Ajker Patrika

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে

  • দলগুলোর মধ্যে মতভেদ, ছাড় দেওয়ার মনোভাব কম।
  • বিরোধের নতুন কারণ জাতীয় পার্টি।
  • ভোটে না যাওয়ার কথাও পরোক্ষভাবে বলছে কোনো কোনো দল।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিজেদের প্রতিশ্রুতির কথা বারবার জোর দিয়েই বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু ভোটের লড়াই যারা করবে, সেই রাজনৈতিক দলগুলোর কথার সুর যেন মিলছে না। বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) সামনের সারিতে থাকা দলগুলোর দূরত্ব যেন দিন দিন বাড়ছে। ছাড় দিয়ে সমঝোতায় আসার মনোভাব এখনো দৃশ্যমান হচ্ছে না। বরং কোনো দল প্রকারান্তরে জানিয়ে দিচ্ছে, দাবি পূরণ না হলে ভোটে যাবে কি না, তা-ও ভাবছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন হবে কি না, এ বিষয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, এমনটা মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকা'কে বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। এ অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে।

কেন অনিশ্চয়তা আছে বলে মনে করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মুনীরুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। এ কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। তাঁর বিশ্লেষণ, শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তৃণমূলে শিকড় থাকতে হয়, যা সরকারের নেই।

রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ বাড়ছে মূলত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও জাতীয় নির্বাচন কী প্রক্রিয়ায় হবে, সরাসরি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, নাকি নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন হবে, সরাসরি ভোটে আইনসভার সদস্যরা নির্বাচিত হবেন নাকি সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে—এসব বিষয়ে।

আবার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষগুলোর পরস্পরের মধ্যেও আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। এর বাইরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গত রোববার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে আলাদা আলাদা কথা বলেছেন। সূত্রমতে, তিনটি বৈঠকে যে আলাপ হয়েছে, তাতে দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পন্থা নিয়ে তীব্র মতভেদের বিষয়টি স্পষ্ট।

এর বাইরে জামায়াত ও এনসিপির অভিযোগ, গণ-অভ্যুত্থানের পর দলগুলোর মতো সহাবস্থান বজায় রাখার কথা থাকলেও বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের বদলে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে। বিএনপি সনদ বাস্তবায়ন ও জাতীয় নির্বাচনের প্রক্রিয়ার বিষয়ে ছাড় দিতে রাজি না হলে জামায়াত ও এনসিপি আগামী নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথাও ভাবছে, এ বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জানানো হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

অন্যদিকে বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন চায় দলটি। তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ করেছে, জামায়াত ও এনসিপি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।

অন্যদিকে জামায়াত জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ও পিআর না হলে নির্বাচন না করার আশঙ্কার কথা বলেছে। আর এনসিপি বলেছে, নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচন না হলে দলটি নির্বাচন করবে না। দল দুটি প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছে, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির তৎপরতা সন্দেহজনক। তাদের আশা ছিল, বিএনপি আওয়ামী লীগকে প্রতিপক্ষ করে বক্তব্য দেবে। কিন্তু দলটি মাঠে-ময়দানে জামায়াত ও এনসিপিকে লক্ষ্যবস্তু করছে; জাতীয় পার্টিকেও মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে। বিষয়টিতে বিএনপির বিদেশি বন্ধু প্রভাবিত করছে বলেও দাবি তাদের।

এদিকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের বসুন্ধরার বাসায় গতকাল অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে শক্ত অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।

আর বিএনপির চাপে নির্বাচন কমিশন ভোটের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, এমন অভিযোগ করে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের গত রোববার বলেছেন, ‘একটি দলের চাপে গতানুগতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে গেলে বেশির ভাগ দলের জন্য নির্বাচনে যাওয়া সংকুচিত হয়ে যাবে, প্রশ্নবোধক হয়ে যাবে, আমরা ট্রেন মিসও তো করে ফেলতে পারি।’

অন্যদিকে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেছেন, দেশে যে রাজনৈতিক সংকট ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে উঠছে, সেটার স্থায়ী সমাধানের জন্য তাঁর দল আগে গণপরিষদ নির্বাচন চায়, যে পরিষদ নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমানে সবচেয়ে সক্রিয় এই তিন দলের প্রবল মতভেদের পরিস্থিতিতে নির্বাচন আদৌ হবে কি না, সে বিষয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে দলগুলোর ভেতরেই।

প্রধান উপদেষ্টা অবশ্য এসব বৈঠকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও তাতে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার কথা দলগুলোকে জানান। দলগুলো যেন নির্বাচনবিমুখ না হয়ে অংশ নেয়, তার সব রকম চেষ্টা করবেন বলে তিনি জানান।

রোববার তিন দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর তাঁর প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘ঘোষণা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কেউ যদি নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নিয়ে ভাবে, সেটা হবে জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক।’

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ তোলা হলে বিএনপি নেতারা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, আর কোনো দল নিষিদ্ধ হোক, এটা তাঁরা চান না। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, জাতীয় পার্টির বিষয়ে আলোচনা হয়নি।

জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা রোববার তিন দলের সঙ্গে বৈঠকের বিরতিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য) মনির হায়দারও বৈঠকে ছিলেন। সেখানে দলগুলোর অবস্থান নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আলোচনা করেন। আলী রীয়াজ মতবিরোধের বিষয়ে সব দলকে একসঙ্গে নিয়ে বসে পরিস্থিতির সমাধান করার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টাকে দলগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কথা বলার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিছু কিছু বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে ভূমিকাও নিতে বলা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ওঠার উপায় কী, এ প্রশ্নে বিশ্লেষক আ ন ম মুনীরুজ্জামানের মত, সরকারের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

ধর্ষণে মেয়ে গর্ভবতী, বাবার আমৃত্যু কারাদণ্ড

ভারতসহ একসঙ্গে তিন দেশ সামলাবেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, দিল্লিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নারীর সঙ্গে ঝগড়ার পর রূপসা সেতু থেকে নিচে লাফ দেন সাংবাদিক বুলু: কোস্ট গার্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত