈরি এবং নিয়োগ করাদের তালিকা সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়াও হয়েছে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য নির্বাচন কমিশন সার্ভিস নামে একটি সার্ভিস থাকবে। এই সার্ভিস প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান আইনের ৩(৪) ধারা বহাল থাকবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইনের ৩(৪) ধারায় বলা আছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিযুক্ত একজন সচিব এবং অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত হবে।

এনবিআর-সংক্রান্ত আইনের সংশোধনীর বিষয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্স-সংক্রান্ত বিষয়ে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক ট্রেজারি বন্ডের ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।

সংস্কার নিয়ে আলোচনা

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চলমান সংস্কার পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ১২১টি সংস্কার নিয়ে প্রথম ধাপে কাজ শুরু হয়েছিল। বৈঠকে জানানো হয়েছে, ৭৭টি অতিগুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের মধ্যে ২৪টি ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে, আর আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে ১৪টি, বাকিগুলো বাস্তবায়নের পথে।

সংস্কার বাস্তবায়নে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বাইরে যে বিষয়গুলো তাঁরা সংস্কার করেছেন বা বাস্তবায়ন করেছেন, তার একটি তালিকা তৈরি করার জন্য বলা হয়েছে। সংস্কার কমিশন যেসব সংস্কারের সুপারিশ দিয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সংস্কার প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে হয়েছে। একটা বুকলেট করে সংস্কার তুলে ধরা হবে।

‘বাংলাদেশ ও চীন হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে’

বাসস জানায়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ ও চীন তাদের ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে এগিয়ে যাবে, যা উভয় দেশ ও বিশ্বের জনগণের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও সুখ বয়ে আনবে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে গত বুধবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে চীনা দূতাবাস আয়োজিত এক জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এক ভিডিও বার্তায় এই মন্তব্য করেন।

প্রধান উপদেষ্টা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জনগণের সেবার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে অর্জিত উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পাশাপাশি গ্লোবাল সাউথ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এর অনুপ্রেরণা ও অবদানের প্রশংসা করেন। চীনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা, সহায়তা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বক্তব্য দেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, প্রধান রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতা, বিদেশি কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, চীনা সম্প্রদায়ের সদস্য, শিক্ষাবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং থিংক ট্যাংক বিশেষজ্ঞসহ ৬০০ জনের বেশি অতিথি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংক: খেলাপি ঋণ আদায় তলানিতে

হাসিনার পতনের আগের দিন ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা হয়: নাহিদ

ডিএমপি কমিশনারের বার্তা: ঝটিকা মিছিল হলে ওসি ও পরিদর্শক প্রত্যাহার

কুমিল্লায় ৪ মাজারে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, পুলিশ-সেনাবাহিনী মোতায়েন

শেষ ওভারে নবির ছক্কাবৃষ্টি, বাংলাদেশের সমীকরণ কী দাঁড়াল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত