Ajker Patrika

পর্যটনে অমিত সম্ভাবনা থাকলেও যে কারণে মালদ্বীপের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ

সাইফুল মাসুম, মালদ্বীপ থেকে ফিরে
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ৩১
পর্যটনে অমিত সম্ভাবনা থাকলেও যে কারণে মালদ্বীপের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ

ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই যার একমাত্র পুঁজি। পর্যটন খাত থেকেই দেশটির মোট দেশীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ৫০ শতাংশের বেশি আসে। বিপরীতে বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ৩ শতাংশের কম। অথচ মালদ্বীপের চেয়ে বাংলাদেশের পর্যটন খাত সংখ্যা ও বৈচিত্র্য—দুই বিচারেই এগিয়ে। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের পর্যটন ব্যবস্থাপনাই পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। 

মোট ১২০০ ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপের স্থলভাগের আয়তন মাত্র ২৯৮ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে সবগুলোতে কিন্তু মানুষের বসতি নেই। দেশটির ৮০০ দ্বীপে কেউ থাকে না। এগুলো ভার্জিন আইল্যান্ড হিসেবে পরিচিত। মাত্র ২০০ দ্বীপে মানুষের বসতি আছে। আর পর্যটনের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা দ্বীপের সংখ্যা শতাধিক। এই দ্বীপগুলোকে বলা হয় রিসোর্ট আইল্যান্ড। একটি দ্বীপ আসলে একটি রিসোর্ট। পর্যটনের জন্য এই দ্বীপগুলোর মধ্যে ৭০-৮০টি বিভিন্ন দেশকে ইজারা দিয়েছে দেশটি। 

এবার একটু বাংলাদেশের দিকে তাকানো যাক। টুরিস্ট পুলিশের পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে পর্যটকদের আকর্ষণের মতো ১৬৭৫টি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। শুধু সংখ্যায় নয়, এই পর্যটন স্থানগুলো বৈচিত্র্যের দিক থেকেও মালদ্বীপ থেকে এগিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশ নিজেদের এই শক্তিকে কাজে লাগাতে পারছে না। 

দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে সাগর ও সৈকত। বৈচিত্র্য বলতে এর গঠনশৈলী ও সংশ্লিষ্ট রিসোর্ট-প্রদত্ত নানা সেবা ও সুবিধা। অন্যদিকে বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলো একটি থেকে অন্যটি আলাদা। এখানে যেমন আছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, তেমনি আছে সেন্ট মার্টিনের মতো কোরাল দ্বীপ, আছে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটির মতো পার্বত্য এলাকা, আছে হাওরাঞ্চল, সিলেটের বিস্তৃত চা-বাগান ও এর সঙ্গে আরও নানা বিচিত্র সব পর্যটন স্থান। আছে ঐতিহাসিক নানা স্থাপনা। কিন্তু এত বৈচিত্র্য দিয়েও পর্যটক সেভাবে টানতে পারছে না বাংলাদেশ। তাহলে মালদ্বীপ কীভাবে পারছে? 

মালদ্বীপ পারছে তার পর্যটন ব্যবস্থাপনা দিয়ে। শুধু ব্যবস্থাপনার জোরেই দেশটি নিজেদের পর্যটন স্থানগুলোকে গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারছে। ২০২০ সালে দেশটিকে বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যাওয়ার্ডস ‘বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পর্যটন গন্তব্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এখানেই থেমে থাকেনি তারা। নিজেদের সম্ভাবনাকে প্রতিনিয়ত তারা উন্মোচিত করছে। বিপরীতে বাংলাদেশ এত এত বৈচিত্র্য নিয়ে শুধু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে পিছিয়ে পড়ছে। 

পর্যটন খাত থেকেই মালদ্বীপের মোট দেশীয় উৎপাদনের ৫০ শতাংশের বেশি আসে

অনেকে বলে থাকেন বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় পর্যটনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজন—এমন অনেক কিছুই করতে পারছে না। কিন্তু মালদ্বীপের দিকে তাকালে এই যুক্তি আর ধোপে টেকে না। তারা ধর্মীয় বিষয়াদিকে যথাযথ সম্মানের জায়গায় রেখেই পর্যটনকে এগিয়ে নিচ্ছে। খোদ মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বলেন, ‘মালদ্বীপ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বীপ। তারা ধর্মীয় শ্রদ্ধার জায়গাটিকে অটুট রেখেই পর্যটন খাতকে উন্নত করেছে। রিসোর্ট আইল্যান্ডগুলোতে আপনি বিনোদনের জন্য সব করতে পারেন। কিন্তু স্থানীয় দ্বীপগুলোতে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে। এ জন্য এখানে লাখ লাখ বিদেশি পর্যটক আসছেন।’ 

মোট জনসংখ্যায় মুসলিমদের অনুপাত বিচারে মালদ্বীপ বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশের বেশি মুসলিম। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ হার ৯০ শতাংশের কিছু বেশি। ফলে ধর্মীয় মূল্যবোধকে পর্যটন বিস্তারে বাধা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই, যদি মালদ্বীপকে উদাহরণ হিসেবে সামনে আনা যায়। 

নাজমুল হাসান আরও বলেন, ‘বিশ্বসেরা যত হোটেল রিসোর্ট ব্র্যান্ড আছে, তাদের সবারই রিসোর্ট এখানে আছে। প্রতিটি রিসোর্টেই নিজেদের মতো করে পর্যটন ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছে তারা। সেখানে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করে না। মাঝেমধ্যে এগুলোতে কর্মকর্তারা সারপ্রাইজ ভিজিটে যান। অনিয়ম পেলে প্রথমে সতর্ক করা হয়, পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এটাই মালদ্বীপের পর্যটন শিল্প বিকাশের মূল কারণ।’ 

আরেকটি বিষয় হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা ও যত্ন। বাংলাদেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে গেলে পরিচ্ছন্নতার অভাবটিই সবার আগে নজরে পড়ে। আছে নিরাপত্তার অভাবও। এ দুটি দিকেই এগিয়ে মালদ্বীপ। 

পর্যটকদের আকর্ষণের মতো বাংলাদেশে যে ১৬৭৫টি দর্শনীয় স্থান রয়েছে, কক্সবাজার তার অন্যতম

কিছুদিন আগে মালদ্বীপে সরাসরি ফ্লাইট চালু করেছে বাংলাদেশের বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। প্রতিষ্ঠানটির মালদ্বীপ শাখার ব্যবস্থাপক নাজমুল শাকির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটু খেয়াল করলে দেখবেন কত পরিচ্ছন্ন পরিবেশবান্ধব জনপদ। কিন্তু বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমরা নষ্ট করে ফেলছি। মালদ্বীপের হোটেল মোটেল, রাস্তা, পার্কিং, হাঁটার পথের ব্যবস্থা সব গোছানো। কোথাও ময়লা হচ্ছে না। হোটেল থেকে খাবার নিয়ে লোকে খাচ্ছে; কিন্তু নিচে ময়লা ফেলছে না।’ 

এটি একদিনে হয়নি। ১৯৭২ সালে মালদ্বীপে রিসোর্ট ছিল মাত্র তিনটি। এখন এ সংখ্যা শতাধিক। এটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। দুই দশক আগেও দেশটির জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ছিল ৪০ শতাংশের নিচে, এখন যা ৫০ শতাংশের বেশি। জার্মানভিত্তিক এগলিইটিস-মিডিয়ার প্রকল্প ওয়ার্ল্ডডেটা ইনফোর তথ্যমতে, ২০০১ সালে মালদ্বীপের জিডিপির ৬২ দশমিক ৪২ শতাংশ আসত মৎস্য খাত থেকে। আর পর্যটন থেকে আসত ৩৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। সে সময় বাংলাদেশের আয় ছিল জিডিপির ১ শতাংশেরও কম। 

মালদ্বীপ ২০০৪ সালে পর্যটনের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ হাতে নেয়। দেড় দশকের ব্যবধানে তার সুফলও পায় তারা। এই সুফল এনে দেওয়া মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি কিন্তু বাংলাদেশি; নাম নুরুল ইসলাম নাজেম। পর্যটন বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের এ অধ্যাপক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মালদ্বীপের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তাদের আয়ের বড় অংশ আসে পর্যটন থেকে। সেই অনুপাতে বাংলাদেশে পর্যটন থেকে জিডিপিতে যোগ হয় খুব সামান্য। মালদ্বীপে ১ হাজারের বেশি দ্বীপ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২০০ দ্বীপে মানুষ বসবাস করে। আর ৮০০ দ্বীপে কেউ থাকে না; সেগুলোকে বলা হয় ভার্জিন আইল্যান্ড। পর্যটনের জন্য ৭০-৮০টি আইল্যান্ড তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে ইজারা দিয়েছে। নিজেরা টুরিজমের জন্য কয়েকটা দ্বীপকে ডেভেলপ করেছে। এসব দ্বীপে পর্যটন কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে অত্যন্ত উন্নত ব্যবস্থাপনায়। দেশটিতে ২০১১ সালের পর থেকে পর্যটন শিল্প সবচেয়ে বেশি বিকাশ লাভ করে।’ 

মোট ১২০০ ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপের শতাধিক দ্বীপকে কেন্দ্র করে চলে পর্যটন ব্যবসা

জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কাউন্সিলের তথ্য যাচাই করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের পর্যটন চিত্র একেবারেই উল্টো। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মোট পর্যটকের ৯৬ শতাংশ ছিল দেশীয় পর্যটক। বিদেশি পর্যটক ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। ২০২০ সালেও অনেকটা একই চিত্র, মোট পর্যটকের ৯৩ শতাংশ ছিল দেশীয়। আর ৭ শতাংশ ছিল বিদেশি। অন্যদিকে ২০১৯ সালে মালদ্বীপে মোট পর্যটকের ৯৬ শতাংশ ছিল বিদেশি পর্যটক। আর দেশি পর্যটক ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। ২০২০ সালে মোট পর্যটকের ৯৩ শতাংশ ছিল বিদেশি পর্যটক। আর দেশি পর্যটক ছিল মাত্র ৭ শতাংশ। 

জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদানকে আমলে নিলে এই বিপরীত চিত্র আরও প্রকট হয়ে ধরা দেয়। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কাউন্সিলের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে কিছুটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সে বছর দেশের মোট জিডিপির ২ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যটন খাত থেকে এসেছিল। অন্যদিকে ২০১৯ সালে মালদ্বীপের জিডিপির ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ এসেছে পর্যটন খাত থেকে। 

বাংলাদেশে বিদেশি টুরিস্ট না আসার কারণ হিসেবে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম নাজেম বলেন, ‘বিদেশি টুরিস্টের জন্য যেসব সুবিধা থাকা উচিত, তা আমাদের দেশে নেই। পর্যটন অবকাঠামো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। কিছু হোটেল আছে এত ব্যয়বহুল যে, অনেক পর্যটক আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এখানে ফুড সিস্টেম ভালো। তবে তা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরিবেশন করা হচ্ছে না। পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। এ ছাড়া বিগত সময়ের বিভিন্ন সহিংসতার খবর বাংলাদেশে ভ্রমণের বিষয়ে পর্যটকদের আগ্রহ কমিয়ে দেয়। বাংলাদেশে টুরিজমকে উন্নত করতে হলে সরকারের সহায়তা লাগবে। অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। মানুষের মানসিকতা পাল্টাতে হবে।’ 

মালদ্বীপের রিসোর্ট আইল্যান্ডগুলোতে আপনি বিনোদনের জন্য সব করতে পারেননিরাপত্তার বিষয়টি বোঝা যাবে একটি পরিসংখ্যানে চোখ বোলালে। টুরিস্ট পুলিশের পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো ১৬৭৫টি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছে ৪০৭ টি, চট্টগ্রামে ৩৩০, খুলনায় ২৬৩, বরিশালে ১১৮, রাজশাহীতে ২৪৩, রংপুরে ১৪৩, সিলেটে ৯৬ ও ময়মনসিংহে ৭৫টি দর্শনীয় স্থান। এই দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে মাত্র ১০৪ টিতে টুরিস্ট পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী রয়েছে। আর কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটের জাফলং, সুন্দরবন, কুয়াকাটা, নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের মতো গুটিকয় স্থান ছাড়া কোথাও নেই পর্যটন অবকাঠামো। 

বাংলাদেশের পর্যটন স্থানগুলোকে বিশ্ব দরবারে ঠিকঠাক তুলে ধরতে না পারার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে উন্নতি হলে এবং সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে পর্যটনবান্ধব করা গেলে মালদ্বীপের চেয়ে বাংলাদেশের পর্যটন খাত কোনোভাবেই পিছিয়ে থাকার কথা নয়। এতে সারা দেশই উপকৃত হবে। জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান আগের চেয়ে বাড়বে, যার সরাসরি সুফল পাবে স্থানীয় জনগোষ্ঠী। 

বিষয়টি নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডও। মালদ্বীপ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে জানিয়ে বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাবেদ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মালদ্বীপ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের টুরিজম লিডার। পর্যটনের জন্য সারা বিশ্বে তারা পরিচিত। নিজেদের প্রচেষ্টায় ও বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ নিয়ে তারা দাঁড়িয়ে গেছে। মালদ্বীপ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমাদের সুন্দরবন, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, হাওরসহ অনেক দর্শনীয় স্থান আছে, যা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা যেতে পারে। আমরা নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তাদের পর্যটনের অভিজ্ঞতা আমাদের দেশে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

  • যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা
  • বিপিসির নথি বলছে, আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি আছে
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

বোরো ধানের মৌসুমে দেশে জ্বালানি মজুতে টান পড়েছে। বর্তমান ডিজেলের মজুত একেবারেই তলানিতে রয়েছে। সরকারি তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলে মজুত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুত রয়েছে। যদিও বিপিসির দাবি, দেশে জ্বালানি-সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিপিসির মজুত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ডিজেল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৭ টন মজুত রয়েছে। এর মধ্যে দেশের ২৪টি ডিপোর ট্যাংকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৯ টন মজুত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন লাইটার জাহাজসহ ট্রানজিটে রয়েছে ৪৯ হাজার ৬৬৮ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১৬ হাজার ৬০১ টন ডিজেল সারা দেশে বিক্রি করা হয়েছে। সে হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানে বিপিসির কাছে ২০ দিনের ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে বিপিসি বিভিন্ন ডিপোতে পেট্রল মজুত আছে ২২ হাজার ১১৪ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৬১৮ টন পেট্রল বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে পেট্রল ১৩ দিনের মজুত আছে।

বিপিসির ২৩ ডিসেম্বরের স্টক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে মোট ২৮ হাজার ২৭০ টন অকটেন মজুত রয়েছে। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৮৮৫ টন অকটেন বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে ১৫ দিনের অকটেন মজুত আছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান জানান, সারা দেশে ২৫ দিনের অকটেন ও পেট্রল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ডিজেল ৩৫ দিনের মজুত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। দেশে ডিজেলের মজুত কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে সব জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। তাই ডিজেলের চাহিদা কম।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৫ হাজার ৬৯৫ টন অকটেন মজুত রয়েছে। আর পেট্রল মজুত রয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ টন। সারা দেশের ১৭টি ডিপোতে ৯২ হাজার ৮৯৫ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে সরকারি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৮০ হাজার ২১৩ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯১৪ টন পেট্রল এবং ৪ হাজার ১৮৭ টন অকটেন মজুত রয়েছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফতুল্লা, রাজশাহী, হরিয়ান, চিলমারী ডিপোতে কোনো জ্বালানি তেল নাই। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের নাটোর ডিপোতে ৩০ টন, রংপুর ডিপোতে ৫৭ টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিপোতে ২ টন ডিজেল রয়েছে।

নাম না প্রকাশে সরকারি তেল বিপণনকারী এক কর্মকর্তা জানান, বিপিসির আমদানি করা জ্বালানি তেলের মজুত আশঙ্কাজনকভাবে কম রয়েছে। ডিজেলের মজুত একবারেই কম। তাঁর মতে ১৩ থেকে ১৫ দিনের জ্বালানি মজুত রয়েছে বর্তমানে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আসিফ মালিক বলেন, দেশে পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত রয়েছে। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেলের জাহাজ আসা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান।

তবে গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল মোমিন বলেন, দেশে ধান উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম হচ্ছে বর্তমান বোরো মৌসুম। এ সময় প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এই মৌসুমে জ্বালানি-সংকট হলে সেটা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ছেদ পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় গত বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা, চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যেকোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।

সরকারসংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।

আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনে বঙ্গভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎস বড়দিনে খ্রিষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে বঙ্গভবনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্ববাসীর প্রতি বড় দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চিরকাল অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত