Ajker Patrika

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের ময়নাতদন্ত কেন হয়নি, ব্যাখ্যা দিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৫, ১৮: ৫৬
গোপালগঞ্জে হামলাকারীদের পুলিশের ধাওয়া। ছবি: সংগৃহীত
গোপালগঞ্জে হামলাকারীদের পুলিশের ধাওয়া। ছবি: সংগৃহীত

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে ঘিরে সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তরের যে খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়, তা ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য’ বলে দাবি করেছে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, চিকিৎসকেরা চাইলেও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা রাজি না হওয়ায় মরদেহের ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হয়নি।

আজ রোববার গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জীবিতেষ বিশ্বাসের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব দাবি করা হয়।

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ১৬ জুলাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে। একই সঙ্গে চলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একপর্যায়ে গুলি ছোড়েন বাহিনীর সদস্যরা। এতে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁদের মধ্যে চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গুলিবিদ্ধ একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

গোপালগঞ্জে সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্ত না করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে—এই খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এর প্রতিক্রিয়ায় গতকাল শনিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, গোপালগঞ্জে সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ প্রয়োজনে কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হবে।

এর ঠিক পরদিনই সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ ময়নাতদন্ত না হওয়ার ব্যাখ্যা দিল গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ জেলায় অপ্রত্যাশিত ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্ত না করার বিষয়ে কিছু সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনদের বক্তব্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয় যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে ময়নাতদন্ত না করে লাশ হস্তান্তর করে, বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য।

‘প্রকৃত ঘটনা এই যে, উল্লিখিত তারিখে ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর জরুরি বিভাগে প্রথম মরদেহটি আসে, কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণার পর রোগীর স্বজনদের ময়নাতদন্তের কার্যক্রম শেষ করে লাশ নেওয়ার কথা বললে স্বজনেরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং একপর্যায়ে জোরপূর্বক লাশ নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অন্য মরদেহগুলোর স্বজনেরা ময়নাতদন্ত করাতে রাজি হয় না এবং হাসপাতালে কর্মরত কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে জোরপূর্বক মরদেহ নিয়ে যায়।

‘উল্লেখ্য, এ সময় উদ্ভূত পরিস্থিতি ও চারদিকে সংঘর্ষ চলমান থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অসহায়বোধ করে। তা ছাড়া আহত লোকজনের চিকিৎসা প্রদানের জন্য চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও অন্যান্য কর্মচারী আত্মনিয়োগ করায় এবং বাইরের পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে ঘটনা পুলিশকে মোবাইল ফোনে এবং লিখিতভাবে জানানো হয়।

‘আমরা আশা করি, উল্লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে জনমনে সৃষ্ট ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন

রাজনৈতিক দলগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে একমত না হলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: আসিফ নজরুল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ০৮
সোমবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
সোমবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে বলেছে সরকার। এ সময়ের মধ্যে দলগুলো একমত না হলে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

আজ সোমবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান উপদেষ্টা।

সকাল ১০টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁও কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়।

আইন উপদেষ্টা বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনা করে এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত জানাতে অনুরোধ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময়ের মধ্যে দলগুলো একমত না হলে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আসিফ নজরুল বলেন, ‘ আজ জাতীয় ঐক্যমত কমিশন কর্তৃক প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। ’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এ ছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।’

এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে (সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যে কোনো সুযোগ নাই সেটাও আমাদের সবার বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। ’

সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয় বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাবেক মুখ্যসচিব কামাল সিদ্দিকী মারা গেছেন

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
ড. কামাল সিদ্দিকী। ছবি: সংগৃহীত
ড. কামাল সিদ্দিকী। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক মুখ্যসচিব ড. কামাল সিদ্দিকী মারা গেছেন। আজ সোমবার ভোরে গুলশানে নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সকালে এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আজ আছর নামাজের পর গুলশান আজাদ মসজিদে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হবে।

কামাল সিদ্দিকী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘের শিশু অধিকার কমিটির নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ কর্তৃক মনোনীত হন এবং ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

ড. কামাল সিদ্দিকী ২০০৬ সাল পর্যন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফ্লোরা অ্যান্ড ফাউনা অব বাংলাদেশের প্রধান সম্পাদক ছিলেন। এটির প্রথম খণ্ড ২০০৮ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নতুন সচিব

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৪১
৪ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নতুন সচিব

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং পরিকল্পনা বিভাগে নতুন সচিব নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

এর মধ্যে তিনজন অতিরিক্ত সচিবকে সচিব পদে পদোন্নতি এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত এক সচিবকে পদায়ন করে রোববার রাতে আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. নুরুন্নাহার চৌধুরীকে সচিব পদোন্নতি দিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব বিলকিস জাহান রিমিকে পদোন্নতির পর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শওকত রশীদ চৌধুরী পদোন্নতিকে সচিব পদোন্নতি দিয়ে পেয়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত সচিব এস এম শাকিল আখতারকে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব পদে পদায়ন করা হয়েছে।

গত ৩ আগস্ট পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব এস এম শাকিল আখতারকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই পদে যোগ দিতে পারেননি তিনি। এরপর তাঁকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন: মামলা থেকে অব্যাহতি ১৪৫৬

  • জুলাই-আগস্টের ঘটনায় করা ১৬৫ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন।
  • এসব ব্যক্তিকে পূর্বশত্রুতার জেরে ও হয়রানি করতে মামলায় আসামি করা হয়েছিল।
  • সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধিতে সংযুক্ত ধারার ক্ষমতাবলে পুলিশের এই প্রতিবেদন।
  • মামলার অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে, তদন্ত শেষে আরেকটি প্রতিবেদন।
আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ২১
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হত্যাসহ নানা অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা মামলাগুলোতে অনেককে পূর্বশত্রুতার জেরে ও হয়রানি করতে আসামি করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এ পর্যন্ত ১৬৫টি মামলা থেকে এমন প্রায় দেড় হাজার আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন থানায় করা ১৬৫টি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা প্রাথমিক তদন্তে ১ হাজার ৪৫৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা পাননি। তাই তাঁরা হয়রানির শিকার এসব ব্যক্তিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে আদালতে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেন। পরে আদালত এসব ব্যক্তিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা এই আবেদন করেছেন ফৌজদারি কার্যবিধির সংশোধিত ধারার ক্ষমতাবলে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম বলেছেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া। সারা দেশে এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ডিএমপির সূত্র জানায়, গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ডিএমপির আট বিভাগের ৫০টি থানায় অনেক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি অসংখ্য। এসব মামলায় অনেককে পূর্বশত্রুতার জেরে এবং হয়রানি করতে আসামি করা হয়েছে। হয়রানি ঠেকাতে এবং এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির সংশোধিত ধারার ক্ষমতাবলে নিরপরাধ ব্যক্তিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সূত্রটি জানায়, ডিএমপির ৫০ থানায় বিভিন্ন অভিযোগে করা ১৬৫টি মামলায় ১ হাজার ৪৫৬ জনের অব্যাহতি চেয়ে আদালতে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাঁদের মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। তবে মামলাগুলোর অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে। তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসব মামলার প্রতিটিতে আরেকটি করে প্রতিবেদন দেবেন। ওই প্রতিবেদনে ঘটনার সঙ্গে যে বা যারা জড়িত, তাদের বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে।

১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের প্রস্তাব গত ২৯ জুন উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের স্বাক্ষরের পর এটি ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে জারি করা হয়। নতুন এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনে ১৭৩-ক নামে একটি ধারা যুক্ত হয়েছে, যার শিরোনাম ‘অন্তর্বর্তীকালীন তদন্ত প্রতিবেদন ইত্যাদি’। এতে বলা হয়েছে, তদন্ত চলাকালে মামলার যেকোনো পর্যায়ে পুলিশ কমিশনার, জেলার পুলিশ সুপার বা সমমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মামলার অগ্রগতির বিষয়ে একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিতে পারবেন। ওই প্রতিবেদনে যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে সেটি আদালতে (ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্রাইব্যুনাল) দাখিল করা যাবে এবং আদালত সন্তুষ্ট হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মামলার কার্যক্রম থেকে অস্থায়ী অব্যাহতি দিতে পারবেন। তবে এ অব্যাহতি চূড়ান্ত নয়; তদন্ত শেষে যদি সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে মূল ধারার (১৭৩) অধীনে তার নাম পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করতে কোনো আইনি বাধা থাকবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ২৪ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় করা পুলিশ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজ (১৭) এই নতুন ধারার সুবাদে অব্যাহতি পেয়েছে। সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(এ) ধারায় দাখিল করা অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গ্রহণ করে চলতি বছরের ১৫ জুলাই ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াক তাকে অব্যাহতির আদেশ দেন।

ওই অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মোল্লা মো. খালিদ হোসেন জানান, মামলায় উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে ফাইয়াজের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তদন্ত সম্পূর্ণ করতে সময় প্রয়োজন হওয়ায় সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(এ) ধারায় ফাইয়াজের অব্যাহতি চেয়ে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তবে মামলার তদন্ত কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে।

পুলিশ সদর দপ্তর বলেছে, সারা দেশেই নিরপরাধ মানুষকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে কাজ করছে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা এ জন্য প্রতিটি বিষয় তদন্ত করছেন। তবে কোনো অপরাধী যাতে এ সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়টিও দেখতে হয়। তাই এ বিষয়ে ধীরে-সুস্থে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইজিপি বাহারুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলায় আসামির নাম দেন বাদী। তিনি যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, তাঁরাই আসামি। এরপর পুলিশ অভিযোগ তদন্ত করে যাদের সম্পৃক্ততা পায়, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয়। যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পায় না, তাদের অব্যাহতি দেয়। বাদী যদি হয়রানি করতে বা পূর্বশত্রুতার জেরে কারও নাম আসামির তালিকায় দেন, তখন পুলিশ তাতে বাধা দিতে পারে না। তবে তদন্তে তাঁদের অব্যাহতি দিতে পারে। ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের ফলে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দিয়ে সেটি করা যাচ্ছে। এই ধারায় সারা দেশে নিরপরাধ ব্যক্তিদের মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিতে কাজ করছে পুলিশ। এটি চলমান প্রক্রিয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত