Ajker Patrika

বাংলাদেশ সম্পর্কে অপতথ্য ঠেকাতে ইইউ কূটনীতিকদের সহযোগিতা চান প্রধান উপদেষ্টা

বাসস, ঢাকা  
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইইউর কূটনীতিকরা। ছবি: সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইইউর কূটনীতিকরা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই মিসইনফরমেশন ঠেকাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

আজ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠক প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা এই মিসইনফরমেশন ঠেকাতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।’

১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্বে দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।

প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে ১৫ জন প্রতিনিধি তাদের মতামত তুলে ধরেন। বৈঠকে শ্রম অধিকার, বাণিজ্য সুবিধা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইবুনাল অ্যাক্ট, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন ও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে উভয়ের অঙ্গীকার ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে গোটা মাসজুড়ে আমরা বিজয় উদযাপন করি। বিজয়ের মাসে আপনাদের সঙ্গে এমন একটি ইনটার‌্যাক্টিভ আলোচনায় অংশ নিতে পেরে আমি খুব আনন্দিত।’

বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন তিনি। এ সময় তিনি গত ১৬ বছর ধরে অত্যাচার, শোষণ, বলপূর্বক গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় সংক্ষেপে তুলে ধরেন। অধ্যাপক ইউনূস অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রের বিষয় উল্লেখ করে দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং ব্যাংকিং সিস্টেমকে কীভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছিল সে সব কথা জানান।

বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক আকারে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এই মিসইনফরমেশন ঠেকাতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা যে ব্যাপক টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে তা দিয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।

সম্প্রতি জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কথা উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ইইউ প্রতিনিধিদের বিশদভাবে জানান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত রাষ্ট্রদূতদের বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করায় অনেক শিক্ষার্থী দিল্লি গিয়ে ইউরোপের ভিসা নিতে পারছেন না। ফলে তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। ভিসা অফিস ঢাকা অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থানান্তর হলে বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই উপকৃত হবে।’

বৈঠকে উপস্থিত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, ইতিমধ্যে বুলগেরিয়া বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা সেন্টার ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর করেছে। তিনি অন্য দেশগুলোকেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানান।

সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন জানান ইইউ প্রতিনিধিরা। বেশ কিছু পরামর্শ ও সুপারিশ তুলে ধরে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাইব্যুনালে সেনাবাহিনী-র‍্যাব-পুলিশ-বিজিবির কঠোর নিরাপত্তা

আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের ভেতরে-বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৫১
বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের ভেতরে-বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের ভেতরে-বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার বিরোধী অপরাধের মামলায় রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ট্রাইব্যুনালের মূল ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশ।

আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের ভেতরে-বাইরে অর্ধশতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্বরত আছেন।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের ভেতরে-বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের ভেতরে-বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরেজমিনে হাইকোর্টের সামনে বিজিবি ও পুলিশ সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে। এ সময় অর্ধশতাধিক পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের ওই এলাকায় দায়িত্বপালন করতে দেখা গেছে। হাইকোর্টের ভেতরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনেও রয়েছেন পুলিশ, র‍্যাব এবং সেনাবাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যকে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হবে আজ বৃহস্পতিবার। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই তারিখ ধার্য করবেন।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের ভেতরে-বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের ভেতরে-বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে রায়ের দিন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ আজ লকডাউন ঘোষণা করায় এবং কয়েক দিন ধরে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ও সংলগ্ন এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্তসংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েন করতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে গতকাল বুধবার সেনাসদরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের ভেতরে-বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের ভেতরে-বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্য- বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা এই মামলায় গত ২৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। সেদিন রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের জন্য ১৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক এবং চৌধুরী মামুন কারাগারে রয়েছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ২৩ অক্টোবর সর্বশেষ যুক্তি উপস্থাপনকালে এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ সাজার (মৃত্যুদণ্ড) আবেদন জানান। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের খালাস চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন তাঁদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

চলতি বছরের ১ জুন এই মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। সেদিন অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে ১৬ জুন নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। বিজ্ঞপ্তি জারির পরও হাজির না হলে ২৪ জুন তাঁদের দুজনের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮-এর সাবেক বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী আমির হোসেনকে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী, প্রতক্ষ্যদর্শীসহ ৫৪ জন। অডিও, ভিডিও, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, জব্দ করা গুলি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়।

নিরাপত্তা জোরদার

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি এবং গত কয়েক দিনের নাশকতার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনসংলগ্ন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় পর্যাপ্তসংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়ন করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গতকাল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে সেনাসদরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একটি সূত্র বলেছে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং মামলাটির সংবেদনশীলতার কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি বা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে বৃহস্পতিবার পর্যাপ্তসংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েন করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি রুখে দেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী: প্রসিকিউটর মিজানুল

ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, দেশে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা রুখে দেবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে তারা এটা বলছে।

সহিংসতাকে ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল বলেন, এটাকে হুমকি মনে করেন না। তিনি মনে করেন, বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য করছে। এই ট্রাইব্যুনাল কোনোভাবেই কারও দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। বিচারের ক্ষেত্রে বিচারকেরা স্বাধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই জাতীয় সনদ: সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় দলগুলো

  • আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি ঠিক হবে।
  • নিজ নিজ অবস্থানে এখনো অনড় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।
  • বাস্তবায়ন আদেশের জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে এনসিপি।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৩
জুলাই জাতীয় সনদ: সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় দলগুলো

দীর্ঘ আলোচনার পর স্বাক্ষর হলেও এখন বাস্তবায়নের পদ্ধতিতে আটকে আছে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫। সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা অনিরসনের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে দলগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে সাত দিন সময় দেওয়া হলেও কোনো সমাধান আসেনি। এই অবস্থার মধ্যে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি কী হবে, তা নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছে উপদেষ্টা পরিষদ। এই বৈঠক থেকে সরকার কী সিদ্ধান্ত দেয়, তার অপেক্ষায় আছে দলগুলো।

সরকারসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ কিছুটা সংশোধন করে আদেশ জারির প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। ১৫ নভেম্বর আদেশ জারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ঠিক করা হবে। এরপর তা রাজনৈতিক দলগুলোকে জানিয়ে দেবে সরকার।

এদিকে জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে যে যার অবস্থানে এখনো অনড় রয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট করার দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো।

বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার জন্য অপেক্ষা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। সেখানে এ বিষয়ে সরকারের ভূমিকা, জামায়াতসহ ৮ দলের আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন নেতারা। সনদ নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনে সরকারের দিক থেকে কার্যকর পদক্ষেপ আসার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তাঁরা।

গতকাল বুধবার রাজধানীতে বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি কোনো রাজনৈতিক দলের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করবে নাকি দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেবে।

এর আগে গত মঙ্গলবার দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, জুলাই সনদের বিষয়াদির বাইরে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে সনদে স্বাক্ষরকারী কোনো দলের জন্য তা মান্য করার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। সে ক্ষেত্রে সব দায়দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তাবে।’

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনসহ ৫ দফা দাবিতে আন্দোলনে আছে জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দল। দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার ঢাকায় সমাবেশ করার পর এবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি পালনের হুমকি দিয়েছে তারা। গতকাল এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান বলেন, ১৬ নভেম্বর আট দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে জনগণের পাঁচ দফা দাবি মেনে নেওয়া না হলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনার সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি)। এনসিপির পলিসি ও রিসার্চ লিড খালেদ সাইফুল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত দেখে এনসিপি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো সরকারের সিদ্ধান্ত এখনো জানি না। সরকার যখন সিদ্ধান্ত দেয়, তখন আমরা সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

এনসিপির নেতারা বলছেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা কেমন চাই, আমরা সেটা জানিয়েছি। আমরা বলেছি যে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যে গণভোট হবে, সেখানে কোনো নোট অব ডিসেন্ট থাকবে না। কারণ, গণভোটে নোট অব ডিসেন্ট থাকলে গণভোট অর্থহীন হয়ে যায়। গণভোটে যে ফলাফলই আসুক না কেন, পার্টিগুলোর তা অগ্রাহ্য করার সুযোগ তৈরি হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মানবতাবিরোধী অপরাধ: হাসিনা-কামালের রায়ের দিন ঘোষণা আজ

  • আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার।
  • পর্যাপ্তসংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েন চেয়ে সেনাসদরে চিঠি।
  • বিশৃঙ্খলা রুখে দেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী: প্রসিকিউটর
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হবে আজ বৃহস্পতিবার। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই তারিখ ধার্য করবেন।

এদিকে রায়ের দিন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ আজ লকডাউন ঘোষণা করায় এবং কয়েক দিন ধরে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ও সংলগ্ন এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্তসংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েন করতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে গতকাল বুধবার সেনাসদরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউটর বলেছেন, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রুখে দেবে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্য- বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা এই মামলায় গত ২৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। সেদিন রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের জন্য ১৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক এবং চৌধুরী মামুন কারাগারে রয়েছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ২৩ অক্টোবর সর্বশেষ যুক্তি উপস্থাপনকালে এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ সাজার (মৃত্যুদণ্ড) আবেদন জানান। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের খালাস চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন তাঁদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

চলতি বছরের ১ জুন এই মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। সেদিন অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে ১৬ জুন নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। বিজ্ঞপ্তি জারির পরও হাজির না হলে ২৪ জুন তাঁদের দুজনের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮-এর সাবেক বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী আমির হোসেনকে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী, প্রতক্ষ্যদর্শীসহ ৫৪ জন। অডিও, ভিডিও, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, জব্দ করা গুলি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়।

নিরাপত্তা জোরদার

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি এবং গত কয়েক দিনের নাশকতার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনসংলগ্ন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় পর্যাপ্তসংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়ন করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গতকাল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে সেনাসদরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একটি সূত্র বলেছে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং মামলাটির সংবেদনশীলতার কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি বা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে বৃহস্পতিবার পর্যাপ্তসংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েন করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি রুখে দেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী: প্রসিকিউটর মিজানুল

ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, দেশে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা রুখে দেবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে তারা এটা বলছে।

সহিংসতাকে ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল বলেন, এটাকে হুমকি মনে করেন না। তিনি মনে করেন, বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য করছে। এই ট্রাইব্যুনাল কোনোভাবেই কারও দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। বিচারের ক্ষেত্রে বিচারকেরা স্বাধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাস-ট্রেনে আগুন, ককটেল হামলা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০২: ০৪
রাজধানীর মিরপুরে গতকাল শতাব্দী পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তিন ব্যক্তি যাত্রীবেশে বাসটিতে উঠে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের সনি স্কয়ার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর মিরপুরে গতকাল শতাব্দী পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তিন ব্যক্তি যাত্রীবেশে বাসটিতে উঠে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের সনি স্কয়ার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হবে আজ। তার আগেই সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস ও ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে। স্লিপার তুলে ফেলা হয়েছে রেললাইনের। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাজধানীতে চার জায়গায় বাস ও অন্যান্য যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী আশুলিয়া ও গাজীপুরে তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্তব্যরত এক আনসার সদস্যকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, মিরপুরের পল্লবী, কারওয়ানবাজারের সার্ক ফোয়ারা মোড় এবং মৌচাকে ফরচুন টাওয়ারের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সিলেট-আখাউড়া রেলপথের ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল স্টেশনের মধ্যবর্তী মৌলভীবাজার কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে রেললাইনের স্লিপার ফেলে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনটি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, ১ থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫টি স্থানে ২৭টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কোনো হতাহতের খবর নেই। তবে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত এবং আইনের আওতায় আনার কাজ করছে। ঢাকা ও আশপাশের জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর শাহ আলী থানা এলাকায় শতাব্দী পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মিরপুর-২ নম্বর এলাকা থেকে নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার পথে যাত্রীবেশে থাকা তিনজন বাসটিতে আগুন দেয়। বাসের সামনের কয়েকটি আসন পুড়ে যায়, তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। শাহ আলী থানার ওসি গোলাম আযম বলেন, মিরপুর-২ নম্বরের দিক থেকে সনি সিনেমা পেরিয়ে নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার পথে যাত্রীবেশে থাকা তিনজন বাসটিতে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভানো হয়।

গতকাল রাতে রাজধানীর দোলাইরপাড়ে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুখে সড়কে আরেকটি বাস আগুনে পুড়েছে। এর বাইরে ঢাকার কাকরাইলে রমনা থানার সামনে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান এবং উত্তরায় একটি মাইক্রোবাসও আগুনে পুড়ে যায়। তবে এই দুটি ঘটনা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

গতকাল রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে জাহাঙ্গীর আলম চাকলাদার নামের এক পথচারী আহত হয়েছেন। তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়েছে। রাত সাড়ে নয়টায় পল্লবীতে জুলাই ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী চলার সময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে এবং প্রায় একই সময়ে মৌচাকে ফরচুন টাওয়ারের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ ছাড়া রাত ১০টার পর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার কাছে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

এদিকে গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় তেজগাঁও রেলস্টেশনের পরিত্যক্ত লাইনে থাকা ট্রেনের কোচে আগুন দেয় দুষ্কৃতকারীরা । স্থানীয় লোকজনের তৎপরতায় আগুন দ্রুত নিভিয়ে ফেলা হয়। ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দা ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সহযোগিতায় ঘটনাস্থলের পাশ থেকে সন্দেহভাজন দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।

এর আগে গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের প্রিপারেটরি স্কুলের সামনে দুটি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হয়। একই রাতে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় সড়কের পাশে পার্ক করা আলিফ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। বাসের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা চালক আহত হন এবং বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।

গাজীপুরে সাত ঘণ্টার মধ্যে তিনটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত গাজীপুর নগর ও শ্রীপুরে এসব ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।

এদিকে সিলেট-আখাউড়া রেলপথের ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল স্টেশনের মধ্যবর্তী মৌলভীবাজার কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে রেললাইনের স্লিপার ফেলে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। তবে ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনটি সময়মতো থামিয়ে বড় দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। এসব ঘটনার পর রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি সদস্যদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোট ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেকোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে এবং সাধারণ মানুষ যেন নিরাপদে চলাচল করতে পারে, তা নিশ্চিত করা হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রল ঢেলে আগুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির আসবাবসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে গেছে। তবে টাকার ভল্টের কোনো ক্ষতি হয়নি। কে বা কারা এই অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে, সেটাও জানা যায়নি।

ব্যাংকের চান্দুরা শাখার ম্যানেজার মো. কলিম উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে বাইরে থেকে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগানো হয়। নৈশপ্রহরী বিষয়টি বুঝতে পেরে তাঁদের অবহিত করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এরই মধ্যে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন পুরোপুরি নেভান। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হবে বলে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত