Ajker Patrika

ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক বিপর্যয়

ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক বিপর্যয়

একদিকে ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল; তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারতের ত্রিপুরা থেকে ছুটে আসা পানির তোড়। সব মিলিয়ে দেশের পূর্বাঞ্চলের সিংহভাগ এলাকা এখন পানির নিচে। কোথাও কোমরপানি, কোথাও ঘরের চালা ছুঁই ছুঁই। তলিয়েছে সড়ক-মহাসড়ক, রেলপথও। ডুবেছে ফসলের মাঠ, ভেসে গেছে চাষের মাছ। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে আকস্মিক এই বন্যায় কী করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে—তাৎক্ষণিকভাবে বুঝে ওঠাই মুশকিল হয়ে গেছে সাধারণ মানুষের জন্য। 

গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের অন্তত ৯ জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ফেনীর বাসিন্দারা আকস্মিক বন্যায় পড়েছে চরম দুর্ভোগে। তিন পার্বত্য জেলা—রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যোগ হয়েছে পাহাড়ধসের ঘটনা। ডুবেছে চট্টগ্রাম নগরীর অনেক সড়ক। মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলের মানুষ তো বিপদে আছে আগে থেকেই। এবার নিয়ে গত তিন মাসে তৃতীয় দফায় বন্যাকবলিত হয়েছে তারা। 

এর মধ্যেই আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও দুঃসংবাদ দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তাতে অধিদপ্তর বলেছে, পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের ঘটনা ঘটতে পারে। 

এদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর ত্রিপুরা, মেঘালয়সহ বাংলাদেশের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলীয় ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী ভারতের কয়েকটি রাজ্যে আজ শুক্রবারও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে।

কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালীতে পানি আর পানি
সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলে প্রবল বন্যা দেখা দেয়। বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে সেখানে। সেখানকার গোমতী নদীর পানির স্তর বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৩১ বছর পর মধ্য ত্রিপুরার ধলাই জেলার বিশাল জলাধার ডুম্বুরের (৪১ বর্গকিলোমিটার) ‘স্ল্যাপ গেটের’ তিনটি গেটের একটি খুলে দেওয়া হয়। এর জেরে গোমতীর বাংলাদেশ অংশ ও আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। 

বিশেষ করে কুমিল্লা ও ফেনীর মানুষ বলছেন, গত ৩৬ বছরে এমন বন্যা তাঁরা দেখেননি। কুমিল্লায় পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে বাঁধ ভেঙে পড়ার শঙ্কায় মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেই মধ্যরাতে গোমতীপাড়ে পাহারায় ছিলেন স্থানীয়রা। টর্চ ও মশাল হাতে, মোবাইল ফোনের আলো জেলে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন তাঁরা। সবার মনে শঙ্কা, এই বুঝি পানির তোড়ে গোমতী বাঁধ ভেঙে পড়ল। মূলত কুমিল্লা সদর থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার গোমতী বাঁধের দুর্বল অংশ নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছে বেশি। বাঁধের দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত অংশে স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগেই বালুর বস্তা ফেলছেন। 

কুমিল্লায় টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে গোমতীর পানি বেড়ে গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিপৎসীমার ৭০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সদর উপজেলা, দেবিদ্বার ও বুড়িচং উপজেলার নদীতীরবর্তী অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নিচু এলাকার কোথাও কোথাও পানি ঘরের চাল ছুঁই ছুঁই অবস্থা। অনেকের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। প্রশাসন থেকে মাইকিং করে স্থানীয়দের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হচ্ছে। 
ব্রাহ্মণপাড়ার আলুয়া গ্রামের বাসিন্দা জাসমিন আক্তার বলেন, ‘বুধবার সকালেও বাড়িতে রান্না করছি। সন্ধ্যায় এত বেশি পানি এল যে জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকছে। এখন পর্যন্ত সহায়তার জন্য কেউ আসে নাই।’

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, জনসাধারণকে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। 

এদিকে ফেনী কবলিত হয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায়। বিশেষ করে ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরামের অবস্থা বেশি খারাপ। এসব উপজেলার পৌর শহরগুলোও প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী কয়েক লাখ মানুষ। এমনকি ফেনী শহরেও কোনো কোনো বাড়ির নিচতলা প্রায় পুরোটা ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে সোনাগাজী উপজেলার বড় ফেনী নদীর মুহুরী রেগুলেটরের ৪০টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, পানির তোড়ে ভেঙে গেছে অনেক রাস্তা, বাঁধ ও সেতু। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এর মধ্যে মুহুরীর পানি গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।

ফেনী শহরের পূর্ব উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, বুধবার রাত থেকে পৌর শহর প্লাবিত হয়েছে। তাঁদের বাসার নিচতলা পুরোপুরি পানিতে ডুবে গেছে। 

নোয়াখালীতেও একই অবস্থা। সদর, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, চাটখিল ও সুবর্ণচর উপজেলায় গতকাল বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, এই আট উপজেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেক বাড়িতেই ৩ থেকে ৫ ফুট পানি। নিচু এলাকাগুলোয় পানির উচ্চতা ৬ থেকে ৭ ফুট। এদিকে মুহুরী নদীর পানি আরও বেড়েছে।

কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের নূর নবী বলেন, বুধবার দুপুরে মুহুরী নদীর বাঁধ উপচে ফেনী ছোট নদীর পানি বেড়ে যায়। নোয়াখালী খালও উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। 

টানা বর্ষণ ও মেঘনার জোয়ারে লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৬ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী। এই জেলার চারটি পৌরসভা ও পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে রামগতির প্রায় ৪০টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। বাসাবাড়িতে পানি ওঠায় জ্বলছে না চুলা। 
এদিকে খুলনার পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের কালীনগর গ্রামে পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ৫-৬টি গ্রামের পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

বন্যাকবলিত চট্টগ্রাম ও পার্বত্য তিন জেলা
চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চকবাজার, বাকলিয়া, ডিসি রোড, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় গতকাল হাঁটুপানি ছিল; কোথাও কোথাও কোমরসমান পানি। রাহাত্তারপুল এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হুদা বলেন, ‘আমাদের এলাকার অধিকাংশ বাসার নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও ফটিকছড়িতে প্রায় এক লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে। 
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির পাঁচটি ইউনয়ন এবং কক্সবাজারের রামুর চার ইউনিয়নের এক লাখের বেশি মানুষ এখন পানিবন্দী। রামুতে পানির তোড়ে ভেসে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ রয়েছেন দুজন। 

এদিকে খাগড়াছড়িতে গতকাল সকাল থেকে চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। জেলার অন্তত ৫০টি গ্রামের বাসিন্দা পানিবন্দী। এ নিয়ে গত দুই মাসে চারবার বন্যার কবলে পড়ল পার্বত্য জেলাটি। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, খাগড়াছড়ি সদরের ১৮টি এবং জেলায় মোট ৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। 

রাঙামাটিতেও কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টিতে জেলার তিনটি সড়কের ২১টি স্থানে ছোট-বড় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ধসের শঙ্কায় স্থানীয়দের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করছে প্রশাসন।

দুর্ভোগের শেষ নেই সিলেট অঞ্চলের মানুষের
সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ এই অঞ্চলের মানুষ এবার নিয়ে তিন মাসে তিনবার বন্যাকবলিত হয়েছে। গত জুনের শেষ দিকে প্রথম দফায়, জুলাইয়ে দ্বিতীয় দফায় এই অঞ্চল প্লাবিত হয়। দ্বিতীয় দফার পানি এখনো পুরোপুরি নামেনি। তার মধ্যেই তৃতীয় দফা বন্যা হানা দিয়েছে। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেড়েই চলেছে কুশিয়ারার পানি। হবিগঞ্জে খোয়াই নদের পানি বিপৎসীমার প্রায় ২০০ সেমি ওপর দিয়ে বইছে। বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে কালনী নদীর পানিও।

মৌলভীবাজারে পানিবন্দী ৩ লাখ মানুষ। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, রাজনগর, সদর উপজেলায় অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলার পানিবন্দী সাজিদ মিয়া বলেন, ‘রাতে মনু নদ ভেঙে আমার ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। আমার সবকিছু শেষ। জানি না, কোথায় যাব।’

এদিকে কিশোরগঞ্জের হাওরে খোয়াই নদীর পানি হু হু করে ঢুকছে। এতে অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন উপজেলায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

বিদ্যুৎ নেই, নেটওয়ার্ক নেই, যোগাযোগও বিপর্যস্ত
কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি ঢুকে পড়াসহ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে এসব জেলার অনেক এলাকাই এখন বিদ্যুৎহীন। এমনকি মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কও বিঘ্নিত হচ্ছে কোথাও কোথাও। বিশেষ করে ফেনী ও নোয়াখালীর বেশ কিছু এলাকায় কার্যত টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। 

এদিকে বিভিন্ন এলাকায় সড়কে পানি ওঠায় যাতায়াতও বিঘ্নিত হচ্ছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেন গতকাল সকালে হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। এতে সড়কের ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য মহাসড়কে পানি কমায় সীমিত পরিসরে যাতায়াত শুরু হয়েছে। নোয়াখালীতে জেলা শহর মাইজদীতে প্রধান সড়ক ডুবেছে। শুধু তা-ই নয়, জেলার ৮০ শতাংশ সড়ক এখন পানির নিচে। লক্ষ্মীপুরেও অনেক সড়ক তলিয়েছে। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকার সড়কের কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি। 

এদিকে ফেনীতে রেললাইন ও রেলসেতু তলিয়ে যাওয়ায় সারা দেশের সঙ্গে চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে পাহাড় ধসে এই রুটেও ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। হবিগঞ্জে খোয়াই রেলসেতু তলিয়ে যাওয়ায় সারা দেশের সঙ্গে সিলেটেরও রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। 

ভেঙেছে বাঁধ, ভেসেছে ফসল
বন্যাকবলিত সব জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে চাষের মাছ। এ ছাড়া মৌলভীবাজারে ধলাই ও মনু নদের ১৪টি প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে।

কুমিল্লায় গোমতীতীরের কয়েক শ হেক্টর জমিতে আবাদ করা পাকা আউশ ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৪০ হাজার পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। তলিয়েছে শরৎকালীন সবজি, আমনের বীজতলাসহ ১৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল। নোয়াখালীতে আউশ, আমনসহ প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাগড়াছড়িতেও আকস্মিক বন্যায় তলিয়েছে অনেক ফসলি জমি। মৌলভীবাজারে প্রায় ৪৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল ও দেড় হাজারের বেশি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। খুলনায়ও বাঁধ ভেঙে ভেসেছে ফসলি জমি, ঘেরের মাছ। 

উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা
বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোয় প্রশাসনের পাশাপাশি উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবি। স্বেচ্ছাসেবকেরাও আছেন মাঠে। খাগড়াছড়িতে বন্যায় আটকে পড়া শতাধিক মানুষকে নৌকায় করে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। এ ছাড়া উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ত্রাণ তৎপরতাও চালানো হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। তবে অনেক এলাকার বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, সহায়তা নিয়ে তাঁদের কাছে গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কেউ যাননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গুম করে নির্যাতন: হাসিনাসহ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ ২১ ডিসেম্বর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম করে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই সেল) নির্যাতনের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ ২১ ডিসেম্বর।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আজ রোববার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই দিন ধার্য করেন।

মামলার ১৭ আসামির মধ্যে আজ শুনানির সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন ১০ সেনা কর্মকর্তা।

তাঁরা হলেন—র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব আলম, সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম, সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) খায়রুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল ও সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।

ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত তিন আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ এবং সাতজনের পক্ষে ছিলেন তাবারক হোসেন। শেখ হাসিনার পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এম হাসান ইমাম ও পলাতক তিনজনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সুজাদ মিয়া।

আসামিদের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর সাবেক প্রতিরক্ষা-বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন পলাতক রয়েছেন।

র‍্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে নির্যাতনের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৮ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন।

পরে ওই দিনই তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৪ জন ব্যক্তিকে গুম করে নির্যাতনের ঘটনায় চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিকেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসবে ইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ০৩
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি একই দিন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ রোববার বিকেল ৪টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিক জানান, বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন ইসির সিনিয়র সচিব।

আজ দুপুরে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইজিপি, বিজিবির প্রধান, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, ডিএমপি কমিশনার, এনটিএমসির সঙ্গে আমরা আজ বৈঠকে বসব।’

এর আগে গতকাল শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, ইসির নিজস্ব তিন রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ মাঠপর্যায়ের সব অফিস ও কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের আইজিপি ও পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে কমিশন।

গত শুক্রবার বেলা ২টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট রোডে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন অফিস এবং পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এই বৈঠকের আয়োজন করছে ইসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০২
সুদানে নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী। ছবি: আইএসপিআর
সুদানে নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী। ছবি: আইএসপিআর

সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন এবং আটজন আহত হয়েছেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে আজ রোববার এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় আনুমানিক বেলা ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী কর্তৃক এই নৃশংস ড্রোন হামলাটি পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই হামলায় কর্তব্যরত ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী শহীদ হন। শহীদদের আত্মত্যাগ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারের এক উজ্জ্বল ও গৌরবময় নিদর্শন হয়ে থাকবে।

ড্রোন হামলায় শহীদ হয়েছেন ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। তাঁরা হলেন নাটোরের কর্পোরাল মো. মাসুদ রানা (এএসসি), কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (বীর), রাজবাড়ীর সৈনিক শামীম রেজা (বীর), কুড়িগ্রামের সৈনিক শান্ত মন্ডল (বীর), কিশোরগঞ্জের মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।

হামলায় আহত হয়েছেন আটজন শান্তিরক্ষী। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন কুষ্টিয়ার লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান (পিএসসি, অর্ডন্যান্স), দিনাজপুরের সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন (বীর), ঢাকার কর্পোরাল আফরোজা পারভিন ইতি (সিগন্যালস), বরগুনার ল্যান্স কর্পোরাল মহিবুল ইসলাম (ইএমই), কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মেজবাউল কবির (বীর), রংপুরের সৈনিক মোসা. উম্মে হানি আক্তার (ইঞ্জিনিয়ারিং), মানিকগঞ্জের সৈনিক চুমকি আক্তার (অর্ডন্যান্স) এবং নোয়াখালীর সৈনিক মো. মানাজির আহসান (বীর)।

আহত শান্তিরক্ষীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে সৈনিক মো. মেজবাউল কবিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দ্রুত তাঁর সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি বর্তমানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। অপর সাত আহত শান্তিরক্ষীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানান্তরিত সকলেই বর্তমানে শঙ্কামুক্ত রয়েছেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৬
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ফাইল ছবি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাজধানীর মিরপুরে আজ রোববার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ১৯৭১ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতির পর সকাল সোয়া ৭টার দিকে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর সেখানে তিনি কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল সালাম জানায়। তখন বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে উপস্থিত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, সব অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবিচল সাহস ও দৃঢ় অবস্থান দেশের ইতিহাসে অনন্য ও চিরস্মরণীয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার রাতে দেওয়া এক বাণীতে তিনি আরও বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ও তাদের দোসরেরা নির্মমভাবে হত্যা করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। আমি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি সেসব সূর্যসন্তান ও শহীদ বুদ্ধিজীবীকে, যাঁদের আত্মদান আমাদের মুক্তির সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছে। আমি তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা একটি জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম রূপকার।’

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন পাকিস্তানি শোষকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে সম্মুখসারির যোদ্ধা।’

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে গতকাল দেওয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের মেধা ও প্রজ্ঞার প্রয়োগ, সাংস্কৃতিক চর্চা ও ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। যুদ্ধকালীন সরকারকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও কৌশলগত পরামর্শ দিয়ে জাতিকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নিতেও তাঁদের ছিল অসামান্য ভূমিকা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক দুঃখজনক ও কলঙ্কময় দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিনগুলোতে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরেরা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে দেশের বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। শোকাবহ এই দিনে আমি শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল বীর শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করি।’

তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন পাকিস্তানি শোষকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে সম্মুখসারির যোদ্ধা। বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের মেধা ও প্রজ্ঞার প্রয়োগ, সাংস্কৃতিক চর্চা ও ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। যুদ্ধকালীন সরকারকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও কৌশলগত পরামর্শ দিয়ে জাতিকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নিতেও তাঁদের ছিল অসামান্য ভূমিকা।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরেরা এসব দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী, দার্শনিক, রাজনৈতিক ও চিন্তাবিদসহ দেশের মেধাবী সন্তানদের নির্মমভাবে গুম ও হত্যা করে। এ পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে থাকা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে একটি ব্যর্থ জাতিতে পরিণত করাই ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের মূল উদ্দেশ্য।

তিনি বলেন, ‘আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীরা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি গণতান্ত্রিক উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমগ্র জাতিকে সঙ্গে নিয়ে তেমনই একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছে। এর মাধ্যমে আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আমৃত্যু লালিত স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সবাইকে নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আসুন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলি উন্নত, সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ।’

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাসই বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছিল, তবে ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে একযোগে ধরে নেওয়া হয় বহু বুদ্ধিজীবীকে। বিজয়ের পরই তাঁদের অনেকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহের সন্ধান মেলে। এ দিনটিকে তাই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করে জাতি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত